somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরই কি আমাদের চোখ খুলে দিল

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান শাখার ভল্ট থেকে ১৬ কোটি টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনায় এখন উত্তাল দেশের ব্যাংকিং সেক্টর। বিশেষ করে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে জেমসবন্ড স্টাইলে চুরি সংঘটিত হওয়ায় ভল্টের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ব্যাংকের কর্তা-ব্যক্তিদের। অবশ্য এর মধ্যে স্বস্তিদায়ক খবর হল-- সংঘবদ্ধ ওই চোর চক্রের দু'সদস্যকে লুণ্ঠিত টাকাসহ আটক করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা।
দুঃসাহসিক এই চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি সার্কুলার জারি করেছে। উল্লিখিত সার্কুলারে ভল্টের দেয়াল ও মেঝেতে ইস্পাতের ব্যবহার এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা তথা সিসি ক্যামেরা ও সিকিউরিটি এলার্ম স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত ভল্টের ভেতরে সিসি ক্যামেরা ও সিকিউরিটি এলার্ম লাগানোর প্রচলন নেই আমাদের দেশে। তবে এটির যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুধাবন করতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে ভল্টের কাঠামাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেঝে ও ছাদসহ চারপাশে ইস্পাত বেষ্টনী নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এটাই কি প্রথম কোনো দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা? নিশ্চয় না। এর আগেও একই কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি হতে আমরা দেখেছি। ২০০৮ সালের ২ মার্চ ব্রাক ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখায় একই কৌশলে চুরি হয়। তখন অবশ্য ব্যাংকের ছাদ ফুটো করে ভল্টের রুমে প্রবেশ করে চোর চক্র। তারা ব্যাংকের উপরের তলার আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া নেই, যার নিচেই ছিল ব্রাক ব্যাংকের ভল্ট। চোর চক্র হোটেলের রুমে অবস্থান নিয়ে নির্বিঘ্নে লুটপাটের কাজ সম্পন্ন করে। ওই ঘটনার কারণে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয়। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা যে গ্রহণ করেনি, তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হল।
ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটলে সবাই যেন নড়েচড়ে বসেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারও জারি করে। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে-- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ-নিষেধ ব্যাংকগুলো ঠিকমত পালন করছে কিনা, তা মনিটরিং করার ক্ষেত্রে রয়েছে চরম উদাসীনতা।
একটি বিষয় সব সময় অনুধাবন করা উচিৎ যে, দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক আমানত হিসাবে গ্রহণ করা জনগণের টাকা নিয়েই ব্যবসা-বাণিজ্য করে। সেটি দিয়েই বছর শেষে কোটি কোটি টাকার লাভ-ক্ষতির হিসাব দেখান। ব্যাংকের সৌন্দর্য বর্ধন করেন, কাস্টমর টানতে নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে ছাড়েন, লাখ লাখ টাকা বেতন দিয়ে রাখেন একাধিক ডিএমডিসহ হাই প্রোফাইলের অসংখ্য কর্মকর্তা । এমন কি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছেলে-মেয়েদের বাছাই করে নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করা যায়, সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী পদস্থ কর্তা-ব্যক্তিরা স্ব স্ব ব্যাংকের নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হবেন।
কিন্তু বাস্তব অর্থে এ চিত্রটি ভিন্ন। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের ভল্ট তৈরীতে যথাযথ নিয়ম পালন করা হয়নি। এমন কি কোনো ভবনের ফাস্ট ফ্লোরে ব্যাংকের ভল্ট থাকা যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ থাকলেও, তা মানছে না দেশের একাধিক বেসরকারি ব্যাংক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও জরাজীর্ণ ভবনে রয়েছে সোনালী, জনতা, পূবালীসহ সরকারি-বেসরকারি একাধিক ব্যাংকের শাখা। খোদ মতিঝিলেও বিভিন্ন ভবনের ফাস্ট ফ্লোরে রয়েছে অনেক ব্যাংকের ভল্ট।
সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বা ছাদ ফুটো করে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়। সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। কেবল সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকলে চলবে না, ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে সবার আগে জরুরী হচ্ছে বিচক্ষণতা।

কিশোরগঞ্জের এ ঘটনাটির মধ্য দিয়ে আমাদের চোখ কি চোরেই খুলে দিল! যদি তা-ও হয় তাতেও অখুশী হব না, কারণ এবার হয়তো ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতি বিশেষ অভিনন্দন, ঘটনার দেড় দিনেই উদ্ধার করে ফেললো চুরি যাওয়া টাকা। বেচারা চোর! দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করা তার শ্রম সাধনা কেবল জলেই গেলোনা, গোটা জীবনও হয়ে গেলো আঁকাবাকা।
কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে খুতখুতানি থেকে গেলো অন্তরে। যারা ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে, অথবা ঠকিয়ে বা প্রতারণার মাধ্যমে এই সোনলী ব্যাংক থেকে হাওয়া করলো হাজার হাজার কোটি টাকা, সেই হলমার্ক তানভীর, বিসমিল্লাহ গ্রুপের হোতারা ধরা পড়েনা সহজে। আর গ্রেফতার হলেও ঠিকই জামিনে বেরিয়ে যায় আইনের ফাক ফোকড় গলে। দু:খজনক হলেও সত্য যারা শেয়ার কেলেঙ্কারীর মধ্য দিয়ে পথের ভিক্ষারী বানিয়ে দিলো দেশের হাজার হাজার শেয়ার ব্যবসায়ীদের, তাদের কথা আমরা কেউ বলতে পারিনা সাহস করে।

- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×