ফরহাদ উদ্দিন স্বপনের ব্লগ "প্রসঙ্গ: ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষায় ব্যক্তির নামকরণ"-এর উত্তরে আমার এ ব্লগটি লিখা। উনার ব্লগের লিংকাটাও এখানে দিলাম। কেউ পড়তে চাইলে ক্লিক করুন নীচের লিংকটি।
Click This Link
লেখককে ধন্যবাদ, কারন আমার মেয়ের নাম রাখার সময় এরূপ সমস্যার সম্মুখিন হয়েছিলাম '৯৪-এ। ১৯৯৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর আমার মেয়ের জন্ম হয়।
নামের বিষয়টি নিয়ে আমার নিজের মধ্যেই একটা বিতর্ক চলতো শৈশব থেকে। যখনই আমাদের পরিবারে কেউ জন্ম গ্রহন করতো তখন নাম রাখার একটা প্রতিযোগিতা পড়ে যেত যেন সকলের মধ্যে। কারণ যার নামটা সব থেকে সুন্দর হবে, তার নামটায় যে রাখা হবে। আমি হেরে যেতাম বারবার। কারণ আমি সর্বক্ষনই বাংলা শব্দ দিয়ে নাম পছন্দ করতাম, কিন্তু সকলেই আমার দেয়া নামটা বাতিল করে দিত, হিন্দুর নাম বলে। মনটা খারাপ হয়ে যেত প্রতিবারেই। তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আমার সন্তানের নাম আমি নিজেই রাখবো, অন্য কারও নাম রাখাটাকে প্রধান্য দিবো না।
আমার মেয়ে যখন ওর মায়ের গর্ভে আসলো এবং এ সংবাদটা আমি যখন শুনলাম, তখনই আমি আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে প্রার্থনা করেছিলাম, "হে প্রভূ, আমার স্ত্রীর গর্ভে যে সন্তান দিয়েছো, তাকে তুমি মেয়ে রূপে পাঠিয়ো"। এ প্রর্থনার এই উদ্দেশ্য ছিল যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কথা আমাকে ভীষন ব্যথিত করতো তা হলো, মেয়েরা কখনই বংশের ধারা রক্ষা করে না, শুধু ছেলে সন্তানরই নাকি এ অধিকার। তায় যদি প্রথম সন্তান ছেলে না হয়ে মেয়ে হয় তাহলে ঐ মাকে অনেক যাতনা সহ্য করতে হয় আমাদের সমাজে। এ জন্য আমি আমার স্ত্রী এবং মাকে (আমার বাবা তখন গত হয়ে গিয়েছিলেন) বললাম, "দেখ, যদি আমার মেয়ে সন্তান হয়, তাহলে আমি আর কোন সন্তান নেবো না। কিন্তু যদি ছেলে সন্তান হয় তাহলে যতক্ষন না আমার মেয়ে সন্তান হবে ততক্ষন পর্যন্ত সন্তান নিতে থাকবো।" সকলে আমার কথা শুনে হতবাক। সকলে যেন একবাক্যে বললো, "এতো দেখছি তুই একেবারে উল্টো কথা বলছিস, যদি কারও প্রথমে মেয়ে হয় তাহলে যতক্ষন না ছেলে হয় ততক্ষন সন্তান নেবার চেষ্টা করে, আর তুই বলছিস একেবারে উল্টো কথা।" আমি আর তাদের সাথে এ বিতর্কে গেলাম না শুধু বললাম, "এটায় আমার শেষ কথা"।
এরপর যখন এলো সেই শুভক্ষনটা অর্থাৎ আমার মেয়ের জন্মের মূহুর্তটি এবং আমার মেয়েকে আমার মা আমার কোলে তুলে দিয়ে বললো, "আল্লাহ তোর কথা শুনেছে, তোর মেয়ে হয়েছে, এই দেখ তোর মেয়েকে"! আমি কি যে আনন্দিত হয়েছিলাম সেদিন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি ঐ মূহুর্তে আমার মেয়েকে দু'হাতে উপরে তুলে ধরে চিৎকার দিয়ে সকলকে বললাম, "আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম 'প্রিয়ংবদা পিকী রঞ্জিনী'। আমার কথা শুনে সকলেই যেন হতভম্ব। সকলই চুপচাপ, কারও মুখে কোন শব্দ নেই।
