somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসংগঃ ব্লগার = নাস্তিক, এই অপপ্রচারের দ্বায়ভার কার??

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষই ব্লগিং কি জানে না। হয়ত ব্লগিং এর শাব্দিক অর্থ জানে, কিন্তু এই পরিসরে বাস্তবে কি হয় সেটা খুব কম লোকই ভাল করে জানে। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এই মুহুর্তে আপনি বাংলাদেশের যে কোন বড় কর্পোরেট হাউজে যান, গিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করে দেখুন, কয়জন বলতে পারবে বাংলা ব্লগ জগতে কি হয় বা কি ধরণের ব্লগিং চর্চা হয় ?? সেখানে আলেম সমাজেরতো এই বিষয়গুলো জানার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের কয়জন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা ব্লগিং করেন?? যদিও ইদানিং বেশ কিছু ইসলামী সাইট বিভিন্ন মাদ্রাসা বা ইসলামিক সেন্টার থেকে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে মূলতঃ ইসলাম এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়। ব্লগিং নিয়ে আলোচনা তেমন একটা হয় না বা কেউ সেটা নিয়ে চিন্তাও করে না।

নাস্তিক নামধারী ধর্ম বিদ্বেষী এবং অবমাননাকারী ব্লগারদের কর্ম-কান্ড সাধারণ মানুষের সামনে চলে আসার প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষের মধ্যে একটা ভুল বার্তা পৌছে গেছে, যে ব্লগার মানেই নাস্তিক। আমার অনেক সহব্লগারই দেখছি এটা নিয়ে খুব প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। প্রথম প্যারার বক্তব্যের নিরিখে চিন্তা করলে, এই ভুল ধারণা ভাংগানোর দায়িত্ব মূলতঃ আমাদের ব্লগারদেরই। এটা নিয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার নেই। এই প্রসংগে বছর পাচেক আগে অফিস থেকে করানো একটা "Team Building" ট্রেনিং এর কথা মনে পড়ে গেল। মালয়শিয়ান এক ট্রেনারের তত্ত্বাবধাণে করানো সেই ট্রেনিং এ একটা টাস্ক ছিল যেখানে ১০/১৫ জন কলিগ একটা লাইন করে দাড়িয়েছে। একদম শুরুতে যে ছিল, তার কাছে কাগজে লেখা একটা বার্তা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকে তার পেছনের জনকে কানে কানে সেই বার্তাটি বলবে এবং শেষ ব্যাক্তির কাছ থেকে ট্রেইনার সেই বার্তা শুনবেন। খুব ইন্টারেস্টিং একটা টাস্ক। কারণ, পরিশেষে দেখা গেল মূল বার্তার সাথে শেষ ব্যাক্তির বলা বার্তার বিস্তর তফাত!! এটাই কিন্তু বাস্তবতা! এই ডামাডোলের মধ্যে, "নাস্তিক নামধারী ব্লগারদের ধর্ম অবমাননা" শেষ পর্যন্ত "ব্লগারদের ধর্ম অবমাননা" হয়ে গিয়েছে। তারপরেও আমি পত্রিকায় দেখেছি, হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, নাস্তিকদের নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যেসব নাস্তিক ব্লগার ইসলামকে নিয়ে অবমাননাকর লেখা লিখেছে তাদের বিচার দাবী করছেন তারা। এরপরেও হয়ত কোন বক্তা নাস্তিক ব্লগারদের কথা বলতে গিয়ে ব্লগার বলে ফেলবেন, কিন্তু সেকথার অর্থ আমাদের, অন্ততঃ ব্লগারদের না বোঝার কথা না। আর এই ভুল ভাংগানোর দায়িত্ব আরেকটু যাদের ছিল, সেই মিডিয়া যার যার নিজের স্বার্থে খেলেছে, যেহেতু আমাদের দেশের সব মিডিয়াই কোন না কোন দলের পক্ষাবলম্বন করে। তাই আজকে আমাদের ব্লগারদেরকেই, আমাদের কথা এবং লেখার মাধ্যমে এই বার্তাটি সবার কাছে পৌছে দিতে হবে ব্লগার মানেই নাস্তিক নয়!

