somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুনিয়ার আর্জেন্টিনার সমর্থক, এক হও

০৯ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(শুধুমাত্র ঘোর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের জন্য লেখা।)



১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপের সময় আমি ১ম শ্রেণীর ছাত্র।
খেলা কখন হত জানি না, তবে বাবাকে দেখতাম বিকেলে বিটিভিতে ফুটবল খেলা দেখছেন। সম্ভবত তিনি খেলার পুণঃপ্রচার দেখতেন।



ফুটবল এমনই একটা খেলা যেটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ যে কেউ সহজেই বুঝতে পারে। তাই বাবার সাথে বসে কয়েকটি খেলা দেখেছিলাম। আবছা মনে আছে যে কালো জার্সি পরা (বুঝতে হবে যে টিভি ছিল সাদাকালো B-)) খাটোমত এক খেলোয়াড়ের খেলা দেখার সময় বাবা খুব উৎফুল্ল হয়ে পড়তেন। ম্যারাডোনা বা আর্জেন্টিনা বোঝার মত বয়স হয় নি।





ধীরে ধীরে যত বড় হলাম ফুটবল খেলার প্রতি ততই আকর্ষণ অনুভব করতে লাগলাম। আমার বাসা তখন ছিল মীরপুর ১ এ। যেদিন করে মীরপুর ২ এর জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা হত, সেদিন করে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো আমাদের এলাকার উচুঁ বাড়িগুলোতে এসে পড়ত। বুঝতাম আজকে ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে। কি ভাবে জানি আমি মোহামেডান দলের সমর্থকে পরিণত হলাম। যেদিন করে মোহামেডানের খেলা থাকত সেদিন করে খাতার একটা পৃষ্ঠায় তিনটি কালো দাগ কোনাকুনি এঁকে একটি কাঠিতে ঐ কাগজটি আঠা দিয়ে লাগিয়ে ছাদে চলে যেতাম এবং পিলারের লোহার সাথে বেঁধে দিতাম। B-)

তখন ফুটবলই ছিল এদেশে সবার প্রিয় খেলা। আমরা ছোটরা মীরপুর ১ এ বেঙ্গলী মিডিয়াম স্কুলের বিশাল মাঠের এক কোণে প্রায় প্রতিদিনই ফুটবল খেলতাম। তখন ঐ এলাকায় এত বেশি ঘনবসতি ছিল না। এখন সেই বেঙ্গলী মিডিয়াম স্কুলের মাঠ দখল করে কয়েকটি মার্কেট গড়ে উঠেছে। হায়রে বাংলাদেশ! /:)

যাহোক, এরপর ১৯৯০ তে মনিপুর স্কুলে ভর্তি হলাম। আমরা চলে এলাম মনিপুর স্কুলের পাশে। তখন এই এলাকাটিতে বাড়িঘর খুবই কম ছিল। ছিল খোলা জায়গা এবং অসংখ্য ডোবা। এই বছরই অনুষ্ঠিত হল ইটালী বিশ্বকাপ।



মনে পড়ে, আমাদের সে কি উত্তেজনা! রাত জেগে খেলা দেখা আর সকালে সমবয়েসীদের সাথে সেই খেলা নিয়ে তুমুল গলাবাজি।

প্রথম খেলাতেই আর্জেন্টিনা ক্যামেরুন নামে এক অখ্যাত দলের সাথে হেরে গেল।



কি কারণে জানি আর্জেন্টিনার প্রতি একটি সহানুভূতি এসে গেল। জানতে পারলাম এই দলেই আছে আগের বিশ্বকাপের বিশ্বকাপানো খেলোয়াড় ম্যারাডোনা। আরও আছে ক্যানিজিয়া, বাতিস্তুতা, বুরুচ্যাগা, সেনসিনি এবং গোলকিপার গয়কোচিয়া।



আমি আর্জেন্টিনা নামক ঐ ল্যাটিন আমেরিকার দলটির ভক্ত হয়ে গেলাম। আর্জেন্টিনার প্রতিটি খেলা মানেই সে কি শিহরণ!



