somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চতুস্কোণ

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জড়িয়েছে জটিল এক সম্পর্কের জালে। পরস্পরকে সঁপেছে নির্ঝাঞ্ঝাটে। কাছাকাছি হওয়ার পর নিজেরাই আবিস্কার করে, এ এক অন্য রকম ভাল লাগা। ঘুরে ফিরে কেবলই সঙ্গ প্রত্যাশা। পরিবেশ পেলে লুকায়িত ইচ্ছেগুলো ডানা মেলে। পরস্পরের সাথে মিশে যায় উদ্দাম । আবার এটিও উপলব্দি আসে যে, ধর্মীয় দৃষ্টিতে শুধু নয়, সামাজিক ভাবেও হচ্ছে নিন্দনীয় কাজ। তারপরও অনুমোদিত স্পর্শের দিকে ধাবিত হতে থাকে দেহ-মন। স্বস্তিময় অনুভুতিগুলো ঘোরাচ্ছন্ন করে তোলে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন ওরা হয়ে দাড়ালেন তিনজন।
দুই দম্পত্তি। বাসা ঢাকার স্কাটন। রেলভ্রমণে পরিচয়। একই এসি বাথে ঢাকা টু খুুলনা। সারা রাত কেবিনে ওরা চারজন। আলাপ পরিচয়ের পর হাসি-তামাশা করে কেটেছে সময়। ভাগাভাগি করে খেয়েছেন খাবার। যেন অনেক দিনের চেনা। তিশা ও সৌরভ নেমে যায় চুয়াডাঙ্গা। আবিদ ও শোভা পৌছায় খুলনায়। এরপর অনেকদিন যোগাযোগ নেই। যদিও সেদিন সৌরভের মোবাইল নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলেন আবিদ। কিন্তু পরে আর খোঁজ খবর নেয়া হয়নি।
চলার পথে পরিচয় হওয়া সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটি হয়। প্রথম প্রথম যোগাযোগ থাকে। পরে তা কমে আসে। ভুলেও যায় অধিকাংশজন। আবার সবক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। দূরপাল্লার যাত্রা পথে পাশাপাশি সিটের অপরিচিত নারী-পুরুষ আলাপচারিতায় এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় যে অনেক দূর গড়ায় সম্পর্কের গভীরতা। এদের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এতটাই গভীরে পৌছায় সম্পর্ক, যা একটি বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করে নিদারুণ জটিলতা।
আবিদ পেশায় একজন প্রোকৌশলী। একটি আর্কিটেক ফার্মে কাজ করে। ভীষণ রকমের কাজ পাগল মানুষ। বছর তিন আগে বাবা-মায়ের দেখে দেয়া মেয়ে শোভাকে বিয়ে করেন। এখনও ছেলে-পুলে হয়নি। দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছে। যদিও আবিদ একটু কুঞ্জুস টাইপের, কিন্তু সংসারে কোন অপূর্ণতা রাখেননি। কিন্তু তার পরেও কেমন যেন একটা অপূর্ণতা বোধ করে শোভা। রোজ রান্না করা আর ঘর-বাড়ি গুছিয়ে রাখা গৃহিনী জীবন একঘেয়েমি মনে হতে লাগে তার। সারাদিন বাড়িতে একা একা কাটে সময়। ছোট কাজের মেয়ে একজন আছে বাসায়। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা। কিন্তু ওর সাথে আর কতই বা কথা বলা যায়!
বিয়ের আগে কখনও ঢাকায় আসা হয়নি শোভার। প্রথমে ঢাকার প্রতি আকর্ষণ থাকলেও অল্পদিনে তা ম্লান হয়ে যায়। কেননা ঢাকার মানুষদের তার কাছে আত্নকেন্দ্রিক বলে মনে হয়েছে। মানুষগুলো যেন যে যার নিজেদের মত থাকতে পছন্দ করে। কেউ কারোর খোঁজ রাখেনা। সত্যি তো, পাশের এ্যপার্টমেন্টে যারা থাকেন, তাদের কেবল মুখ চেনে শোভা। আলাপ পরিচয় নেই। তারা হাসবেন্ড-ওয়াইফ দুজনে চাকরি করেন। সকালে একসাথে বেরিয়ে যান। সারাদিন বাড়ি তালা দেয়া থাকে। ছুটির দিনগুলোতে উনারা ঘুমিয়ে কাটান। কখনও বেড়াতেও যান। আবিদ সপ্তায় ছুটি পায় একদিন। সেও যেন সারা সপ্তাহর ক্লান্তি ভাঙে ওই ছুটিরদিনে। জুম্মার নামাজও পড়তে যায়না। শেষ রাতে গিয়ে ঘুমায়, সারাদিন পর বিকেলে ওঠে। শোভা চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। কোন ঝামেলা করেনা। আব্দার করেনা। তার কেবলই মনে হয় , ঢাকার গৃহিনী জীবন এমনই বৈচিত্র্যহীন বন্দিময়!
