আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তার পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের দেশের জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের সেই জনপ্রিয়তায় দ্রুতই ভাটা পড়ে।
ঐতিহ্যবাহী এই দলটির নানান কারনে বার বার জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেও তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। এদেশে আওয়ামী লীগের সাথে পাল্লা দিয়ে যে অন্য জনপ্রিয় দলটি রাজনীতি করে তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু বার বার এ ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ ২০০৮ এর নির্বাচনেও বিএনপি ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর এর পূর্বে জিয়া পরবর্তী সময়ে বিএনপির জনপ্রিয়তা কখোনোই কমেনি। এমনকি বিএনপি যে ৯৬ এর নির্বাচনে জিততে পারেনি সেখানেও তাদের প্রাপ্ত আসন ছিল ১১৫ টির বেশি।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানোতে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই।
আমার শিরোনামে অনেকেরই ইতিমধ্যেই ভুরু কুঁচকে গেছে তা আমি জানি। এই প্রসঙ্গে বলি, এই আওয়ামী লীগ এত জনপ্রিয়তা নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শুরু করলেও ৭৫ পরবর্তী সময়ে কিন্তু তা ধরে রাখতে পারে নি। সত্যি বলতে কি রক্ষী বাহিনীর বর্ননাতীত নৃশংস অত্যাচার ও সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি , দুর্ভিক্ষ ইত্যদি তখনকার আওয়ামী লীগকে এক প্রায় শেষ করে দেয়।
বঙ্গবন্ধুর চাটুকাররা সেই সময়ও তাকে বুঝতে দেয়নি যে দেশের প্রকৃত অবস্থা কি। আওয়ামী লীগে আর যেসবের অভাবই হোক না কেন, চাটুকারের কখোনো কোনো অভাব হয় নি।
তারপরেও বঙ্গবন্ধু কিছুটা খোলসমুক্ত হতে পেরেছিলেন। তিনি মুখ ফুটে বলতে পেরেছিলেন, আওয়ামী লীগ চোরের দল , চাটার দল। তিনি আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করেছিলেন । আর আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠনকে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
আর সেববের ফলাফল কি হয়েছিল তা তো সবারই জানা। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নামটিকে এদেশের মানুষ স্রেফ গালি হিসেবেই ব্যবহার করেছে।
এসবের ধারাবাহিকতায় ৯৬ এর আওয়ামী সরকারও যথষ্টে অজনপ্রিয় হয়ে পরিত্যাজ্য হয়েছিল। সেই সরকারের সময়ও তারা জুজুর রাজনীতি অব্যহত রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার। বিরোধী দলের যে কোনো দাবি বা কর্মসূচীকেই তারা বলতো এসব বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বাঁাচানোর ষড়যন্ত্র।
এসবের পরিনতি কি হয়েছে তা তো আমরা সবাই জানি। তবে মজার বিষয় হলো পরে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের কিন্তু ছেড়ে দেয়নি।
এখোনো এই দলটি একইভাবে জুজুর ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করছে। বিগত চারটি বছর তারা শুধু এই যুদ্ধাপরাধী আর তাদের এক সময়কার সহযোগী জামাত , জামাত করতে করতে কাটিয়ে দিল।
বঙ্গবন্ধুর প্রথম সরকারের সময় যেমন আওয়ামী লীগের পাপের বোঝা এতই ভারী হয়ে গিয়েছিল যে সেই আওয়ামী লীগ বিলুপ্তকরন প্রকৃয়াকে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব আখ্যা দিতে হয়েছে।
একই ভাবে আজ শাহবাগ আন্দোলনকেও দ্বিতীয় বিপ্লব খেতাব দিতে শুরু করেছে কেউ কেউ। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলি এতই অজনপ্রিয় যে তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে মুখ রক্ষার আশায় শাহবাগের বগলে চেপে বসে আছে।
আর ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায় তখনকার আওয়ামী লীগ জাসদের নামে রাজনৈতিক মামলা ও ক্রস ফায়ার দিয়ে যে রেকর্ড করেছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ তাকে বহু আগেই ছাপিয়ে গেছে।
ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। মুলত এখন আওয়ামী লীগের দেশব্যপী জনপ্রিয়তা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কম।
প্রধান বিরোধী দলের সাথে সেই জনপ্রিয়তার পার্থক্যটা সরকার বান্ধব প্রথম আলো ১০ শতাংশ দেখালেও প্রকৃত পার্থক্য তার অনেক বেশি বলেই অনেকে মনে করেন।
এখন মুলত আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিী হয়ে গেছে ঢাকা কেন্দ্রীক। ঢাকার বাইরে পুরো বাংলাদেশে এই দলটি আসলে দাঁড়াতে পারছে না।
আর তাদের রাজনৈতিক মিত্র বাম দলগুলোর নেতাদের তো কোনো কালেই তাদের স্ত্রীরাও ভোট দেন নি। সুতরাং এভাবে আর শেষ রক্ষা হওয়ার কথা নয়।
আওয়ামী সরকার এখন তাদের সকল অন্যায় ঢাকার জন্য বিগত জোট সরকারের শরনাপন্ন হচ্ছে। চাটুকার আওয়ামী বুদ্ধিজীবির দল সরকারের সকল অন্যায়ের সমর্থন দিতে গিয়ে বিএনপি সরকারের সময়কার একই ধরনের অন্যায় কি কি হয়েছিল তা উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করছে।
এই বুদ্ধিজীবিরা এটা কখোনোই ভাবছে না যে এই আওয়ামী লীগকে তো মানুষ বিগত বিএনপি যে যে অন্যায় করেছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে ক্ষমতায় বসায় নি। বরং সেগুলো না করার মুচলেকা দিয়েই তো তারা ক্ষমতায় এসেছে। সুতরাং এসব বুদ্ধিজীবিদের দেয়া আপাত বৈধতা ভোটের রাজনীতিতে ধোপে টিকবে না।
সরকারের হাতে কিছুটা সময় বোধহয় এখেনো আছে। যদি খুব দ্রুত তারা পুরোপুরি গনতানি্ত্রক, ও জনগনকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী কর্মকান্ড শুরু না করে, যদি তারা একই ভাবে দমন , পীড়ন আর ক্ষমতায় থাকার জন্য গোয়ার্তুমী করতে থাকে সেক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্ম যদি আবারো আওয়ামী লীগ শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে তখন সাধারন জনগণকে কি দোষ দেয়া যাবে???