somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার একটি কাকতালীয় পোস্ট ও কিছু ক্ষোভের কথা!

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েকদিন আগে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম আমার পিচ্চি, মানে তিন বছরের ছেলেটিকে নিয়ে। পোস্টের সারমর্ম হল- হিন্দিতে ডাবিংকৃত কার্টুন দেখে কিভাবে আমাদের সন্তানরা হিন্দি ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে!

কাকতালীয় বিষয়টি হল- পোস্টটি যেদিন দুপুরবেলা দিলাম সেদিনই সন্ধ্যায় জানতে পারলাম সংসদে তথ্যমন্ত্রী ডোরেমন কার্টুনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার ধারণা, আমার মত অসংখ্য অভিভাবক সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন।

অবশ্য এমন নয় যে, আমরা ইচ্ছা করলে বাচ্চাদের হিন্দি কার্টুন দেখা বন্ধ করতে পারতাম না, বা ঐ চ্যানেলটি লক করে রাখতে পারতাম না। আমরা অভিভাবকরা চাইলেই বাচ্চাকে ডোরেমন, গুজুরাসহ সব হিন্দি ভাষায় ডাবিংকৃত কার্টুন থেকে দূরে রাখতে পারতাম।

আসলেই কি পারতাম? হয়ত পারতাম, কিন্তু আসলে চাইতাম না।

আর এখানেই আমার যত ক্ষোভ, যত দুঃখ!

আসলে আমরা যারা ঢাকা শহরের মত অপরিকল্পিত নগরে শিশুর জন্ম দিয়েছি, আমরা আমাদের শিশুটিকে সুস্থ একটা পরিবেশ দিতে পারিনি। আমাদের শিশুরা বড় হয় বহুতল ভবনের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের চারদেয়ালের ভিতর। তাদের জগৎটা ঘরের ভিতর আর ছোট্ট বারান্দার ভিতর সীমাবদ্ধ। ঢাকা শহরের অনেক ফ্ল্যাটবাড়িতে দিনের আলোও ঠিকমত পৌঁছায় না। যে বয়সে আমি, আমার ছোট ভাই ও কলোনীর সব শিশুদের নিয়ে খোলা প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছি, লাটিম খেলেছি, মার্বেল খেলেছি, লুকোচুরি খেলেছি- সেই বয়সে ঢাকার সমস্ত বাচ্চাগুলো ফার্মের মুরগী কিংবা খাঁচায় বন্দী পাখির মত একঘেয়ে পরিবেশে বড় হচ্ছে।

আচ্ছা বলুন তো, ২ থেকে ৫ বছরের একটি বাচ্চা ২৪ ঘন্টায় কি করবে? ধরলাম ৮-১০ ঘন্টা ঘুমাবে, কিন্তু বাকী ১৪ ঘন্টা! আরও ধরলাম খাওয়া, গোসল, বাথরুমে আরও ২ ঘন্টা! এরপর তো ১২ ঘন্টা থেকে যায়। কতক্ষণ বাচ্চাকে খেলনা দিয়ে আটকে রাখবেন? আর রোজ রোজ নিত্যনতুন খেলনা কেনার সামর্থ্য কয়জন অভিভাবকের আছে? মায়েরা বাচ্চাকে সারাদিন নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ঘরের কাজ হবে কখন? বাবাদের কথা বাদ দেন, ঢাকার অধিকাংশ পুরুষ লোক সাত সকালে কর্মস্থলে বের হন, ফেরেন সন্ধ্যার পর। আমার মত অনেকে ফেরেন মধ্যরাতে! ঢাকা শহরে কি কোন খোলা জায়গা আছে যেখানে বিকেলে মা তার শিশুটিকে নিয়ে খেলতে বের হবেন?

আমরা তাই বাচ্চাদের সাথে প্রতারণা করি। টিভির রিমোট ধরিয়ে দেই বাচ্চার হাতে, কিংবা টিভিতে কার্টুন ছেড়ে দিয়ে মা চলে যান ঘরদোরের কাজ গুছাতে। আর আমাদের বাচ্চারা তন্ময় হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কার্টুন দেখে। সারাদিনে সে কার্টুনে যত হিন্দি কথা শোনে, বাবা-মার কাছ থেকে তার অর্ধেক বাংলা শোনে কিনা সন্দেহ! আমাদের বাচ্চারা ডোরেমন, নবিতা, গুজুরাদের বানায় ভার্চুয়াল বন্ধু!

তাহলে বাচ্চা বাংলা না বলে হিন্দি বলবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে?

আমাদের বাচ্চাগুলো আসলেই ফার্মের মুরগীতে পরিণত হচ্ছে। কয়েকদিন আগে অফিসের পিকনিকে গেলাম সবাই সপরিবারে। কয়েকটি বাচ্চা যাওয়ার পথে গাড়ীতে বমি করল। পিকনিক স্পটে গিয়ে সহকর্মীরা মজা করবেন কি, বাচ্চাদের শুশ্রুষা করতেই দিন শেষ!

এতো গেল দুঃখের কথা! এবার ক্ষোভের কথাটি বলি। বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল গুলো খুলে দেখুন- দিনরাত চব্বিশঘন্টা হয় খবর, নয়ত টকশো, নয়ত বস্তাপঁচা নাটক, নয়ত রিয়েলিটি শোর নামে ন্যাকামি, ফাজলামি। এত এত চ্যানেল, একটি চ্যানেলও কি পারে না ডোরেমনের মত জনপ্রিয় কার্টুনগুলো বাংলায় ডাবিং করতে?

অবশ্যই পারে। কিন্তু করবে না, কারণ ওতে ব্যবসা কম। এরা ছোটে বড় ব্যবসার পিছনে। পাবলিক টক শো খায়, পাবলিক বাংলা একাডেমীর লাইভ টেলিকাস্ট খায়, পাবলিক শাহবাগের গনজাগরণ খায়। তাই পাবলিক যেটা চায় সেটাতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে! অথচ ঐ পাবলিকগুলোর ঘরে সন্তান আছে, তাদেরও অধিকার আছে দিনে কিছুটা সময় টিভি বিনোদনের!

আমাদের এই ক্ষোভের প্রতিকার করতে পারে সরকার নিজ উদ্যোগে, পারে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। সরকার আইন করে দিতে পারে প্রতিটি বাংলাদেশী চ্যানেলকে ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৪ ঘন্টা শিশুদের বিনোদনের জন্য অনুষ্ঠান রাখতে হবে, সমস্ত কার্টুন বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করতে হবে, বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত অনুষ্ঠান রাখার শর্ত দেয় তাহলে তো আরও ভাল হয়।

আমাদের বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল মালিকরা কি কখনও ভেবে দেখেছেন- এক ডোরেমন কার্টুন দিয়ে কিভাবে একটি চ্যানেল দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে যেতে পারে?

শিশু দর্শকদের অবহেলা করাটা কি তাদের ঠিক হচ্ছে?
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×