somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকা ভ্রমণ......

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব

চার .

কনফারেন্স ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলেতে। সুকমল দার মতে বার্কেলে নামটাই নাকি একটা অন্যরকম আভিজাত্য বহন করে। কথাটা একেবারে অমূলকও নয়, প্রায় একশ জনের মত নোবেল প্রাইজ পেয়েছে এখান থেকে, কেউ কেউ মারা গেছেন, জীবিত আছেন অনেকেই, ধারণা করা হয় গত ১০০ বছরে পৃথিবীতে বিজ্ঞানের উন্নতির প্রায় সিংহভাগ গবেষণার কাজ হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অভিনব কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় নোবেল প্রাইজ পাওয়া ব্যাক্তিদের সম্মান দেখিয়েছে। তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য সতন্ত্র পার্কিং প্লেসের ব্যাবস্থা করেছে। মানে আপনি নোবেল প্রাইজ না পাওয়া হলে ওইখানে গাড়ি রাখতে পারবেন না। আমেরিকাতে গাড়ি পার্কিং করার জায়গা অনেক সময় পাওয়া যায়না। যেখানে সেখানে পার্কিংও আপনি করতে পারবেন না, নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি পার্ক করতে হয়। প্রত্যেকটা গাড়ির জন্য সারিবদ্ধভাবে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা। পার্কিংয়ের জন্য ঘণ্টা প্রতি পয়সাও দিতে হয় কিছু কিছু জায়গায়। পার্কিং করার জায়গা দিয়ে সম্মান জানানোতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন প্রথমে, পড়ে দেখা গেল এটাই তাঁদের সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে।

ছবিঃ ক্লক টাওয়ারের উপর থেকে তোলা বার্কেলে ক্যাম্পাসের ছবি

প্রথম যখন ভিতরে ঢুকছি প্রথমেই চোখ কেড়ে নেয় এর নয়নাভিরাম বিশাল ক্যাম্পাস,সবকিছু যেন ছবির মত সাজানো গোছানো। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই ক্যম্পাসের বিস্তৃতি । ছিমছাম নিরিবিল পরিবেশ, কোথাও একটা নোংরা পড়ে নেই, ঘাস গুলো যত্ন করে কেটে দেওয়া, কাঠবিড়ালি গুলি মনের আনন্দে খেলছে ঘাসের উপরে, কেউ তাদের একটুও বিরক্ত করছেনা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন দেখলে চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা। এইখানেই আমার প্রেজেন্টাশন। ভিতরে ভিতরে আমি মারাত্নক নার্ভাস, আমার অবস্থা দেখে সুকমল দা একবার বলেই ফেলল যে সে নিজেই পুরো প্রেজেন্টাশনটা দিয়ে দিবে। আমি কিছুতেই রাজি না। আমি আগের প্ল্যানে অটল, সুকমল দা অর্ধেক বলে আমাকে বলতে বলবে। উৎকণ্ঠায় ভুগলেও এখানে এসে সবার সামনে কথা বলার রোমাঞ্চ থেকে নিজেকে বঞ্ছিত করতে চাইনা। অনেক বিখ্যাত লোক সেখানে উপস্থিত। সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, রেহমান সোবহান- যিনি বঙ্গবন্ধুর ছয়দফার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন, বুয়েটের অনেক শিক্ষন, বার্কেলের শিক্ষক আরও অনেকে যারা নিজ নিজে অঙ্গনে সেরাদের কাতারে।

ছবিঃ ডায়াসে গভর্নর আতিউর রহমান

দাদা তার অনংশটুকু বলছে, আমার মাথায় কিছুই যাচ্ছেনা, পেটের ভিতরে মুচড়িয়ে উঠছে টেনশনে, একবার উঠে প্রস্রাবও করে আসলাম, মেডিটেশনের মত করে দীর্ঘ সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়ছি রিলাক্স হওয়ার জন্য। কিসের কি, কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা, আমার মনে হচ্ছে ওখানে গিয়ে আমার গলা দিয়ে শব্দই বের হবেনা। সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে এইসব ভেবে আরও ভয় পাচ্ছি । কেন জানিনা যতই বড় হচ্ছি সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভয়টা আমাকে দিন দিন বেশি করে চেপে ধরছে, ভয় শুধু একটাই লোকে কি বলবে। যাই হোক দাদা শেষ করে আমাকে আমন্ত্রণ জানালো, আমি আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে পয়েন্টারটা হাতে নিয়ে পরের স্লাইডে গেলাম, কি বলব আগে অনেকবার প্রাকটিস করে গিয়েছি, প্রথম স্লাইড একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে গুছিয়ে বললাম, বলছি আর আমার আত্নবিশ্বাস বাড়ছে। সুন্দর ইংরেজিতে পুরো প্রেজেন্টাশন শেষ করলাম, অনেকেই প্রশংসা করে বলল নাইস প্রেজেন্টাশন। ভয়ডর কেটে যাওয়াতে বলতেও বেশ উপভোগ করছিলাম। সবার সামনে কথা বলতে পারার মধ্যে, সবাইকে নিজের কথা শুনানোর মাঝে একধরণের মজা আছে। আমি সেদিন সেটা আবিষ্কার করলাম । আমার মনে হতে লাগল এর পর থেকে আমি সবার সামনে কথা বলতে আর কখনোই ভয় পাবনা। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলাম সেদিন।

ছবিঃ আমেরিকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এরকম একটা করে ক্লক টাওয়ার আছে।


ছবিঃ বার্কেলের লাইব্রেরী- এমন লাইব্রেরী হলে কার না গিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে?

সমাপনী বক্তৃতায় আমাদের পেপারের ভূয়সী প্রশংসা করা হল, সাথে আমারও, সবচেয়ে ইয়াং প্রেজেন্টার হিসেবে। দাদাও ফেরার পথে বলছিল , 'তোমার প্রেজেন্টাশন স্কিল ভালো' । ভীষণ নির্ভার আর খুশি লাগছিল সেদিন, মনে হচ্ছিল বিশ্বজয় করেছি। ফিরে আসতে আসতে ভাবছিলাম নিজের মনের হীনমন্যতা মানুষকে অনেক কাজে পিছিয়ে দেয়। ওইটুকু পার হয়ে যেতে পারলে আর সমস্যা হয়না। রতন টাটার এই বিষয়ে একটা কথা পরে দেখেছিলাম যেটা আমি এখন সবসময় মনে করি, ' None can destroy iron, but its own rust can! Likewise none can destroy a person, but its own mindset can!' মাইন্ডসেট বদলালে অনেক কিছুই ঠিক হয়ে যায়। হীনমন্যতাগুলোকে কখনও মনে স্থান দিতে নেই। এটা ওই প্রেজেন্টাশনের শিক্ষা আমার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×