আমাদের স্বাধীনতার যে মুলমন্ত্র সেগুলো কি এই দলটি ধারন করে?
আমরা জানি আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র চারটি। গনতন্ত্র , বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল গনতন্ত্র নামক বস্তুটিকে ঘৃনা করে বলেই মনে হয়। এই তন্ত্র ফন্ত্রর কারনেই তো তাদের ক্ষমতা হারানোর ঝঁুকি তৈরি হয়েছে। তাদের বাকশালী চেতনায় তো আঘাত লাগারই কথা।
স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে গাঁটছড়া বঁেধে এই দলটি প্রথমেই গনতনে্ত্রর মূলে কুঠারাঘাত করেছিল। সেই ক্ষত বিক্ষত গনতনে্ত্রর কফিনে শেষ পেরেকটিও তারা পুঁতে দিলো গতকাল। প্রধান বিরোধী দলের অফিসে সামরিক স্টাইলে হামলা চালিয়ে তাদের গনতনে্ত্রর প্রতি যে ঘৃনা তার বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
তারা একটা সময় বাকশাল করেছিল, এখন আবার শুনছি সেই বাকশালের আদলে নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সেই কমিটিতে হয়তো কেউ কেউ নাম লেখাবেন। সেই কমিটির নেতারা যাকে তাকে মারধোর করবেন, বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। টাকা পয়সা নিয়ে কাউকে রাজাকার আবার কাউকে মুক্তিযোদ্ধা উপাধী দিবেন।
ভেবে দেখেন এগুলোই তো রক্ষীবাহিনীর কাজ ছিল। পার্থক্য হল রক্ষীবাহিনী সরকারী বেতন পেত , আর সরকারের গঠিত এসব কমিটি যেহেতু বেতন ভাতা পাবে না, সেহেতু তাদের সাধারনের কাছে গিয়ে জোর করে টাকা পয়সা নিয়ে নেতৃত্ব ফলাতে হবে।
শুধু শাহবাগ আন্দোলনের সাপোর্টে সরকারের কি আর চলছে না ? তারা যদি মনেই করে যে শাহবাগে সত্যিই জনসমর্থন আছে তবে তারা নিশ্চিনে্ত বিএনপিকে তাদের কার্যক্রম করতে দিত। কিন্তু সেটা হয়নি।
কথায় আছে সঙ্গদোষে লোহাও ভাসে। যদি আমরা সবাই ধরেও নিই যে শাহবাগ আন্দোলনটি নির্দলীয় এবং দেশের সব ধরনের জনগনের সেখানে সমর্থন আছে, তাহলেও চোখ বুজে বলা যায় কোনো জনসমর্থিত আন্দোলন সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে নিবেন না। সেটা নিতে গেলে সরকারের উপকার তো কিছু হবেই না বরং শাহবাগ আন্দোলনটিই উত্তরোত্তর ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এখানে অনেকেই বিএনপির সময়ের অনেক অগনতানি্ত্রক আচরন হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি উদাহরন নিয়ে হাজির হতে পারেন। তাদের বলে নিই, বিএনপি তাদের একটা রাজনৈতিক শষ্টিাচার ও চোখে কিন্তু একটা পর্দা রেখেছিল। বিএনপি কিন্তু সরকার পতনের ট্রাম্পকার্ড ছাড়ার কথা বলার পরেও আওয়ামী লীগ এর মহাসচিবকে গ্রেফতার তো দূরের কথা একবার জিজ্ঞাসাও করতে যায়নি কেউ।
সুতরাং সরকার আমাদের স্বাধীনতার প্রথম মূলমন্ত্রটিতে আদৌ নাই।
খতিয়ে দেখা যাক গনতন্ত্রমনা না হয়েও আওয়ামী লীগ কি করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হয়? তবে কি অন্য ভিত্তিগুলো তারা ঠিক রেখেছে?
