আমার এক চাচী ঢাকার বাইরে এক শহরে বেড়ে উঠেছিলেন। বিয়ের পর ঢাকা আছেন। একদিন আমাকে অনুযোগ করলেন চাচা উনাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না, উনি এখনো বসুন্ধরা মার্কেটে একবার ও যান নাই। এটা বছর চারেক আগের কথা। উনার কথা শুনে আমার মনে হল, বসুন্ধরা মার্কেটে যাওয়াটা কোন আলাদা ক্রেডিট এর মধ্যে পড়ে কিনা। আমি নিজেও তো এই মার্কেটে তখনো যাই নাই
এক সময় এক ফ্যাকড়ায় পড়ে যেতে হয়েছিল বসুন্ধরায়। ঢুকে আমার মনে হল এখানে শুধু দেখাই যাবে কেনা যাবে না কিছুই। কেনার চেষ্টাও করিনি, ধরা খাওয়ার ভয়ে........দরদাম এ আমি একেবারেই কাঁচা। এরপর দেখি ভাল ভাল মুভি গুলো সিনেপ্লেক্স এ দেখায়। সিনেপ্লেক্স এ একটা ছবি দেখার শখ ছিল মনে মনে। সঙ্গী সাথী জোগার করতে পারিনাই দেখাও হয় নাই।
এইবার আসল কথায় আসি.......মনপুরা যখন মুক্তি পেল; আমার তখন দম ফেলার সময় নাই। সবাই মনপুরা দেখে, ব্লগে পোস্ট দেখি.........আর আফসুস খাই। গানগুলো শোনা ছিল আগেই.........জাফনা শুনলেই বলতো আমার আম্মুর প্রিয় গান, কোন গান বারবার শুনলেই সে বলে ওটা আমার প্রিয় গান। কিছুদিন আগে বাপের বাড়ী গেলাম, ওখান থেকে পান্থপথ কাছেই। হঠাৎমাথায় চাপলো, এখনো কি মনপুরা চলে? পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে জানা গেল, এখনো চলে। বন্ধুরা সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, অফিস ফেলে কারো অন্য কিছু ভাববার সময় নেই। কাউকে সাথে নেয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। মাথায় ভুত চেপেছে, আমাকে ছবি দেখতে হবে, কেউ নেই তো একাই যাব। তবে কাউকে আগে বলা যাবে না, তাহলেই বলবে, দাঁড়া ছুটির দিনে সবাই মিলে যাই, একে বলি তাকে বলি। সবগুলোকে জুটাতে যেয়ে আমারটাই হবে না। বাসায় প্রিয় ভাবীকেও বলিনি, তার আবার মেয়েকে স্কুল থেকে আনা নেয়া, রান্নাবান্না আছে। আমার সাথে যেতে গেলে এগুলোর অন্য ব্যবস্থা করতে হবে......ফলাফল কারোরই যাওয়া হবে না।
মাথাপাগল মানুষ আমি, যা ভাবি তাই করি। মনে মনে প্লান করা আছে, সে মত সকালে জাফনাকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে বেড়িয়ে গেলাম........টিকেট কেটে প্রায় ফাঁকা হলরুমে যেয়ে ঠিক মাঝ বরাবর বসলাম। আহ মিশন সফল। আশেপাশে সবাই গ্রুপ ধরে এসেছে, মজার কিছু হলে হাসছে, পাশের জনের সাথে কথা বলছে। আমার সে বালাই নেই, আমি একা একা গভীর মনযোগের সাথে ছবি দেখলাম...........একেবারে মিশে গেলাম বলা যায়। কোন কিছুর সমালোচনা করতে হলে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়, আমার নেই কাজেই আমি শুধূ ছবিই দেখলাম।
নায়ক নায়িকার প্রেম দেখলাম, নদীর চরের বিস্তীর্ণ ক্ষেতে বাতাসের দোলা দেখলাম, সবুজে ভরা বাংলা দেখলাম। যা দেখি, তাতেই মন ভরে যায়। একটা দৃশ্যে নায়ক নায়িকার ছবি আলাদা ভাবে নেয়া, মাথার উপর শরতের সাদা-নীল আকাশ.......অদ্ভুদ সুন্দর!
প্রথম দেখাতেই নায়ক নায়িকা প্রেমে পড়ে দুজনেই যেভাবে নির্ঘুম রাত পার করছে..........আমার মনে হল.... হাযরে এমন একখান উথাল পাথাল প্রেমও হইল না; যার জন্য একটা নির্ঘুম রাত পার করা যাবে। যার জন্য মনে হবে, জীবন পূর্ণ, এখন আমার মরলেও ক্ষতি নেই.......আফসুস, আফসুস।
ছবির নায়ক দ্বীপে নির্বাসিত, তার কোন নৌকা নেই, প্রেমিকাকে দেখবার জন্য সে যখন রাতের আঁধারে নদী সাঁতরে পার হয়, নায়িকা তখন ওপারে মশাল জ্বালিয়ে রাখে তীরের নিশানা বোঝার জন্য..........সেটিকে আমার লিয়েন্ডার এর প্রেমিকা হিরোর জন্য দার্দানালেস প্রণালী পাড়ি দেবার কথা স্মরন করিয়ে দেয়। তাই এই প্রেম আরো বিমুর্ত হয়ে ওঠে।
নায়িকা যখন নায়কের মিথ্যে মৃত্যুর খবরে বিষকেই আপন করে নেয়........সেটি আমাকে রোমিও জুলিয়েটের কথা মনে করিয়ে দেয়.............তখন মনে হয়, এটাও সম্ভব, অনেক অনেক তীব্রভালবাসা হলেই সম্ভব।
ছবি দেখে বের হয়ে যখন ফোন দিয়ে বলা শুরু করলাম আমি একা একা মনপুরা দেখে বের হলাম.....ঝাড়ি খাওয়া শুরু হল। একজন বলল কেমন লাগলো? আমি বললাম, সেই কিশোর বয়সটা ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে, তারপর তুমুল একটা প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে.........যার জন্য নির্ঘুম রাত জেগে জেগে কাটানো যায়। আমার দোস্ত টাশকি খাইছে কোন সন্দেহ নাই। মনে মনে ভেবেছে পাগলের আবার কোন পাগলামী চাপলো! সমস্ত দিন আমি ডুবে থাকি এক রূপকথার জগতে........যেখানে রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গাতে রাজপুত্র এসে কপালে চুমু খাবে আর স্লিপিং বিউটি জেগে উঠবে........তারপর তারা সুখে থাকবে নিরন্তর......(কন্যাকে রূপকথা পড়ে শোনাতে শোনাতে আমারও মাথাটা গেছে)।
এখন থেকে ভাবছি, ছবি দেখতে গেলে একাই যাব, একাগ্র চিত্তে সিনেমা উপভোগ। নিজের মিশনে নিজেই অভিভূত!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



