somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলে গড়া প্রেম ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জল পাড়ি দিতে দিতে পৌঁছালাম সীমানার বাইরে । বিস্তৃত আকাশের ছায়া সেখানেও আছে- নীল আছে, সাদাকালো মুখোশধারী জলও আছে, ভেসে বেড়ায় আলোকভেদ্য নীলের বুকে। জল বলে আকাশটা বেঁচে আছে আমাকে চুষে, আকাশ বলে তাদের ঋণ আমি পরিশোধ করে দেই ! থাক তাদের এই অভিমান। এক যন্ত্রণায় সমুদ্র আমাকে আপ্যায়ন পাঠিয়েছিল বৃষ্টিকে দিয়ে, সেই রাত্রিতে অবিরত বৃষ্টিকে আমি দেহে গ্রহণ করছিলাম। অঝরধারার প্রতিটি ফোঁটায় অনুভব করেছিলাম সমুদ্রের বিনম্র ভালোবাসা, লোমকূপগুলো খুব সজাগ থেকে জানান দিচ্ছিলো আমায়। সেই থেকে প্রেম হয়ে গিয়েছিলো সমুদ্রের সাথে আমার, সে প্রেম ছিলো শুধু অনুভবে, গভীর, বসবাস হৃদয়ের গহীনে। দিনরাত ভেবেছি, আবেগে কেঁদেছি, আমার সেই প্রিয়তম সমুদ্রকে চাই ! তাকে দিয়ে আমি আবেগকে ভালোবাসবো, সুখের জনম কিনবো, ব্যাথাহীন যন্ত্রণা ধারণ করবো...

দীর্ঘ আকাশ পাড়ি দিয়ে এসেছি এই সীমানার বাইরে, প্রিয়তম সমুদ্রের আঙিনার খুব নিকটে । চারপাশে জল দিয়ে ঘেরা, সাজানো বাস্তব জলরঙ্গের সকল চিত্রকর্মে । গহীনে বুকে হঠাৎ এসে পড়লো একটি সপ্তক ঝরনা, সে অবিরত নেমে যাচ্ছে গভীরে, চারপাশের জলগুলোকে নিচ্ছে খেয়ে আপন মনে। আমি আমার প্রেমের ভেলা সঙ্গে করে নিমজ্জিত হলাম তার বহমান নিমগ্ন বুকে অথবা সে আমায় টেনে নিয়েছিলো আমি না করতে পারি নি । পাড়ি দিচ্ছিলাম সুগঠিত যত্নের একটি অধ্যায়, জল তরঙ্গের প্রতিটি শীতল ফোঁটায় সিক্ত হচ্ছে হৃদয়ের প্রতিটি প্রেমাসক্ত কোণ । মনে পড়ছে ফেলে আসা অতীতদের কথা, তারা আমায় এতো গভীরে ধারণ করে নি, এভাবে অনুভব করে নি, হৃদয়ে এমন করে পৌঁছাতে পারে নি, দিতে পারে নি আমায় শর্তহীন বিশুদ্ধ স্বাধীনতা।

জলের শত শত বিরামহীন রুপালি পর্দা গায়ে মেখে নিমগ্নে সফল এক যাত্রা করছি। অতঃপর পশ্চাতে ঝরনা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলে জলের লালগালিচায় আমি হলাম অর্পিত । এ জগতের ইতিহাস আমার জানা নেই, জলের গহীনে জলই যেন হেরে গেল ! জল দিয়ে গড়া অনন্য এক অনুভব, আছে জল দিয়ে বানানো পর্বত, আকাশ, অরণ্য, বিস্তর জমিন, ঘর, পাখি, ফুল... প্রতি পরতে পরতে জলের অঙ্কিত ছোঁয়া, যেন স্পর্শেই যাবে গলে । আমি বিস্মিত হয়ে শুধু এগিয়ে যাচ্ছি, জানি না কোথায় যাচ্ছি ! অজানা কোন ঠিকানায় ? মন চাইছে তবে থাক না ঠিকানা অজানা ! জলের আকাশে একঝাঁক পাখি মিষ্টি সুরে ডাকছে, চারপাশ জুড়ে ফুলের বাহারি বাগান তরতাজা সুগন্ধি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অতি সূক্ষ্ম মনকাড়া কারুকার্যের ছোট্ট ছোট্ট ঘরগুলোতে জলেরা বাস করে তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে । আমাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে সুশ্রী স্নিগ্ধ হাসিতে । আমি কীভাবে তা গ্রহণ করবো ? জানা নেই, শুধু নিক্ষেপ করছি অপার বিস্মিত দৃষ্টি!

হঠাৎ থমকে দাঁড়ালাম । চোখের কার্ণিশে পড়লো সুবিশাল এবং সুপ্রতিভ এক প্রাসাদ, স্বচ্ছ জলের পর্দা ভেদ করে দৃষ্টির অপারগ সৌন্দর্য নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ! প্রাসাদকে ঘিরে নেই কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী, নেই কোন প্রহরী ! চারপাশ জুড়ে পাখিরা, ফুলেরা, জলেরা প্রিয়তম সমুদ্রের গান গাইছে । হঠাৎ আমার মনে পড়লো, হায় আমি তো প্রিয়তমের বাড়ি চলে এসেছি ! কী নিয়ে এসেছি, কী নিয়ে এসেছি প্রিয়তমকে দেয়ার জন্য ? শরীরের জামায় খুঁজতে লাগলাম, বের করে আনলাম গোলাপ আকৃতির একমাত্র হৃদয় । আমি এগিয়ে যাচ্ছি এক'পা দু'পা করে, প্রিয়তম সমুদ্র কী জানে ফিরিয়ে না দেয়ার এক আকাশসম ইচ্ছে নিয়ে এসেছি আমি তার সান্নিধ্যে ?

অনুভবে অনুভবে.. ঝঙ্কার তুলে যাচ্ছে ভালোবাসার আগ্রাসী ঢেউ, যেন প্রিয়তম সমুদ্র হয়ে গেছে আমার ! আমি ভেসে ভেসে যাচ্ছি প্রাসাদের দিকে, প্রাসাদের দরজা খুলে গেল । মনের অজান্তে নিরলস চক্ষুদ্বয়ের পাতা গেল পড়ে , হয়তো সহ্য করতে পারবো না প্রিয়তমের সৌন্দর্যের প্রেম ! হৃদয়ের নয়ন মেলে আমি গোলাপ আকৃতির হৃদয়টাকে এগিয়ে দিয়ে বলছি- প্রিয় সমুদ্র, তুমি কী আমায় প্রেম দিবে ?

উত্তরের ইতিহাস আমি আর জানতে পারি নি, শুধু অনুভব করছি, একটি জলের হৃদয় জড়িয়ে আছে নিঃশ্বাসে....


একটি 'কল্পনাপ্রধান পাঠ' রচনা ।

ছবি কৃতজ্ঞতা- সংগৃহীত থেকে ।

বাংলা নববর্ষের শীতল শুভেচ্ছা !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×