কেশবতীর গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
'কেশবতীর গল্প' নিয়ে একটি ভূমিকাপত্র__
এক নাটকের কাহিনী লেখার জন্য চেপে ধরেছিলো আমার এক বন্ধু। তার চাপাচাপিতে আমার কাহিনী লেখা শেষ হলেও তার নাটক আজও নামেনি। (আসলে কবিকে দিয়ে আজাইরা এবং বাজাইরা গল্প লেখানো-ই তার আসল উদ্দেশ্য ছিলো কিনা বুঝতে পারলাম না!) তখন কাহিনী লিখতে গিয়ে কতো যে কাহিনী, কতো ভাবনা! পাবলিক কি খাবে, কোনটা চলবে, কোনো পটভুমিতে লিখতে হবে, কোন বয়সীদের টার্গেট করতে হবে... আরো কতো কি! (যারা লিখেন তারা তো বুঝেন ব্যাপারটা।) তখন ভাবলাম, প্রতিদিন আমাদের ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কত কাহিনীর জন্ম হচ্ছে সেখান থেকে না হয় একটা নিয়ে নেই। আর আনুষঙ্গিক অন্যান্য দিকগুলো বাদ দিয়ে প্রেমটাকেই উপজিব্য করে তোলার মহান দায়িত্ব নিয়ে শুরু হলো লেখা।
ও-মা, আরেক ঝামেলা! সব সত্য ঘটনা চলে আসছে কাহিনীতে, জন্ম নিচ্ছে নতুন গল্প!!!
বন্ধু বললো- আসলে ক্ষতি কি?
তাই, কেশবতীকে নিয়ে শুরু হলো কল্পনা আর বাস্তবের সংমিশ্রণে কাহিনী বুণনের পালা...।
...গল্পটা শেষ করে যাদের পড়তে দিয়েছিলাম তাদের মধ্যে ছিলো আমার এক ক্লাশমেট (বান্ধবী), ছোট বোন আর সেই কেশবতী!
তাদের প্রতিক্রিয়া ছিলো এমন__:
__: হুমম, ভাইয়া তুমি বরং গল্পই লিখো। কবিতা কি লেখো মাথা-মুন্ডু কিচ্ছু বুঝি না! (ছোটবোন)
__: তুই এটা লিখেছিস? ছি: ছি: ছি: তোর কলমে এমন বাজাইরা প্রেমের কাহিনী কেমনে বের হলো? তুই আর কোনোদিন গল্প লিখিস না, সাবধান! (বান্ধবী)
__: '... ...' (কেশবতী)।
বন্ধুরা, কেশবতীর মন্তব্য উল্লেখ্য করলাম না। তা বরং পূর্ণ কেশবতীকেই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।
ডিপার্টমেন্টে নবীণবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
মেয়েদের প্রেভিলিয়নের দিকে নজর রাখার দায়িত্ব পড়েছে প্রিতম, তৌসিফ আর মৃদুলের উপর। পিছন দিকে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছে আর মঞ্চের অনুষ্ঠান দেখছে। হঠাৎ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি মেয়ের দিকে হাত তুলে প্রিতম বলে উঠল- বন্ধু, দ্যাখ ওই মেয়েটার কী লম্বা চুল! যাকে বলে একেবারে কেশবতী!
