somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলের মাঝে কালো বিন্দু

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-শোন,আজকে কিন্তু মুভি না দেখে যাচ্ছিনা,যতো সময়ই লাগুক।
-কিন্তু ৩টায় কচি স্যারের কোচিং আছে আজকে!
-তো?রোজই তো কোচিং করি,আজকে মিস দিবো,কি বলিস অরিন?
-না না,আজকে জৈব রসয়ান চ্যাপ্টারের এর ক্লাস,মিস করলে খবর আছে!
-দেখ,ঐশী আজকে সুযোগ পেয়েছি,সো মুভি না দেখে এখান থেকে যাবো না,তোর কোন না না শুনবো না,ওকে?
ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টিটা সরিয়ে সামনের দিকে রাখলো মৃদুলা,দূর থেকে কেউ তাকালে ল্যাপটপের আড়লে দুটো মায়াবী চোখই দেখতে পাবে শুধু,মুখটা না। তবে কিছুক্ষন কেউ সেদিকে তাকিয়ে থাকবে এটা নিশ্চিত,মনে মনে হয়তো আগ্রহও জন্মাবে,এতো সুন্দর চোখ দুটো যার তার সম্পূর্ন মুখটা একবার দেখা গেলে ভালোই হতো!মৃদুলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর সামনের টেবিলের পাশে দাঁড়ানো কলেজ ড্রেস পড়া তিনটে মেয়ের দিকে। খুব গভীর ভাবেই তাকিয়ে আছে বলা যায়! একটা সময় ঠোঁটে অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠলো,আস্তে আস্তে দৃষ্টিটা আবারো ল্যাপটপের স্ক্রীনের দিকে রাখলো। কিন্তু কান ঠিকই পাতা রাখল,ঐ মেয়ে গুলোর কথোপকথনে,
-শোন,অতসী,আমরা ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে মুভি দেখতে আসবো,সমস্যা কি?বাট আজকে না
-দেখ,ঐশী,তখনের কথা আলাদা,জাস্ট ইমাজিন, আমরা কলেজ লাইফে ক্লাস-কোচিং ফাঁকি দিয়ে একদিন বসুন্ধরাতে মুভি দেখছি,হাউ ইন্টারেস্টিং! আরে তুই এখন বুঝতেছিস না,পরে বুঝবি ব্যাপারটা কত্তো মজার!হাহাহা
পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেতে থাকা মেয়েটা বলল,
-আমিও অতসীর সাথে একমত,ক্লাস যখন ব্যাঙ করেছি কোচিং মিস করলে কি আর এমন ক্ষতি হবে শুনি!
-অরিন,অতসী তোরা বুঝতেছিস না?!আমার আব্বু যদি শুনে আমি কোচিং বা ক্লাস মিস করেছি,আমার ১২টা বাজিয়ে ফেলবে!একা একা আর কোথাও যেতে দিবেনা!
-তো আমাদের বাপ-মায়েরা কি আদর করবে?! তোর ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়!হুহ
মৃদুলা একই ভাবে হাসতে হাসতে ল্যাপটপে টাইপ করতে লাগল!এমন সময় ওয়েটার এসে কফির মগটা রেখে গেলো। এবার ল্যাপটপ ছেড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। প্রায় প্রতিদিনই অফিসের কাজ শেষে বিকেলের সময়টা,অথবা লাঞ্চটাইমের পর এই সময়টায় অফিসে তেমন কাজ না থাকলে ফুড কোর্টে এসে জানালার পাশে টেবিলে বসে মৃদুলা। আপন মনে কাজ করে,লাঞ্চ করে,বিকেলে কফি খায় একটা সময় উঠে চলে যায়। এখানকার প্রতিদিনের সবাই ওর মুখের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে বলা যায়,মাঝে মাঝে সন্ধ্যের পর তমাল আসে অফিস শেষে,এক সাথে খেয়ে বাসায় ফিরে। আজো লাঞ্চের পর তেমন কাজ ছিলো না বলে চলে এসেছে,চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখল,একটু রিল্যাক্স হওয়ার জন্য। মৃদুলা চোখ বন্ধ করেই একটা চিৎকার শুনতে পেলো!কপাল কুঁচকে গেলো ওর!আবারো চিৎকার শুনতে পেলো! ''প্রিতু...!'' বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো মৃদুলার কপালে!একটা সময় প্রচন্ড রকম চমকে চোখ খুলল!যেনো মারাত্নক কোন শক খেয়েছে সে...! আশে-পাশে তাকালো,লাঞ্চ আওয়ার তাই কিছুটা ভীড় আছে বলা যায়,সামনে তাকিয়ে দেখলো মেয়ে গুলো নেই। মৃদুলা ব্যাগ থেকে পানি বের করে কিছুক্ষন চোখে-মুখে ছিটালো,তারপর টিস্যু বের করে মুখ মুছতে মুছতে দেখলো কফি অনেকটা ঠান্ডা হয়ে আসছে,ওয়েটার কে ডেকে গরম করে দিতে বলল। চেয়ার ঘুরিয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসল,বিকেল হয়ে আসছে,৯তলার উপর থেকে ব্যাস্ত শহরে একটু ভিন্ন কিছু খোঁজার চেষ্টা করলো মৃদুলা... কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একই দৃশ্য গুলো বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে!

