ব্লগে অনেক কবি। দারুণ সব কবিতা ভীড় করে প্রতিদিন। দেখে ঈর্ষা হয় আমার। কবিতা লিখতে হলে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গুণ থাকতে হয়। আমার তা নেই। কখনো চেষ্টাও করিনি তাই। কিন্তু পড়তে তো মানা নেই। তাই সুযোগ পেলেই কবিতায় ডুব দিতে ভুল হয় না। ‘প্রিয় কবি ও কবিতারা‘ নামক পোস্ট গুলো হল আমার ভাললাগা কবিতাগুলো সবার সাথে ভাগ করে নেয়ার পোস্ট।
প্রথম কেনা কবিতার বই এ মুগ্ধ হয়ে পড়া অনেক গুলো কবিতার মধ্যে একটা কবিতা ছিল ‘নিঃসঙ্গতা’।
“অতটুকু চায়নি বালিকা !
অত শোভা, অত স্বাধীনতা !
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,
আয়নার ধারে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক !
অতটুকু চায়নি বালিকা !
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম !
চেয়েছিলো আরো কিছু কম !
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী !”
সদ্য কলেজ পার হওয়া আমাকে সহজ, সাধারণ কথায় লেখা আবুল হাসান এর সেই কবিতা ভাবিয়েছে অনেক দিন। মনে হয়েছে কবিতার বালিকাটা মনে হয় আমি। একা থাকলে বিড়বিড় করে বলতাম। ভাল লাগতো।
ওটাই ছিল প্রথম আবুল হাসান কে পড়া। এর পর পড়েছি আরো অনেক। পড়েছি আর অবাক হয়ে ভেবেছি মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে মনকে নাড়া দেয়ার মত এত কবিতা তিনি কিভাবে লিখেছেন!
“অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা !”
(পাখি হয়ে যায় প্রাণ)
কঠিন সত্য কথা কি সহজ ভাবে লিখে গেছেন । মানুষ একা এর চেয়ে চিরন্তন সত্য আর কি আছে? আমি পড়ি, মুগ্ধ হই, আবার পড়ি, মনে নিয়ে নাড়াচাড়া করি।
“ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!”
(ঝিনুক নীরবে সহো)
একটা ছোট্ট তিন লাইনের কবিতা কত শক্তিশালী হতে পারে তার প্রমাণ বোধহয় উপরের লাইনগুলো!
“আমার কেবলই রাত হয়ে যায়’ লাইনটার মধ্যে একটা অদ্ভুত বিষণ্নতা আছে। প্রত্যেক মানুষের নিজের ভেতর হয়ত একজন বিষন্ন মানুষ বাস করে। আমার ভেতরের বিষন্ন মানুষটার অস্তিত্ব আমি টের পাই তাই হয়ত এ কবিতাটা এত ভাবায় আমাকে।
“যেখানেই যাই আমি, সেখানেই রাত!
স্টেডিয়ামের খোলা আকাশের নীচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত
আমার কেবলই রাত হয়ে যায়!”
( অপরিচিতি)
শেষ করবো কবি আবুল হাসানের আরেকটা প্রিয় কবিতা দিয়ে -
“মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা,
আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার মৃত্যুর আগে বোলে যেতে চাই,
সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন
কী লাভ যুদ্ধ কোরে? শত্রুতায় কী লাভ বলুন?
আধিপত্যে এত লোভ? পত্রিকা তো কেবলি আপনাদের
ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর…
মানুষ চাঁদে গেল, আমি ভালোবাসা পেলুম
পৃথিবীতে তবু হানাহানি থামলোনা!
পৃথিবীতে তবু আমার মতোন কেউ রাত জেগে
নুলো ভিখিরীর গান, দারিদ্রের এত অভিমান দেখলোনা!
আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা
সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ কোরে দিলাম,
সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তো
আমরা আমাদের কাছে বোলতে পেরেছি,
ভালো আছি, খুব ভালো আছি?”
(জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