somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরতাল-অবরোধ-মহাসমাবেশ ঃ তাদেরও কিছু বলার ছিল

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৮৪ ঘন্টার অভিনব হরতালের মুখে পরেছে দেশ । বিম্পি মহাসচিব ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে "গণ-অভ্যুথ্‌থানের" মধ্য দিয়ে তাদের দাবী আদায় করবে । কাদের নিয়ে করবে কে জানে । চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি । প্রস্তুত সরকারও । চিহ্নিত বিরোধী দলের নেতাদের চলছে গণ-গ্রেফতার । ইতিহাস আমাদের শেখায়। যেই ফখরুদ্দিনের সমালোচনা তারা করে, এখন তার পথই অনুসরণ করছে তারা ।

তাদেরও কিছু বলার ছিল

>>> মিসেস ফাতেমা বেগম তার দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে। কি যে ঝক্কিঝামেলা ছোট বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া! অনেক খুজে পেতে একটা সিএনজি পেল, তাও ভাড়া চায় আকাশ্চুম্বি। অগত্যা তাতেই উঠে পরে। কিন্তু কিছু পথ যেতেই কোথা থেকে কারা এসে গাড়ি থামায়,"গাড়ি যাবে না, আইজ হরতাল জানোস না??" কিছু বলার আগেই একজন হেচকা টানে ড্রাইভারকে বের করে ফেলে। তারপর একটা ইট দিয়ে আঘাত করে সামনের গ্লাসটা চৌচিড় করে ফেলে। ফাতেমা বেগম তার আতংকিত দু বছরের অসুস্থ শিশু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে।

>>> পাড়ার কিছু ছেলে-পিলে খবর দিলে রমিজ মিয়া লুঙ্গি আর সেন্টু গেঞ্জি গায়েই দৌড়ে বেড়িয়ে পরে। গিয়ে দেখে তার কাপড়ের দোকানের সাটার ভাঙ্গা। নিশ্চই রড দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে। সুযোগ-সন্ধানী কেউ কেউ চোখের সামনেই দোকানের মাল নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তার মাথায় হাত। এটা কেন হল? হরতাল দেখেই তো সে দোকান বন্ধ রেখেছিল, নইলে কে চায় ব্যাবসায় লস দিয়ে বাসায় শুয়ে-বসে থাকতে। সে জানে এলাকার "রাজনৈতিক" পোলাপানগুলা কেমন। তাই বলে বন্ধ দোকানের উপর চড়াও হবে তা সে ভাবতেই পারেনি। অগত্যা দুটো ছেলেকে ওখানে বসিয়ে রেখে মাল সরানোর ব্যাবস্থা করে আর সাটার ঠিক করাতে লোক খুজতে যায়। কিন্তু যাবে কোথায়? সবখানেই তো পিকেটারের ভয়, দোকান-পাট বন্ধ??

>>> সকালে বাবা জানালো তার ইন্সুলিন শেষ আনতে যেতে হবে। কিন্তু আজ তো হরতাল, আনতে হলে যেতে হবে বড় মার্কেটে, সেটা বেশ দূর। বাবা গাড়ি নিয়ে যেতে বলল, একটানে যাওয়া-আসা হয়ে যাবে, শুধু একটু দেখে চললেই হল, মেইন রোডে খুব বেশি না গেলেই হল। সজল তাই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। মার্কেটের সামনের পার্কিং-এ গাড়ি রাখে। কিন্তু ফিরে এসে দেখে তার গাড়ি আর গাড়ি নেই, সামনে-পিছে গ্লাস ভেঙ্গে চুরে একাকার!! সে বুঝে পায় না মূহুর্তের ভিতর এটা কি করে হল? কারা করল? পুলিশ কি করল? কিছুই ভেবে পায় না। লোক-মুখে শুধু জানতে পারে দুজন দুস্কৃতিকারী নাকি আটক হয়েছে। তবু শান্তনা পায় না।

>>> কাল হরতাল বলে গাড়ি পেতে দেরী হল খুব। মতিঝিল থেকে মহাখালি চলে আসার পর পিছনের এক চিপায় সামান্য ঠাই হয় জাহিদের। রাত হয়ে গেছে অনেক। ভীড়ের বাসে দুলে দুলে যেতে যেতে জাহিদের চোখে তন্দ্রা নেমে আসে। অজান্তেই ঘুমিয়ে পরে সে। এটাই ছিল তার শেষ ঘুম। উত্তরার কাছে একটা বাস থেকে জাহিদের আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জাহিদের মা শোকে আজ স্তব্ধ, তার সন্তানের মরা মুখটাও দেখে যেতে পারল না।

