পর্ব - ০৬, আপলোড ২৪/০৯/২০১৩
------------------------------------------------------------------
লতাকে নিয়ে টুকটাক খবর বেরচ্ছে কাগজে। কোন কোন পত্রিকার ফলোআপ রিপোর্ট থাকছে রহস্যে ঘেরা। অহেতুক রঙ চড়িয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে ফলোআপের কারণে এক ধরণের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে পুলিশের ওপর। এটা অবশ্যই ভাল একটা ব্যাপার। সবারই মনে পড়ে যাচ্ছে, খুঁজতে শুরু করছে।
সাংবাদিকরা যে মাঝের মধ্যে লেখার কিছু না পেয়ে ডেস্কমেট নিউজ তৈরি করে থাকেন, তা বরং উপকারেই আসে । মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া হয়। আজ স্থানীয় একটি কাগজে লিখেছে,
পাঁচ মাসেও খোঁজ মেলেনি লতার
নিউজের প্রথম দুই প্যারায় লিখেছে, গৃহবধূ লতার রহস্যজনক নিখোঁজের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন সন্ধান মেলেনি। অনুদঘাটিত রয়ে গেছে তার অন্তর্ধান রহস্য। তাকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় দিন কাটছে স্বামী দু:খবন্ধুর।
নীলফামারির ডিমলা উপজেলার নাউতাড়া গ্রামের কলেজ শিক্ষক দু:খবন্ধুর সুন্দরী স্ত্রী মিনতি লতা নিখোঁজ হন চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল। তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছেন নিখোঁজের স্বামী ডিমলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক দু:খবন্ধু।
দীর্ঘ পাঁচ মাসেও গৃহবধূ লতার খোঁজ না মেলায় বিষয়টি রহস্যজনক বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে পুলিশ। দাম্পত্য কলহর জের ধরে তাকে গুম করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আলাপকালে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, লতা নিখোঁজের পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাকে খুঁজে বের করতে না পারা পর্যন্ত অন্তর্ধানের নেপথ্য কারণ নিয়ে আগাম কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
এদিকে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সোনিয়া জানান, প্রভাষক দু:খবন্ধুর স্ত্রী লতা মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার এক মাস আগে থেকেই তিনি একজন মনোচিকিৎসকের তত্ববধানে ছিলেন।
সকাল থেকে এই একই নিউজ যে কতবার পড়লাম, তা বলতে পারবোনা। তবে প্রতিবারেই নিউজের প্রথম দুই প্যারা শেষ করে থেমে যাচ্ছি। পরের অংশ পড়তে গেলে রাগ হচ্ছে । হাস্যকর সাংবাদিকতা ! যা মনে আসলো, তাই বানিয়ে বানিয়ে যেন লিখে দিলো পত্রিকাটি। পরকীয়া প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়ে দেয়ারও এক ধরণের অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল এর আগে প্রকাশিত অপর একটি ফলোআপ রিপোর্টে। লতা গুম হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা ইনিয়েবিনিয়ে বলা হয়েছে আজ প্রকাশিত রিপোর্টে। এটিই এখন সামনে খুলে বসে আছি।
কেন আমার দিকে এভাবে সন্দেহর তীর ছুড়ে দেয়া হলো?
