somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একলা চলা, ব্যাপক রুমান্টিক এবং আফসুসময় গল্প

৩০ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক চাচী ঢাকার বাইরে এক শহরে বেড়ে উঠেছিলেন। বিয়ের পর ঢাকা আছেন। একদিন আমাকে অনুযোগ করলেন চাচা উনাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না, উনি এখনো বসুন্ধরা মার্কেটে একবার ও যান নাই। এটা বছর চারেক আগের কথা। উনার কথা শুনে আমার মনে হল, বসুন্ধরা মার্কেটে যাওয়াটা কোন আলাদা ক্রেডিট এর মধ্যে পড়ে কিনা। আমি নিজেও তো এই মার্কেটে তখনো যাই নাই:(, এজন্য আমার কোন আফসোস ও ছিল না। আমি শপিং এডিক্ট না। প্রয়োজন ছাড়া দোকানে ঘুরতে পারি না। যেটা দরকার, সেটা কেনা হলে চাবী দেয়া পুতুলের মত বাড়ী রওনা দেই, বাড়তি কিছুও কেনা হয না। সেই থেকে ভাবতাম বসুন্ধরা মার্কেটে কি আছে যার জন্য চাচীর এত আফসোস।

এক সময় এক ফ্যাকড়ায় পড়ে যেতে হয়েছিল বসুন্ধরায়। ঢুকে আমার মনে হল এখানে শুধু দেখাই যাবে কেনা যাবে না কিছুই। কেনার চেষ্টাও করিনি, ধরা খাওয়ার ভয়ে........দরদাম এ আমি একেবারেই কাঁচা। এরপর দেখি ভাল ভাল মুভি গুলো সিনেপ্লেক্স এ দেখায়। সিনেপ্লেক্স এ একটা ছবি দেখার শখ ছিল মনে মনে। সঙ্গী সাথী জোগার করতে পারিনাই দেখাও হয় নাই।

এইবার আসল কথায় আসি.......মনপুরা যখন মুক্তি পেল; আমার তখন দম ফেলার সময় নাই। সবাই মনপুরা দেখে, ব্লগে পোস্ট দেখি.........আর আফসুস খাই। গানগুলো শোনা ছিল আগেই.........জাফনা শুনলেই বলতো আমার আম্মুর প্রিয় গান, কোন গান বারবার শুনলেই সে বলে ওটা আমার প্রিয় গান। কিছুদিন আগে বাপের বাড়ী গেলাম, ওখান থেকে পান্থপথ কাছেই। হঠাৎমাথায় চাপলো, এখনো কি মনপুরা চলে? পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে জানা গেল, এখনো চলে। বন্ধুরা সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, অফিস ফেলে কারো অন্য কিছু ভাববার সময় নেই। কাউকে সাথে নেয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। মাথায় ভুত চেপেছে, আমাকে ছবি দেখতে হবে, কেউ নেই তো একাই যাব। তবে কাউকে আগে বলা যাবে না, তাহলেই বলবে, দাঁড়া ছুটির দিনে সবাই মিলে যাই, একে বলি তাকে বলি। সবগুলোকে জুটাতে যেয়ে আমারটাই হবে না। বাসায় প্রিয় ভাবীকেও বলিনি, তার আবার মেয়েকে স্কুল থেকে আনা নেয়া, রান্নাবান্না আছে। আমার সাথে যেতে গেলে এগুলোর অন্য ব্যবস্থা করতে হবে......ফলাফল কারোরই যাওয়া হবে না।

মাথাপাগল মানুষ আমি, যা ভাবি তাই করি। মনে মনে প্লান করা আছে, সে মত সকালে জাফনাকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে বেড়িয়ে গেলাম........টিকেট কেটে প্রায় ফাঁকা হলরুমে যেয়ে ঠিক মাঝ বরাবর বসলাম। আহ মিশন সফল। আশেপাশে সবাই গ্রুপ ধরে এসেছে, মজার কিছু হলে হাসছে, পাশের জনের সাথে কথা বলছে। আমার সে বালাই নেই, আমি একা একা গভীর মনযোগের সাথে ছবি দেখলাম...........একেবারে মিশে গেলাম বলা যায়। কোন কিছুর সমালোচনা করতে হলে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়, আমার নেই কাজেই আমি শুধূ ছবিই দেখলাম।

নায়ক নায়িকার প্রেম দেখলাম, নদীর চরের বিস্তীর্ণ ক্ষেতে বাতাসের দোলা দেখলাম, সবুজে ভরা বাংলা দেখলাম। যা দেখি, তাতেই মন ভরে যায়। একটা দৃশ্যে নায়ক নায়িকার ছবি আলাদা ভাবে নেয়া, মাথার উপর শরতের সাদা-নীল আকাশ.......অদ্ভুদ সুন্দর!

প্রথম দেখাতেই নায়ক নায়িকা প্রেমে পড়ে দুজনেই যেভাবে নির্ঘুম রাত পার করছে..........আমার মনে হল.... হাযরে এমন একখান উথাল পাথাল প্রেমও হইল না; যার জন্য একটা নির্ঘুম রাত পার করা যাবে। যার জন্য মনে হবে, জীবন পূর্ণ, এখন আমার মরলেও ক্ষতি নেই.......আফসুস, আফসুস।

ছবির নায়ক দ্বীপে নির্বাসিত, তার কোন নৌকা নেই, প্রেমিকাকে দেখবার জন্য সে যখন রাতের আঁধারে নদী সাঁতরে পার হয়, নায়িকা তখন ওপারে মশাল জ্বালিয়ে রাখে তীরের নিশানা বোঝার জন্য..........সেটিকে আমার লিয়েন্ডার এর প্রেমিকা হিরোর জন্য দার্দানালেস প্রণালী পাড়ি দেবার কথা স্মরন করিয়ে দেয়। তাই এই প্রেম আরো বিমুর্ত হয়ে ওঠে।

নায়িকা যখন নায়কের মিথ্যে মৃত্যুর খবরে বিষকেই আপন করে নেয়........সেটি আমাকে রোমিও জুলিয়েটের কথা মনে করিয়ে দেয়.............তখন মনে হয়, এটাও সম্ভব, অনেক অনেক তীব্রভালবাসা হলেই সম্ভব।

ছবি দেখে বের হয়ে যখন ফোন দিয়ে বলা শুরু করলাম আমি একা একা মনপুরা দেখে বের হলাম.....ঝাড়ি খাওয়া শুরু হল। একজন বলল কেমন লাগলো? আমি বললাম, সেই কিশোর বয়সটা ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে, তারপর তুমুল একটা প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে.........যার জন্য নির্ঘুম রাত জেগে জেগে কাটানো যায়। আমার দোস্ত টাশকি খাইছে কোন সন্দেহ নাই। মনে মনে ভেবেছে পাগলের আবার কোন পাগলামী চাপলো! সমস্ত দিন আমি ডুবে থাকি এক রূপকথার জগতে........যেখানে রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গাতে রাজপুত্র এসে কপালে চুমু খাবে আর স্লিপিং বিউটি জেগে উঠবে........তারপর তারা সুখে থাকবে নিরন্তর......(কন্যাকে রূপকথা পড়ে শোনাতে শোনাতে আমারও মাথাটা গেছে)।

এখন থেকে ভাবছি, ছবি দেখতে গেলে একাই যাব, একাগ্র চিত্তে সিনেমা উপভোগ। নিজের মিশনে নিজেই অভিভূত!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৩৪
৬৯টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×