মৃদুল ওদিকে তাকিয়ে বলল, মনে হয় পাশের কোনো কলেজের, অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে। তথাকথিত গেস্ট হবে আর কী! তৌসিফ একটু ভেবে বলল, না-রে, মনে হয় আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই, নতুন এসেছে। ঠিক ভালো ভাবে চিনতে পারতেছিনা। প্রিতম একটু ভেংচি মার্কা চেহারা করে বলে, আমাদের ভার্সিটির! আবার আমাদের ডিপার্টমেন্টের? তাও কী-না আমাদের চোখে পড়ে নি! কথাগুলো শেষ করে প্রিতম হাসলো। তৌসিফ আবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল- আরে, হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে এমন লম্বা চুলের একটা মেয়ে দেখেছি। প্রিতম ব্যাপারটা বাদ দেয়ার মত করে বলে, আচ্ছা বাবা দেখেছিস ভালো হয়েছে। এখন দেখা গেল মেয়েটা আমাদের দিকে ফিরে তাকালো এ্যাঁইয়া বড় বড় দু‘খানা দাঁত বের করে। তারপর ধর গিয়ে, চেহারাখানা একেবারে তেলেছমাতি বেগমের মত! কথা শেষ হতেই তিনজন একসাথে হেসে উঠল।
তৌসিফ আবার বলল, না-না, তার উল্টোটা হবে। মৃদুল তৌসিফের থুথ্নিতে ঝাঁকি দিয়ে বলল, তুমি তো মামা, মি. আশাবাদী! তৌসিফ থুথনি থেকে মৃদুলের হাত সরিয়ে বলে, হলে?
তখন প্রিতম হেসে হেসে বলে, তাহলে এই তিন বছরে যে অসাধ্য সাধন করতে পারিনি, তার জন্য আদা আর কোল্ডড্রিংক্স খেয়ে লেগে যাবো!
এমন সময় অন্য সারি থেকে একটি মেয়ে এসে কেশবতী মেয়েটির পিঠে হালকা করে থাপ্পর দিল। সে পিছন ফিরে তাকিয়ে হেসে বলল, আরে মৌলি তুই? মৌলি বলল, তোদের না নবীণবরণ? তুই ভিতরে যাস নি? কেশবতী জানায় অনুষ্ঠানে আসতে তার দেরী হয়েছে, তাই সে ভেতরে যায় নি।
তৌসিফ তখন দাঁত কটমট করে বলে, বলেছিলাম না মেয়েটাকে কোথায় দেখেছি। আমি ওকে ভর্তির সময় দেখেছি। তোমরা তো ভাবো আমি শুধু গুল মারি! এমন সময় প্রিতমের দিকে তাকিয়ে মৃদুল বলে, কেউ যদি লাইনে দাঁড়াতে না চাও তাহলে বলে দাও। মেয়েটা দেখছি জটিল সুন্দরী! প্রিতম কেশবতীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলে, আর কেউ লাইনে আসতে চাইলে খুন-খারাপি হয়ে যাবে! তৌসিফ খুব আগ্রহী হয়ে বলে, চল্ তাহলে মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আসি। জুনিয়র আছে কোনো প্রবলেম নাই। প্রিতম বাঁধা দিয়ে বলে, না-না, এভাবে না। আগাতে হবে অন্য প্রসেসে। ওর পাশে দেখ বড় আপু একজন আছে। উনাকে ধরতে হবে। মৃদুল বড় আপুকে চিনতে পেরে বলে, আরে সোনালি আপু দেখি! দাঁড়া আমি উনাকে ডেকে আনছি।
সোনালি এসেই জিজ্ঞেস করলো- কিরে তোরা! বল কেন ডেকেছিস? তৌসিফ বলে, আপু ঘটনা তো একটা ঘটে গেছে। সোনালি মুছকি হেসে বলে, তা তো বুঝতে পারছি। তবে সেটা কী? মৃদুল জানায়, ওই যে আপনার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল না! ওই যে চুল লম্বা মেয়েটা! সোনালি আবার জিজ্ঞেস করে- হ্যাঁ, কী হয়েছে?
তখন প্রিতম আমতা আমতা করে বলে, না আপু, এখনো কিছু হয় নাই। তবে হওয়ার জন্যই আপনার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন আর কী! সোনালি চোখ বড় করে বলে তাহলে এই অবস্থা! মেয়েটা কী এই বিল্ডিং এর?
সোনালির প্রশ্নের উত্তরে তৌসিফ জানায়, শুধু এই বিল্ডিং এর না, আমাদের ডিপার্টমেন্টেরও!
