somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমিকদের নাম তিরস্কৃত হয় কেনো?

১৬ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্ট্রিট রোমিও, মজনু দিওয়ানা , কলির কৃষ্ণ বা কেষ্ট। এই শব্দ গুলো আমরা অহরহ শুনে থাকি । বলেও থাকি। কেনো? অবশ্যই কোনো ভালো অর্থে নয়। কাউকে বিদ্রূপ করতে! কারন তারা বিদ্রূপের ই যোগ্য। তারা কারা? যারা মেয়েদের অসম্মান ও অবমাননা করে। এমন কি কখনো তা সব সীমা অতিক্রম করে যায়।এই ঘৃণ্য কাজটাকে আমরা এককথায় ' ইভ টিজিং ' ( বহুল প্রচলিত) বলে থাকি। ইভ অর্থাৎ আদি মানবী। তাঁকে যারা টিজ করে তারা ইভ টিজার। এই শব্দ বন্ধের যৌক্তিকতা বোঝা যায়। কিন্তু, এদেরকে হঠাৎ আবহমান প্রেমিকদের নাম দিয়ে ভূষিত করা কেনো?



প্রথমে আসি রোমিওর কথায়। সবাই জানি রোমিও সেক্সপিয়রের নাটকের একটা চরিত্র। যে তার প্রেমিকা জুলিয়েটের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়। এই নাটকে দেখতে পাই রোমিও কিভাবে নিজেকে প্রেমিক হিসাবে পরিনত করেছে। আর প্রেমিকাকে অসম্মান দূরের কথা তাকে সূর্য্যের আলোর সাথে তুলনা করেছে। এহেন প্রেমিক কিভাবে ইভটিজারদের সাথে তুলনীয় হয়?




এবারে মজনুর কথা একটু ভাবি । আরবের লায়লা - মজনুর প্রেম কাহিনীকে চিরকালীন ট্র‌াজিক কাহিনী বলা চলে। এটা হয়ত সবাই মানবেন। লায়লার অনত্র বিয়ে হয়ে যায় । তারপর মজনু মরুভূমির জঙ্গলে বসে শায়েরী লেখে। শেষমেশ লায়লার কবরের পাশে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে। যদিও গল্প মতে মজনু হ্যান্ডসাম, শাহি খানদানের ছেলে। চাইলেই হাজারটা প্রেমিকা জুটে যেত। তা না করে মজনু জীবনটা জঙ্গলেই কাটিয়ে দিল। এই বিরলতম প্রেমিক পুরুষকে সমাজের জঘন্যতম পুরুষদের শ্রেণীতে টেনে আনা কেনো?



সব শেষে আসি কৃষ্ণ প্রসঙ্গে। এটা লিখতে গিয়ে কিছু দিন আগের দূটো ফিল্মি গানএর কথা মনে হচ্ছে। একটা ' কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে......
আর একটা হিন্দী। সলমান খানের উপর পিকচারাইজড। ' কুড়িয়োঁ কা নেশা .........

ইশক কে নাম পে করতে সভি আব রাস লীলা হ্যায়
ম্যাঁয় করু তো শালা ক্যরেক্টার ঢিলা হ্যায়। '

গানের লিরিকগুলো খেয়াল করুন। শুনে মনে হবে নারীরা যেন ভোগ্যপণ্য।
এবার রাসলীলা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। সেটা কি ? বঙ্কিম চন্দ্র তাঁর শ্রী কৃষ্ণ চরিত্রে রাসলীলার খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। গহীন অরণ্যের মধ্যে সেন্টার পয়েন্ট বা কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন রাধার সাথে কৃষ্ণ আর চারপাশএ গোপিনীরা বৃত্তাকারে নাচ গান করতে থাকেন। এক সময় দেখেন তাঁদের সাথেও কৃষ্ণ আছেন। এই হোলো রাস লীলা। ধার্মিক কথায় বলা যায় জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন।

