ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর বাঁ পা আগে , হাতে যেভাবে দেখিয়েছি ওয়েভ কর, এবার ডান পা আগে রিপিট সেম ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর এন্ড টার্ন ব্যাক টু ফ্রন্ট! ও. কে? তিন্নি একটু পজ দিয়ে বলে এবারে লিরিক শুরু গলি মে মারে ফেরে, পাস আনে কো মেরে..... আর হ্যাঁ, অম্বরসরিয়া মুন্ডেভা...... গানটা ১৬বিট দিয়ে শুরু আমরা ৮টা বিট ছাড়ছি নাইনথ, নবম থেকে শুরু করছি। বোঝাতে পারলাম? ' ওরে, দারুণ বুঝিয়েছিস! এবার থাম! মামি এসে বোঝাবে নাহলে.... ' কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে ঢোকে জিনিয়া। তবে সে আর কিছু বলার আগেই তিন্নি বলে ' আরে দিদিয়া তোর জন্যই তো এতো কান্ড! রাত ১ টায় নাচছি! ' নিধিও সাথে যোগ দেয় ' ঠিক বলেছিস তিন্নি! উফ! দিদিয়া একজন নন বেঙ্গলীকে কেনো বিয়ে করছিস? তাদের রিচুয়াল, সঙ্গীতে আমাদের কেনো নাচতে হবে? ' জিনিয়া হেসে এসে বলছি বলে কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে সেঘর থেকে বেরিয়ে যায় । জিনিয়ার বিয়ে উপলক্ষে তার বড়ো ও ছোটো মামার মেয়েরা তিন্নি ও নিধি এবং সেই সাথে তারকিছু বান্ধবী এসেছে! সেরকম এক বান্ধবী মিতা । সেই ঘরে তার দুই বোন সহ বান্ধবী এই মিতা রয়ে যায় । এবারে সে বলে ওঠে ' ও আর বলেছে, তুই আর শুনেছিস! '
নিধি বলে জানি গো মিতাদি! পিসিমনি, জামাই হিসাবে বিজনেস ম্যাগনেটএর ছেলেকে পেয়ে একেবারে মুগ্ধ! যা বলছে তাই করছে! '
তিন্নি ' যাক বাদ দে! আমাদের পারফর্ম করতে বলেছে ট্রাই করবো ভালো করার! নিধি, অম্বর সরিয়াতে হাতের ওয়েভটা একটু ঠিক করে কর! তুই রুমালি রুটি বানানো দেখেছিস? রুটি বানাতে যেভাবে হাত ঘোরায় সেভাবে....... ' তার কথা শুনে বাকি দুজন হেসে উঠল! উফ, কী উদাহরণ!
জিনিয়া এবার ঘরে ঢুকে বলে মা আর বড় মামী ( তিন্নির মা) আসছে! বলতে বলতেই তাঁরা ঘরে ঢোকেন ও বলেন ' তোরা কি আজ রাত জাগবি? এই জিনিয়া তুই আলাদা ঘুমাবি! ' তিন্নি বলে ' সেই তো, দিদিয়ার তো স্প্যেশাল ব্যাপার! ' সাথে সাথে তার পিষি বলেন ' এবার তুমিও স্পেশাল হওয়ার জন্য রেডি হও ' তখন তার মা বলেন ' তোমার দাদা মেয়েকে যা স্পেশাল করে রেখেছে, তারজন্য পরে কতো কথা শুনতে হবে দেখো! সারাক্ষণ খালি বলবে শাড়ি পড়িস না মা, কেমন যেন বড় বড় লাগে! যেন উনি সারাজীবন মেয়েকে ছোটো করে রাখবেন! ' তিন্নি বিরক্তিভরা সুরে বলে ' আঃ মা, এই রাতে...... ' তখন পিসী বলেন ' আচ্ছা আমরা যাচ্ছি... '
নিধি বলে দিদিয়া জিজু পাঞ্জাবিতে কি গুডনাইট মেসেজ পাঠালো? মিতা হেসে বলে ' তেনু ম্যায় ( তোমায় আমি ) .... ' !