জানিনা কেনো স্থানীয় কাগজগুলো মাঝের মধ্যে এ কাজটা করে। এস আই সোনিয়া একদিন বলছিলেন, ওই কাগজের ক্রাইম রিপোর্টারের মোবাইলে ২শ টাকার ফ্ল্যাক্সি লোড করে দিতে। এতে মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। সোনিয়াকেও নাকি মাঝের মধ্যে দু'একজন সাংবাদিককে এভাবে খুশি করাতে হয়। এতে করে তার কর্মতৎপরতার ভাল দিকগুলো কাগজে হাইলাইট হয়।
মিডিয়াতে কর্মরত নীলফামারির লোকজনের সাথে কি আমার খুব ঘনিষ্ঠতা রাখার দরকার আছে? না আমি রাজনীতি করি, না করি কোন অবৈধ কারবার। ঘুষ-দুর্নীতি করে টাকা কামানোর সুযোগতো শিক্ষকতা পেশায় নেই। তাছাড়া ব্যাপারটা এমন না যে লতাকে আমি হত্যা শেষে লাশ গুম করে দিয়েছি। অথবা আমার অবহেলা ও প্ররোচনায় সে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এখন টাকা বিলিয়ে পুলিশ ও মিডিয়ার মুখ বন্ধ করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই । এসব তো কিছু ঘটেনি।
মাস দুই আগেও এধরণের নিউজের একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছিলাম পত্রিকা অফিসে । তারা আমার প্রতিবাদটি ছাপালেও হুবহু প্রকাশ করেনি। সেখান থেকে কয়েকটি লাইন ছেটে দেয়ায় দূর্বল হয়ে যায় প্রতিবাদের ভাষা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদকের কাছে গিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে এসেছিলাম।
আজ প্রকাশিত ফলোআপ রিপোর্টের শেষ প্যারায় বলা হয়েছে, দু:খবন্ধু তাঁর শিক্ষকতা পেশা বিশেষ করে প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বেশি। এতে করে স্ত্রী লতার সাথে তাঁর এক ধরণের দূরত্ব তৈরি হয়। সেটির প্রভাবও পড়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে।
যেন মনে হচ্ছে আমার বাড়ির পাশেই থাকতেন এই সাংবাদিক! কাছ থেকে নিজের চোখেই দেখেছেন আমাদের দাম্পত্য জীবন।
এরপর আরও দু-এক লাইন আছে প্রকাশিত সংবাদে। সেখানে নতুন কোন তথ্য নেই। অগ্রগতির কোন কথা লেখা নেই।
আজ সারাদিন বিভিন্ন চায়ের দোকানে, শিক্ষক মহলে এবং আমার প্রতিবেশীরাও প্রকাশিত ওই সংবাদের সত্যতা মেলাতে কত কিছু যে আলোচনা করতে থাকবেন, তা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবেনা।
নিশ্চিত বলতে পারি আমার নিকটতম প্রতিবেশী সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হরিপদ বাড়িতে ফেরার সময় বগলচাপা করে নিয়ে আসবেন খবরের কাগজ। বউকে পড়ে শোনাবেন । ছেলে-মেয়েরাও শুনবে। পরের দিন সকালে সোমা বৌদিকে কাগজটা দেখাবে হরিপদর বউ।
লতার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। কিন্তু ওদের কারোর উপলব্দিতে আসেনা আমার বুকের ভেতর চলতে থাকা ক্ষরণের যন্ত্রণা কত গভীর।
মানতে দোষ নেই, যেকোন নিখোঁজের ঘটনা কৌতুহল সৃষ্টি করে। হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটি নারী হলে অধিকাংশ মানুষ বেশি কৌতুহল দেখান। আর গৃহবধূ হলেতো কথায় নেই।
ইদানিং নিজের অজান্তেই ভগবানকে ডেকে ফেলছি । মনে পড়ে না স্কুলের গন্ডি পেরোবার পর নিজের জন্য ভগবানের কাছে কখনও কিছু চেয়েছি। সত্যি কথা বলতে কি ধর্মের নিয়ম বালাই আমাকে টানেনি কখনও। তাই বলে ধর্মহীন নই। স্থুল বস্তুবাদিও নই। নাস্তিকতাকে যে মনে মনে লালন করি, তাও নয় । বিশ্বাসের জায়গা এটুকুই যে দুনিয়া সৃষ্টির মালিক একজন। ধর্ম সৃষ্টিকারী অনেকজন। আমার আকুতি সেই সৃষ্টিকর্তার নিকট যার কাছে রয়েছে তাঁর সকল সৃষ্টির সমান গুরুত্ব। যার কাছে ধর্মের কোন ভেদাভেদ নেই। আজ আমি মনে প্রাণে তাঁর কাছে চাইছি, আমার সমস্ত কিছুর বিনিময়ে চাইছি।কথা দিলাম, বাকি জীবনে আর কিছুই চাইবো না। সুস্থ শরীরে আমার কাছে ফিরে আসুক মিনতি লতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