সরকারী অফিসের হিসাব রক্ষক বাবা,মমতাময়ো মা,বড় বোন প্রতীতি কে নিয়ে ছিলো মৃদুলার 'হ্যাপি ড্রিম হাউজ' মৃদুলাদের সরকারী কলোনীর বাসাটাতে ঢুকার পূর্বেই দরজায় চোখে পড়বে,চমৎকার ভাবে আর্ট করা একটা ছবি,সেখানে আর্ট পেপারের উপর স্কেচ করা আছে,একটা ছোট ঘরের ছবি,আর লেখা'হোম হোম,সুইট হোম,উইথ মাই ড্যাড-মম :) ''... আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়ের মতো মৃদুলা আর প্রতীতিই ছিলো ওদের বাবা-মায়ের সব আশা-আকাংখা আর সুখের ধন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরেও হাসি মুখে বাবা স্বপ্ন দেখতেন তার মেয়েরা ভালো আছে,ভালো রেজাল্ট করেছে,জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর মা? সারাটাক্ষন তিনি মায়া-শাসন দিয়ে এমনভাবে আগলে রাখতেন যেনো কোন কিছুতে কোন অভাব বোধ না করে মেয়েরা। যেবার মৃদুলা ক্লাস এইটে বৃত্তি পেলো আর বড় বোন এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেলো ওদের দুই বোনকে বুকে জড়িয়ে আব্বু-আম্মুর সে কি আনন্দের কান্না... ছোট্ট তিন কামরার সেই বাসাটাকে যেনো বেহেশতের বাগান মনে হয়েছিলো! আপু কলেজে উঠার পর মৃদুলা বুঝতে পেরেছিলো আপুর কলেজে-কোচিং এর খরচ,সেই সাথে ওর স্কুলের সব খরচ যোগার করতে বাবাকে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে!প্রায় দিনই ও রাতে বারান্দায় বসে প্রিয় বিড়াল 'লুছিফার'এর সাথে ফিসফিস করে গল্প করতে করতে আব্বু-আম্মুর কথা শুনতো!,
-প্রিতুর আব্বু,সামনের সপ্তাহ থেকে কিন্তু প্রিতু নতুন ম্যাথ টিচারের কাছে পড়া শুরু করবে,ওখানে কিছু এডভ্যান্স দিতে হবে
-ও না কলেজের ম্যাথ স্যারের কাছে পড়ে?আবার আরেক স্যার লাগবে?
-আরে কলেজের স্যার কি ঠিক মতো পড়ায়?খালি না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করাবে তাই বাধ্য হয়ে পড়ছে!
-হুম,কিন্তু মাস শেষে তো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে!গত মাসে মৃদুলার রেজিষ্টেশনের জন্য কলিগের কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলাম,সেটা এ মাসে দিতে হবে!এখন আবার প্রিতুর টাকা......!!
মৃদুলা চুপ করে শুনতো আব্বুর দীর্ঘশ্বাস। ওর ছোট্ট বুকটা মনে হয় কষ্টে ফেঁটে যেতো!কখনো চোখে পানিও চলে আসতো!
প্রায় রাতেই মৃদুলার ঘুম ভেঙ্গে যেতো,প্রিতুর হাসির আওয়াজে!খুব বিরক্তি নিয়ে একবার তাকাতো প্রিতুর দিকে,কিন্তু প্রিতু ওপাশ ফিরে মোবাইলে কথা বলেই যাচ্ছে,মনে মনে কিছুক্ষন বোনকে বকে আবার ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়তো!কি যে এতো মজা পায় রাত জেগে ফোনে কথা বলে আল্লাহই জানে!জিজ্ঞেস করলে বলবে ফ্রেন্ড,মৃদুলা বুঝে না ফ্রেন্ড এর সাথে সারা রাত জেগে গল্প করার কি আছে??!হোক সে ছেলে,ফ্রেন্ড ই তো,তাহলে রাত জেগে এতো কি গল্প করতে হবে?ক্লাস শেষে কিংবা কোচিং শেষেও তো বিকেলে গল্প করা যায়...!!
