
রাত্রিত্ব মুছে গেলে দিন আসে না, শূন্যতা আসে । শূন্যতাকে দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়, ঠিক আত্মার মত । আত্মাও একটা বিশাল শূন্যতা । এটা দেহের বাইরে এবং ভেতর নিরুদ্দেশভাবে ছটফট করে।আচ্ছা আত্মা কী আয়ানায় তাকায় ? তবে তো সেও নিজেকে দেখতে পেত ! সময়ের সাথে তার বিবর্তন পরিলক্ষিত হতো, রাত দিনের উলোটপালট অনুভূত হতো তার হৃদয়ে ! আচ্ছা আত্মারও কী হৃদয় আছে, নাকি সে স্বয়ং হৃদয় । হতেও পারে, পাপে তার দেহের পঁচন ধরে । সে তো দেহ ধরে রাখতে পারে না, তার চোক্ষের সান্নিধ্যে পোকামাকড় খেয়ে নিঃশেষ করে দেয় তার ঐশ্বর্যের শরীর। সে কী ভাবলেশহীন থাকে, নাকি ঠুকরে কেঁদে ওঠে...। আপাতত থাক চির অমর আত্মার কথা। কথা হচ্ছিলো রাত্রি নিয়ে, রাত্রির রঙ নিয়ে, রঙ্গ নিয়ে ।
নিরাসক্ত রাত্রি, তাকে অনেকে বলে বিস্বাদ, অনেকে বলে পরম বন্ধু । আমার কাছে সে বন্ধু, অতি নিকটের। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমি তারই রূপ। পরম আবেশে সে আমাকে আলো দিয়ে জ্বালিয়ে রাখে । আমার ভালো লাগে । সে বলে আমাকে, জন্মের আগে তুমি আমার কাছে ছিলে, অতঃপরও তুমি আমার । আমার এক অদ্ভুত রঙ আছে সবকিছু পালটে দেয়ার। পৃথিবীর গর্ভে আমার অজস্র নিশানা রয়েছে । তুমি চাইলে দেখতে পারো । তার কথাগুলো আমাকে টানে । আমি নির্দ্ধিধায় পরম সুখে তার বুকে ঢুকে পড়ি । আমার খুব ইচ্ছে হয় তাকে আমার সেই অতঃপরের গল্প শুনাতে। কিন্তু কোন এক অজানা সূতা টেনে ধরে রাখে আমার ইচ্ছেকে। সেখানে ঘাত, অপঘাত, প্রতিঘাত অনেক । আমার কাছে মনে হয় রাত্রি আমার সব জানে, যেমন করে আমি তার অনেক কিছুই জানি। কিন্তু সে কখনো আমার কাছে আমার কোন কিছু উদ্ধৃত করে নি। তার লুকিয়ে রাখার ক্ষমতা অনেক গভীর । আমি শুনেছিলাম বহু আগে স্বন্যাসীর মুখে রূপকথার গল্পের মত করে- রাত্রি তার সিংহভাগই উদ্ধৃত করে না, উদগিরণের ছোঁয়ায় লাগব করে দেয় ! হয়তো সে তাই করছে, দিনকে আগলে রেখে তাকে আলোয় ছড়িয়ে দিচ্ছে....
