মা'কে নিয়ে আজ অবধি আমি কোনদিন কোনকিছু লিখতে পারিনি।
আসলে মায়েরা অনন্তকাল ধরে কাছে থাকে না, তারাও একসময় এই পৃথিবীতে আমাদের খুব নিঃস করে দিয়ে দূরে হারিয়ে যেতে পারে- এটাই হয়তো আমি কোনদিন আমার মায়ের জীবদ্দশায় ভাবতে পারিনি।
আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল অনন্ত অশেষ কষ্ট সারাজীবন চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া অনিঃশেষ এক সত্তার অবিনশ্বর এক নাম।... । আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই অসীম অনন্ত ছায়া- যার কাছে আমি সকল পথ হারিয়ে শেষ আশ্রয় খুঁজে নিতে ছুটে যেতে পারি অনন্তকাল! আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই সর্বংসহা আশ্চর্য্য এক পৃথিবী- যাঁর কাছে আমার সকল অন্যায় আবদার পার পেয়ে যেতো অন্তহীণ অবারিত প্রশ্রয়ের অনিন্দ্য অপরূপ মায়ায়....।
আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই অনন্ত ক্ষমার ডালপালা বিস্তৃত মমতাময় বিস্ময়কর বিশাল এক বৃক্ষ- যাঁর কাছে লক্ষ অপরাধের পরেও আমি হাসতে হাসতে ক্ষমা পেয়ে যেতে পারি অজস্রবার !...
কিন্তু সেই অদ্ভুত অসীম মমতা আর ক্ষমাশীল অস্তিত্বের অধিকারী 'মা'-ও যে একদিন তাঁর হতভাগ্য অসহায় সন্তানদের একা ফেলে রেখে 'দূরের নক্ষত্র' হয়ে হারিয়ে যেতে পারে- তা আমার একেবারেই জানা ছিল না।...
২০০৫ এর ৩০শে আগষ্ট আমাদের 'মা' আমাদের সবাইকে বেদনায় স্তব্ধ করে দিয়ে যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন, তখনও আমি বুঝতে পারিনি এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়টি আমি হারিয়ে ফেলেছি।
আমি বুঝতে পারিনি- আর কোন বেদনায়- আর কোন অসহায়ত্বে- আর কোন তীব্র ব্যর্থতার দিনে 'মাগো' বলে চীৎকারে বুকে জড়িয়ে ধরে 'মুহূর্তে পরম শান্তি' খোঁজার শাশ্বত চিরন্তন স্থানটি আমি হারিয়ে ফেলেছি।....
আমি বুঝতে পারিনি- এই কঠিন পৃথিবীতে এমন সব কষ্টকর অসহ্য বেদনার মুহূর্ত পার হতে হবে যখন জুরাইন কবরস্থানের এক কোণে দেয়ালঘেঁষা এক বৃক্ষতলে চিরনিদ্রায় শায়িত আমার মা'য়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে আমাকে নিরব নিঃশব্দ স্বরে বলতে হবে- "আর পারিনা মাগো, তুমি কি আমার কষ্টগুলো সব দেখতে পাচ্ছো? তুমি কি দূর থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছো সেই অপরূপ অনন্ত আশীর্বাদ, যার স্পর্শে আমার এই তীব্র কষ্টগুলো সব পুড়ে পুড়ে শান্তির সোপান হয়ে যাবে? ''
৩০শে আগষ্ট- ২০০৬ ইং পার হলো মা'য়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।.....
মা'কে নিয়ে কোন একটি লেখা 'সামহয়্যার ইন ব্লগ'-এ পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম সেই দিন-ই। কিন্তু কেন যেন অনেক চেষ্টা করেও কোনভাবেই কোনকিছু লিখতে পারছিলাম না। .... সেই লিখতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে খুব কষ্ট দিলো অনেকদিন। সত্যিই কি মা'কে নিয়ে কিছু লেখার যোগ্যতা আমি চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি?
আমি জানি,
আমার কোন কান্না, কোন কষ্টই আর তোমার সীমাহীন উদ্বেগ-
অনন্ত আকুল মমতার কাছে
পৌঁছাতে পারে না।....
এতোবার আমি ভাঙতে ভাঙতে
পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুখ থুবড়ে পড়ি,
এতোবার আমি জ্বলতে জ্বলতে
নিঃস রাতের এক ক্ষয়ে যাওয়া নিঃসঙ্গ পথ
হয়ে পড়ি-
তবু আমি আর পাইনা তোমাকে-
তোমার আঁচল আর ঢাকে না আগের মতো
দিশেহারা, বেদনার্ত আমাকে।
একটি বিশাল বৃক্ষ হয়ে যে তুমি আমাকে
অনিঃশ্বেষ ছায়ায় রেখেছিলে এতোকাল-
যে তুমি বুঝতেই দাওনি-'না পাওয়ার যন্ত্রণা' বলে
এই পৃথিবীতে কিছু আছে-
আমার এমন বিপুল কষ্টের দিনে- এমন 'বৈরী সময়ের' পথে পথে
বলোনা কোথায় কতোদূর হেঁটে হেঁটে- সেই তোমাকেই
পুনরায় খুঁজে ফিরি?
তুমি কি এমন মুখের রেখার দিকে তাকিয়েও
একবার বলবেনা আজ-
এই শহরের বুকে
কোথায় লুকিয়ে রেখেছো তোমার সীমাহীণ শান্তির
সেই অপরূপ অনন্তবারি-ধারা-
যেখানে ভিজতে ভিজতে আমার কষ্ট গুলো সব
নতুন আঙ্গিকে ফুটে উঠবে
আশ্চর্য্য 'প্রশান্তির শব্দমালা' হয়ে
অনন্ত অবিনাশী এক বেদনা-বিধূর কবিতায়?
..........................................................................
রচনাকালঃ ৩০শে আগষ্ট, ২০০৬ইং
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