দেখতে দেখতে প্রিতুর এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা ঘনিয়ে আসে,ওদিকে মৃদুলাও ব্যাস্ত ওর এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে। আর আব্বু-আম্মু? তাদের দেখেতো মনে হয়,মেয়েরা না পরীক্ষা তারাই দিচ্ছেন!!! আব্বু প্রতিদিনই মেয়েদের প্রিয় ফল-প্রিয় খাবার কিনে আনছেন,হরলিক্স-দুধ তো বাধ্যতামূলক,আম্মু প্রায় দিনই রোজা রাখেন,নফল নামায তো আছেই,চিন্তায় মনে হয় তাদের ঘুমই আসে না!প্রায় রাতে আম্মু বা আব্বু উঠে এসে ওদের রুমে ঘুরে যান!দোয়া পড়ে ফুঁ দেন,আদর করে যান।
রিটেন পরীক্ষা শেষ করে মৃদুলা বেশ গভীর ভাবে বড় বোনকে পর্যবেক্ষন করে...!কেমন জানি চিন্তিত মনে হচ্ছে,তবে তা পড়াশোনা নিয়ে না!ঘটনা কি?! জিজ্ঞেস করবে ভেবেও জিজ্ঞেস করে না! হঠাত একদিন বাসায় মনে হয় বোম ফাটলো!!
বাবা দুপুরেই বাসায় চলে আসলেন!অসম্ভব গম্ভীর মুখ। সবাইকে ডাকলেন,প্রিতু বেশ অপরাধীর মতো এসে দাড়ালো!
মা জিজ্ঞেস করতেই বাবা চেঁচিয়ে উঠলেন,
--কি হয়েছে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোমার আদরের বড় মেয়েকে জিজ্ঞেস করো?মেয়ের তো কোন খোঁজ খবরই রাখোনা!সে কি করেছে জানো?
মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-কি করেছে?!
-ওর কলেজ থেকে ফোন এসেছিলো,ও ফার্স্ট ইয়ারের পর এক সপ্তাহও নিয়মিত ক্লাস করেনি,তাই এডমিট দেয়া হয়নি কলেজ থেকে,বলা হয়েছিলো গার্ডিয়ান নিয়ে আসার জন্য,তাও যায়নি,তাই বাধ্য হয়ে প্রিন্সিপ্যাল আমাকে ফোন করেছে! শুধু তাই না,ওর কেমিষ্ট্রি কোচিং এর স্যারও আমাকে ফোন করেছিলো,ও নাকি একটা মডেল টেষ্টও দেয়নি!অথচ ঠিকই মডেল টেষ্ট দেবার জন্য আমার কাছ থেকে ৫হাজার টাকা নিয়ে গেছে!!
বাবা থামলেও কেউ কোন কথা বলতে পারলো না!ঘরের মধ্যে পিনপতন নিরবতা!মৃদুলা দেখলো আব্বুর রাগী চেহারা থেকে থেকে কেমন কান্না কান্না চেহারা হয়ে গেছে,আর আম্মু আঁচলে মুখ চেপে রেখেছেন! মৃদুলার কেন জানি খুব অপরাধী লাগল নিজেকে,আসলে ও তো সবই জানতো কম বেশি,আপু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বয়েজ কলেজের ছেলেদের সাথে ঘুরতে যেতো,লুকিয়ে মোবাইল কিনেছে,একাধিক সিমও ব্যাবহার করে,কোচিং এর টাকা দিয়ে বান্ধবীদের সাথে শপিং এ যেতো আর আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলতো,নিজে টাকা জমিয়ে এসব ড্রেস-কসমেটিকস কিনেছে!
এরপরের দিন গুলো যথেষ্ট দুর্বিষহই ছিলো বলা চলে,আপুর সাথে সাথে ওকেও অনেকটা মানুসিক টর্চার সহ্য করতে হতো,বেশ বকা শুনতে হতো। মাঝে মাঝে মনে হতো আম্মু ওকেও আপুর মতো সন্দেহ করে! অনেক ঝামেলা চুকিয়ে আপুর এডমিট আনা হলো,পরীক্ষাও দিলো। দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ করে এডমিশন কোচিং এর ভর্তি হলো প্রিতু। আর ওদিকে মৃদুলার রেজাল্ট বের হলো,গোল্ডেন ফাইভ পায় মৃদুলা। অনেকদিন পর মৃদুলার ছোট্ট পরিবারে আনন্দ ফিরে আসে যেন...অনেক দিন পর প্রান খুলে আব্বু-আম্মু হাসল। প্রিতু প্রায়ই গল্প করতে করতে মৃদুলাকে বলতো,
-ইশ আমার যদি লোপার মতো দামী একটা মোবাইল থাকতো,কিংবা আমার যদি নিশুর মতো ল্যাপটপ থাকতো!