.......মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতারা, আপ্নারা বলেছেন আপ্নারা গণ-অভ্যুথ্‌থান করবেন, জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করবেন। আপনাদের কথা আপ্নারা বললেন। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন, যাদের নিয়ে কথা বলছেন, তাদেরও কিছু বলার ছিল? ফাতেমা বেগম, রমিজ মিয়া, সজল, সজলের বাবা, জাহিদ, জাহিদের মা, এদেরও কিছু বলার ছিল। আপনি কি তাদের কথা শুনবেন? শুনবেন কি?? জবাব দিন, আমরা জবাব চাই...

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ
দীপা ফোন ধরছে না। শোয়েবের চুল ছিড়তে বাকী। কিন্তু কি-ই বা করতে পারে সে?
দীপা ওর বোন আর বাবার সাথে এসেছে বড় ভাইটাকে দেখতে ভার্সিটির হলে। রাতের ট্রেনে ফিরে যাবে। গত ছয় মাসে এটাই এক সুযোগ শোয়েবের সাথে দেখা করার। ভেবেছে বোন নিপাকে নিয়ে ঘুরতে যাবার অযুহাত দিয়ে চলে আসবে টিএসসি। তারপর খুব করে কথা বলতে পারবে তারা। বিকেলের দিকেই আসার কথা শোয়েবের। এটাই ছিল প্ল্যান। কত কথা জমিয়ে রেখেছে দুজনে!! কত কিছু করবে?
হয়তো বাচ্চা মেয়ের মত বাহানা ধরবে এটা-ওটার জন্য। শোয়েব ভাববে, ছ্বি, বিশ বছরের মেয়ের এরকম ছেলেমী মানায়?
কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। রাস্তায় প্রায় দেড় ঘন্টার জ্যাম!! কেন? শুনলো সরকার দলের মহাসমাবেশ আজ সোহ্‌রাওয়ারদী উদ্যানে। একারণে পথে পথে মিছিল নেতা-কর্মীদের, একটা গাড়িও সামনে এগোবার জো নেই। এদিকে দীপার ফোন আর ফোন। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে হাটা দেয় শোয়েব। কিন্তু যেতে যেতে দীপা নেই। ঝামেলা হবে জেনে ওর বাবা ওকে নিয়ে আগেই চলে গেছে।
এখন মেয়েটা ফোন ধরে না, একটু দেরী হয়েছে বলে এভাবে রাগ করতে হয়? যাহ্‌, আমিও ফোন দিব না!! কিন্তু মনের ভিতর একটা জমাট কষ্ট রয়েই যায়। ইস্‌, ছ'মাস দেখা নেই, আবার কবে দেখা হবে??? কাদতে ইচ্ছে করে ওর। ধূর্‌, এই বয়সে এত লোকের সামনে কান্না করা কি মানায়????

ফ্রান্সের ধর্মঘটের হাল-হকিকত

আমার খালা-খালু ফ্রান্স প্রবাসী। সেই হিসেবে ওখানকার কিছু কিছু খবর শুনে থাকি। খালু অফিসে যায় সাধারণত পাতাল-রেলে করে। ওটাই দ্রুতগামী এবং সাশ্রয়ী।
তো একদিন দেখে রেল চলছে না। জানতে পারল সেদিন পরিবহন ধর্মঘট। রাস্তায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ধর্মঘট হলেও কিন্তু বাস চলছিল, তবে অন্যদিনের চেয়ে কম। যাদের পকেটে যথেষ্ট ইউরো আছে তারা টেক্সি ভাড়া করছে।
এরকম বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত চলেছিল। মজার ব্যাপার হল যেদিন ধর্মঘট শেষ হয়। পাতাল-রেল আবার চালু হয়। তো সেদিন রেলের নিয়মিত যাত্রীদের হাতে ধর্মঘটীরা একটা করে কেক ধরিয়ে দিল। সেই সাথে আবার যাত্রীদের "সাময়িক অসুবিধা"র জন্য আন্তরিক ক্ষমা চায় তারা।


এই হল সেখানকার ধর্মঘট-হরতালের অবস্থা। আমাদের দেশের
হরতালকারী-ধর্মঘটীদের কাছে কি এরকম আচরণ আশা করেন? ইইইইইইইইইইইইহ্‌ মামা বাড়ির আবদার পাইছো?????!!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×