একটু পেছনে যদি ফিরে তাকাই, হেফাজতে ইসলাম সংগঠনের ব্যানারে নাস্তিক নামধারী ধর্ম অবমাননাকারীদের যে শাস্তির দাবী, সেটা কিন্তু প্রতিটি মুসলমানেরই দাবী। অন্ততঃ কেউ যদি নিজেকে মুসলমান দাবী করেন, আর আল্লাহ, তার রাসূল(সঃ) এবং আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলামকে নিয়ে কুরুচীপূর্ণ প্রচার এবং অবমাননাকর লেখার জন্য কোন প্রতিবাদ না করেন এবং তাদের শাস্তির দাবী না করেন, তাহলে সেটা ঈমানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকটে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এমনকি সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তর হব’। [ মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী, হা/১৫ ]

সবচেয়ে দুঃখজনক কথা, ব্লগে যখন নাস্তিক নামধারী ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল(সঃ) এবং ইসলামের মহান ব্যাক্তিবর্গকে নিয়ে যা খুশী তা বলেছে, তখন এদের প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন গুটিকয়েক ব্লগার। তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আর অধিকাংশ ব্লগার সুশীল থাকতে চেয়ে এসব দেখেও এড়িয়ে গেছেন। অনেকেই হয়ত মন থেকে ঘৃণা করেছেন কিন্তু কিছু বলেন নি। যারা প্রতিবাদ করেছেন, ব্লগ কর্তৃপক্ষ তাদের উপরই হয়েছেন খড়গহস্ত। তাহলে আজকের ব্লগার=নাস্তিক, সাধারণ মানুষের এই ধারণা সৃষ্টির দ্বায়ভার কার? নাস্তিক নামধারী কিছু ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগার এর বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার, অধিকাংশ সুশীল ব্লগারের নির্লিপ্ততা, প্রতিবাদী ব্লগারদের ব্লগ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দমন আর ঐসব ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগারদের জামাই আদর করে লালন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্লগারদের প্রতিনিধি হিসেবে পাশে বসিয়ে আদর করাই কি আজকের এই অবস্থার জন্য দ্বায়ী নয়?

আজকের এই পরিস্থিতির দ্বায়ভার আসলে আমাদেরই। যেমন আমাদের কর্ম তেমন তার ফল... :|

পরিশেষে হেফাজতে ইসলাম নেতা এবং কর্মীদের প্রতি বলছি (যদি কেউ পারেন, তাদের কাছে পৌছে দেবেন), ব্লগার মানেই নাস্তিক ব্লগার নয়। সকল নাস্তিক ব্লগারই ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগার নয়। শাহবাগে আন্দোলনকারী সকল ব্যাক্তিই ব্লগার নয়, আর যারাই বা ব্লগার আছেন তাদের সবাই নাস্তিক নয়, আর যে কয়জন নাস্তিকই সেখানে আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে সবাই ধর্ম অবমাননাকারী নয়। সুতরাং, আপনাদের শাহবাগের আন্দোলনের প্রতি কোন বিদ্বেষ পোষণ করার দরকার নেই। এতে আপনাদের আন্দোলনের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি হচ্ছে। বরং, নাস্তিক নামধারী সকল ধর্ম অবমাননাকারী, সে ব্লগিং করুক আর নাই করুক, তাকেই আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী করুন, সে মতে আন্দোলন করুন। আমরা আপনাদের সাথে আছি।

পবিত্র কুরআন মজীদের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে পোস্ট শেষ করছিঃ

“"তারা কি একথা জেনে নেয়নি যে, আল্লাহর সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে যে মোকাবেলা করে তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে দোযখ; তাতে সব সময় থাকবে। এটিই হল মহা-অপমান। মুনাফেকরা এ ব্যাপারে ভয় করে যে, মুসলমানদের উপর না এমন কোন সূরা নাযিল হয়, যাতে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় অবহিত করা হবে। সুতরাং আপনি বলে দিন, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাক; আল্লাহ তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন যার ব্যাপারে তোমরা ভয় করছ।আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার।"
~~[সূরা আত তাওবাহ ৯:৬৩-৬৬]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সরল পথে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×