পূর্বমুখী বাড়ির পূর্ব দিকের বারান্দায় ষাট উর্ধ্ব হাসেম আলী বসে আছেন । আয়েশে চেয়ারে বসে অপলকে তাকিয়ে আছেন বিপরীতমুখী ছোট কুটিরটার দিকে । মাঝে একফালি উঠান, পরিপাটি বাড়ির উঠানই স্বাক্ষর রাখছে সৌখিন হাসেম আলীর ।অনেকক্ষণ বসে আছেন । চোখের চশমাটা হাতে নিয়ে মুছতে মুছতে হাক ছাড়লেন ‘ময়না! ময়না,
একদম দৌঁড় দিয়ে খাদিজা এসে বললো‘ আব্বাজান ডেকেছেন আমায় !
স্ব কাজে মনোযোগ রেখেই বললেন‘হ ডাকছিলাম, আমার জন্য গোসলের পানি গরম করছিলে?
‘হ্যাঁ, ‘সেই কখন গরম করে রাখলাম,এখন তো আবার ঠান্ডা হয়ে গেল আব্বা ।
‘আমাকে বললে না যে? চোখে চোখ রেখে বললো হাসেম ।
‘বলিনি,পরে যদি আবার রাগ করেন।
‘শুনো,‘আমাকে মাত্রারিক্ত ভয় পাবে না মা। আরেকটি কথা একটু চা খাওয়াও আমায় ;এখন যাও ।
‘আচ্ছা আব্বা-এই বলে খাদিজা সোজা চলে গেল রান্না ঘরে ।
আবার নীরবতা বিরাজ করছে পুরো হাসেম আলীকে ঘিরে । অবাক নয়নে তাকিয়ে আছেন সামনের বারান্দার দিকে । অজানা এক কারণে একমাত্র পূত্রবধু খাদিজাকে ‘ময়না’ বলে ডাকে ।‘ময়না’ নামে ডাকার পেছনে একটি রহস্য আছে কিন্তু সে রহস্যটা কি কেউ জানে না । এক হাসেম আলী ছাড়া ।
গলায় কৃত্রিম শব্দ করে খাদিজা বারান্দায় চা নিয়ে হাজির । ‘আব্বা, আপনার চা ।
‘তোমার চা কোথায়? যাও আরেকটি চা বানিয়ে নিয়ে এসে; আমার পাশের চেয়ারটাই বসো ।
অল্প সময় পর ।
‘ময়না, চা’য়ে একটু চিনি কম দিবে আরও । আচ্ছা আজ কয় তারিখ জানো?
ইদ গেছে পাঁচ দিন । এইবার আশ্বিনের ১৩ তারিখ ইদ হইছে ,আব্বাজান, তাহলে তো আজ ১৮ তারিখ ,ঠিক আছে না ? -আগ্রহ ভরে তাকিয়ে বললো খাদিজা ।
‘হ্যাঁ,-- একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে গেল হাসেমের । লম্বা দম নিয়ে হাসেম শুরু করলো ।
‘আমি তখন সবে মাত্র অবসর গ্রহণ করেছিলাম । প্রায় এক লাখ টাকা পেনশন পাই । হজে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম, ‘কিন্তু জয়ের ছেলে মানুষীর জন্য’ -বলে থেমে গেল হাসেম । নীরবতা ভঙ্গ করে আবার শুরু করলো হাসেম--
‘আমি জয়কে মোটর সাইকেল কিনে দিলাম । হজে যাওয়া বাদ দেই । কিন্তু জানো কি মা! ছেলে আমার নেই ,ঠিকই তাঁর মোটর সাইকেলটি আছে । এই দেখো বারান্দায় এখনও আছে । আমি প্রতিদিন আলতো হাতে হাত বুলাই ,মুছে রাখি । বলতে বলতে চশমার ফাঁক দিয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে যাচ্ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:২৭