শুনে সোনালি মাথা দোলিয়ে বলে, তা ভালো। তবে আমাকে কী করতে হবে? প্রিতম জানালো, আপু, আপাতত নাম ও নাম্বারটা নিয়ে দিলেই হবে। সোনালি হেসে হেসে বলে- আপাতত আর ভাইতত যাই বল না কেনো, শুধু নামটা জেনে দিতে পারব কিন্তু নাম্বার না। জুনিয়র একটা মেয়ে, নাম্বার কীভাবে চাই! উত্তরে মৃদুল বলল, কী বলেন আপু! নামতো আমরাও জানতে পারব। আপনি কৌশল করে জাস্ট নাম্বারটা নিয়ে আসেন। প্রিতম একটু অনুণয়ের সুরে বলে, প্লিজ আপু! মৃদুল আবার যুক্ত করে- এই না হলে বড় বোন! ছোট ভাইদের যদি কোন উপকারই না করলেন! সোনালি একটু হেসে বলল, তোরা না! আচ্ছা দেখতেছি। তোরা একটু খাবার-দাবারের ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখিস!
সবাই সমস্বরে, অবশ্যই! অবশ্যই! বলে উঠে।
ভাসির্টির ভেতর একটা পুরনো দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিতম। তার পাশে দেয়ালের উপর বসে আছে মৃদুল। তৌসিফ বসে আছে সামনের ব্রেঞ্চে। তার সাথে আছে ইনন ও পায়েল। মৃদুল তখন সবার উদ্দেশ্যে বলল, এই ছিল মুটামুটি গতকালের কাহিনী। এখন প্রিতম কীভাবে আগাবে তাই বলবে। মি. প্রিতম আপনি শুরু করেন। তার আগে তৌসিফ হাত তুলে বলে, আমার কিছু বলার আছে আজকের হাউজের সামনে। ইনন বলল, অনুমতি দেয়া হইল। আপনি বলিয়া বলিয়া যাইবেন না, বসিয়া থাকিবেন। তৌসিফ শুরু করে, যার নাম্বার পাওয়া গেল তার নামটার ব্যাপারে এই গরিবের একটু কৌতুহল আছে!
পায়েল টিপ্পনি কেটে জানতে চায়, আর কোনো ব্যাপারে নাই তো? তৌসিফ উত্তরে বলে, ওসব না হয় না-ই বললাম! আমি তার নাম নিয়ে দু‘চারটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম! শরীফা রাহমান টিয়া ; টিয়া কেনো? প্রিতম একটু ক্ষেপে যায়। বলে, ওই বেটা আমি ওর নামের আকিকার সময় ছিলাম নাকি? মৃদুল হেসে হেসে বলে, আবার শামসুর রাহমানের কোনো আত্নীয়-টাত্নীয় নয়-তো! তৌসিফ ভেটো দিয়ে বলে, এটা অবশ্যই না। কেননা, একজন কবি তার কারো নাম টিয়ে রাখবে না। পায়েল বলে, রাখতেও তো পারে। কবিরা তো একটু খেয়ালি হয়। তাছাড়া রবি ঠাকুর নিজের নাম রেখেছিলেন ভানু সিং। ‘সিং’ ব্যাপারটা কী অদ্ভূত! তৌসিফ আবার বলে, ময়না রাখলে তো ভালই হত। গান গাওয়া যেত- 'ও আমার ময়না গো...'
