somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ : সেই সময়

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




‘সেই সময়’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস।আমার পড়া অন্যতম সেরা একটা উপন্যাস এটি।উপন্যাসটি রচিত হয়েছে ১৮৪০ থেকে ১৮৮০ এর সময়কালের তৎকালীন বাংলার পটভূমিতে।

আমার কাছে গল্পের কোনো চরিত্রকেই প্রধান বলে মনে হয়নি। লেখকের মতে, ‘এই কাহিনীর মূল নায়ক হল সময়।’আসলেও তাই।উনবিংশ
শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া নানা ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে চলেছে।আর সেই সময়প্রবাহকে লেখক তুলে ধরেছেন নবীনকুমার নামক চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

নবীনকুমার হল কলকাতার বিখ্যাত জমিদার বংশ সিংহী পরিবারের উত্তরাধিকারী। তার জন্মসংবাদ দিয়েই কাহিনির সূচনা।ধীরে ধীরে আমরা পরিচিত হই তার বাবা রামকমল মা বিম্ববতী, পালক ভাই গঙ্গানারায়ণ,বাবার বন্ধু বিধুশেখর ও আরো নানা চরিত্রের সাথে।নবীনকুমারের শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত প্রায় পুরো জীবনের বর্ণনা লেখক উপন্যাসটিতে করেছেন, আর সেই বর্ণনাই তুলে ধরেছে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সমাজের পরিস্থিতি ও বিবর্তনকে। লেখকের নবীবকুমার সম্পর্কে বক্তব্য, ‘ সময়কে রক্ত মাংসে জীবিত করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক।

তো কেমন ছিল সেই সময়? বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষ তখন ব্রিটিশদের পদতলে। দেশীয় জমিদার ও শাসকেরা তখন নামমাত্র ক্ষমতায়,
আসল ক্ষমতা কুক্ষিগত ইস্ট ইন্ডিয়া শাসকদের হাতে। তাদের তৈরি কলকাতা শহর তখন সারা বঙ্গের রাজধানী এবং সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।সেখানকার বেশির ভাগ জমিদার ও উচ্চবিত্তরাই ভোগবিলাসে মগ্ন, মধ্যবিত্ত নামক শ্রেণী তখনো অনুপস্থিত, নিম্নবিত্তরা ভয়াবহ শোষনের শিকার। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য ভীষণভাবে উপেক্ষিত। শতাব্দী ধরে চলে আসা ফার্সী এবং আরবীর ব্যবহারও পড়তির দিকে, সর্বদিকে ইংরেজ ও ইংরেজী সাহিত্যের জয়জয়কার। সমাজ অশিক্ষা এবং নানা ধরণের প্রথা এবং ধর্মীয় সংস্কারে আকন্ঠ নিমজ্জিত, নারীরা কেবলই ভোগ্যদ্রব্য। একদিকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ, অন্যদিকে হাজারো অন্যায় এবং অনাচারের এক বিশাল সমুদ্রের নিচে ডুবে ছিল গোটা বঙ্গসমাজ।

ধীরে ধীরে এখানে গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত যুবকশ্রেণী। যাদের অনেকেই উদ্যগী হন সমাজকে পরিবর্তনের। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মধূসুদন দত্ত সহ আরো অনেক ইতিহাসখ্যাত চরিত্র উঠে এসেছে উপন্যাসের নানা পর্যায়ে। নবীবকুমার এই শ্রেণীরই একজন সদস্য।

লেখকের সার্থকতা এখানেই যে, তিনি উপন্যাসে ইতিহাসের নিরস বর্ণনাকে প্রাণ দান করতে সক্ষম হয়েছেন । তার গল্প বলার সাবলীল ভঙ্গি, বিশদ বর্ণনা আমাকে যেন সেই সময়টিতে নিয়ে গিয়েছিল। এতটাই মগ্ন হয়েছিলাম যে, টানা একবসাতেই ১২ ঘন্টা পড়ে শেষ করেছিলাম বইটি।

এই উপন্যাসটির জন্যে সুনীল বঙ্কিম এবং একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন

ডাউনলোড লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×