somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামুতে এখন কারা ব্লগিং করে!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সামহোয়ার ইন ব্লগে আমার ব্লগিংয়ের বয়স প্রায় ৪ বছর। ২০০৯ এর শুরুর দিকে প্রথম অন্য একটি নিকে রেজিস্ট্রেশন করি। আমার প্রথম পোস্টটি ছিল-

মুক্তিযোদ্ধাদের চাওয়া পাওয়া : একজন মুক্তিযোদ্ধার অভিমত

তখন ব্লগিং খুব মজা লাগত! সামুতে সেই সময় অধিকাংশ পোস্ট ছিল মানসম্মত। অনেক প্রতিভাবান ব্লগার নিয়মিত লিখতেন। সকালে অফিসে গিয়ে প্রথম দুই ঘন্টা তো আগের দিন যে পোস্ট থেকে শেষ করেছিলাম সেখান থেকে শুরু করতাম। কোনটা রেখে কোনটা পড়ি এমন অবস্থা!

আগেও একবার বলেছি, সব ব্লগারের ব্লগিং জীবনের একটা পিক সময় থাকে। তারপর এক সময় ধীরে ধীরে আগ্রহ কমে আসতে থাকে। আজ যেমন ফেসবুকে মজে আছে গোটা দুনিয়া- প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ধারণা, একসময় ফেসবুকের আবেদন কমে যাবে। নতুন কিছু ততদিনে চলে আসবে। ঠিক তেমনি সামুতে এক সময় আগ্রহ সবারই কমে যায়। অবশ্য কিছু মানসিক রোগী বা ভাদাইম্মা আছে, যারা ব্লগেই খায়, ব্লগেই ঘুমায়, ব্লগেই প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সারে।

সামহোয়ার ইন ব্লগের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার একটা কারণ উপরে উল্লেখ করলাম। আরেকটা কারণ হল, সামুতে এখন এত বিচিত্র প্রজাতির ব্লগার এসেছে যে, পুরনো সামুকে ফেরত পাওয়া এখন অসম্ভব! বিচিত্র ব্লগারদের বিচিত্র চরিত্র- কেউ সারাদিন পত্রিকার কপিপেস্ট মারে, কেউ সারাদিন ইসলাম বলতে কিছু নাই এইটা প্রমাণে ব্যস্ত, কেউ সারাদিন কাদিয়ানী-দেওয়ানবাগীর গুনগান করে, কেউ ব্লগেই ইসলামের জন্য শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, কেউ ব্লগটাকে বানায় চ্যাটরুম, কেউ আপু-মামা-খালা বানিয়ে পারিবারিক গল্পগুজব করে! আরেক গ্রুপ আছে দারোয়ানের মত। এরা নিজেদের 'ছাগু ফাইটার' দাবী করে। আগে সেই তথাকথিত 'ছাগু ফাইটার'দেরও ক্লাস ছিল, তারা যেভাবে জামায়াত-শিবিরদের কোনঠাসা করে রাখত সেটা দেখে ভালই লাগত। এখন ব্লগটা ভরে গেছে লো-ক্লাস পোলাপাইনে। নিচে একটা নমুনা দেখাচ্ছি।

তার আগে বলি, আমার ব্লগ প্রোফাইলে দুটি বাণী আছে।

একটা হল- কাঁদো বাঙালী কাঁদো। দেশের যে অবস্থা, তাতে বছরে মাত্র একদিন কেঁদে লাভ হবে না। তাই আমি প্রতিদিন নিজে কাঁদি এবং অন্যদেরও কাঁদতে উৎসাহ দেই।

দ্বিতীয়টি হল- কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম। এটা বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও বুদ্ধিজীবী স্যামুয়েল জনসনের একটা উক্তি। উক্তিটি কিন্তু আসলে সত্যিকারের দেশপ্রেমিকদের নিয়ে নয়- এটা হল কাপুরুষদের নিয়ে। যখন কাপুরুষরা নিজের কৃতকর্মের পক্ষে কোন যুক্তি দেখাতে পারে না, তখন তারা কপট দেশপ্রেমের আশ্রয় নেয়- এটাই এই উক্তিটির সহজবোধ্য ব্যাখ্যা।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা লেখার সমালোচনায় একটা পোস্ট লিখেছিলাম গত ১৫ অক্টোবর । লেখাটির লিংক এখানে।