প্রিতম হেসে হেসে সায় দিয়ে বলে, অসুবিধা কী? এখন গাইবি- ও আমার টিয়া গো... সবাই হাসে।
ইনন প্রসঙ্গে নিয়ে আসে। বলে, আচ্ছা এবার বল কী প্ল্যান করলি? পটাবি কীভাবে? প্রিতম একটু নড়েচড়ে আরাম করে দাঁড়িয়ে বলে, আমি তাহলে তোদেরকে ব্যাপারটা বুঝাচ্ছি। ৩ মাসের একটা এসএমএস প্রজেক্ট। তিন গুণ ত্রিশ = ৯০ টা এসএমএস করবো। ফোন করব শুধু বিশেষ দিনগুলোতে। তবে প্রথম ফোন করব এসএমএস পাঠানোর ঠিক এক সপ্তাহ পর। দম নিয়ে আবার বলে, তোদের যার কাছে যা যা এসএমএস আছে দিস। আশা করছি তিন মাস পর তোদেরকে তোদের ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবো! মৃদুল হেসে বলে, এমন পিকিউলিয়ার প্ল্যান কেনো বাপ? প্রিতম জানায়, আসলে আমি চাই আগে কথাবার্তা হউক। দুজন দুজনের সম্পর্কে কিছু জানি। দেখি সে কারো সাথে এঙ্গেজ কী-না? চোখের দেখাটাই তো আর সব না! পায়েল যোগ করে, তাই! চুল তো আর চীরদিন না-ও থাকতে পারে, বাট মন থাকবে। ইনন চোখ ইশারা করে বলে, জটিল প্ল্যান! তবে বন্ধু! আমার মনে হচ্ছে তুমি এইখানে ধরা খাবা! প্রিতম বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে জবাব দেয়, দ্যাখেন মিস ডাবল প্রিপজিশন. আপনি নামের দিক দিয়ে বড়লোক হতে পারেন। কারণ আপনার নামে আছে জোড়া প্রিপজিশন মানে in আর on! কিন্তু আমার বাবাও কম না! অন্ততঃ একটা প্রিপজিশন হলেও নামের সাথে দিছে। ওই প্রিপজিশনের কসম! টিয়া আমারই হবে। প্রিতমের কথা শোনে পায়েল বলে, তুই কিন্তু জিদ করছিস! প্রিতম গায়ে না নিয়ে বলে, করলাম! এই মন্তব্যে ইনন হঠাৎ বলে উঠে, তাহলে ধর বাজি! প্রিতম বলে, এখানে আবার বাজির কী আছে? তৌসিফ জিজ্ঞেস করে, মামা সাহসে বুক কাঁপে বুঝি? প্রিতম জানায়, বুক কাঁপবে কেন! মৃদুল যোগ করে, যদি তুই সাকসেসের ব্যাপারে ওভার সিওর থাকিস- তাহলে হয়ে যাক! প্রিতমও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, ওকে, আমার আপত্তি নেই! আগ্রহের সাথে ইনন বলে, ওকে! তাহলে আজ থেকে তিন মাস পর কোন এক চাইনিজে দেখা হচ্ছে সবার। দোয়া করি বিলটা যেন তোকে না দিতে হয়! আফসোসের সুরে পায়েল বলে, বেচারাকে চাপ দিস না ইনন! প্রিতম কিঞ্চিত রাগত স্বরে বলে, হোয়াট! তোদের জেলাস হচ্ছে বুঝি! তোদের পটাই নি বলে? পায়েল উত্তরে বলে, এই ক্ষমতা তোমার নাই মামা! প্রিতম- আচ্ছা দেখিস তাহলে! মৃদুল হিসেব করে বলে, তিন মাস মানে আজ নভেম্বরের ১৪ তারিখ আগামী ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখ। তৌসিফ চেঁচিয়ে বলে, তার মানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে! প্রিতম খুশি হয়ে ওয়াও উচ্চারণ করে উঠে। তারপর বলে, আশা করছি তোদের বিমুখ করব না।
ইনন বলে- আমরাও আশা করছি বিমুখ হব না!
