somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কি কানাডা'র নতুন অভিবাসী হয়ে আসছেন? তাহলে এ লেখাটি আপনারই জন্যে - পর্ব ১

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টার্কিশ এয়ারলাইনসের সুবিশাল এয়ারবাসটা যখন কানাডা'র মাটি স্পর্শ করলো, ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট। টরন্টো'র পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাস্টমস-ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ বেল্ট থেকে নিজের মালামালগুলো খুঁজে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২০ ঘন্টার জার্নি শেষে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে যখন বাইরে বেরিয়ে এলাম, কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটায় প্রায় জমে যাবার যোগাড়। এই তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে বড় বড় লাগেজগুলো সামলাতে আমি যখন ব্যাস্ত, হঠাৎ পাশ থেকে এক নারী কণ্ঠের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম ... "ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার?" ভালো করে তাকিয়ে দেখি, ভদ্রমহিলা এয়ারপোর্টের-ই কোন এক পুলিশ অফিসার হবেন। তাকে জানালাম যে, আমার বন্ধু গাড়ি নিয়ে আসার কথা আমাকে নেবার জন্যে। সেই দেবদূতের মতো ভদ্রমহিলা নিজে থেকেই আমার বন্ধুর ফোন নম্বর নিয়ে তাকে ফোন দিয়ে আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। এই প্রথম পরিচিত হলাম কানাডার মানুষদের চম]কার ব্যবহারের সাথে।

বাংলাদেশ থেকে আসার আগে কানাডা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিলনা। শুধু ই্উটিউব আর হলিউড সিনেমার বদৌলতে এখানকার বাড়ি-গাড়ি-মানুষজন দেখেছি। বাংলাদেশ থেকে এখানে আসার আগে অনেক অজানা শঙ্কা, দ্বিধা মনের ভেতরে ঘুরপাক খেয়েছে।

আজ তাই আমার সদ্য অভিজ্ঞতার আলোকে এই লেখাটি লিখছি শুধু তাদের জন্যেই, যারা অদূর ভবিষ্যতেই সুদূর বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার কানাডার টরন্টো শহরে আসছেন ইমিগ্র্যান্ট হয়ে। এক বসাতে সব কথা বলেতো শেষ করা যাবেনা। তাই ধারাবাহিকভাবে লেখাটি বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে, যেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় আসা নতুনদের জন্যে এই কথাগুলো গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে। তবে অবশ্যই উল্লেখ্য যে, নানা মুনীর নানা মত থাকতেই পারে, তবে এই লেখাটি সম্পূর্ণরূপেই আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং মতামত।


আর ভালো কথা, কারো কোন প্রশ্ন/সাজেশন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আমার সাধ্য মতো সঠিক উত্তরটি দেবার চেষ্ট করবো।

তো চলুন, আর দেরি না করে চলে যাই মূল প্রসঙ্গে:

কানাডার ভিসা পাবার পর কি কি করণীয়:
১. প্রথমেই আপনাকে কানাডার ইমিগ্র্যান্ট ভিসা পাবার জন্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।আপনার এখনো ধারণাই নেই, কত সুন্দর একটা দেশে আপনি আসতে যাচ্ছেন। আপনার পাসপোর্ট এবং COPR ফর্মটি অতন্ত্য যত্নের সাথে সংরক্ষণ করুন। টার্কিশ এয়ারলাইন্সে কানাডায় আসার পথে ইস্তাম্বুলের এয়ারপোর্টে আমার পাসপোর্টের সাথে এই COPR ফর্মটি কর্তব্যরত অফিসার দেখতে চেয়েছিল। সুতরাং এই দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হ্যাণ্ড-লাগেজে বহন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

২ যত দ্রুত সম্ভব টিকেট বুকিং দিন। রওনা হবার কমপক্ষে দেড় থেকে দুই মাস আগে টিকেট কনফার্ম করলে কিছুটা কমে টিকেট পেতে পারেন।

৩. যারা দীর্ঘ সময়ের জন্যে কানাডা আসছেন, তাদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি, টার্কিশ, এমিরেটস ইত্যাদি প্রায় সব এয়ারলাইন্সেই আপনাকে ২৩ কেজি করে দু'টি বড় লাগেজ এবং হ্যাণ্ড লাগেজে ৭-৮ কেজি মালামাল নিতে দেবে। কাজেই ওজন মেশিন নিয়ে বসে যান এখুনি। ২৩ কেজির জায়গায় সর্বোচ্চ ২৫ কেজি পর্যন্ত আনতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে যাত্রার দিন বোর্ডিং-এর সময় আগে আগে যাবার পরামর্শ দিচ্ছি।

৪. কানাডা আসার আগে আমার মনে প্রশ্ন ছিল, কি কি নিয়ে আসতে পারবো, কি কি আনতে পারবোনা ইত্যাদি। কানাডায় অবস্থানরত অনেকেই অনেক পরামর্শ দিয়েছে। আমি এত বিস্তারিততে নাই বা গেলাম। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আসার আগে প্রচুর আণ্ডারগার্মেন্ট, মোজা, টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট, বঙ্গবাজারের কানটুপি - এগুলো বেশ কাজে দিচ্ছে। আর গরম কাপড় বলতে দুইটা মোটা সোয়েটার এনেছিলাম। বাকী গরম জামা বলতে লেদার জ্যাকেট, ইনার, হাতমোজা, ওভারকোট ইত্যাদি বাংলাদেশ থেকে না এনে এখান থেকে কিনেছি। কারণ বাংলাদেশী ফ্যাশন এখানে চলবেনা।