এর দু'দিন পর আমার মা, ভাই এবং আমার শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজন আমাকে ডেকে বললো, "দেখ, তোমার আগের কথাটা আমরা মেনে নিয়েছি যে তোমার মেয়ে হলে তুমি আর কোন সন্তান নিবে না, কিন্তু আমাদের সকলেরই একটা আপত্তি এই যে, তুমি যে নামটা রেখেছো তা রাখতে পারবে না। কারণ এটা একটা হিন্দুয়ানী নাম। নামটা রাখতে হবে ইসলামীক দৃষ্টিতে"। ওদের কথা শেষ হলে আমি বললাম, "আমি জানিনা নামের ক্ষেত্রে তোমরা ইসলামীক দৃষ্টি কি। আল-কোরআনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে যে, (এক)- পৃথিবীতে যত ভাষা আছে তা আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টি করেছেন, (দুই)- তোমরা তোমাদের সন্তানদের অর্থবহ নাম রাখো। তবে কেন ভাবছো বাংলা ভাষার কোন শব্দ দিয়ে নাম রাখলে সেটা হিন্দুয়ানী নাম হয়। আমি যে নাম রেখেছি সেটায় থাকবে, এর কোন পরিবর্তন হবে না। কেউ যদি আমার মেয়ের নাম শুনে তাকে হিন্দু ভাবে আমার তাতে কিছু যায় আসে না, তবে আমি খুব খুশি হবো যদি আমার মেয়ের নাম শুনে কেউ যদি তাকে বাঙ্গালী ভাবে তাতে।
এর পরের কথা, আমি এখন অব্দি আর কোন সন্তান নেইনি। কিন্তু নামের ক্ষেত্রে, যে তার নাম শুনে, তাকে প্রথমত হিন্দু ভাবে। আমার মেয়ে একটি ইংলিশ মেডিয়াম স্কুলে পড়ে। তার সহপাঠীদের মা বাবারাও আমার মেয়েকে হিন্দু বলে মনে করতো বহুদিন যাবৎ। একবার অর্থাৎ আমার মেয়ে যখন স্ট্যান্ডার্ড ত্রির ছাত্রী তখন সে তার তিনজন সহপাঠীর বাবা মাকে দাওয়াত দিতে বরলো ঈদে। আমি তখন তাদের ঈদের দাওয়াত দিলাম এবং আমাদের বাসায় আসতে বললাম। আমার কথা শুনে তারা যেন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। আমি ওদের অবস্থা দেখে বিষয়টা বেশ বুঝতে পারলাম এবং তাদেরকে বললাম, "বুঝতে পেরেছি, আমার মেয়ের নাম শুনে এতদিন মনে করেছেন যে আমরা হিন্দু, আসলে তা নয়, আমরা মুসলমান"। আমার কথা শুনে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন তারা। তাদের মধ্যে একজন বললো, "ভাই, নামের জন্য আপনার মেয়ে এ স্কুলে সকলের কাছেই পরিচিত, কারণ আপনার মেয়ের নামটা একেবাই আনকমন এবং আমরা সকলেই ভাবতাম আপনারা হিন্দু"। আমি তাদের কথার আর কোন উত্তর দিলাম না, আবার তাদেরকে ঈদের দিন আমাদের বাসায় আসার কথা বলে চলে আসলাম। চলে আসার পরে মনে মনে বললাম, "হে মোর বাঙ্গালী, এখনও রয়ে গেলে হিন্দুত্বের মধ্যেই"।
(বিঃ দ্রঃ- পোষ্টি মডারেশন করা আছে, আপনি মন্তব্য পাঠালে পাঠাতে পারেন। আমি পড়ার পরে অবশ্যই উত্তর দিব। আমার পোষ্টি মডারেশন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে ব্লগারদেরকে উত্ত্যক্ত করেন তাদের চেহারা সাধারণ ব্লগারদের কাছে উন্মুক্ত করতে চাই না। তবে কেউ যদি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পোষ্ট করেন, সে গুলো আমি সংরক্ষন করে রাখবো, প্রয়োজন বোধে সে মন্তব্য গুলি দিয়ে পোষ্ট আকারে প্রকাশ করবো। ধন্যবাদ।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ১২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