পরদিন থেকে প্রতি রাতে দশটায় নিয়ম করে নতুন একটা মোবাইল থেকে প্রিতম নিয়মিত ভাবে এসএমএস করতে থাকে। আর ক্যাম্পাসে টিয়ার সহপাঠি কিংবা তার নিজের বন্ধু-বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করে টিয়া সম্পর্কে জানতে থাকে। এই জানার পাশাপাশি সে মুটামুটি রুটিন করে টিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে থাকে। লাইব্রেরী, ক্যান্টিন, ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ যেখানে তাকে পাওয়া যায়; প্রিতম সেই সকল জায়গায় আনাগোনা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে কাস আর কাসমেটদের সাথে একটা ছোটোখাটো গ্যাপ তৈরী হয়। বন্ধু-বান্ধবরা অনেকে টিজ করে বলে, এক সপ্তাহেই এই অবস্থা! পরে তো দেখছি আমাদের একেবারে ভুলে যাবি রে প্রিতম। তবে এক সপ্তা টানা কাটায় কাটায় দশটার সময় এসএমএস করেও কোনো সারা পায়নি সে। তার মোবাইল অন থাকা সত্তে¡ও কখনো কোনো এসএমএস করেনি টিয়া অথবা মিসডকল কিংবা কল। প্রিতম ভাবে মেয়েটা বড় কঠিন! একে পটাতে বেগ পেতে হবে নিশ্চিত। তারপরও সে হাল ছাড়ে না। সে ডিটারমাইন্ড হয় তিন মাস এসএমএস এর ব্যাপারে। এভাবে এক সপ্তা পর প্ল্যান মোতাবেক একদিন রাতে এসএমএস না করে দশটার এক ঘণ্টা পর অর্থাৎ ঠিক এগারোটায় ফোন করে প্রিতম।
_: হ্যালো! স্লামালাইকুম।
-) কেমন আছেন? সালামের উত্তর না দিয়ে প্রিতম জিজ্ঞেস করে।
_: ভালো আছি, কিন্তু আপনি কে? টিয়ার প্রশ্ন।
-) আমি সে, যে প্রতিদিন রাত দশটায় আপনাকে এসএমএস করে।
_: তা-তো নাম্বার দেখেই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আপনি এসএমএস করেন কেন? আর ফোন-ই বা করলেন কেন? আমি সাধারণত অপরিচিত নাম্বার রিসিভ করি না এবং কথা বলতেও আগ্রহ পাই না।
-) ওকে! আমি আপনাকে বিরক্ত করবো না। আমার এসএমএস গুলোর শেষ অক্ষর দেখে হয়তো নাম জেনে গেছেন; তার পরও বলছি- ‘Pretoom’
_: তো! ও-পাশ থেকে সংক্ষিপ্ত উত্তর।
-) তো-কিছু না। ভাবছি নামটা ÔWorld name championship’ এর জন্য পাঠাবো। আপনার কাছে কেমন লাগল; তা-ই জানতে চাচ্ছিলাম আর কি! প্রিতম হেসে উত্তর দিল। আ...চ্ছা! উত্তরটা পেয়ে গেলাম। যাই হউক, রেখে দিই। চুলায় কিছু চড়িয়েছেন বুঝি?
_: আপনি তো বড় অদ্ভূত! চুলায় কি চড়াবো?
-) না। যে ভাবে তাড়াহুড়া করছেন তাই ভাবলাম...
_: হ্যাঁ, চুলায় চাল বসিয়েছি। এখন তরকারি কুটব, মাছ বানাবো, রাঁধবো, খাবো এবং ফোন রাখবো। ok!
-) ok, রাখেন। তবে মাঝে মধ্যে মাংস-টাংস রাঁধেন কী-না খুঁজ নেব।
_: never-ever! আমার নাম্বারে পরিচিত ছাড়া কেউ ফোন দেয় না এবং আমি অপরিচিত নাম্বার রিসিভ করিও না। সুতরাং...
-) কই, আপনার নাম্বার দেখে তো মনে হচ্ছে না এটা শুধু পরিচিতজনদের জন্য! আমার কল তো গেল। তাছাড়া আপনার অভিবাবক দেখছি বেশ কট্টরপন্থি!
