somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের জন্য শুধু.....

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মা'কে নিয়ে আজ অবধি আমি কোনদিন কোনকিছু লিখতে পারিনি।

আসলে মায়েরা অনন্তকাল ধরে কাছে থাকে না, তারাও একসময় এই পৃথিবীতে আমাদের খুব নিঃস করে দিয়ে দূরে হারিয়ে যেতে পারে- এটাই হয়তো আমি কোনদিন আমার মায়ের জীবদ্দশায় ভাবতে পারিনি।

আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল অনন্ত অশেষ কষ্ট সারাজীবন চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া অনিঃশেষ এক সত্তার অবিনশ্বর এক নাম।... । আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই অসীম অনন্ত ছায়া- যার কাছে আমি সকল পথ হারিয়ে শেষ আশ্রয় খুঁজে নিতে ছুটে যেতে পারি অনন্তকাল! আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই সর্বংসহা আশ্চর্য্য এক পৃথিবী- যাঁর কাছে আমার সকল অন্যায় আবদার পার পেয়ে যেতো অন্তহীণ অবারিত প্রশ্রয়ের অনিন্দ্য অপরূপ মায়ায়....।

আমার কাছে 'মা' মানেই ছিল সেই অনন্ত ক্ষমার ডালপালা বিস্তৃত মমতাময় বিস্ময়কর বিশাল এক বৃক্ষ- যাঁর কাছে লক্ষ অপরাধের পরেও আমি হাসতে হাসতে ক্ষমা পেয়ে যেতে পারি অজস্রবার !...

কিন্তু সেই অদ্ভুত অসীম মমতা আর ক্ষমাশীল অস্তিত্বের অধিকারী 'মা'-ও যে একদিন তাঁর হতভাগ্য অসহায় সন্তানদের একা ফেলে রেখে 'দূরের নক্ষত্র' হয়ে হারিয়ে যেতে পারে- তা আমার একেবারেই জানা ছিল না।...

২০০৫ এর ৩০শে আগষ্ট আমাদের 'মা' আমাদের সবাইকে বেদনায় স্তব্ধ করে দিয়ে যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন, তখনও আমি বুঝতে পারিনি এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়টি আমি হারিয়ে ফেলেছি।

আমি বুঝতে পারিনি- আর কোন বেদনায়- আর কোন অসহায়ত্বে- আর কোন তীব্র ব্যর্থতার দিনে 'মাগো' বলে চীৎকারে বুকে জড়িয়ে ধরে 'মুহূর্তে পরম শান্তি' খোঁজার শাশ্বত চিরন্তন স্থানটি আমি হারিয়ে ফেলেছি।....

আমি বুঝতে পারিনি- এই কঠিন পৃথিবীতে এমন সব কষ্টকর অসহ্য বেদনার মুহূর্ত পার হতে হবে যখন জুরাইন কবরস্থানের এক কোণে দেয়ালঘেঁষা এক বৃক্ষতলে চিরনিদ্রায় শায়িত আমার মা'য়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে আমাকে নিরব নিঃশব্দ স্বরে বলতে হবে- "আর পারিনা মাগো, তুমি কি আমার কষ্টগুলো সব দেখতে পাচ্ছো? তুমি কি দূর থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছো সেই অপরূপ অনন্ত আশীর্বাদ, যার স্পর্শে আমার এই তীব্র কষ্টগুলো সব পুড়ে পুড়ে শান্তির সোপান হয়ে যাবে? ''

৩০শে আগষ্ট- ২০০৬ ইং পার হলো মা'য়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।.....

মা'কে নিয়ে কোন একটি লেখা 'সামহয়্যার ইন ব্লগ'-এ পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম সেই দিন-ই। কিন্তু কেন যেন অনেক চেষ্টা করেও কোনভাবেই কোনকিছু লিখতে পারছিলাম না। .... সেই লিখতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে খুব কষ্ট দিলো অনেকদিন। সত্যিই কি মা'কে নিয়ে কিছু লেখার যোগ্যতা আমি চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি?


আমি জানি,
আমার কোন কান্না, কোন কষ্টই আর তোমার সীমাহীন উদ্বেগ-
অনন্ত আকুল মমতার কাছে
পৌঁছাতে পারে না।....

এতোবার আমি ভাঙতে ভাঙতে
পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুখ থুবড়ে পড়ি,
এতোবার আমি জ্বলতে জ্বলতে
নিঃস রাতের এক ক্ষয়ে যাওয়া নিঃসঙ্গ পথ
হয়ে পড়ি-

তবু আমি আর পাইনা তোমাকে-
তোমার আঁচল আর ঢাকে না আগের মতো
দিশেহারা, বেদনার্ত আমাকে।

একটি বিশাল বৃক্ষ হয়ে যে তুমি আমাকে
অনিঃশ্বেষ ছায়ায় রেখেছিলে এতোকাল-
যে তুমি বুঝতেই দাওনি-'না পাওয়ার যন্ত্রণা' বলে
এই পৃথিবীতে কিছু আছে-

আমার এমন বিপুল কষ্টের দিনে- এমন 'বৈরী সময়ের' পথে পথে
বলোনা কোথায় কতোদূর হেঁটে হেঁটে- সেই তোমাকেই
পুনরায় খুঁজে ফিরি?

তুমি কি এমন মুখের রেখার দিকে তাকিয়েও
একবার বলবেনা আজ-
এই শহরের বুকে
কোথায় লুকিয়ে রেখেছো তোমার সীমাহীণ শান্তির
সেই অপরূপ অনন্তবারি-ধারা-


যেখানে ভিজতে ভিজতে আমার কষ্ট গুলো সব
নতুন আঙ্গিকে ফুটে উঠবে
আশ্চর্য্য 'প্রশান্তির শব্দমালা' হয়ে
অনন্ত অবিনাশী এক বেদনা-বিধূর কবিতায়?


..........................................................................

রচনাকালঃ ৩০শে আগষ্ট, ২০০৬ইং

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০৬
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×