মাঝে মাঝেই ব্লগে দেখি কেউ কেউ নারীর অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন ধরণের পোস্ট দিয়ে থাকেন। অনেকেই এমন সব ব্যাপারের অবতারণা করেন, যেন মনে হয় দুনিয়াতে নারী পুরুষের মাঝে কোনই ভেদাভেদ নেই! নারী পুরুষ একেবারেই সমকক্ষ। অথচ প্রকৃতিগতভাবেই নারী পুরুষ কখনোই এক নয়। আল্লাহ নিজেই নারী এবং পুরুষকে আলাদাভাবে তৈরী করেছেন এবং তাদের প্রত্যেককে কিছু স্বাতন্ত্র দিয়েছেন যেটা একটি সুস্থ সমাজ রচনা করা এবং মানব জাতির বংশধারাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লগে জনৈক নারী ব্লগারের একটি পোস্ট পড়ছিলাম আজকে। তিনি সেখানে নারী জাগরণের প্রথিকৃতদের অবদানের কথা স্বীকার করে নারীদের লেখাপড়া শেষ করে দশ দেশ ঘুরে বুড়ো বয়সে বিয়ে করার উৎসাহ দিচ্ছেন। তার ভাষায় এই সমাজের প্রতিটি মানুষ একজন নারীর আশ্রয়ে ১০ মাস ভিখারির মত পালিত হয়ে তবেই পৃথিবীর মুখ দেখেছে। তাই নারীদের তিনি সেই ভিখারির ভয়ে ভীত হয়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে নিষেধ করেছেন।
ঠিক এই ধরণের চিন্তা চেতনার প্রচার প্রসারের কারণেই আমার মতে আজকে সমাজের এই দুরবস্থা। ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই এক ধরণের অসুস্থ মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়ে উঠছে। আজকে আমাদের সন্তানদের আমরা এটা বোঝাতে ব্যার্থ হচ্ছি, সমাজে নারী এবং পুরুষের কিছু স্বতন্ত্র ভূমিকা আছে। নারী, পুরুষ উভয়েই কাজ করতে পারে, সেটা কোন সমস্যা না, আমি যেহেতু ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে চলার চেষ্টা করি, তাতে মনে করি মুসলিম নারীদের অবশ্যই পর্দার বিধান মেনেই বাইরে কাজ করতে যাওয়া উচিত, তাকে কাজের ক্ষেত্রও সেভাবেই নির্বাচন করতে হবে যাতে পর্দার ব্যাঘাত না ঘটে। যাহোক, তার সেই পোস্টেই আমি কিছু কথা বলেছি যেটা আমি সবার সাথেই শেয়ার করতে চাচ্ছি।
আপনি অবশ্যই একজন মেয়ে মানুষ এবং একজন মানুষ। প্রকৃতি আপনাকে মেয়ে মানুষ হিসেবেই পাঠিয়েছে, আপনাকে সন্তান ধারণের ক্ষমতা দিয়ে সম্মানিত করেছে, পুরুষকে কিন্তু সেটা দেয় নি। সুতরাং, আপনাকে আপনার স্বাতন্ত্র্য বা সীমাবদ্ধতা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। বর্তমান সমাজে মেয়েদের সবচেয়ে যে বিষয়টা দিয়ে বোকা বানানো হয়েছে, সেটা হল মেয়েদের মধ্যে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে, পরিবাররের অভ্যন্তরীন কাজের ব্যবস্থাপনা এবং সন্তান লালল পালন খুবই নীচু প্রকৃতির একটা কাজ। বরং, বাইরে গিয়ে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে বিশাল কোন পদবী নিয়ে কাজ করতে পারলেই নারী জীবন সফল ! (এখানে আরো অনেক নোরাং বাস্তবতার অবতারনা করা যেত, করলাম না, আশা করি সবাই নিজ বুদ্ধিতে বুঝে নিবেন)। আর এটাই হল সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করার সবচেয়ে সুন্দর বুদ্ধি, যেমনটা আজকে আমরা পাশ্চাত্যে দেখছি ! কেউ এই ব্যাপারটা মেয়েদের বোঝাচ্ছে না যে, একজন পিতা যেমন ঘরের বাইরে খেটে আয় করছেন, তেমনি একজন মাতা ঘরের ভেতরে ব্যবস্থাপনা এবং সন্তান লালন পালনের মাধ্যমে কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন না! আমি নিজেই দেখেছি, অনেক বড় আপু চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র তার সন্তানদের বেড়ে ওঠাতে মায়ের অবদানের ঘাটতি হচ্ছে এটা উপলব্ধি করতে পেরে।