_: আমার বাবা কখনো এমন না। এ রকম মন্তব্য কখনো করবেন না।
-) আসলে অন্য অভিবাবকের কথা mean করছিলাম!
_: এর বাহিরে কোনো অভিবাবক থাকুক; এটা আমি পছন্দ করি না।
-) Fine কিন্তু well wisher অথবা Partner এর ক্ষেত্রে ?
_: ভেবে দেখিনি অথবা বলতে পারেন আগ্রহ নাই।
-) কারণটা জানতে পারি?
_: না, পারেন না।
-) ok! কিন্তু চালের কনডিশনটা তো জানতে পারি?
_: (ও-পাশ থেকে হাসির শব্দ আসে।)
-) তাহলে ভালো থাকবেন।
_: ok।
-) বাই। লাইন কেটে গুণগুণ করে গান ধরে প্রিতম।
‘ওরে আমার টিয়া পাখি চিননা আমারে, তুমি চিননা আমারে। যে জন তোমার মন জিতিবে এসএমএস করে, তুমি চিননা তারে।’
এভাবে আরো কিছুদিন কথা বলে, বিভিন্ন জায়গায় স্বতঃস্ফুর্ত টিয়াকে দেখে এক সময় প্রিতমের সিরিয়াসলি ভালো লেগে যায়। আর প্রিতম যেহেতু চায় না টিয়া তার কোনো কারণে বিরক্ত হউক, তাই সে যখন-তখন ফোন কিংবা সরাসরি দেখা করে না। শুধু আড়াল থেকে, কখনো চলতি পথে, লাইব্রেরী, ডিপার্টমেন্ট কিংবা ক্যান্টিনে দেখে নেয়। টিয়ার দৈনন্দিন রুটিনের সাথে মিলিয়ে এগোতে থাকে প্রিতমের ভার্সিটির দিনগুলো। অথচ সামনে তার অনার্স ফাইনাল। কিন্তু কাসের প্রতি অমনোযোগি। তাই কাসমেটদের সাথে বেড়ে যাচ্ছিল দূরত্ব। এই কয়দিনে কেমন পাল্টে গেছে প্রিতম। তার বন্ধুরা এই ব্যাপারটা মার্ক করে, জানতে চায় তার কী হয়েছে। ইনন তো একদিন বলেই ফেলল, এখনই যে অবস্থা! টিয়াকে পেলে তো আমাদের চিনবি নারে প্রিতম। প্রিতম হাসে। সে ভাবে কীভাবে বুঝিয়ে বলা যায় টিয়াকে তার মনের কথা। এর ভেতর একদিন এসএমএস এল টিয়ার। সে যে কী খুশি, পারলে লাফায়। বার বার পড়ল সেটা।
টিয়া লিখেছেÑ ‘ আপনি অনেকদিন যাবৎ প্রতি রাতে দশটায় এসএমএস পাঠান। ব্যাপারটা ইন্টারেসটিং। কিন্তু আমি ইন্টারেস্ট পাই না। আমি চাই, আপনি আর আমাকে কখনো এসএমএস করবেন না। কখনোই না।’
এই অসম্মতিমূলক এসএমএস টা-ই প্রিতম তার মেসের সকলকে দেখায়। তার কেনো যেনো মন খারাপ হয় আবার আনন্দও হয়। সে ওই হিন্দি ডায়লগটার মত ভাবে, ‘নাফরাত্ হি সাহি, লেকিন কুচ তো কিয়া’ তখনই সে টিয়াকে ফোন করে।
_: হ্যালো। কে? ও-পাশ থেকে জবাব আসে অপরিচিতের মত।
-) চেনেন না? প্রিতম ঠাণ্ডা গলায় জানতে চায়।
_: আপনার তো ফোন করার কথা না।
-) আপনারও তো এসএমএস করার কথা ছিল না।
_: কী চান আপনি? হোয়াট ইউ ওয়ান্ট?
-) ‘সীতা কার বাপ’ জানতে চাচ্ছেন?
