somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে বলে বদলে দেবে মানচিত্র !

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুলনা ও সিলেটকে ভারতের করে নেয়ার এক ফমূর্লা বের করেছে মোদীর বিজেপি। ফর্মুলা অনুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পশিমাঞ্চল চলে যাবে পশিমবঙ্গের ভেতর। অপরদিকে সিলেট ঢুকে যাবে মেঘালয়ের সাথে।

বা: হা:
বাংলাদেশ যেন খেলার পুতুল!
যা খুশী ভাবতে পারো!

ভারতের শিলাচরের "সাময়িক প্রসঙ্গ " নামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত বিজেপি নেতার বক্তব্যর খবরটি বাংলাদেশের কোন কোন মিডিয়া প্রকাশ করেছে। তাঁর প্রস্তবনা নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমাদের একটি প্রস্তাব রয়েছে। তা হলো আসাম-ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত এই বেল্টের পরপর অঞ্চলগুলো আমাদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী দিনের বাংলাদেশের একটি ম্যাপের খসড়া ছবি লেখার শুরুতে তুলে ধরা হয়েছে।

মোদীর দল বিজেপি দিল্লির সিংহাসনে বসুক বা না বসুক,
ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের একজন রাজনীতিক কি আমার দেশের জমি দাবি করতে পারেন?
এই ধরণের আর একটিও উক্তি যদি দ্বিতীয়বার ভারতীয় কোন রাজনীতিকের মুখে আসে, আমরা বাধ্য হবো প্রস্তাবিত খসড়া ম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূখন্ড দখলের অভিযানে নামতে। যাইহোক, মূল আলোচনায় আসি।

ভারতের সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার খবর মতে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামী বাংলাদেশের কাছে এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দাবি করেছেন।

কেনো করলেন?



মি. স্বামী মনে করছেন, তাদরে অঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে বহু অনুপ্রবেশকারী চলে গিয়ে বসবাস শুরু করছে। এতে নানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভারত। তাই অনেকটা ভারসাম্য রক্ষায় খুলনা ও সিলেট অঞ্চল ভারতের করে নেয়া প্রয়োজন। বিষয়টি এখনও মোদীর কান পর্যন্ত পৌছেনি।

ভারতের সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার তথ্য মতে, বিজেপি নেতা সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামী এই দাবির কথা আলোচনা করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে। তিনি আরও বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে সংসদে এই নিয়ে প্রস্তাব তোলা হবে।

বিজেপির শীর্ষনেতা স্বামীর দেয়া ফর্মুলা অনুযায়ী খুলনা ও সিলেট ভারতভুক্ত হলে বাংলাদেশের মানচিত্রর রুপ কেমন রুগ্ন দেখাবে তা আকিঁয়েও দেখলাম। মেজাজ চড়ে গেলো খুব। আপনারও মেজাজ খারাপ হবে, চিত্রে দেখুন:



কথা হচ্ছে, রাষ্ট্রের সীমারেখা নিয়ে কথা বলার অধিকার যদি হয় সবার, তবে আমরাও প্রশস্থ করতে পারি আমাদের মানচিত্র। মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম হতে পারে বাংলাদেশভুক্ত । পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে উত্তর চব্বিশ পরগণা, কলকাতা, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ হয়ে রাজশাহীর সাথে মিলিত হবে। এ অঞ্চলগুলো হবে বাংলাদেশেরই জেলা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় ত্রিপুরা অঞ্চল অন্তত বাংলাদেশের হওয়া উচিৎ। মানচিত্রের একেবারেই পেটের কাছে রয়েছে।


ত্রিপুরার উত্তর ও দক্ষিণে বাংলাদেশ। এক কথায় সীমান্তের ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশ। মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। ৩৫ শতাংশ মুসলিম। এদের অনেকখানি ভরসা বাংলাদেশ। সুখে-দুঃখে কাছাকাছি, পাশাপাশি। আখাউড়া থেকে আগরতলা একটুখানি। কলকাতার রসগোল্লার চেয়ে কুমিল্লার রসমালাই এখানে সহজলভ্য। ট্রেনে আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে তিন দিন। সে তুলনায় ঢাকা নাগালে।



এদিকে সিলেটের শেষ সীমান্তে অর্থাৎ তামাবিল থেকে দূরে যে পাহাড়গুলো দেখা যায়, সেগুলো সবই ভারতের। আমরা পাহাড়ের তলদেশেও যেতে পারিনা। জাফলং এ গেলেই যেন কষ্টটা বেড়ে যাই আরও বেশি। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ওই পাহাড়গুলো ছুতে পারিনা আমরা।

পাহাড়গুলো কেবলই ভারতের হলো কেনো?

