সন্ধ্যা নগর জুড়ে ধুকছে প্রাচীন প্রথা
হাঁটছে মানুষ ধীরে পার্কে নীরব একা
বলছে অযুত কথা সব মনোলগ হয়ে
করছে শহর জুড়ে অধ্যাদেশের জারি
মুক্ত মুখের ঠোঁটে লাগবে সেলাই শুধু
ঠিক তখনই – শহরের প্রবেশদ্বার অতিক্রম করেন একজন বৃদ্ধ। শুভ্র শ্মশ্রু। আরও শুভ্র মাথার দীর্ঘ চুল। কী গভীর দৃষ্টি! প্রবল আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপ। চোখের পলকে প্রেমের তেপান্তর। চওড়া কাঁধের ঝাঁকুনিতে দুলে বিশ্ব সংসারের ওজন। মুখের প্রতিটি আওয়াজে মুক্তির বাণী। চেহারায় খেলছে শক্তি আর আভিজাত্যের ঢেউ। কোথাও থামছে না। নির্মোহ পদক্ষেপে প্রদক্ষিণ করছে শহরের চারদিক। বৃদ্ধের পেছনে মিছিল। ক্রমশঃ বাড়ছে মিছিলের আয়তন। বৃদ্ধের কাছে জনতার প্রত্যাশার বৃষ্টি হচ্ছে – কেউ সন্তান চায়, কেউ সন্তানের মৃত্যু চায়! জীনের পরিণতি জানতে চায় একদল যুবক। নারীরা জানতে চায় স্বামীর ঘরে বন্দিত্ব আর কতদিন? যুবতীরা প্রশ্ন করে, স্বাধীনতার ব্যাপারে। আমলার প্রশ্ন, প্রমোশন কবে হবে? ক্ষমতার প্রশ্ন, অমরত্বের দাওয়াই কোথায়? একদল জানতে চায় স্বেচ্ছার মৃত্যুর অনুমতি কবে আসবে। পিতারা শুধায়, বুড়ো তুমি কি বৃদ্ধাশ্রম পালিয়েছো? মায়েদের প্রশ্ন, বুড়ো – তোমার এই প্রবল প্রভাবের রহস্য কী? পুলিশ জানতে চায় আপনি কখন শহর ছাড়বেন? আমরা যে আর পারছি না! তিন বাহিনী মাঠে নেমেই আঁতকে ওঠে! বৃদ্ধের পেছনে পুরো শহর ছুটছে। ছুঠছে ওদের মায়েরা, মেয়েরা, বাবারা, পুত্রেরা...
বিকেলের আগেই বৃদ্ধ শহরের মুক্ত মঞ্চে দাঁড়ায়। প্রশানের সবাই তাঁকে বক্তব্য দিতে নিষেধ করে। কিন্তু কারও কণ্ঠই তখন মুক্ত নয়। পুরো শহরের প্রতিবেশে নির্বাক স্তব্ধতা। দরাজ কণ্ঠের সুর মূর্ছণা ছাড়ে বৃদ্ধ। পিনপতন নিরবতা...
এই জনতার কাছে চাই মানুষের ছায়া
একটা খবর দেব রাত পালাবেই দূরে
দূর জীবনের মায়া নাও আপনার বুকে
শুদ্ধ গানের সুরে ভাসবে সবাই সুখে
আসবে হৃদয় মাঠে প্রেম সরোবর আলো...
হঠাৎ পাল্টে যায় পুরো পরিবেশ। পাগল! পাগল!! পাগল!!! রব ওঠে। কোরাস ওঠে "মানুষেরা সমাধিতে গেছে। তুই জনতার ভেতর মানুষ খুঁজিস! শালা বৃদ্ধ! ঠগ! বাটপার!" পাথর ছুটছে! আইফোন ছুটছে! গ্যালাক্সি ছুটছে! ট্যাব ছুটছে! জনরোষের নয়া মাত্রা নামছে। ভিডিও হচ্ছে। লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। পণ্যের মায়া নাই। ক্ষোভ মেটাও। মেটাচ্ছে। বৃদ্ধ মুখ থুবড়ে ভূপাতিত। জনতা ঘরে ফিরছে। শিশুরা বৃদ্ধকে ঘিরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সৌখিন ফটোগ্রাফারদের আরেক দফা সেল্ফি হয়ে গেছে। শহরের বিখ্যাত সেলুনের মালিক বৃদ্ধের দাঁড়ি-গোফ আর চুলের মূল্য হাকছে।
বৃদ্ধ বুঝে গেছে সময় শেষ! হঠাৎ দাঁড়ালেন। ভয়ে সরে গেল শিশুরা। আলখাল্লার ভেতর শিশুদের নিরাপদ করলেন। গা ঝাড়া দিলেন। ফিরলেন যৌবনে। অবাক ছড়ানো লোকজন দৌড়াচ্ছে ঠিকানায়। বৃদ্ধ এখন প্রবল যুবক। আকাশের দিকে ফিরে চিৎকার দিলেন। গগণ কাঁপে! পাহাড় দুলে! শহর মূক হয়। জনতার কানে নামে বধির তুফান।
বৃদ্ধের মোবাইল পেন্ট আর শার্টে দুইহাজার পনেরটি পকেট – ধাতব অন্ধকারে ঠাসা। বৃদ্ধ শহরের বড় রাস্তায় ওঠে আসে। কুর্ণিশে নত সমগ্র শহর...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২