ছাদের মধ্যে এত্ত পানি জমে গেছে, জুঁই আর সেতু ঠিক করেছে পানিগুলো সব ছাদ থেকে সরাবে । এতে করে ছাদ পরিষ্কার হবে , ওদের খেলাও হবে। এমনিতে তো মা প্রতি সপ্তাহে কাজের মেয়েকে দিয়ে ছাদ পরিস্কার করান, এই সপ্তাহে ওরা দুই বান্ধবি মিলেই কাজটা করে দিচ্ছে ।
অথচ জুঁইয়ের মা তাদের এই মহৎ উদ্দেশ্যকে একটুও মূল্যায়ন করলেন না । সব জায়গায় খুঁজে অবশেষে ছাদে উঠে উনি দেখেন জুঁই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার । চার বছরের মেয়েকে সামলানো এত কষ্টের ? কখন তাকে ফাঁকি দিয়ে ছাদে উঠে গেছে । কানে ধরে মেয়েকে ঘরে নিয়ে এলেন তিনি, মনে মনে ঠিক করলেন, এখন থেকে বৃষ্টি এলেই মেয়েকে রুমে আটকে রাখবেন ।
দৃশ্যপট ২ ঃ জুঁই এখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ম্যাডাম বাংলা ক্লাসে “প্রিয় ঋতু” রচনা লিখতে দিয়েছে । জুঁই ঠিক করেছে বইয়ের বানানো কথা না, সত্যি সত্যি তার প্রিয় ঋতুর কথাই লিখবে । গোটা গোটা হরফে খাতায় লিখল “আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা” । উফ ! কি সমস্যা , এখন আবার লিখতে হবে কেন প্রিয় ঋতু । কেন? কেন?
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে । ওর বেঞ্চের পাশেই জানালা । জানালা দিয়ে দেখতে পেল স্কুলের পাশের ঝিলটাতে বৃষ্টি পড়ছে । কি অসাধারন দৃশ্য !! জুঁই খাতায় লিখল “বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় । সেই বৃষ্টিতে ভিজতে আমার অনেক ভাল লাগে । তাই বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু” ।
দৃশ্যপট ৩ ঃ জুওলজি প্র্যাকট্রিকাল ক্লাসরুম থেকে কলেজের পুকুরটা দেখা যায় । সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি । এই বৃষ্টির মাঝে কি ক্লাস করতে ভাল লাগে ? জুঁই আর লাবণ্য ঠিক করলো ওরা বৃষ্টিতে ভিজবে, কিন্তু ফেন্সিকে নেয়া যাবে না । ও অনেক পুতুপুতু মার্কা । বৃষ্টিতে ভেজার কথা বললেই – জ্বর আসবে, মা বকবে এসব ঢংয়ের কথা বলা শুরু করবে ।
ঃ ফেন্সি , আমরা ক্লাস আর ক্লাস করব না, তুই করবি?
ঃ (অবাক হয়ে) ক্লাস কেন করবি না? তাহলে এত কষ্ট করে কলেজে আসলাম কেন?
ঃ আমাদের জরুরি কাজ আছে, তুই ক্লাস করলে কর, আমরা গেলাম ।
ঃ না, আমি একা কি ক্লাস করবো , আমি বাসায় চলে যাবো ।
ঃ এটাই ভাল হবে, আয় তোকে রিক্সা করে দেই, কাল দেখা হবে, কেমন?
জুঁই আর লাবণ্য গল্প করতে করতে (এ বয়সী মেয়েদের গল্পের অভাব হয় না) ভিজতে ভিজতে কলেজের পাশের অলি গলি ঘুরতে লাগলো । পরিচিত কারো সামনে পরা যাবে না , মুরব্বি কেউ দেখলেই বকা দিবে। হিঃ হিঃ হিঃ , কি মজা, মুয়িজুর রহমান স্যার (ওদের প্রিয় ইংরেজি প্রফেসর) ভিজতে ভিজতে বাসায় যাচ্ছেন । তার মানে বড়দেরও আমাদের মত ভিজতে ইচ্ছে করে, কিন্তু তারা আমাদের কাছে সেটা লুকিয়ে রাখেন ।
দৃশ্যপট ৪ঃ তমাল ফোন করেছে।
ঃ কি করছ?
ঃ বৃষ্টি দেখছি । খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে।
ঃ তাই ? তাহলে তো বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে এখানে থাকা যাবে না, এখানে তো বৃষ্টি পড়ে না ।
ঃ আমি কখনই তোমার আমারিকায় যাবো না। কি আছে ঐ দেশে ?
ঃ ঠিক আছে, আসতে হবে না । আমার একটা স্বপ্ন আছে- -
ঃ কি ?
ঃ কোন এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলে আমি পরবো সাদা পাঞ্জাবি, তুমি পরবে সাদা শিফনের শাড়ি । তারপর ছাদে তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব । তুমি আমার বুকে মাথা রাখবে, আমি তোমার মুখটি তুলে সেই বৃষ্টিভেজা মুখখানি দেখব ।
ঃ সত্যি ?
ঃ হু-ম-ম সত্যি । যদিও বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভাল লাগে না, জ্বর আসে , তবুও শুধু তোমার জন্য ভিজব ।
ঃ সব সময় ভিজতে হবে কিন্তু ।
ঃ ঠিক আছে । সব সময়ই - - -
দৃশ্যপট ৫ঃ জুঁইয়ের নতুন সংসারের বয়স মাত্র ১ মাস । আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে । বৃষ্টির শব্দে ঘুম আসছে না । রাহাত বলল , বৃষ্টি নামাতে ভাল হয়েছে, ভাল একটা ঘুম হবে, কি বল ? কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে জুঁই বারান্দায় গেল, বারান্দায় পানি জমে গেছে। অদ্ভুত মাদকতা চারদিকে, প্রকৃতির কি অপরূপ সৌন্দর্য । রাহাত ডাকল জুঁইকে, কি করছ? বৃষ্টির পানি রুমে আসছে তো , ঘুমাতে এস । কাল সকালে তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে, মীটিং আছে ।
জুঁই ঘোর লাগা চোখে রাহাতকে বলল, চল না বৃষ্টিতে ভিজি ।
ঃ পাগল নাকি ? এত রাতে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে?
ঃ একটু ভিজব
ঃ না, না, কি যে বল না ছেলেমানুষের মত ।
ঃ আমার অনেক শখ ছিল আমার বরের সাথে বৃষ্টিতে ভিজব......।
ঃ বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে, টনসিলের সমস্যা হয়, আর জানই তো কাল মীটিং...
পাদটীকা ঃ আর কখনই জুঁইয়ের বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি । এখন বৃষ্টি দেখলেই ওর মেজাজ খারাপ হয় । কি ফালতু ! ! রাস্তাঘাট কাঁদা মাখা হয়ে যায় , কোথাও যাবার উপায় থাকে না। কেন যে বৃষ্টি হয় ! ! !
View this link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ২:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



