somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা আছি বলেই ব্লগ আছে, আমরা আছি বলেই বাংলাদেশ আছে

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের ব্লগাররা না থাকলে কি হবে? বাংলা ব্লগ থাকবেনা। বাংলা ব্লগ না থাকলে কি হবে? আমাদের সাত বছর পেছনে যেতে হবে। তাতে লাখো লাখো বিচ্ছিন্ন মানুষ একত্রিত হয়ে বাংলা ব্লগ কমিউনিটি বলে যে জিনিসটা তৈরি হয়েছে, তা থাকবেনা। এই লাখো লাখো মানুষের ভার্চুয়াল এবং বাস্তবের সরব উপস্থিতিতে মত প্রকাশ, গণতন্ত্র চর্চা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক তৎপরতার যে নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে সেটা থাকবেনা।

ব্লগিং কারো পেশা নয়। ব্লগ লিখে টাকা পাওয়া যায়না। ব্লগাররা এদেশের নানান ধর্ম, শ্রেনী ও পেশার মানুষ মাত্র। নিজেদের চিন্তা ভাবনা, আশা আকাঙ্খা, বিপ্লবের বাসনা তারা ব্লগে লিখে প্রকাশ করেন। একজন ব্লগার নাস্তিকও হইতে পারে, মোল্লাও হইতে পারে। একজন ব্লগার দিনশেষে একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, শিক্ষক, বেকার, গৃহিনী অথবা নেহায়েত ভাদাইম্মা। তারপরেও সে যখন ব্লগিং করে, নানান সম্পর্ক ও ঐক্য নির্মান করে এবং একিসাথে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে চায় তখন সে আসলে গ্রামসি যারে অর্গানিক বুদ্ধিজীবী বলেছে সেই অর্গানিক বুদ্ধিজীবীর ভুমিকাটাই পালন করে। গ্রাসরুট বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে সে সিভিল সোসাইটির নিচ থেকে ধাক্কা দেয় উপরের দিকে। তাতে সিভিল সোসাইটি নতুন সম্ভাবনায় কাপে, পলিটিকাল সোসাইটি নরেচরে বসে। একজন ব্লগারকে তাই দিনশেষে নানামুখি ক্ষমতার সাথে লড়াই করতে হবে, যদি সে ব্লগার হিসাবে বেঁচে থাকতে চায়।

একজন ব্লগার যেহেতু লিখে টাকা পান না, তাই লেখার নামে তাকে কারো ফুট ফরমায়েশ খাটতে হয়না। সেই সুবাদে কারো দাদাগিরি মেনে তাকে ব্লগ না লিখলেও চলে। লেখার ক্ষেত্রে তার বাড়তি কিছু স্বাধীনতা আছে। কিন্তু ব্লগ মগের মুল্লুকও না। ব্লগের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা স্বরূপ ব্লগিয় নীতিমালা আছে। আর তারচেয়েও বড় সার্বভৌমত্ব নিয়ে আছে ব্লগার সমাজ। ব্লগে অপরাধ করলে অপরাধীকে ব্লগ সমাজের মুখোমুখি হতে হবে। অথবা মডারেটর নামক মাতবরের বিচার মানতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে সমাজ ও মাতবর মিলে তাকে শাস্তি দেবে। এসব শাস্তির মধ্যে নানান মেয়াদে জেল জুলুম আছে। এই সময়টায় ব্লগারের ব্লগিং করার অধিকার নানান মাত্রায় হরণ করা হয়, মানুষের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। গুরুতর অপরাধে একজন ব্লগারের ভার্চুয়াল মৃত্যুদন্ডও হতে পারে। বাস্তবে তার ভয়াবহতা বোঝা যাবেনা, কিন্তু একজন ব্লগারের কাছে এই মৃত্যু হালকা কিছু নয়। এটা ব্লগার মাত্রই জানেন।

তবে ব্লগে ব্যান হওয়া এখন ব্লগারদের জন্যে খুব বেশি ভয়াবহ বিষয় নয় যেহেতু বাস্তবেও তাকে জবাই হতে হচ্ছে। যেই কারনে একজন ব্লগারকে ব্লগে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় সেই একি কারনে তাকে বাস্তবেও খুন করা যেতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন আমাদের উঠাতে হচ্ছে কারন একজন ব্লগারের কাছে এই মুহুর্তে ভার্চুয়াল এবং বাস্তব মৃত্যুর দুরত্ব কমে এসেছে।

ব্লগে অপরাধ করার খাতিরে কাউকে ব্লগে ভার্চুয়াল মৃত্যুদন্ড দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যখন কাউকে খুন করা হয় অথবা করার চেষ্টা করা হয় অথবা কেউ তার খুনের দাবি তোলে বাস্তবে, তখন তার সাথে সহমত হয়ে যদি তাকে ব্লগেও ভার্চুয়ালি খুন করা হয় তখন আসলে তার হত্যাপ্রচেষ্টা অথবা হত্যাকেই বৈধতা দেয়া হয়। সেই ইতিহাস বাংলা ব্লগে রচিত হইলো। ব্লগারের মৃত্যুদন্ডে সাক্ষর করেছে বাংলা ব্লগ।

কিন্তু ব্লগ কেনো খুনি হয়ে উঠলো? আসিফ মহিউদ্দীন যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাইলে তারে আগে কেন ব্যান করা হইলোনা? কেনো তারে হত্যাচেষ্টা করার পরে, তার ফাঁসির দাবিতে মোল্লারা আন্দোলন করার পরে তার ব্লগটাকে মুছে দেয়া হলো? বাংলাদেশ সরকার এবং সরকারি হুকুমত কায়েম করতে গিয়া সামহোয়ারইন কর্তৃপক্ষ আসিফ মহিউদ্দীনকে হত্যার বৈধতাই দিয়া দিলেন।

তাইলে বিষয়টা কি দাঁড়াইলো? ব্লগে লিখার কারনে আপনে খুন হইতে পারেন, এবং আপনার ব্লগিয় ও রাষ্ট্রিয় কর্তৃপক্ষ সেইক্ষেত্রে কোন দায়ভার না নিয়া বরং আপনাকে ব্লগ এবং তার রাষ্ট্রের মানচিত্র থেকে নির্দিধায় মুছে ফেলতে পারে। এবং আমরাও সকল দায়ভার অস্বিকার করে আসিফরে বলতে পারিযে, ব্যাটা তুই ১৪ জানুয়ারী কেন মইরা গেলিনা।

একজন ব্লগার হিসাবে আপনে কি দায়ভার অস্বিকার করবেন, নাকি দায় নিবেন। এই স্বিদ্ধান্তের উপরে বাংলাদেশের ব্লগারদের ভবিষ্যত নির্ভর করবে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×