কোন এক মুহূর্তে হঠাৎ আমি টের পাই, আমার বিগত অস্তিত্বের। বহুকাল সে অস্তিত্ব রঙ্গিন পাথর হয়ে ছিলো । পাথরেরও জীবন আছে সে অস্তিত্ব আমাকে বারংবারই তা প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে । রাত্রির সাথে খুনসুটি ছেড়ে আমি কিঞ্চিত স্থবির হয়ে পড়ি । আমি আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকি দূরে কেউ একজন আলেয়াকে দেহে মেখে দৌড়াচ্ছে ! কিন্তু সে জ্বলছে, এমন কোন যন্ত্রণায় অস্থির নয় । তার মুখে আমি হাসি দেখছি, যেন শীতল কিছু গায়ে মেখে সে দৌঁড়াচ্ছে ! যেন সে চারপাশে শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে ! রাত্রি কী তা দেখছে ? হয়তো দেখছে । আমার হৃদয়ে যন্ত্রণা অনুভূত হয় । যেন আগুন্তুকের দেহের আলেয়া আমাকেও টানছে ! হঠাৎ যন্ত্রণাক্লেষ্ট হয়ে আমি উগরে দেই। কী অদ্ভুত । ব্যামোতে খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ না বের হয়ে বের হয়ে আসলো থোকা থোকা আলেয়ার লাভা ! ছত্রভঙ্গ আলেয়াগুলোয় ভেসে উঠছে আমার বিগত ইতিহাস, অতঃপরের ইতিহাস....
আলেয়ায় মিশে পুড়ে পুড়ে একদিন মধ্য গগণে সূর্য উঠেছিলো । ঠিক যেন ফিনিক্সের শৃঙ্খল হৃদয় ! সে আলোয় আমি কোন এক মেঘার্ত শৃঙ্গের চূড়ায় বক্ষ উজাড় করে দিয়েছিলাম । ফিনিক্সের হৃদয়ে সান্নিধ্যে আমার হৃদয়ের পক্ষ থেকে একটি অলিখিত সন্ধি উথাপিত হয়েছিলো, আমার বক্ষে বসবাস করার চিরন্তনী সন্ধি। এই গহীন আঁধারের বক্ষে সে হারিয়ে যায় । কূলে কূলে আলো জ্বালিয়ে আদিমতর সুখবাণী ছড়িয়ে উড়ে যায় সে ! সবাই দেখে আমার চক্ষে জ্বলন্ত শিখা, আমি হেঁটে যাচ্ছি একগাল শীতল হাসি নিয়ে পথের পর পথ...... ছাই উড়ে উড়ে মিশে যাচ্ছে বাতাসের দেহে.... অথচ নিঃসৃত হয় কোন গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকা মৃগনাভ গুল্মের সর্বগ্রাসী ঘ্রাণ.... উন্মাদ হয়ে ফিরে আত্মাহুতি দেয়া অজস্র আত্মা ! ওরা পেতে চায় আমার এই ফিনিক্স পাখির সুখ... কিন্তু ওরা পারে না আমাকে ছুঁতে, কারণ ওরা মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করে নিজেকে করেছে মৃত মৃত্তিকা.... ওরা পারে নি আমার মত সীমাহীন বিস্বাদের রাজ্যে বিচরণ করতে, ওরা পারে নি রাত্রির আকাশ পোড়া নিঃশ্বাস বক্ষে ধারণ করতে.... ওরা পারে নি হৃদয় পুরে রাখতে রাত্রিতে... ওরা পারে নি আমার মত ভস্ম থেকে জেগে উঠতে....
রাত্রি আমাকে তার বক্ষে তুলে নিয়ে হাঁটছে । তার চোখের অগোচরে আমি দেখছি বক্ষ থেকে বের হওয়া থোকা থোকা আলেয়াগুলোকে । আবারো রঙ্গিন পাথর গলে কিছু দুঃখ পড়ে গেলো । আমি কিঞ্চিত দুঃখ বোধ করছি। রাত্রির উপর রাগ হচ্ছি ! আমি দেখি অপলক দূরের আমিকে। সে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে, আলেয়ার ধূম্রে তার ছাই উড়ছে.....।
রাত্রি কী জানে তার প্রেমে গড়ে উঠা আমার হৃদয়ের গহীন থেকে গহীনের এই আমিকে ।
ছবি বন্ধু- গুগল ইমেজ ।
&& এই লেখাটি 'আহমেদ জী এস' ভাইকে উৎসর্গ করলাম। &&
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