ধর্ম কথা না হয় বাদ দিলাম। মহাভারত অনুযায়ী কৃষ্ণ বীর। তবে তিনি রাধা বা কোনো গোপিনীর গলায় সুদর্শন চক্র ঠেকিয়ে তাঁর কাছে আসতে বাধ্য করেননি! তিনি তাঁদের বাবা, ভাই বা স্বামীর মতো তথাকথিত সুরক্ষাদাতা নন। তবু তাঁরা গেছেন। তাও রাতের বেলা। সুরক্ষিত ঘর থেকে বিপদ সঙ্কুল জঙ্গলে। কিন্তু কেনো?
তাঁরা কৃষ্ণকে বা তাঁর বাঁশির সুরকে ভালোবেসে পছন্দ করে গেছেন। নিজের ইচ্ছায়।

ইচ্ছা - এই শব্দেই যতো বিপত্তি। মেয়েদের কোনো নিজের ইচ্ছে থাকতে পারে না। কারন সে মেয়ে। সে দুর্বল। এক আলাদা শ্রেণীভুক্ত। তার ভালো মন্দ বোঝেন পরিবার ও বৃহত্তর সমাজ । তাই প্রেমিক আর অপ্রেমিক এক হয়ে যায়। কোনো প্রেমিক যতোই গুণবান হোক , আর প্রেমিকা সেই গুণে যতোই মুগ্ধ হোক না কেন প্রেমিকের পকেটের ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ও কুলোগৌরব বিচার করে সেই গুণের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা রাখে একমাত্র মেয়েটির পরিবার। মেয়েরা আবার সুরক্ষিত জীবনের কি বোঝে? আমার মনে হয় আইন করে মেয়েদের ভোটাধিকার রদ করে দেওয়া উচিত। কারন যারা নিজের জীবন সংগী নির্বাচন করতে পারে না তারা দেশের প্রধান মন্ত্রী বা সঠিক রাজনৈতিক দল নির্বাচন করবে কিভাবে? দেশের দূরাবস্থার জন্য মেয়েরাই দায়ী।

আবার ফিরে যাই ইভটিজারদের কথায়। এরা কি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফসল নয়? যে সমাজ তাদের মতো অপ্রেমিকদের মহান প্রেমিকদের তকমা দিয়েছে। কারন তারাও তো মেয়েদের হ্যা বা না - এর পরোয়া করে না। তাদের কথায় ' আমি বলছি বলেই তুমি আমার হবে। না যদি বলো তবে এসিড ছুড়বো এবং দরকার হলে তোমার জীবনও কেড়ে নিতে পারি! ' ভাবুন, মজনু কিন্তু বিবাহিত লায়লাকে এসিড ছোড়েনি উল্টে বেচারা নিজেই বিবাগী হয়েছিল।
হ্যাঁ। তবে, শিশুকন্যা বা বৃদ্ধার চূড়ান্ত অবমাননা ঘটলে এই সমাজই মোম বাতি মিছিল করে খবর তৈরী করে। মানছি। কিন্তু অন্তঃসারশূন্য প্রতিবাদের কোনো প্রয়োজন আছে কি ? কারন চোখের সামনে অপরাধ যখন ঘটে তখনও সমাজ দর্শকের ভূমিকা পালন করে তামাশা দেখে। তাই তো মজনু আর অপ্রেমিক এক হয়ে যায় ।

পরিশেষে ফিরে যাই রোমিওর কথায়। রোমিও বলেছিল যে প্যারিস রোমিও আর জুলিয়েটের প্রেমটাকে না বুঝেই মারা গেছে। দূর্ভাগ্য প্যারিস-এর। হুম। সত্যিই বড়োই দুর্ভাগা ছিল প্যারিস। আর তার চেয়েও দুর্ভাগা আমাদের এই সমাজ!

আপনার মতটা কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:১৯
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×