ভাষা ও ধর্ম বিবেচনায় বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত হওয়ার কথা নয় কি! কিন্তু বেছে বেছে পাহাড়গুলো বাদ দিয়ে স্রেফ সমতল অঞ্চলটুকু পেলো বাংলাদেশ।

অপরদিকে রাজশাহীর ওপাশে মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ মানুষ আমাদের মত বাঙালি। তাদের ও রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কথাবার্তায় রয়েছে একই ধরণের আঞ্চলিক টান। কলকাতা বা দিল্লির চেয়ে অনেক বেশি আপন আমরা। মুর্শিদাবাদের ২৬টি থানার মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান।

বিশ্ববাসীর কাছে "আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা- মুর্শিদাবাদ" বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তুলে আমরা নতুন করে সামিল হতে পারি এক কাতারে। জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানীর প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে পারি। যেভাবেই দেখা হোক না কেনো, যুক্তিতর্কে, জনমত জরিপে, কিংবা বসবাসরত মানুষের মতামতের প্রেক্ষিতে ভারতের ওই রাজ্যগুলোর মালিক বাংলাদেশ।

কিন্তু আমরা কখনও এমন প্রস্তাবনার পথে হাটিনি। যদিও জননেতা মাওলনা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এধরণের একটি বাংলার প্রস্তাব করেছিলেন। সেই ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসামকে বাংলাদেশভুক্তর পরিকল্পনা ছিল।

আমরা শত বছর আগের সেই পরিকল্পনা বা প্রস্তাবনা নিয়ে আসলে কথা বলতে চাইনি কখনও। বরং সীমান্ত নিয়ে ভারতের সাথে থাকা বিভিন্ন অমিমাংসিত ইস্যুর যৌক্তিক সমাধান চেয়ে এসেছি ।



সত্যিকথা বলতে কি, ৪৭ এ দেশ ভাগের সময় আমাদের মুসলিম নেতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট এলাকাগুলো বেছে নেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে যেসব অঞ্চল নিয়ে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার ছিল রাজত্ব, সেইসব অঞ্চলগুলো আমরা পাইনি।

অথচ এগুলো কি বাংলাদেশের প্রাপ্য না?

ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায়, ৪৭ এ দেশ ভাগের আরও দুবছর সময় পর্যন্ত আসাম ও বাংলা ভারতভুক্ত ছিলনা। কাগজ কলমে ৪৯ সালে ভারতের রাজ্য হিসাবে অর্ন্তভূক্ত হয়। ইতিহাসে আছে, আসাম ও বাংলা মিলে "বেনসাম" নামে স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র করার প্রস্তবনা উঠেছিল তৎকালীন সময়ে। কিন্তু এটি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা সেভাবে এগোয়নি। আরও একটি বড় কারণ হলো আমাদের মধ্যে চলমান হানহানি ও ধর্ম নিয়ে রক্তারক্তি রকমের বাড়াবাড়ি সব পরিকল্পনাকে বিনষ্ট করেছে।

বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যর কারণেই আসলে আমাদের মুখ থেকে এখন বেরিয়ে আসছে "গ্রেট বাংলা" গঠনের প্রস্তাব। তবে সবাই যে এই প্রস্তাবের সমর্থন জানাবেননা, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায়। আমাদের দেশের এমন অনেক নাগরিককে খুঁজে পাওয়া যাবে, যিনি ওই প্রস্তাবনার পক্ষে থাকা তো দূরের কথা, বিজেপির ওই নেতার সমালোচনাও করতে চায়বেননা। ভারতের অন্ধভক্ত ওই বাংলাদেশীরা হয়তো ইতিমধ্যে বলেও বসেছেন, কে কি (ভিন্ন রাষ্ট্র) বললো, তা নিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এত লেখালেখির কিছু নেই।
কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে গুজব হিসাবে দাবি করে বলতে শুরু করেছেন, "হলুদ সাংবাদিকতা।" অনেকে আবার বলেছেন, এতে করে "সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা" বাধার আশঙ্কা থাকে। কোন ভাবেই যেন ভারতের প্রতি নতজানু মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছেনা তাদের।

বাস্তবতা হলো, বিষয়টি হিন্দু-মুসলিম বিবেচনায় না দেখে, বাংলা ভাষা তথা বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় দেখা উচিৎ। আমাদের মানচিত্র নিয়ে কেউ যদি কাটাছেড়া করার স্বপ্ন দেখে, তবে আমরাও গুড়িয়ে দেবো তাদের স্বপ্ন। বদলে দেবো তাদেরই মানচিত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১২
৪০টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×