_: দেখুন, আপনাকে তো বারবার বললাম, আমি এসবে আগ্রহী নই।
-) কিন্তু বন্ধু হতে আপত্তি কোথায়?
_: আছে। কারণ, এখান থেকেই দুর্বলতার শুরু।
-) আমি অনেকগুলো মাল্টিভিটামিন দিয়ে দেব; দুর্বল হবেন না।
_: সমস্যা আছে। আমি দুনিয়ার সবার সাথে বন্ধুত্ব করলেও আপনার সাথে করব না।
-) আমার অপরাধ?
_: বললাম না সম্ভব না।
-) ok, এই কথাটাই সরাসরি শুনতে চাই।
_: না। কী দরকার...
-) একই ডিপার্টমেন্টে আছি। তাছাড়া আমাকে তো চিনেন-ই মনে হয়। এত ফলো করি!
_: দেখা হলে কী বলতে হবে?
-) যা খুশি।
_: তাহলে কাল বিকালে ডিপার্টমেন্টে থাকবেন। আমি পরীক্ষার পর দেখা করব।
পরদিন বিকালে দেখা হয় প্রিতম আর টিয়ার। টিয়ার নিষেধ সত্তে¡ও তাকে এগিয়ে দিতে হল পর্যন্ত যায় প্রিতম। অনেক কথা হয়। সে সব কিছু খুলে বলে টিয়াকে। তাকে প্রথম দেখা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, তিন মাসের এসএমএস প্রজেক্ট ইত্যাদি। টিয়াও তার পরিবারের কথা, তার ফ্যামিলির কথা, ভার্সিটিতে পড়তে আসা, বাবার কাছে দেয়া তার কমিটমেন্ট অর্থাৎ কোনো রিলেশনে না জড়ানোর প্রসঙ্গ, অনেক কিছুই বলে অন্তরঙ্গ ভাবে। তারপর হলে ঢুকে যাবার সময় হেসে হেসে বলে যায়, ড়শ, তাহলে আর এসএমএস অথবা ফোন করবেন না।
মন খারাপ করে বসে আছে প্রিতম। মৃদুল বলে, আরে আরো তো ১০/১২ দিন হাতে আছে। লেগে থাক- কাজ তো হতেও পারে! ইনন বলে, টাকার মায়া বড় মায়ারে!
প্রিতম নরম কণ্ঠে বলে, দ্যাখ, ব্যাপারটা এমন না। একটা গল্প আছে না, শেয়াল মহিষ ও সিংহের! সিংহ একদিন শেয়ালকে বলল, কীরে তুই আমার জন্য কোন খাবারের ব্যাবস্থা করিস না যে? তারপর একদিন শেয়াল সিংহকে এসে বলল, ওস্তাদ আপনার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করেছি। মহিষটাকে একটা গর্তে ফেলে এসেছি, আসুন খাবেন। তখন সিংহ বলল, ওটা যেহেতু গর্তে আছে তাকে পরেও খাওয়া যাবে। আগে তোকে খেয়ে নিই!’ মনে কর যে, সিংহটা হল প্রেম। আর প্রেম আমাকে বলছে, টিয়া তো সরল মনের মেয়ে! তাকে যেকোনো সময় পাওয়া যাবে। আগে তোর ঘাড়ে চেঁপে বসি!
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো বলল, আসলেই বন্ধু আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
আই কান্ট থিংক উইদাউট হার!