আপনি কি জানেন একজন নারীর মোটামুটি ৪৩ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রজঃনিবৃত্তি ঘটে যার মাধ্যমে তার সন্তান ধারণ ক্ষমতা রহিত হয়ে যায়? রজঃনিবৃত্তির কারণে নারী জীবনে বেশ কিছু শারীরবৃত্তিয় পরিবর্তন ঘটে, ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়াতে যোনি পথের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা হ্রাস পায়, যার কারণে যৌন সংগম কষ্টকর হয়ে পড়ে (একটি জরিপে দেখা গেছে ৮৪% মহিলা রজঃনিবৃত্তির পর সহবাসকে পেইনফুল বলেছেন), অনেক মহিলার যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়। হ্যা, সমাধানের চেষ্টাও আছে, চিকিৎসকের পরামর্শে হয়ত পিচ্ছিলকারক ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু আমি যেটা বোঝাতে চাইছি, স্বাভাবিক যৌন জীবন কিছুটা হলেও ব্যহত হয়। আপনি কি জানেন বেশী বয়সে গর্ভধারণ করলে ত্রুটিযুক্ত সন্তান উৎপাদনের ঝুকি বেড়ে যায়? আপনি কি জানেন বেশী বয়সে, গর্ভধারণ করার ক্ষমতাই অনেক সময় কমে যায়? আপনি কি জানেন ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মেয়েদের প্রথম সন্তান হওয়া উচিত, নইলে অনেক ধরণের জটিলতার আশংকা চলে আসে? আপনি কি এটা বোঝেন, নারী হওয়ার কারণে প্রকৃতিগতভাবেই এই সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিতে আপনি বাধ্য? (উপরের সবগুলো তথ্যই চিকিৎসা শাস্ত্র মতে বলা, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়।)
তাহলে আপনি কেন মেয়েদের বেশী বয়সে, দশ দেশ ঘুরে বিয়ে করার পরামর্শ দিচ্ছেন? কেন আপনি একটি মেয়েকে ১৮ বছরে বিয়ে করে তার যৌন জীবন উপভোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন না, হালাল ভাবে? বুড়ো বয়সে বিয়ে করার এই উৎসাহের কারণেই (কথাটা ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) কিন্তু আজকে সমাজ জুড়ে ব্যাভিচার ছড়িয়ে পড়েছে। আপনি যতই বলুন, মানুষের জৈবিক চাহিদা কিন্তু কোন লেকচার শুনে কাজ করে না। পার্কে গিয়ে দেখুন, হোটেল/ফ্ল্যাটে খবর নিয়ে দেখুন, তরুণ-তরুণীরা অবাধ এবং অবৈধ যৌনাচারে জড়িয়ে পড়ছে। কুমার/কুমারী ছেলে-মেয়ে আজকের সমাজে খুজে পাওয়াই দুষ্কর। এটাই কি পুরুষ এবং নারীর উন্নতি?
মনে রাখা প্রয়োজন, বিয়ের উদ্দেশ্য কিন্তু শুধু সন্তান উৎপাদন নয়, পুরুষ এবং নারী উভয়ের চরিত্র হেফাজত করার জন্য বিয়ে অত্যন্ত জরুরী। এজন্যই আল্লাহ সামর্থ্যবান নারী পুরুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বলেছেন।
হাদিসেও বলা আছে, তিনটি কাজে দেরী না করতে, তার মধ্যে একটি হল, বিবাহযোগ্য মেয়ের উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেলে বিয়ে দিতে দেরী না করা। এই বিধানগুলো সৃষ্টিকর্তা না বুঝে দেন নি। যাকে তিনি বানিয়েছেন, তিনি জানেন, কোন নিয়মে তাকে চলতে হবে, কিসে সে ভাল থাকবে।
চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন, আপনি মেয়ে মানুষই আর আমি পুরুষ মানুষই। আমার কাজ আপনাকে দিয়ে হবে না আর আপনার কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। পুরুষ নারী পরস্পরের সহযোগী, প্রতিদন্দ্বী নয়। নারী এবং পুরুষ যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তবেই আমরা একটা সুস্থ এবং সুন্দর সমাজ পাব। পাশ্চাত্যের ধারণার অন্ধ অনুকরণ আমাদের অন্ধকারেই নিয়ে যাবে, আলোর পথে নয়।
আমি এখন ইরানে আছি। এটা নামে ইসলামিক রিপাবলিক হলেও কাজে এরা ওয়েস্টার্ণ। তাই এদের সমাজও ভেতরে ভেতরে উচ্ছন্নে যাচ্ছে, বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায় না। বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে এখানে। হাদিসে তালাককে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল চুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০