(প্রিয় ব্লগার মিল্টন ভাইয়ের কথায় মনে পড়ল, ঐ বিশ্বকাপ চলাকালে খেলার বিভিন্ন মূহুর্তের ছবি সম্বলিত ভিউকার্ড জমানো নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুই ভাই মিলে প্রায় ১২০টি ভিউকার্ড জমিয়েছিলাম। কোনটি ৫০ পয়সা, কোনটি ১ টাকা, আবার কোনটি ২ টাকা। প্রতিটি ভিউকার্ডের পিছনে নম্বর দিয়েছিলাম যাতে কোনোটা হারিয়ে গেলে খুঁজে পাই। ভিউকার্ডগুলো অনেক বছর ছিল, তারপর কোথায় হারিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না :()









আর্জেন্টিনা আমাদেরকে নিরাশ করে নি। শেষ পর্যন্ত এই দলটি ফাইনালে পৌঁছে গেল। আমরা পুরো পরিবার টিভি সেটের সামনে বসে খেলা দেখছি।



কিন্তু শক্তিশালী জামার্নীর বিপক্ষে ফাইনালে আর্জেন্টিনা তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। তবে মনে মনে একটা আশা ছিল যে, আর্জেন্টিনার গোলকিপার গয়কোচিয়া খুবই দক্ষ। খেলা যদি টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে আর্জেন্টিনাই জিতবে।



কিন্তু অঘটন ঘটল তার আগেই! সামান্য একটি ফাউলের অজুহাতে রেফারি কোডেসাল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পেনাল্টি কিকের আদেশ
দিলেন!!!:-*:-*:-*



আমরা রুদ্ধশ্বাস, হতবাক হয়ে গেলাম!!!
পুরো স্টেডিয়ামের উত্তেজনা তখন আমাদের বাসায়!!!!



তারপরও আশা ছিল গোলকিপার ঠিকই পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিবে।



কিন্তু পারল না, ব্রেইমা নামের জার্মানীর খেলোয়াড়টি পিলার গা ঘেষে যেভাবে বলটি জালে পাঠালো, সেটা ঠেকানো বিশ্বের সেরা গোলকিপারের পক্ষেও সম্ভব নয়!!!



কাঁদছেন ম্যারাডোনা!

আমারও চোখ টলটল করে উঠল!!!

শেষ কয়েক মিনিট অনেক চেষ্টা করল আর্জেন্টিনা- কিন্তু গোল শোধ করতে পারল না।

হেরে গেল আর্জেন্টিনা!!!



আমি হতবিহ্বল! নির্বাক!!! আমার প্রিয় দলটি এভাবে তীরে এসে তরী ডোবালো!!!

বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল- কিন্তু সেই শোকের রেশ কাটতে কয়েকদিন লাগল আমার!!!



ম্যারাডোনা হয়ে গেলেন আমার প্রিয় এক ট্রাজেডির নায়ক!!! /:)







এরপর প্রতিটি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলা মানেই অন্য রকম এক উত্তেজনা, আশায় বুক বাঁধা।







বিস্কিট, চানাচুর, চিপস নিয়ে টিভির সামনে অপলক বসে থাকা।











আর্জেন্টিনা জিতলে চিৎকার করে ওঠা।





আবার হেরে গেলে হতবিহ্বল হয়ে থাকা।



সবচেয়ে খারাপ লাগত যেদিন আর্জেন্টিনা হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিত। সেদিন এবং তারপর কয়েকটা দিন গলা দিয়ে খাবার নামত না। সারাক্ষণ খালি ভাবতাম- এরকম কেন হল? ঐ খেলোয়াড়টা ঐরকম না করলে কি হত? রেফারির ঐ সিদ্ধান্তটা কি ঠিক ছিল?



কৈশোরের সেই আবেগ এখন অনেকটাই কমে এসেছে! জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত আমরা রাত জেগে খেলা দেখে পরদিন কিভাবে অফিস করব সেই চিন্তাও করতে হয়। আমার ছেলের বয়স ৩ মাস। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে সেও হয়ত তার বাবার মত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখবে। কিন্তু বাবার সেই আবেগ তাকে স্পর্শ করবে কি? তার জন্য খেলার কোন মাঠই তো এই শহরে নেই। খোলা মাঠে ফুটবল নিয়ে প্রাণপণে দৌড়ানোর উত্তেজনা সে কি কোনদিন বুঝতে পারবে?



বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে। বাংলাদেশ কোনদিন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে সে আশা করা কঠিন। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল তো থেমে নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে পৃথিবীজুড়ে যে আলোড়ন তৈরা হয় তার সমকক্ষ আর কোনকিছু নেই- গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। আমরা বাংলাদেশীরা বিশ্ব ফুটবলে অংশ নিতে না পারি, একটি দলকে সমর্থন দিয়ে সেই খেলার একটুখানি উত্তেজনার ভাগিদার হতে সমস্যা কোথায়?

আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। আমৃত্যু তাই থাকতে চাই। :D:D:D








আসুন সবাই বিশ্বকাপের সেরা দল আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেই!!!

আজ থেকে প্রোফাইলে আর্জেন্টিনার পতাকা!!! :D:D:D:D:D




আর্জেন্টিনা এবার চ্যাম্পিয়ন হবেই!!!! B-)B-)B-)B-)B-)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:০৪
৭৮টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×