somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিরোধেই মিলবে স্ট্রোকের প্রতিকার

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন এবং প্রতি ছয় সেকেন্ডে কোথাও না-কোথাও কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে মারা যায় এবং এই সংখ্যা এইডস, ম্যালেরিয়া ও টিবির সম্মিলিত মৃত্যুর সংখ্যা থেকেও বেশি।



স্ট্রোক কী?
স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। সেরিব্রাল অর্থাৎ মস্তিষ্ক, ভাসকুলার অর্থ রক্তনালি এবং অ্যাকসিডেন্ট মানে দুর্ঘটনা। সুতরাং মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে স্ট্রোক একটি হূৎপিণ্ডের রোগ, বাস্তবে এ কথা মোটেই সত্য নয়। স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ।

স্ট্রোকের ১০ কারণ?
উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়মিতভাবে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সেবন স্ট্রোকের সব থেকে বড় কারণ—
- ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুল সেবন।
- অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপে থাকা।
- হূদেরাগ, যেমন—হার্ট অ্যাটাক, এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, ভাল্ব প্রতিস্থাপন, হার্টে জন্মগত ছিদ্র।
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
- স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস, পুরুষ এবং বয়স্কদের অধিক মাত্রায় ঝুঁকি দেখা যায়।
- রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ।
- কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িকেও এর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রসবকালীন একলাম্পশিয়া নামের জটিলতা হলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- কিছু কিছু ওষুধ বা রোগের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যেমন—অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- মাদক সেবনকারীর রক্তক্ষরণের হার বেশি দেখা যায়।
স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রক্ত এক-দুই মাসের ভেতর শুকিয়ে যায়। মস্তিষ্কের অনেকখানি জায়গাজুড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে রোগী শুরুতেই মারা যেতে পারে। স্ট্রোকের পাশাপাশি হূৎপিণ্ড বা ঘাড়ের রক্তনালি বন্ধ থাকলে পরবর্তী এক বছরের ভেতর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর আবার স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বল্পমাত্রার স্ট্রোকের রোগী ২৪ ঘণ্টার ভেতর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।



প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ
কিছু রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি সব রোগীর জন্য অবশ্যই সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে সিটি স্ক্যানে সাদা দেখায় আর রক্ত সরবরাহ কমে গেলে সিটি স্ক্যানে সেই জায়গা কালো দেখা যায়। আক্রান্ত জায়গার চারপাশে পানি জমে ইডিমা হলে কালো দেখায়। এই ইডিমা চারপাশের মস্তিষ্কের ওপর আরও বেশি চাপ দেয়। ইস্কেমিক স্ট্রোকের প্রথম ছয় ঘণ্টাকে হাইপার একিউট বলা যায়। এ সময়ে বেশ কিছুসংখ্যক রোগীর সিটি স্ক্যানে কিছু সমস্যা পওয়া যায় না, সেসব ক্ষেত্রে পুনরায় স্ক্যান করতে হয়। এমআরআই (ডিডব্লিউআই) করে স্ট্রোক ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায়। ঘাড়ের রক্তনালিতে কোনো ব্লক আছে কি না জানার জন্য ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম পরীক্ষাও করতে হবে। এ ছাড়া রক্তের চর্বির পরিমাণ, রক্তের গ্লুকোজ, স্ট্রোকের প্রবণতা বোঝার জন্য কিছু মার্কার দেখা যেতে পারে।
স্ট্রোকে সাধারণত ব্রেনের নিচের দিকের ব্যাজাল গ্যাংলিয়া এবং থ্যালামাস নামক জায়গা বেশি আক্রান্ত হয়, বাকি মস্তিষ্কে যেকোনো জায়গায়ই স্ট্রোক হতে পারে। ব্রেনস্টেমের স্ট্রোক সর্বাধিক বিপজ্জনক, কারণ ব্রেন স্টেমে শ্বাস-প্রশ্বাস, হূৎপিণ্ডের চলাচল ও জ্ঞানরক্ষার কেন্দ্র অবস্থিত।

হঠাৎ স্ট্রোক হলে?
- রোগীকে কাত করে শুইয়ে দেবেন।
- এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেবেন না। কারণ, এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি করে।
- বরং মুখে জমে থাকা লালা, বমি সুন্দর করে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- টাইট জামা কাপড় ঢিলা করে দিন।
- হাসপাতালে যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে
নিয়ে নিন।

কেন অতিসত্বর চিকিৎসা করাতে হবে?
স্ট্রোক হলে আক্রান্ত এলাকার মস্তিষ্ক কোষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রভৃতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত সরবরাহ দুই মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত এলাকার চারদিকে একটি প্রচ্ছায়া বলয়ের সৃষ্টি হয়, দ্রুত চিকিৎসায় প্রচ্ছায়া বলয়কে রক্ষা করা সম্ভব হয়।



স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে তিন হ্যাঁ আর দুই না বলে এক হাতের পাঁচ আঙুল তুলে ধরি—
হ্যাঁ বলুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে (কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটবেন)। ব্যায়াম করে কয়েক কেজি বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলা যাক।
- যেকোনো পরিবেশে হাসিখুশি থাকুন
- দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রাখুন।
ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে
- শাকসবজি
- অল্প ভাত
- পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া বাদে যেকোনো মাছ
- বাচ্চা মুরগি
- ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।
না বলুন
- ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুলকে না বলুন।
খাওয়া যাবে না—
- চর্বি (তেলযুক্ত খাবার) ও শর্করা (মিষ্টি খাবার)-যুক্ত খাবারকে অপছন্দ করুন।
- ফাস্টফুড, বাদাম
- সন্দেশ, রসগোল্লাজাতীয় মিষ্টি।
- দুধ, ঘি, পোলাও, বিরিয়ানি
- পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া
- গরু বা খাসির মাংস
- নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার
- ডিমের কুসুম প্রভৃতি রসনাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।

সবাইকে জানানোর জন্যই copy paste করেছি ।
এই তথ্য গুলো এখান থেকে নেয়া ।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×