গত ৩ নভেম্বর এক বীর ছাগুফাইটার মোঃ নিয়েল হিমু (সম্ভবত মুহম্মদ জাফর ইকবালের অন্ধভক্ত!) আমার ঐ পোস্টে এসে প্রবল বীরত্ব সহকারে গালি দিয়ে গেল-



তার অভিযোগ- কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম- আমি এই কথাটা কেন বললাম!

মোটামুটি অবাক হয়েই আমি পরে একটা পোস্ট দিলাম এই ভেবে যে, ব্লগাররাই তার ভুল ধরিয়ে দিক ওটা আমার কথা নয়- আমি শুধু Quote করেছি মাত্র!

কিন্তু আমি অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে দেখলাম- ঐ ব্লগারের সুহৃদবৃন্দ সাথে সাথে মধুবর্ষণে প্রবল বীরত্ব সহকারে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কয়েকটা নমুনা দেখুন-



দায়িত্ববান নাগরিক নিজ দায়িত্ব বিখ্যাত উক্তিটির নিজস্ব ভার্সন তৈরি করে নিল।



ঘুড্ডির পাইলট নিকের এক ব্লগার আমাকে রিমান্ডে নিয়ে প্রমাণ করতে চাইল, ঐটা আমারই কথা!



শফিউল বাসার নিকের ব্লগার শুরু করল রীতিমত হুমকি। তাকে ঐ উক্তির মানে বুঝিয়ে দিতেই হবে!



ভাইরাস ২০১২ নিকের ব্লগার আমাকে বুঝিয়ে দিল সে আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং আগামী এক বছর তারা বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য মাঠেই আছে।



দায়িত্ববান নাগরিক এবার তাঁর অসীম প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেল ঐ উক্তিটি করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য!


আমার অবাক হওয়ার পালা এখনও শেষ হয়নি! কিছুদিন আগে বুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যখন ভিসির পদত্যাগের দাবীতে অনশন করছিলেন তখন ভিসি তথা সরকারপন্থীরা কিছু ভাড়াটে গুন্ডা বদমাস ছেলে নিয়ে চড়াও হয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর। তখন এক টিভি রিপোর্টার তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কোন ডিপার্টমেন্টের! জবাবে সেই ছেলেটি বলেছিল- সে কমার্স ডিপার্টমেন্টের!

বুয়েটের কমার্স ডিপার্টমেন্ট!!!- বোঝেন অবস্থা!!!! মিথ্যা বলবি তারও তো একটা লিমিট থাকে! এটা নিয়ে সমস্ত ব্লগে ও ফেসবুকে অনেক হাসিঠাট্টা হয়েছে। আমিও মোঃ নিয়েল হিমুর উক্তির প্রেক্ষিতে ঠাট্টা করে লিখেছিলাম- মুহম্মদ জাফর ইকবালের অন্ধভক্তরা কি বুয়েটের কর্মাস ডিপার্টমেন্টের ছাত্র!

সেই শফিউল বাসার নিকের ব্লগার এসে কি বলে গেল দেখেন-



প্রিয় ব্লগাররা বুঝে নিন, কারা এখন ব্লগিং করে! এদের না আছে সাধারণ জ্ঞান না আছে রসবোধ!

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ এ যুগে জন্মাননি। তাহলে ওনার 'বল দাও মোরে বল দাও' অংশটুকু পড়ে শফিউল, দায়িত্ববান নাগরিক, হিমুরা কমেন্ট করত-

ওস্তাদ! বল রেডি! কবে খেলবেন কন!


বাই দ্য ওয়ে, রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় কয়টি লাইন আছে যেন?;)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩২
৫৩টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×