৫. বাংলাদেশ থেকে আসার সময় সবচাইতে যে চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খেয়েছিল তাহলো, সাথে করে সর্বোচ্চ কত ডলার নিয়ে আসা যায়? এ ব্যাপারে বাংলদেশ সরকারের সকল নিয়মনীতি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে জানলাম, বর্তমানে ১ বছরের মধ্যে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০০০ ডলার যে কোন ব্যাক্তি পাসপোর্টে এনডোর্স করে (ব্যাঙ্ক/মানি এক্সচেঞ্জ থেকে) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন।কিন্তু ব্যাঙ্কে (স্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড ব্যাঙ্ক) খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০০০ ইউ.এস ডলার তারা পাসপোর্টে এনডোর্সমেন্ট করতে পারবে। বাকী ৩০০০ ইউ.এস ডলার ব্যাঙ্ক থেকে 'ট্র্যাভেলার্স চেক' হিসেবে নিয়ে আসা যায় যেটা করাটা বোকামী, কারণ 'ট্র্যাভেলার্স চেক' করে আনলে কানাডা আসার পর দেখবেন আপনি ডলারে সে টাকাটা অনেক কম পাচ্ছেন।

সুতরাং, এত ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড ব্যাঙ্ক থেকে ২০০০ ইউ.এস ডলার পাসপোর্টে এনডোর্স করালাম। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ব্যাঙ্ক/মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ইউ.এস ডলারের এনডোর্সমেন্ট হয়, কানাডিয়ান ডলারের হয়না।


৬. দুধ/দুগ্ধজাত পণ্য, কাঠের তৈরি বস্তু ইত্যাদি সাথে আনতে পারবেননা। যদি আনেন এবং কানাডার কাস্টমসে ধরা পড়েন, তাহলে টরন্টো ইমিগ্রেশন পুলিশের মতো খারাপ আর কেউ হবেনা। যদিও টরন্টো এয়ারপোর্টের কাস্টমসে আমার মালামাল চেক করা হয়নি। আর সিগারেট জনপ্রতি এক কার্টুনের বেশি আনলে অতিরিক্ত কার্টুনের জন্যে বিশাল ট্যাক্স দিতে হবে। এমন কোন বাংলাদেশী পণ্য নেই, যা এখানে পাওয়া যায়না। সুতরাং খাদ্যবস্তুর বোঝা টেনে আনাটা বোকামী বলেই আমি মনে করি।

৭. কানাডায় আসার আগেই এখানকার পরিচিত মানুষজনের সাথে কথা বলে থাকার জায়গা ঠিক করে নিন।কারণ টরন্টোতে ইমিগ্রেশনের সময় ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার টরন্টোর একটা ঠিকানা চাইবে, যে ঠিকানায় ভবিষ্যতে আপনার পি.আর কার্ড পৌঁছে যাবে।

৮. টরন্টোতে প্রতিমাসে কি রকম খরচ হতে পারে তার আনুমানিক একটা কম খরচের হিসাব নিচে দিলাম:

ক. বাসা ভাড়া ১ বেড- লিভিংরুম- ডাইনিং-কিচেন- ওয়াশরুম: ৮০০-৮৫০ ডলার
খ. হাইড্রো বিল (ইলেকট্রিসিটি বিল): ৭০-৮০ ডলার (দুই মাসে)
গ. মোবাইল ফোন যদি কম খরচের কানেকশন নেন তাহলে মাসে নূন্যতম ৩৫ টাকা
ঘ. খাবার খরচ জনপ্রতি ১০০-১২০ ডলার
ঙ. বাস/ট্রেনে যাতায়াত, লণ্ড্রি এবং আনুঙ্গিক খরচ ৫০ ডলার ধরে রাখুন
(অন্যান্য আরও অনেক ধরনের খরচ আছে যা আমার পরের পর্বগুলোতে আলোচনা করবো)

যারা কানাডায় একেবারেই নতুন, তারা আসার পর যেকোন কাজ পেতে একটু সময় লাগতে পারে। তাই বাংলাদেশ থেকে ২-৩ মাস চলার মতো টাকা নিয়ে আসাটা ভালো। একটা কথা এই বেলা বলে রাখি, বাংলাদেশী টাকার সাথে কানাডিয়ান ডলার রেট চিন্তা করে যদি কানাডায় খরচ করেন, তাহলে মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। এখানকার লিভিং স্টাইল এবং খরচ অনুযায়ী চিন্তা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

পরের পর্বে পি.আর কার্ড, সিন কার্ড, হেল্থ কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড সহ আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো আশা করছি। সবাইকে শুভেচ্ছা।


পর্ব -২

পর্ব -৩

পর্ব -৪

পর্ব -৫

পর্ব ৬

পর্ব ৭

Facebook page: Click This Link
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৯
৯০টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×