
প্রথমত, আমি আমার বিষণ্ণতার সময়গুলো কাটাচ্ছি একাকি । শুধু রাত্রি জানে তার নিরপরাধ বুকে কতশত ক্ষত ! কেউ একজন কিংবা ওরা ছিলো হৃদয়ের কার্ণিশে ঝুলে থাকা সুখ নিদ্রাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দুঃখের নেশায় ভাগ করে দিতে । কিন্তু আমি কাউকে বলি নি । এবং নিবিড় পরিচর্যায় রেখে যাবো অনন্তকাল তাদের পদচিহ্নের অদেখা নীরব নিশাচর রাত্রিগুলো । ওরা কখনো জানবে না কেউ একজন ওদের সুহৃদ হয়ে ওরা ছাড়াও ওদের অস্তিত্ব আরো একজন টিকিয়ে রেখেছে !
দ্বিতীয়ত, আমি যখন রাত্রি থেকে জন্ম নেয়া আলোকবর্তিকা । আমি রাত্রিকে খুব জানি, খুব চিনি । সে আমার সাথে একাকি একাকি হাঁটে, শূন্যতায়। একদিন তাকে অদ্ভুত হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই দিনের সাথে তুমি হাঁটো কীভাবে ! সে বলে, বিশেষভাবে যদি বলি, রাত্রিনামক কেউ নেই, এই যে আমাকে দেখছো, মূলত আমি হচ্ছি নিভে যাওয়া আলো। এভাবে তার সাথে আমার সখ্যতা বেড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তার চোখে আমি আলো দেখতে পাই । এবং নিজেকে রাত্রি মনে করে তার সাথে দূরত্ব কমাই !
তৃতীয়ত, একটা ঘ্রাণকে আমি খুব তীব্রভাবে অনুভব করি । দুঃখ-সুখের মাঝামাঝি অবস্থান করা একটি সূক্ষ্ম রেখা নাসিক্যে এসে বিঁধে। হৃদয়ের কোণে কোণে পৌঁছে যায় জিজ্ঞাসু দৃষ্টি- তুমি কার পক্ষে ? আমি বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। যদি বলি দুঃখ তবে সুখ অনুভব করবো কীভাবে ! আর যদি বলি সুখ তবে তার অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করবো কীভাবে ! এই যেমন কেউ একজন কিংবা ওরা শেষ সান্নিধ্যে আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, তুমি কী আমি কিংবা আমাদেরকে হৃদ সংস্পর্শে রেখে সুখী? আমি তখন এই সুখের ব্যাখ্যা দিতে পারি নাই । কারণ তাদের জড়িয়ে আমার কোন দুঃখ ছিলো না । দুঃখের সমাদর পাই নি বলে আমি ছিলাম নিরুত্তর, নির্লিপ্ত । কিন্তু ও কিংবা ওরা ভুল সিদ্ধান্তে আমার থেকে ক্রমশ ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে গেলো । সে থেকে রাত্রির সাথে আমার দেখা । আগুন্তুক থেকে সে এখন আমার সুহৃদ । কেউ কেউ বলে রাত্রি হচ্ছে দুঃখের উপযুক্ত সমার্থক । কিন্তু আমার সাথে তার সখ্যতা সুখ আলোচনায় । সে সুখকে খুব আপনভাবে তাই দুঃখী একাকীত্বগুলোকে জায়গা করে দেয় তাদের চোখের রূপাগুলোকে নক্ষত্রে রূপ দিতে !
চতুর্থত, আমি আমাকে তার কাছে পূর্ণাঙ্গভাবে কখনো ব্যাখ্যা করি নি । তাই মাঝে মাঝে রাত্রি দুঃখ করে বলে, মনে হয় আমি তোমার সুখ সুহৃদ হতে পারি নি । আমি অজস্র নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ভাবি, প্রিয় রাত্রি, হয়তো একদিন আমি আমারও একটা বর্ণনাত্বক ইতিহাস শোনাব তোমাকে... হয়তো একদিন.... সেদিন সবাই জেনে যাবে দুই বেলা দু'মুঠো খেয়ে পরে কুঁড়েঘরে বসত করা কোন এক আগুন্তুকের কথা... হয়তো সেদিন সব অচেনা হয়ে যাবে কোন এক কারণে কিংবা অকারণে... হয়তো সে রাত্রিতে আমি নিরুদ্দেশ হবো সামদ্রিক কোন নিলাভ বিহঙ্গের হৃদয়ে ঢুকে... হয়তো তোমাকে ভেঙ্গেচুরে আঁকবো এক অনন্য নিশাচর রাত্রি...।তখন ললুপ্ত চোখে ঘ্রাণমাখা মেঘের আঁড়াল থেকে কেউ উঁকি দেয় ! সে হয়তো জানতে চাইবে, মেঘ হবে ? আমি বলবো, তোমার সীমানা শেষ হলে আমি বলবো... মূলত তুমি হয়ে নয়, তোমার বুকে বিচরণ করে আমি উড়তে চাই চিরন্তর বিভ্রান্ত সুখে..... রাত্রি হয়তো জানবে না তার প্রেমে আমি কত সুদীর্ঘ গভীরতা খুঁজে পাই । তবুও আমি দিন হয়ে তাকে নিয়ে পাড়ি দেবো, দূর থেকে সুদূর... সীমানাহীন কোন অচেনা পথ ধরে....
পঞ্চমত, মিশে যাওয়া আমার অস্তিত্ব অনুভবে রাত্রি । আমি তাকে কিংবা তাদেরকে এক চক্ররেখায় রেখে দেবো, ও কিংবা ওরা আর হারাবে না কোন ভুল সিদ্ধান্তে ! অতঃপর...
ছবি বন্ধুঃ গুগল ইমেইজ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



