somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ব্লগীয় ভাব সম্প্রসারণ !

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই ব্লগ নিয়ে আমার কিছু ভাবনা আছে । ভাবনাগুলো হয়তোবা এলোমেলো, হয়তোবা আবেগীয় । এই ব্যাপারগুলোতে আমি নিশ্চিত নই । মাঝে মাঝে মনে হয় লিখি, মাঝে মাঝে মনে হয় দূরে থাকি। হয়তো ভালবাসি বলেই বিচ্ছেদের একটা ঘ্রাণ থাকে ! নিতান্তই মানস মনের হালচাল, মনের এই কারিগরিত্ব কেউ কী আয়ত্ব করতে পেরেছে ? কেউ কেউ হয়তো আয়ত্বের কাছাকাছি গিয়েছে ! আমার ক্ষেত্রে নিতান্তই শূন্যের কোটা ! সে যাই হোক মন যেখানে আছে সেখানেই থাক। বলতে চেয়েছিলাম কিছু ভাবনা । ব্যাক্তি বিশেষে ব্লগের ব্যবহার একেক রকমের হয়ে থাকে। কেউ ব্যবহার করে লেখক প্রতিভা দেখানোর জন্য, কেউ ব্যবহার করে কোন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, কেউ ব্যবহার করে হাতিয়ার হিসেবে, কেউবা পড়তে, কেউবা শুধু লিখতে, কেউবা চুরিচামারি করতে, কেউবা লেখালেখি বাদ দিয়ে বাদবাকি আজাইরা কাজ করতে.... আর কেউ ব্যবহার করে ভালবেসে- লেখালেখির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে।

এই ব্লগে বেশ কিছু লেখক আছেন যারা শেষের কারণটাতে পড়েন, তারা শুধু লেখে না, পড়ে, বিশ্লেষণ করে,পর্যবেক্ষণ করে, নতুনদের অনুপ্রাণিত করে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অলেখকগুলোকে লেখকে পরিণত করতে চেষ্টা করে, গঠনমূলক উপদেশ দিয়ে থাকেন। বলা যায় উনারা লেখালেখির কনসাল্টেন্ট। এদের সবুজ বাতি কখনো অফ হয় না । এরা যেন নিজের সাথে নিজে চুক্তি করে নিয়েছে 'জীবনভর লেখালেখির সাথে কাটিয়ে দেবো !'

কিছু লেখক আছেন যাদের ব্লগে লেখালেখির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট স্বার্থ থাকে । যেমন, দু'চারলাইন লিখে নিজেকে অন্যের কাছে লেখক বলে দাবি করা, কিংবা ফেইসবুক ইনফোতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া, 'Writer at....'! এদের মধ্যে অন্যের লেখায় মন্তব্যের বালাই থাকে না, দিনরাত শুধু লেখা পয়দা করে । এটাকেও এক প্রকার ভাল প্রতিভার মধ্যে ফেলা যায়, যখন তখন যেখানে সেখানে হাতের আঙ্গুলে লেখা কিলবিল করা যেই সেই কথা নয় !

আরেকশ্রেণীর লেখক আছে, যারা ব্লগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে । এদের কাজ হলো,বাসায় বসে লুঙ্গি ডান্স গান ছেড়ে দিয়ে যে কোন চলমান ইস্যুকে নিয়ে মাথায় তুলে আছাড় দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া । এরা নিজেদেরকে মনে করে চেতনার পিতা, মাতা, নানী, দাদী.... ব্লা ব্লা । এদের মধ্যে ভার্চুয়াল ক্যালামিটিতে দেশপ্রেম প্রকাশ করার নেশা প্রবল । সব অপঘাত ভেঙ্গেচুরে দেশকে উদ্ধার করে ফেলবে । অতঃপর থাকবে লেখার বানানে শত ভুল !

এবার বলবো এক নিরীহ শ্রেণীর লেখকের কথা, এরা থাকবে বেশ চুপচাপ, লেখবে, মন্তব্য করবে, যাবতীয় তর্কভিত্তিক আলোচনা থেকে দূরে থাকবে, কে আসছে যাচ্ছে, কে অনেকদিন ধরে নেই এই নিয়েও তাঁদের কোন মাথাব্যাথা নেই। সবকিছুকে স্বাভাবিক মাপকাঠিতে ফেলেই এরা লেখালেখি করে যায় । উদাহরণস্বরূপ, এরা হচ্ছে সুঁইয়ের মধ্যে সূতা যেমন করে ঢুকানো হয় ঠিক সেই সূতার মত, নীরবে, নীভৃতে একটা প্রভাব বজায় রাখবে ব্লগে, সেলাই করে যাবে ব্লগের আনাচ কানাচ। বেশ ভদ্রশ্রেণীর লেখক হিসেবে এদের নামডাক থাকে। এরাও লেখালেখিকে ভালবেসে, শ্রদ্ধা থেকে লেখালেখি করে।

এবার কিছু আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করা লেখকের কথা বলবো । মূলত এরা সেলিব্রেটি হয়ে থাকতে চায় । এদের লেখালেখির শব্দ থেকে মন্তব্যের শব্দই বেশি হবে। মন্তব্য, প্রতিমন্তব্য, যুক্তি, পালটা যুক্তি, আড্ডা এসব নিয়েই এদের আগ্রহ বেশি। এরাও ভালশ্রেণীর মধ্যে পড়ে । এদের দরূন ব্লগ প্রাণবন্ত থাকে, এদের সেন্স অফ হিউমার প্রবল, নিতান্তই আলগোছে টাইপের হলে আপনি এদের সাথে কখনোই পারবেন না । দেখা গেলো আপনি কিছু সময় ব্যয় করে কারেন্ট আলোচ্য ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করলেন, পরক্ষণে দেখলেন আপনার মন্তব্য পৃথিবী থেকে সরে গিয়ে পড়েছে মঙ্গল গ্রহে ! এই অল্প সময়ের মধ্যেই এরা পৃথিবীর আলোচনা শেষ করে মঙ্গলগ্রহে পাড়ি দিয়েছে ! আপনি এখন ওদের মন্তব্যই পড়ূন, আপনার আর মন্তব্য করার কাজ নেই !

এবার আসি কবিশ্রেণীর লেখকদের নিয়ে । বেশিরভাগ আগ্রহী লেখকদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যাবে ব্লগে পদার্পণের সবচেয়ে উপযুগী হাতিয়ার কবিতাই ছিলো। এই আধুনিক যুগে এর চেয়ে সহজ আর কী হতে পারে ! গল্পের দু'চারটা লাইনকে তিন চার টুকরা করলেই তো একটা বড় ধরণের কবিতা হয়ে যায় ! এদেরকে কেউ কেউ ব্লগের ত্রাসও মনে করে থাকে । ধরুন, আপনি বেশ পরিশ্রম করে একটা সৃজনশীল লেখা দিলেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেটা চলে গেলো দ্বিতীয় পাতায় ! ঘাবড়ে যাবেন না, ধরে নেবের আপনি কবিতার গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন । এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার । আপনার হয়তো ইচ্ছে করবে এইসব কবির ব্লগ পাতায় ঢুকে ওদের ঘাড়টা ধরে কিছুক্ষণ বুড়িগঙ্গার পানিতে চুবাতে ' 'তোর মাথায় এতো কবিতা আসে কত থেকে !'

সবশেষে, ভয়ংকর শ্রেণীর লেখকদের কথা বলবো, এদের বৈশিষ্ট হলো এরা হঠাৎ হঠাৎ পোস্ট দিয়ে নিজের সাহিত্যরসের বহিঃপ্রকাশ করবে । আবার হঠাৎ হঠাৎ আপনার পোস্টে কনটেন্টহীন মন্তব্য করবে, আপনার ধৈয্যের পরীক্ষা নেবে। এরা নানাবিধ ক্যাচালে সহজে মিশে যাওয়ার আধ্যাত্বিক ক্ষমতা বহন করে, কিছু সময়ের মধ্যে দলীয়করণ করে ফেলবে, বিনা তাপেই ব্লগ গরম হয়ে যাবে । আবার হঠাৎ হারিয়ে যাবে, ভদ্র সমাজ ইস্যু ভুলতে শুরু করবে । আবার এরা হঠাৎ উদয় হবে, ভিন্ন ক্যারেক্টারে, ভিন্ন নামে- এরা বহুরূপী ।

ব্লগারের আরও রকম সকম আছে, এতো তরকারি আমি আবার রাঁধতে পারি না । আপাতত এটুকুই । পরিশেষে বলবো, সব ধরণের লেখক, ব্লগার থাকা খারাপ কিছু নয় । এতে ব্লগ পূর্ণতা পায়, যৌবন জৌলস থাকে । শুধু এইটুকুই চাওয়া, ব্লগকে ঢাল তলোয়ার বানিয়ে আমরা নানাবিধ অসুস্থ চর্চা থেকে দূরে থাকি, যেগুলো ব্যাক্তিগত জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। লেখক-পাঠক মানে সেখানে থাকবে সৌন্দর্য্যের চর্চা । সবার প্রতি শুভ কামনা রইলো। যেখানে যেভাবে থাকুন, ভাল থাকুন ।



ছবি বন্ধু- গুগল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৯
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×