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদঃ আওয়ামী লীগ ও তাদের চ্যালা চামুন্ডারা তো এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারে কাছেও নাই। এরা বিশ্বাস করে বাঙালী জাতীয়তাবাদে। পার্বত্য শানি্তচুক্তি করার দিনই তারা বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদকে হত্যা করেছিল।
আজ দেশের ছোটখাটো কোনো সম্প্রদায়ও আর এই সরকারকে পছন্দ করে উঠতে পাছে না।
প্রসঙ্গত একটা মজার কথা বলি, আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজকে হরতালের প্রথম প্রহরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, যে হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে জনগন। দেশের সব প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। স্কুল কলেজ , পরীক্ষা সব স্বাভাবিকভাবে চলেছে। সকল দোকানপাঠ আজ খুলেছে।
এ রকম দাবিতে আমাদের কারো কোনো আপত্তি ছিলনা। কিন্তু আমাদের বাসার কাজের ছেলেটি বলল È ভাইজান দ্যেখছেন, ব্যাডায় কি কয়? হ্যার পেছনের বাটার শো রুম আর কাপরের দোকানগুলা দেহি বন্ধ । আর ব্যাডায় কয় সব খুলছে।
আমি ইতিমধ্যেই ভাঁজ হয়ে যাওয়া কপালে মৃদু হাত বোলাতে বোলাতে ভাবলাম, আমার বাসার কাজের ছেলেটি যা বোঝে, এরা দেখি তাও বোঝে না। মিথ্যা যদি বলতেই হয় তবে একজন আওয়ামী কর্মীকে দিয়ে একটা দোকান খুলিয়ে , সেই খোলা দোকানের সামনে বসে বললেই তো ভাল হত।
সমাজতন্ত্র নামক বস্তুটি তো পৃথিবী থেকে এক রকম উঠেই গেছে। আর আমাদের দেশের সমাজতানি্ত্রকরা ইদানিং নেৌকায় চড়ে পুরোপুরি বুর্জোয়া হয়ে গেছেন।
তারা এখন ভুখার রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী হওয়ার রাজনীতি করেন। প্রয়োজনে এরশাদকে পাশে বসিয়ে চোখে মুখে কষ্ট করে লজ্জাহীন একটা ভাব নিয়ে কোনো মতে বলে ফেলেন , ডা. মিলন হত্যার বিচার চাই !!
তারা যেসব ভুখা মানুষদের নিয়ে এতদিন রাজনীতি করেছে, সেই ক্ষুধার্তরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে , তাদেরই একজন নেৌকায় চেপে মন্ত্রী হয়েছেন। আর দলের সাধারন নেতাকর্মীরা এক কোনায় বসে আসে্ত আসে্ত বলেন, সিরাজ শিকদারদের হত্যাকান্ডেরও বিচার চাই।
তাহের এর ফাঁসি অবৈধ ঘোষনা করেই ক্ষ্যান্ত দেয়া এসব নেতাদের সেসব ক্ষীন কথোপকথন কর্নকুহরে প্রবেশ করে না।
এহেন সমাজতানি্ত্রক দল আবার সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আছে।
এরা সব পারেন। তারা বৈষম্যহীন একটি সমাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের বড় বড় রাজাকার, যারা জাতীয় রাজাকার হিসেবে পরিচিত সেই, কুখ্যাত মোল্লা , নিজামী , গো, আজমদের কাতারে সাঈদী নামক এক অখ্যাত রাজাকারেরও বিচার করছেন।
শেয়ার বাজারে ত্রিশ লাখ লোককে সমাজতানি্ত্রক উপায়ে সকলের টাকা শুন্য করে দিয়েছেন!!!! পীর সাহেবরা ছাড়া সবাই সমান !!
এটা সকল স্তরের সমানাধিকার নিশ্চিত করার জন্যই বোধ হয়। এহেন সমাজতান্ত্রীক সরকার আবার আইনের শাসনকেও আঘাত করছেন প্রতিনিয়ত।
আজ সবথেকে বড় বুজের্াায়া সরকার দেখাতে চাচ্ছেন একমাত্র তারাই পারেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে। আর কেউ না। কিন্তু আপনারা খেয়াল করেন, তাদের দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি আছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্নটি আমাদের দেশের জন্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং তারা সংবিধানে সুনির্দষ্টি একটি আইন করে স্থায়ী কয়েকটি আদালত করে দিক। বিচার বিভাগীয় একটি শক্তিশালী ও স্থায়ী তদন্ত কমিশন করে দিক। তারা তদন্ত করে করে ধারাবাহিকভাবে এ বিচারটি করবে। যাতে করে কোনো সরকার এসে আর এটি বন্ধ করতে না পারে। তাহলেই তো হয়!!