প্রিতমের চোখ টলমল করতে থাকে। কেউ কোন কথা বলে না। ইনন কিছুক্ষণ পর বলে, সরি বন্ধু!প্রিতম বলে, ইট‘স ওকে. চৌদ্দ তারিখ তোরা সবাই চাইনিজে থাকিস, খাওয়াবো। পায়েল বাঁধা দিয়ে বলে, আরে তুই কেন খাওয়াবি? আমার তো মনে হচ্ছে তুই জিতে গেছিস। সবাই সমস্বরে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ। প্রিতম হেসে হেসে বলে, শেষ পর্যন্ত আমি সিরিয়াসলি প্রেমে পড়লাম; এটাকেই উৎযাপন করি! কাল থাকিস।
চৌদ্দ তারিখ ২টার দিকে প্রিতম পৌঁছে যায় চাইনিজে। সেখানে আগে থেকেই ছিল মৃদুল, তৌসিফ, পায়েল। শুধু ইনন তখনো আসেনি। মৃদুল বলে, খিদায় পেটের ভিতর চুচু তার ফুল ফ্যামেলি নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। তাড়াতাড়ি অর্ডার দে। তৌসিফ ও বলে, আমার পেটেও দাউ দাউ করি আগুন জ্বলতেছে। আস্ত মুরগ দিলেও সেটা সেদ্ধ হয়ে যাবে। হারি আপ ম্যান। প্রিতম জিজ্ঞেস করে, ইনন আসার আগেই অর্ডার করবি? পায়েল বলে, তোরা মেনু দেখ আমি ইনুকে কল দিচ্ছি। অর্ডার শেষে সবাই মিলে গল্প করছে। প্রিতম বলছে, শেষ পর্যন্ত একজনকে মন দিয়ে অনুভব করেছিলাম কিন্তু সে বুঝল না। আমার ইমিডিয়েট বড় বোন মাস্টার্স করছে স্থানিয় একটা কলেজ থেকে তা তো তোরা জানিস। তা না হলে বাসায় বলতাম, টিয়ার বাসায় প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। বাই আই হ্যাভ সাম লিমিটেশন! মেয়েটা বুঝল না। ভ্যালেন্টাইন্স ডে এখন আমার কাছে প্রতি বছর কারো স্মৃতি নিয়ে আসবে। যা দুঃখে থাকবে Full fill। সবাই প্রিতমের কথা শুনে মন খারাপ ভাব নিয়ে মাথা দোলাচ্ছে। খাবার নিয়ে আসছে দেখে প্রিতম মোবাইল থেকে ইননকে কল দিল।
_: হ্যা, প্রিতম!
-) ইনন, কই তুই? খাবার তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে!
_: আমি তোর পিছে। একথা শুনে প্রিতম পেছন ফিরে তাকায়। দেখে ইননের সাথে টিয়া। সে তো অবাক! কিছু বলার আগেই মিটিমিটি হেসে টিয়া বলে, বন্ধুদের খাওয়াবেন, আমাকে খাওয়াবেন না? প্রিতম উঠে চেয়ার ছেড়ে জায়গা করে দিতে দিতে ইননের দিকে তাকিয়ে বলে, ই...নু!
ইনন বলে, বন্ধু আসলেই হেরে গেছি আমি। টিয়ারও তোকে ভালো লাগে। বাদ-বাকী ইতিহাস টিয়া তোকে পরে বলবে। এখন খাওয়া শুরু করা যাক।
খাবার আগে এক তোড়া ফুল টিয়ার হাতে দিয়ে প্রিতম বলে, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে! সাথে সবাই রিংয করে। খাওয়া শুরু করতে করতে ইনন বলল, হ্যাঁ প্রিতম, তোকে একটা কথা বলা হয় নি; তা হচ্ছে, টিয়া কিন্তু আমার রুমমেট! প্রিতম যেনো বেকুব বনে যায়। অবাক হয়ে বলে, তার মানে? হলে তোরা এক সাথে থাকিস! তারপর মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠল, ও মাই গড! এভাবে ধরালি আমাকে! ‘কেশবতীর গল্প’ তাহলে তোরাই ডিরেক্ট করলি? সঙ্গে সঙ্গে সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠল।
তার সঙ্গে সঙ্গে যেন এক মায়াবী ঝংকারে কেঁপে উঠল রেস্তুরার চারপাশ।
পিডিএফ ফরমেট পেতে চাইলে ক্লিক করুন।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অহমিকা পাগলা
এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন