somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছা-অনিচ্ছা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মোহনের একদমই ইচ্ছা ছিল না দোকানে বসার । তবুও বসতে হোলো । কি আর করে ? বাবা দুদিন ছাড়া অসুখে পড়ছে ! তবে , এরসাথে তার পড়াশুনার পাঠও চুকলো । মাধ্যমিকটাও দেওয়া হোলো না । যদিও পড়াশুনা নিয়ে তেমন আফশোষ ছিল না তার । পড়াশুনাটা তার কাছে এমন কিছু আহামরি লাগতো না । তবে তার ট্যাক্সি ড্রাইভার হওয়ার ইচ্ছে ছিল ! পাড়ার এক দাদার কাছে কিছুদিন শিখেও ছিল । যদিও তার ইচ্ছে ধোপে টেকেনি ! বাবার মনোহারি দোকানেই বসতে হয়েছে তাকে । কিন্তু মে্যেদের সাজার জিনিস বেচতে মোহনের একদমই মন চাইছিল না ! যদিও বন্ধুরা বলেছিল ' তোর তো কপাল খুলে গেলো রে ! তোর দোকানে মেয়েদের ভিড় লেগে থাকবে ! '


এর কয়েক বছরের মধ্যেই দোকানটা তার সয়ে গেছিল বা সওয়াতে হয়েছিল । তার দোকানটা বেশ ভালো জায়গায় । কাছেই অফিস-পাড়া , স্টেশন , কলেজ । যেতে আসতে অনেক মে্য়েরাই আসে তার দোকানে । তবে মে্য়ে বলে আলাদা কিছু নয় । বাবা বলে দিয়েছে ' কাস্টমার হোলো লক্ষ্মী ! তার অসম্মান যেন না হয় ' ।


সেদিন বিকেলটা যখন সন্ধ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন দোকানে তেমন ভিড় ছিল না । এমন সময় একটা মেয়ে আসল । ' ঐ গোলাপি পাথর দেওয়া দুলটা একটু দেখাবেন ? ' অভ্যেস মতো কাস্টমারের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তার চোখ আটকে যায় একটা মেয়ের মা্যাভরা দৃষ্টিতে ।

হলুদ সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটার টানা টানা চোখে কি যেন একটা ছিল যে দেখেই ভালো লেগে মোহনের ! এরকমটা আগে কখনো হয়নি । যদিও মুখে সে বললো ' হ্যাঁ ম্যাডাম । এখনি দেখাচ্ছি । ' মেয়েটা মৃদু হাসি মেশানো সুরে বলে ' দূর থেকে ঐ কানেরদুলগুলো দেখেই আপনার দোকানে এলাম । ' সেদিন মেয়েটা কানেরদুলগুলো কেনে ।

পরদিন দোকানে বিকেল থেকে রাত গড়িয়ে যায় পরিচিত দিনের মতোই । রাতে বাড়ি ফিরে মোহনের হঠাৎ মনে হয় ' আচ্ছা , সে মেয়েটা কি আর কোনোদিন আমার দোকানে আসবে ? '

আবার পরের দিন বিকেল হতেই মোহনের চোখটা বার বার রাস্তার দিকে চলে যাচ্ছিল । কারনটা সে নিজেই বুঝতে পারছিল না । সেদিন মেয়েটা এল । চুড়ি কিনল সে । এরপর থেকে প্রায়ই মেয়েটা আসতে থাকলো । কখনো নিজের জন্য , কখনো কাউকে দেওয়ার জন্য জিনিস কিনতে থাকলো । একদিন যেমন বলেছিল ' ভালো কোয়ালিটির জিনিস দেখাবেন । একজনকে গিফট করবো । '


কে জানে কাকে দেবে ! মোহন জানে না । সে তো কিছুই জানে না । মেয়েটার নামটাও জানে না । মেয়েটা কলেজে পড়ে নাকি চাকরী করে সেটাও না । সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে দোকানে আসে । তারমানে সকালেও তো এই পথ দিয়েই কোথাও যায় !
আজকাল সকালের দিকে মোহনের অবাধ্য চোখগুলো মেয়েটাকে খুঁজে ফেরে । কিন্তু মেয়েটাকে দেখা যায় না । মোহন কি মেয়েটাকে জিজ্ঞস করতে পারে যে কেনো তাকে যেতে দেখে না ! কিন্তু এতে যদি মেয়েটা তাকে ভুল বোঝে । সে কি করে বোঝাবে তার কোনো বদ মতলব নেই । শুধু সে রোজ একবার তাকে দেখতে চায় । তাকে দেখলেই মোহনের সবকিছু যেন খুব ভালো লাগে । তবে কি সে বলবে যে তার ঘরে বৌ আছে । রোজগারপাতি ভালো হচ্ছে দেখে তার বাবা তাকে বছরখানেক আগে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । মনে হচ্ছে এই প্রথম বৌ শব্দটা তার জীবনে কোনো কাজে লাগবে । নাহলে সবার বিয়ে হয় । তারও হয়েছে । এরমধ্যে কোনো বিশেষত্ব ছিল না ।


এদিকে সপ্তাহ খানেক হোলো মেয়েটা আসে না । এমনকি তাকে রাস্তায়ও দেখা যায় না !

একদিন চায়ের দোকানের পিন্টু বলে ' কি রে , তোর চিকনী চামেলী ফুড়ুৎ ? '
মোহন বলে ' কি বলতে চাস ? '
পিন্টু - যা দেখি তাই বলেছি
মোহন রাগত কন্ঠে বলে - কাস্টমার লক্ষ্মী ! ফালতু কথা বলবি না !
পিন্টু - লক্ষ্মী তোর সাথে হেসে হেসে কথা বলে
তখন মোহন পিন্টুর দিকে এগিয়ে চাপা গলায় বলে ' মুখ সামলে কথা বল ! বলছি !
তখন কোথা থেকে আরো কয়েকজন চলে এসে বলে ' ভদ্দরলোকের মেয়ের সাথে মহব্বত করছিস কর ! মস্ত আইটেম আছে ! আমাদেরও একটু দেখার ভাগ দে ! '
এবারে মোহন এগিয়ে এসে পিন্টুকে ধাক্কা দেয় । যদিও ঘড়ির দোকানের রতনকাকা এসে যায় বলে হাতাহাতি আর বেশী দূর এগোয় না । যদিও তারা মোহনকে শাষিয়ে যা্য় । আর হাসতে হাসতে বলে ' তোর চিড়িয়ার বিয়ে গেলো নাকি দেখ ! '
কিন্তু মোহনের মনে মনে ভাবে বিয়ে হলে সে জানতে পারতো ! যদিও তার এমন ভাবনার পিছনে কোনো কারন ছিল না ।

এর কয়েকদিন বাদে , একটা দুপুরবেলা মেয়েটা আসল ।দোকানটা ফাঁকা ছিল । গোলাপি সালোয়ার কামিজ পরেছিল সে । কানে ছিল গোলাপি পাথরের দুল । মোহন দেখে চিনতে পারলো , তার দোকান থেকে কেনা দুলগুলো ।
সেদিনও সে কানের দুল দেখতে চাইল । দেখতে দেখতে সে বলে ' আপনাদের মার্কেটটা শপিংমল হবে শুনছিলাম । '
মোহন বলে ' হ্যাঁ ম্যাডাম । '
ইশ দোকানটা আর থাকবে না ! আপনার দোকানটা ছোটো হলেও চয়েসেবল জিনিস আছে । তাই আসতাম । অনেকদিনের দোকান আপনার ? '
কথাগুলোর জাদুস্পর্শে মোহনের মুখটা উজ্জ্বল লাগে । সে বলে ' আসলে দোকানটা আমার বাবার ছিল। বাবার এখন অসুখে ভোগে । তাই আমি চালাই । '
মেয়েটা বলে তাহলে তো আপনার দোকানটার উপরেই সংসারটা নির্ভর ।
তা বলতে পারেন । তবে দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে । এখন সংসারে আমি , বাবা , মা আর আমার বৌ ।

এবারে মেয়েটা কানের দুল থেকে মুখ না তুলেই বলে ' আপনাদের তো আবার অল্প বয়সে বিয়ে হয় । '
সেদিন ওরা বলেছিল ভদ্দরলোকের মেয়ে । আজ মেয়েটা নিজেই বলছে যে তাদের নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে হয় ! এরমানে কি ? সে কি মেয়েটার থেকে অনেক আলাদা ? কোন অভদ্র কাজটা সে করেছে ? যদিও তার এই চিন্তা এক মুহূর্তেই উড়ে য়া্য় । সে বলে ওঠে ' দোকান ছাড়ার আমার কোনো ইচ্ছে নেই । দেখি আরো কয়েকজনকে সাথে পাই কিনা !
তখন মেয়েটা খুব শান্ত গলায় বলে ' দুনিয়া তার নিজের নিয়মে চলে । কে আর কার ইচ্ছে - অনিচ্ছের কথা জানতে চা্য় ! '
মোহন কথাটার কি অর্থ বোঝে বোঝা যায় না । সে বলে ' দুনিয়াদারি মানে ব্যবসা ম্যাডাম । শুধু লাভ আর লোকসানের হিসেব । '
মেয়েটা একথার কোনো উত্তর দিল না । তার ঠোটের কোনে মৃদু হাসির রেখা এসেই মিলে গেলো । সে একজোড়া কানের দুল হাতে নিয়ে বলে ' এমনিতেও আমার আর আপনার দোকানে আসা হবে না । ' মোহন কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলে ' আমার বিয়ে ঠিক হ্য়ে গেছে । আজ চাকরীটা ছেড়ে দিলাম । এদিকে আর আসা হবে না ।'

হঠাৎ কি একটা শক্তি এসে মোহনের কন্ঠরোধ করতে চায় । অস্পস্ট স্বরে সে বলে ' তাও যদি এদিকে আসেন তবে আসবেন । আর ঐ দুলজোড়ার দাম আজকে আমি নেবো না । '
মেয়েটা বলে ' তা কি করে হয় ? '
মোহন জবাব দেয় ' আপনি আমার দোকানের বাঁধা কাস্টমার ছিলেন । অনেক জিনিস কিনেছেন । অনেক জিনিস কিনলে দোকানির তরফ থেকে একটা ফ্রি গিফট থাকে । সেরকম কিছু একটা ধরে নিন । '
মেয়েটা শান্ত কন্ঠে বলে ' ঠিক আছে দাম দেবো না । '
এরপর মেয়েটা দোকান থেকে বেরিয়ে যায় । মোহনের দৃস্টি তাকে অনুসরণ করে । যতদূর দেখা যায় । যদিও মেয়েটা ফিরে তাকায় না।


আজ মোহন দোকানটা বিক্রি করে দিল । ।
এমনিতে বৃস্টি আসার সম্ভাবনা না থাকলে মোহন আকাশ দেখে না । আজ মাঝরাতে বাইরে বেরিয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কেনো সে দোকানটা বেচলো ? লোভে ? নাকি মেয়েটা আর আসবে না বলে ? কংক্রিটের দোকানটাকে সে সাজাতো , গোছাতো । তা কি ইচ্ছে করে ? ভালোবেসে ? নাকি নেহাৎই অভ্যাসবশত অনিচ্ছায় ?
অজানার উদ্দেশ্য সে প্রশ্ন করে ' আমি কি কখনো জানতে পারবো মেয়েটা এখন কোথায় ? সেখানে কি নিজের ইচ্ছেতে আছে ? '

মোহনের চোখ থেকে নিঃসাড়ে জলধারা বইতে থাকে । জানা নেই তা তার ইচ্ছায় না অনিচ্ছায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×