মৃদুলা হেসে বলতো,
-আমাদেরও একদিন হবে ওসব,আমরা নিজেরা টাকা ইনকাম করে কিনবো একদম লেটেষ্ট মডেলের।
প্রিতু মুখ বাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতো! মৃদুলার খারাপই লাগতো,আপু কেন যে খালি ওসব পয়সাওয়ালাদের সাথে বন্ধুত্ব করে আর কথায় কথায় ওদের মতো না হওয়ার আফসোস করে!! কি হয় ওমন দামী মোবাইল না থাকলে?আব্বু যেখানে কোন রকম একটা মোবাইল ইউজ করে সেখানে আপু কেন অতো দামি মোবাইলের আফসোস করে বুঝিনা!
মৃদুলা খেয়াল করে,প্রিতু আবারো আগের মতো হয়ে যাচ্ছে!কোচিং ফাঁকি দেয়া শুরু করেছে,বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেশ দূরে যাওয়া শুরু করেছে!আম্মুকে বলার আগে আপুকে নিজেই একবার সতর্ক করবে ভাবলো,কিন্তু পরক্ষনেরি মত পাল্টায়! আপু হয়তো ওর কোন কথাই শুনবে না,তাই আম্মুকেই বলবে ঠিক করে। কিন্তু আম্মুকে বলার আগেই বদলে যায় সব কিছু...

'এক্সকিউজ মি ম্যাম,আপনার মোবাইলটা অনেকক্ষন থেকে বেজে চলছে,আপনি খেয়াল করছেন না বোধহয়' কথাটা শুনে ছেলেটার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মৃদুলা!ছেলেটা অবাক হয় বেশ!!একটা সময় ধ্যান ভেঙ্গে চারপাশে তাকায়,বিকেল প্রায় শেষের দিকে বলা যায়!
পাশের টেবিলের ছেলেটাকে থ্যাংকস বলে মোবাইলটা রিসিভ করে,
-কি ব্যাপার?তোমাকে কখন থেকে কল করছি!কোথায় তুমি?এভরিথিং ইজ ওকে?
মৃদুলা কন্ঠটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলল,
-হুম,তমাল আমি ঠিক আছি!মোবাইল ভাইব্রেট ছিলো বাট তাও খেয়াল করিনি,সরি!
-কোথায় আছো?বসুন্ধরায়?
-হুম
-ওকে,থাকো আমি আসছি।
মৃদুলা আরো কিছুক্ষন বসে থেকে ল্যাপটপটা ব্যাগে ভরে উঠে দাঁড়ালো। অনেকক্ষন বসে থেকে টায়ার্ড হয়ে গেছে,ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটা শুরু করলো,লিফটে উঠার আগে হঠাত চোখে পড়লো ঐ তিনটা মেয়েকে,গল্প করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে,মৃদুলা দূর থেকেই দেখলো ওদের মধ্যে ঐশী মেয়েটার মুখে এখন আর কোন ভয় বা চিন্তার ছাঁপ নেই। মৃদুলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিফটে উঠলো। কার পার্কিং এর পাশে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃদুলা দেখলো মেয়ে গুলো হাসতে হাসতে যাচ্ছে,মৃদুলার হঠাত খেয়াল হলো,ঐশী মেয়েটার বাম গালে একটা ছোট্ট তিল আছে! বুকটা ধক করে উঠে!!! প্রিতুর গালেও ঠিক এমনই তিল ছিলো,কিন্তু বন্ধুদের সাথে ধানমন্ডি লেক ঘুরে রাস্তা পাড় হবার সময় যখন রোড এক্সিডেন্ট করলো মুখটা একদম থেঁতলে দিয়েছিলো,বাম গালের তিলটা রক্তে ভেসে গিয়েছিলো বলা যায়!!বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া মুখটায় যেনো রক্তাক্ত কালো বিন্দুটার অস্তিত্বই নেই! আজো মনে আছে মৃদুলার,কোচিং এ সকাল-বিকেল ক্লাস আছে বলে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলো সেদিন,আর দিন শেষে ফিরে এসেছিলো রক্তাত্ত লাশ হয়ে!!!
মৃদুলা দু'হাতে মাথা চেপে সিঁড়িতে বসে পরে!একটা সময় ডুকরে কেঁদে উঠে... তমাল গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে দেখে,সন্ধ্যের আলো-আঁধারীতে চারপাশের মানুষ গুলো হেঁটে যাবার সময় অবাক হয়ে দেখছে একটা মেয়ে শপিংমলে ঢুকার সিঁড়িতে বসে মাথা নিচু করে কাঁদছে!!তমাল ধীরে ধীরে মৃদুলার পাশে যেয়ে বসে,ওর মাথায় হাত রাখতেই মৃদুলা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে... তমাল ওকে শক্ত করে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে,কিন্তু কান্না যেনো আর থামছে না!! কান্নার দমকে মৃদুলার মুখ থেকে শুধু কিছু শব্দই বের হচ্ছিলো,
''আপু...আপু.........আমার প্রিতু.........আ-আমি...আপুরে............আমার আপু.........''




১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×