somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~~~কিছু লালন গীতিকবিতা (Lyric)~~~~

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লালনগীতি কার না ভালো লাগে। আমি কিছু লালনগীতির লিরিক সংগ্রহ করে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

শিরোনামঃ তিন পাগলে হলো মেলা

তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে ।।

একটা পাগলামি করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে
ধূলার মাঝে ।।

একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলা ফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি
বুঝবি শেষে ।।

পাগলের নামটি এমন
বলিতে অধীন লালন হয় তরাসে
চৈতে নিতে অদ্বৈ পাগল
নাম ধরে সে ।।

তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে….. !!


শিরোনামঃ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি
দিতাম পাখির পায়ে।

আট কুঠুরী নয়
দরজা আটা মধ্যে মধ্যে
ঝরকা কাঁটা
তার উপরে সদর কোঠা
আয়না মহল তায়ে।

কপালের ফের নইলে কি আর
পাখিটির এমন ব্যবহার
খাঁচা ভেঙ্গে পাখিয়ামার কোন খানে পালায়।

মন তুই রইলি খাঁচার আসে
খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশের
কোন দিন খাঁচা পড়বে খসে
ফকির লালন কেঁদে কয়।

শিরোনামঃ কানার হাট বাজার

বেদ বিধির পর শাস্ত্র কানা
আর এক কানা মন আমার।
এসব দেখি কানার হাট বাজার।

পণ্ডিত কানা অহংকারে
মাতবর কানা চোগলখোরে
সাধু কানা অন বিচারে
আন্দাজে এক খুঁটি গেড়ে
চেনে না সীমানা কার।

এক কানা কয় আর এক কানারে
চল এবার ভবপারে
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারে বার।

কানায় কানায় উলামিলা
বোবাতে খায় রসগোল্লা
লালন তেমনি মদনা কানা
ঘুমের ঘোরে দেয় বাহার।


শিরোনামঃ ধন্য ধন্য বলি তারে

ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমন ঘর শূন্যের উপর পোস্তা করে

সবে মাত্র একটি খুঁটি
খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি
কিসে ঘর রবে খাঁটি
ঝড়ি তুফান এলে পরে

মূলাধার কুঠুরি নয়টা
তার উপরে চিলেকোঠা
তাহে এক পাগলা বেটা
বসে একা একেশ্বরে

উপর নিচে সারি সারি
সাড়ে নয় দরজা তারি
লালন কয় যেতে পারি
কোন দরজা খুলে ঘরে

ধন্য ধন্য বলি তারে……

শিরোনামঃ এক ফুলে চার রঙ ধরেছে

এক ফুলে চার রঙ ধরেছে
সে ফুলে ভাব নগরে কি শোভা করেছে।।
কারণবারির মধ্যে সে ফুল
ভেসে বেড়ায় একুল ওকূল।
শ্বেতবরণ এক ভ্রমর ব্যাকুল
সে ফুলের মধুর আশে ঘুরতেছে।।
মূল ছাড়া সে ফুলের লতা
ডাল ছাড়া তার আছে পাতা।
এ বড় অকৈতব কথা
ফুলের ভাব কই কার কাছে।।
ডুবে দেখ মন দেল-দরিয়ায়
যে ফুলে নবীর জন্ম হয়
সে ফুল তো সামান্য ফুল নয়,
লালন কয় যার মূল নাই দেশে।।


শিরোনামঃ মিলন হবে কত দিনে

মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে।।
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছি কালো শশী
হব বলে চরণ দাসী,
ও তা হয় না কপাল গুণে।।
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ,
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।।
যখন ও-রূপ স্মরণ হয়,
থাকে না লোকলজ্জার ভয়
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে।।

শিরোনামঃ সহজ মানুষ

সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে
পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে

ভজ মানুষের চরণ দুটি
নিত্য বস্তু হবে খাঁটি
মরিলে সব হবে মাটি
ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে

শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এই ভুবনে

আচ্ছালাতুল মেরাজুল মোমেনীনা
জানতে হয় নামাজের বেনা
বিশ্বাসীদের দেখাশুনা
লালন কয় এই ভুবনে

শিরোনামঃ জাত গেল জাত গেল বলে

জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না….

আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে
কি জাত হবে যাবার কালে
সে কথা ভেবে বলো না…

ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
একি জলেই সব হয় গো সুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না…

গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
সে ঘোরও তো গেল না…

জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা…….

শিরোনামঃ রবে না এ ধন

মন আমার গেল জানা ।
কারো রবে না এ ধন জীবন যৌবন
… তবেরে কেন এত বাসনা;
একবার সবুরের দেশে বয় দেখি দম কষে
উঠিস নারে ভেসে পেয়ে যন্ত্রণা । ।

যে করল কালার চরণের আশা
জানোনারে মন তার কী দুর্দশা
ভক্তবলী রাজা ছিল, সর্বস্ব ধন নিল
বামুনরুপে প্রভু করে ছলনা। ।

প্রহ্লাদ চরিত্র দেখ চিত্রধামে
কত কষ্ট হল সেই কৃষ্ণনামে
তারে অগ্নিতে জ্বালালো জলে ডুবাইল
তবু না ছাড়িল শ্রীরূপসাধনা । ।

কর্ণরাজা ভবে বড় দাতা ছিল
অতিথিরূপে তার সবংশ নাশিল
তবু কর্ণ অনুরাগী, না হইল দুখী
অতিথির মন করল সান্ত্বনা । ।

রামের ভক্ত লক্ষণ ছিল সর্বকালে
শক্তিশেল হানিল তার বক্ষস্হলে
তবু রামচন্দ্রের প্রতি, লক্ষণ না ভুলিল ভক্তি
লালন বলে কর এ বিবেচনা । ।

শিরোনামঃ আরশীনগর

বাড়ির কাছে আরশীনগর
সেথায় এক পড়শী বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে ।।

… গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে,
বাঞ্ছা করি দেখব তারে
কেমনে সে গাঁয় যাই রে ।।

কি বলব সে পড়শীর কথা,
হস্তপদ স্কন্ধ-মাথা নাইরে
ক্ষণেক ভাসে শূন্যের উপর
ক্ষণেক ভাসে নীড়ে ।।

পড়শী যদি আমায় ছুঁতো,
যম যাতনা সকল যেতো দূরে
সে আর লালন একখানে রয়
লক্ষ যোজন ফাঁক রে
মাঝে লক্ষ যোজন ফাঁক রে ।
আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে।



সুত্রঃ সংগ্রহ


৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×