somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কবি সবুজ তাপস
❑ কাব্য: সবুজ তাপস (২০১৫)n— বিশ্ব-সাহিত্যের ইতিহাসে কবি ও কাব্যগ্রন্থের নাম একই — এটাই প্রথম ঘটনা।n-n❑ দর্শন: দৃষ্টান্তবাদ [Drishtantoism]n-n❑ সম্পাদনা: ঢেউ

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের গান প্রসঙ্গে

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার (১৯২৪-১৯৮৬, কলকাতা) বাংলাভাষার একজন কবি ও গীতিকার। বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগতকে যাঁরা প্রেমাবেগ-উষ্ণ রেখেছিলেন তিনি তাঁদের একজন। মান্না দে'র গাওয়া তাঁর লেখা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই' ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানে ঠাঁই পেয়েছে। ‘মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে', ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি’, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে',‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’, ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো’, 'এই পথ যদি না শেষ হয়', 'আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে' ইত্যাদি চমৎকার ও জনপ্রিয় গানের গীতিকার এই গৌরীবাবু। মনে আছে, এসব হৃদয়াকর্ষক-অনুভবসুন্দর গান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে শাটল ট্রেনের দেয়ালকে তবলা বানিয়ে সবান্ধবে গেয়েছিলাম। মান্না দে'র কণ্ঠনিঃসৃত, নচিকেতা ঘোষের মিউজিক্যাল আল্পনায় সিক্ত এবং 'মৌচাক' ছায়াছবিতে গীত, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের গান 'এবার ম'লে সুতো হবো' সম্পর্কে ক'টা কথা বলার জন্যই মূলত আমার এ-নিবন্ধ। গানটি তুলে ধরা যাক:
"এবার ম'লে সুতো হবো, তাঁতির ঘরে জন্ম লবো
পাছাপেড়ে শাড়ি হয়ে দুলবো তোমার কোমরে
তোমরা যে যা বল আমারে।
এবার ম'লে মাটি হবো, কুমোর বাড়ি জন্ম লবো
কলসী হয়ে ছলাক ছলাক দুলবো তোমার কোমরে
তোমরা যে যা বলো আমারে।
হবো কাঁখে রূপোর বিছে, নইলে জীবন হবে মিছে
বুঝবে বধূ কি যে জ্বালা, সেই বিছেরই কামড়ে
তোমরা যে যা বল আমারে।
রাগ করোনা প্রাণেশ্বরী, চাও কি আমি প্রাণে মরি,
কাজল হয়ে রাখবো ধরে, দুটি চোখের ভ্রমরে।
তোমরা যে যা বলো আমারে।"
( https://www.youtube.com/watch?v=k3nmky07A-I )
জন্মান্তর-স্বীকৃত গৌরীবাবুর এ-গানে ভালোবাসার আবেগমিশ্রিত আতিশয্যের পাশাপাশি আরাধ্য জনকে কাছে পাওয়ার হৃদয়াকুতি পরিলক্ষিত। কিন্তু এ-গানের পর মনমোহন দত্তের (১৮৭৮-১৯০৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) 'বেনানন্দ' বা 'বাঁশপাতা আর কলমিলতা' শুনলে যে কেউ দু'য়ের মধ্যে এক আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাবেন।
মনমোহন দত্তের গানটি শুনুন:
"বাঁশপাতা আর কলমিলতা গহীন জলে ভাসে রে
হাজার রঙের স্বপ্ন হাসে বেনানন্দের প্রাণেতে
বাঁশপাতা আর কলমিলতা
এবার মরে সোনা হবো, স্বর্ণকারের দোকানে যাবো
মালা হয়ে উঠবো আমি বেনানন্দের গলেতে
বাঁশপাতা আর কলমিলতা গহীন জলে ভাসে রে
এবার মরে সুতো হবো, তাঁতির ঘরে জন্ম নেবো
শাড়ি হয়ে উঠবো আমি বেনানন্দের অঙ্গেতে
বাঁশপাতা আর কলমিলতা গহীন জলে ভাসে রে
এবার মরে মাটি হবো, কুমার ঘরে জন্ম নিবো
কলসি হয়ে উঠব আমি বেনানন্দের কাংখেতে
বাঁশপাতা আর কলমিলতা গহীন জলে ভাসে রে
হাজার রঙের স্বপ্ন হাসে বেনানন্দের প্রাণেতে
বাঁশপাতা আর কলমিলতা।"
( https://www.youtube.com/watch?v=pSqNhy3tkZQ )
মনমোহন দত্ত সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। তিনি মলয়া সঙ্গীতের জনক। মরমী সাধক-কবি, বাউল হিসেবে বিদিত তিনি অনেক অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাঁর লেখা গানগুলো সুর দিয়েছেন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ এর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আফতাব উদ্দিন। চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারের অনুসারীরা তাঁর ভাবসঙ্গীত দ্বারা বেশ প্রভাবিত।
উপরে তুলে-ধরা মনমোহন দত্তের গানটি, আমার কাছে, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারেরটির চেয়ে বেশি সুন্দর এবং শ্রুতিমধুর লাগছে। দত্তের গানটি মজুমদারের জন্মের আগের, বেশ পুরনো। ২০১৫ সালে বাপ্পা মজুমদার তার গানটিকে-প্রাধান্য-দেয়া 'বেনানন্দ' অ্যালবামটি শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে উৎসর্গ করেছেন। আমি বাপ্পার কণ্ঠেই শুনেছি। বিস্ময়ের বিষয়, এ-গানের ভাষা সেকেলে নয়, আধুনিক! বাপ্পা এটি সম্পাদনা করে গেয়েছেন কিনা জানি না।
উপরে উল্লেখ করেছি, মনমোহন দত্তের 'বেনানন্দ'-এর সাথে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের 'এবার ম'লে সুতো হবো'র মিল রয়েছে। এ-মিলের কারণে কোনো কোনো সমালোচক গৌরীবাবুর বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তি অথবা প্রভাবের অভিযোগ আনতে পারেন। তিনি মূলকেন্দ্রে থেকে সঙ্গীত সাধনা করেছেন, মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যমের আনুকূল্য পেয়েছেন। কেবল তিনি নন, কেন্দ্রবাসী বা মিডিয়ার আনুকূল্যপ্রাপ্ত জনপ্রিয় অনেক লেখকই বাউল-সাধক বা প্রচারমাধ্যম-অলালিত 'বুদ্ধিমান' শিল্পীদের সৃষ্টির মোডিফাইড বা নবীকৃত রূপ হাজির করার 'চালাকি'টা করেছেন। 'বুদ্ধিমান'-এর সাথে 'চালাক'-এর পার্থক্য এখানেই। রবীন্দ্রনাথও চালাক ছিলেন।
০৮.০৪.২০১৮
সবুজ তাপস সড়ক
বাংলাদেশ।
~.~
[বি.দ্র.: অনুমতিসাপেক্ষে নিবন্ধটি যেকোনো প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ করতে পারবে]

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×