ক্ষমতার রাজনীতির মধ্যে যুদ্ধাপরাধ ইসু্যটি টানার তো কোনো অর্থই নেই।
আপনারা দেখে থাকবেন, হানিফ সাহেব বলেছেন , বিএনপি নেতাদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাই যদি ফেৌজদারী কারনে কাউকে গ্রেফতারই করে পুলিশ । তাকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ একমাত্র বিচার বিভাগ দিতে পারে। হানিফ সাহেব ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেয়ার কে???
তার কি অধিকার আছে কাউকে ধরার বা ছেড়ে দেয়ার? অগনতানি্ত্রক সরকার তাদের ধরেছে , মেনে নিলাম, কিন্তু ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দিল কোন অধিকারে?
তাহলে এই যে এক রাত তাদের আটকিয়ে রাখলো তার জবাবদিহি কে করবে?
রইলো বাকি ধর্ম নিরপেক্ষতা। স্বাধীনতার এই মূলমন্ত্রটিতেও বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ।
বিশ্বাস যে করে না , তার প্রমান হল, তারা সংবিধানে বিসমিল্লাহ যেমন রেখেছে , তেমনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও রেখে দিয়েছে। সুতরাং এই প্রশ্নে অন্য কোনো দল থেকে নিজেদের আলাদা করার মত কিছু আওয়ামী লীগের নেই।
তাছাড়া এই দলটি মাঝে মাঝে পান না তাই খান না। আবার যখন সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন খেলাফত মজলিশের সাথে চরম সাম্প্রদায়িক চুক্তি করেছিলেন। আবার জামাদের নেতার কাছে দোয়া চাওয়া, তাদের সাথে নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম তো বহু আলোচিত বিষয়।
আবার আছে নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। নির্বাচন আসলেই, হাতে তজবীহ, মাথায় হিজাব । শাহজালাল( রঃ) এর মাজারে গিয়ে প্রচারনা শুরু, জিয়ার নাম পরিবর্তন করার দুরভিসন্ধিতে পীর আওলীয়ার নাম ব্যবহার, সেৌদি আরবে পবিত্র মক্কায় গিয়ে নির্বাচনের ঘোষনা। আবার দেশে এসে তা লঙ্ঘন কত কত উদাহরন আছে এই দলটির সাম্প্রদায়িকতা নিয়েও।
সুতরাং স্বাধীনতার একটি মুলমনে্ত্রর মধ্যেও নেই এই আওয়ামী লীগ।
তাহলে কিভাবে তারা অন্যান্য দল থেকে নিজেদের আলাদা মনে করে?
কিভাবে তারা মনে করে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল?
কোন যুক্তিতে তারা মনে করে যে, একমাত্র তারা ক্ষমতায় আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঠিক থাকবে, অন্য দল আসলে থাকবে না?
আমার জীবনের একটি গল্প দিয়ে শেষ করবো..
প্রাইমারী স্কুলে বসে আমার এক শিক্ষকের কাছে আমি নালিশ করেছিলাম। স্যার মামুন স্কুলের গাছের লিচু পেড়ে খেয়েছে। আমি খাতায় নাম লিখে রেখেছি স্যার।
স্যার বললেন, আচ্ছা সুমন, তুমি কি লিচু পছন্দ কর?
আমি বললাম না স্যার।
স্যার হেসে দিয়ে বললেন, তুমি যে লিচু পছন্দই কর না , এটাও তো একটা দোষ হতে পারে। অন্য মানুষ কি বলতে চায় আর কি করতে চায় , কেন করতে চায় সেই ইচ্ছেগুলোকে সম্মান করতে শেখ। অন্যের একটি দোষ ধরার আগে দশটি গুন দেখবা ।
কখোনোই মনে করবা না যে তুমি একাই এই পৃথিবীতে ভাল, আর সবাই খারাপ বা সবাই ভুল।
আমার সেই স্যার আজ আর জীবিত নেই, জীবিত থাকলে তাকে গিয়ে বলতাম স্যার আপনার সেই কথাগুলো আমাকে গনতানি্ত্রক করেছে। এই ধ্রুব সত্যগুলো সরকারের কানে কিভাবে পেৌছানো যায় তার উপায় যদি বলে দিতেন একবার কত উপকারই না হতো এই জাতির !!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