তাদের হাসাহাসির মধ্যে গম্ভীর কন্ঠে তিন্নি বলে ' দিদিয়া, কিগান কি জানে? '
জিনিয়ার আগেই নিধি বলে ' আবার কি গান রে? ' তিন্নি ' গান না নাম! '
মিতা - হুম নাম, কিগান মিত্র!
নিধি ' সে কে রে? ইশ আমাকে তোরা কতকিছু জানাস না! কিগান! নাম! ' বলেই সে হাসতে থাকে!
তিন্নি বলে ওঠে - কিগান একটা আইরিশ নেম! মানে nymph. '
জিনিয়া তার কথা শেষ না হতেই ঝংকার দিয়ে ওঠে ' বাহ, দেখ ও নামের ঠিকুজিকোষ্ঠী জানে। আমিও এতো জানতাম না! কিগান! ফালতু ছেলে একটা! ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ড্রপ দিয়ে যাচ্ছে! নাটক নিয়ে যতো মাথাব্যাথা! '
তিন্নি গম্ভীর স্বরে বলে - 'দিদিয়া, তুই কিন্তু বলেছিলি যে তুই .... '
এবারেও জিনিয়া তিক্ষ্ণ কন্ঠে বলে ' হ্যাঁ, আমিই ও' কে প্রথম মেসেজ করি! ইংরাজিতে । তার উত্তর কি দিয়েছিল, শোন! জিনিয়া, তুমি দেখে স্পেলিং ভুল লিখেছ! সেন্টেনেসেও গন্ডোগোল! ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা, মাতৃ ভাষায় , বাংলায় কেনো লিখলে না? জানিস , যদিও আমি ভালোবাসার কথা স্পষ্ট করে বলিইনি! দ্য গ্রেট আঁতেল! '
মৃদু হাসির সাথে এবার মিতা বলে - তো ভালোবাসার উপর কবিতা থুড়ি পোয়েট্রি লিখে পাঠিয়েছিলি! এই আঁতেলকেই দশবার মেসেজ পাঠাতিস খেয়েছে কিনা জানতে! আর ওর ভাষাজ্ঞান ভালো! সেটা তুইও জানিস! তোকেও অনেক হেল্প করেছে
জিনিয়া - তারজন্য কৃতজ্ঞ! আর কি করবো?
মিতা - অন্তত অপমান করিস না!
জিনিয়া - তোরা কি বলতে চাস বলতো? আমি কি কোনো কমিটমেন্ট করেছিলাম নাকি?
মিতা - শব্দটাই হাস্যকর!
জিনিয়া - ও. কে! আমি টায়ার্ড শুতে গেলাম। তোদের কিছু লাগলে বলিস! গুড নাইট! '
নিধি ' সরি! মিতাদি! আমি দিদিয়ার হয়ে তোমার কাছে....
মিতা ' আরে আমি জিনিয়াকে ভালো করে জানি। আমি ওর ফ্রেন্ডএর থেকে বড়ো কথা আমাদের বাবাদের বন্ধুত্ব। তাই এসেছি। নাহলে.... কিগানের সাথে সম্পর্ক থাকতেই এটাকে জুটিয়েছে। এটা পজিটিভ হতেই কিগানকে হার্ট করা শুরু করেছে! অন্য কোনো ছেলে হলে দেখতিস কি করতো....
তিন্নি মৃদু স্বরে বলে ' মিতাদি , মানুষ এতো কি করে বদলায় বলো তো? '
মিতা হেসে বলে ' ধ্যেৎ বদলায় কোথায়? এরা প্রথমে বলে - আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ! পরে বলে - আই কান্ট লিভ উইথ ইউ! তাই এতো না, ছোট্ট একটা প্রিপোজিসন শুধু বদলায়! '
একথায় নিধি একটু হেসে ওঠে ! তারপর বলে ' অনেক হোলো!
চল এবার আমরা ঘুমাই!
দিদিয়ার হোটাস্যাপে একবারই দেখেছিল সে পিকটা! আলুথালু চুল। অযত্নের স্টাবল্ড বিয়ার্ড আর উদাসী দুটো চোখ! তিন্নিকে ঘুমাতে দেয় না! জাগিয়ে রাখে .........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৩১