দাম্পত্য জীবন নিয়ে দু:খবোধ থাকলেও এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তির প্রত্যাশা করেনা শোভা। সেতো অসুখী নয়। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। গোছানো সংসার। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন একটু কমতি আছে। আর সেটি হলো বন্ধুত্ব। আবিদ ও শোভার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ওদের বয়সের ব্যবধান প্রায় ১২-১৩ বছর। বিয়ের সময় আবিদের বয়স ছিল ৩৮। শোভার তখন ২৫। মফস্বলের একটি ডিগ্রি কলেজ থেকে পাশ করার বছরখানেক পর শোভার বিয়ে হয়।
আবিদ-শোভা দম্পত্তির পরিচয় আপাতোত এটুকু। গল্পের অপর দম্পত্তি সৌরভ ও তিশার দাম্পত্য জীবন অল্পদিনের। দুজনার বয়সও কাছাকাছি। একটি ঠিকাদারী ফার্মের স্বত্বাধিকারী সৌরভ পয়শাওয়ালা। স্ত্রী তিশা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিচার। কোন কিছুর কমতি নেই। কিন্তু ওরা স্বামী-স্ত্রী সুখী দম্পতির অভিনয় করে যাচ্ছেন, ভিতরে সম্পর্ক কিস্যু নেই।
ট্রেনে পরিচয়ের বহুদিন পর একটি অনুষ্ঠানে আবারও দেখা হয়ে যায় দুই দম্পত্তির। সেখানে দীর্ঘ সময় এক সাথে কাটান তারা। এরপর থেকে সৌরভের সাথে শোভার মোবাইলে অল্প-স্বল্প যোগাযোগ শুরু হয়। সৌরভ নিজে ব্যবসায়ী, তাই প্রয়োজন মত সময় বের করতে পারেন, ফোনে কথা বলতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এভাবেই একপর্যায় শুরু হয় একে অপরের বাসায় যাওয়া-আসা। পক্ষান্তরে আবিদের সাথে তিশারও যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তিশা চঞ্চল মেয়ে, শান্ত-শিষ্ট টাইপের ছেলে তার পছন্দ। আবিদের ভেতরে সেটি খুজেঁ পেয়ে নিজের অজান্তে দূর্বল হয়ে হয়ে যায় তিশা।
দুই পরিবার আর্থিক ভাবে যথেষ্ঠ স্বচ্ছল। পরিচয় হওয়ার পর তারা বেশ কয়েকবার একসাথে ঘুরেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পর হোটেলে দুই দম্পত্তি আলাদা আলাদা রুমে থাকলেও আড্ডার ছলে একে অপরের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করতো। তবে বিষয়টি এমনও নয় যে ওদের চারজনের কাছে ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি এমন যে, কোথাও যাওয়ার জন্য হোটেল রুমে ওরা গোছগাছ শুরু করলো, এমন সময় তিশা বললো আমার শরীর ভাল লাগছেনা, আমি হোটেলে থাকি তোমরা ঘুরে আসো। এতে কেউ কোন দ্বিমত করতো না। স্ত্রীকে হোটেলে রেখেই সৌরভ আবিদ ও শোভার সাথে ঘুরতে চলে যেতো। সে তো শোভার সান্নিধ্য চায়ছে। স্বামী সাথে আছে তাতে কী! পক্ষান্তরে শোভার স্বামী আবিদের তো মন পড়ে আছে হোটেলে তিশার কাছে ফেরার বাসনায়। আর তাই সুযোগ বুঝে ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে আবিদ চলে যেতো। এতে স্ত্রী শোভা কোন কথা বলতো না। কারণ সে তো মনে মনে সৌরভের সঙ্গ চাইছে।
আউটডোরে সৌরভ-শোভা এবং হোটেলে আবিদ-তিশা। কখনও ঘটছে এর বিপরিত। প্রয়োজন ও পরিবেশ মত একটি অলিখিত এগ্রিমেন্ট রচনা হয়ে যাচ্ছে ওদের ভেতর। ছলচাতুরি করে দুই দম্পত্তির ভালবাসার চতুস্কোণে আবদ্ধ হতে থাকার বিষয়টি চলতে থাকে দুই বছরেরও বেশি সময়। সামনা-সামনি এ নিয়ে কোন দম্পত্যি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেনা। কারোর কোন অভিযোগ নেই। অপূর্ণতাও নেই। তাই বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করার কথা ভাবেননি ওরা চারজন। "স্যাক্রিফাইজ মাইন্ড" যেন তাদের দাম্পত্য জীবনকে আরও প্রশান্তিময় করে তোলে। কিন্তু হঠাৎ করে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভেঙে যায় ভালবাসার চতুস্কোণ। রোড এ্যকসিডেন্টে মারা যান শোভার স্বামী আর্কিটেক আবিদ।
নিজের স্বামীর মৃত্যুর দু মাস পর সৌরভের কাছে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করে বসেন শোভা। শুরু করেন চাপ প্রয়োগ। সৌরভ ভুগতে থাকেন সিদ্ধান্তহীনতায়। এদিকে তিশা হয়ে ওঠেন কঠোর। কোন ভাবেই তিনি তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে রাজি হননা। ক্রমান্নয়ে জটিল হতে থাকে তিশা,শোভা ও সৌরভের সম্পর্ক। শেষে আদালতের সরাণাপন্ন হন শোভা।
ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পত্রিকাওয়ালারা রস-রঙ মিশিয়ে করতে থাকে ফলোআপ রিপোর্ট। আদালত থেকে থেকে শুনানির তারিখ পরিবর্তন করে। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তির পথে আগায় না।
এভাবেই কেটে যায় আরও ছয় মাস। শোভাকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে তিশা। সৌরভও তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভা। মামলাটির রায় প্রদান নিয়ে বিব্রতবোধ করতে থাকেন বিচারক।
মামলার কোন এক হাজিরার দিনে শোভা, সৌরভ ও তিশার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচারক বললেন, শুরু থেকেই একটি অনৈতিক মেলামেশা বা সম্পর্ককে স্বজ্ঞানে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন আপনার। একটি মৃত্যু আপনাদের এই মেলামেশার কুফল দিক উপলব্দির পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, এই জটিলতা থেকে কিভাবে পরিত্রাণের পথ বের করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×