somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য ঃ স্বপ্নের বীজ বোনার অপেক্ষায়

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শ্রাবণ যাই যাই করছে, আর কিছু দিন পর বর্ষাকাল শেষ হবে। আষাঢ় মাসের মত এ মাসেও সূর্যের সাথে যুদ্ধ করে মেঘ খন্ডগুলো হেরে গেছে। ফলে সমস্ত মেঘ খন্ড হিমালয়ে একত্র হয়ে আবার আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে গ্রাম বাংলার মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির, নদী-নালার পানি রেখা একবারে তলায় ঠেকে গেছে। অসংখ্য ফল গাছের ফুলের রেনু রৌদ্রতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে ক্ষেতের ফসল কেমন যেন, হাহাকার করছে। ভোর হবার পর থেকেই সূর্যের প্রচন্ড তাপ পৃথিবীর বুক জুড়ে দগ্ধ কেয়ামতের সংকেত দিয়ে যাচ্ছে। নিরব নিথর দুপুরবেলা রাখালেরা গাছের ছায়ার গরুগুলিকে বেঁধে গামছাটা শীতল ঘাসের উপর বিছায়ে শুয়ে পড়ে। কৃষক গাছের ছায়ায় বসে লুঙ্গি দিয়ে দেহের ঘাম মুছে, মাথার বিড়া দিয়ে বাতাস করছে। এদের দেখে মনে হয় যেন, আগুন থেকে উঠে এসেছে। হাত-পা মুখ লাল হয়ে আছে রৌদ্রতাপে। গাছে গাছে পাখিরা থেমে থেমে ডেকে চলেছে। মাঠে মাঠে গরু-ছাগল-ভেড়া--প্রাণীগুলি সূর্যেরও তাপদাহে একটানা ডেকে চলেছে। এর মাঝে দু’একটা ছেলে-মেয়েকে গোবর কুড়াতে দেখা যাচ্ছে । কিছুদূরে দক্ষিনে বড় রাস্তা দিয়ে একটা ছোট ট্রাক যেতেই ধুলি-বালি উড়ে অন্ধকার হয়ে গেল। পথের পাশে বড় বড় গাছের ছায়ায় লুঙ্গি গামছা বিছায়ে পথিক বিশ্রাম করছে। চারদিক হঠাৎ নিরব হয়ে গেলে দূর হতে দুই-একটি ঘুঘুর ঘু-ঘু ডাক শোনা যায়। মনে হয়, এরা যেন বৃষ্টির জন্য স্রষ্টার কছে মিনতি করছে। চৌচির মাঠ-ঘাট আর তৃষ্ণার্ত ফসল ক্রমাগত মিনতি করে চলেছে স্রষ্টার কাছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, কখনও বড়দের কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হচ্ছে--আল্লা মেঘ দে--পানি দে--ছায়া দেরে তুই--আল্লা মেঘ দে--। আমন চাষীরা হাতে বীজ নিয়ে চাতক পাখির মত আকাশ পানে চেয়ে আছে।

প্রকৃতি এখন মাস-দিনের নিয়ম মেনে চলে না। তবুও অপেক্ষা করছি যদি মুসলধারে বৃষ্টি নামে । পুরো জৈষ্ঠ মাসের আম-জাম--কাঁঠাল-জামরুল-লিচুপাকা গরমের মধ্যে শিশির অথবা ভেজা ঘামের মত সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল, তাও এক-আধদিন; শ্রাবনে একটু বেশি হলেও, তা প্রকৃতির সমুদ্র সম চাহিদার তুলনায় এক ডোবার মত। অতএব, বনের চাতকের মত মনের চাতকও নির্ঘুম চোখে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বৃষ্টির জন্য। কর্দমাক্ত মাটিতে কিছু স্বপ্নের বীজ বুনব; হয়তো আমন, লাউ, লিচু, জাম অথবা ডাটা শাক--কোনটা সংসারের নিত্যদিনের জন্য, কোনটা ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য অথবা দেশের ভবিষ্যতের জন্য।

সারাদিন-সারারাত নির্ঘুমে অপেক্ষায় থাকি--আসুক ঝড়-বৃষ্টি-তুফান, মেঘের সমারোহে বর্ষা সুচণা করুক স্বরূপে সত্যিকারের শুভাগমন, আসুক ছায়াঘন দিন; শুষ্ক প্রান্তর, নদী-নালা ও খাল-বিলে জাগুক প্রাণোচ্ছ্বাস। প্রকৃতির ধূলি বিষন্ন অঙ্গ থেকে গ্রীমের ধূসর অবসাদ মুছে গিয়ে ফুটে উঠুক, সজল বর্ষার শ্যামল সুন্দর রূপশ্রী। জেগে উঠুক, স্বপ্নের বোনা বীজ থেকে অংকুরিত চারা গাছ। আসুক পুষ্প বিকাশের লগ্ন। কদম, কেয়া, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের উৎসবে শুরু হোক মেঘ, বৃষ্টি আর আলোর মেলা।




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×