somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫০% যানজট কমে যাবে, যদি.......

১০ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যার অন্যতম প্রধান কারন হলো ঘন ঘন ক্রসিং পয়েন্ট থাকা এবং ক্রসিংপয়েন্টমুখী সবগুলি রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে গাড়ি জমে যানজটের সৃষ্টি করে। ঢাকা মহানগরীর শতকরা ৭৫ ভাগ যানজট মূলত এই কারনেই সৃষ্টি হয়। এছাড়া অন্যান্য কারনগুলির মধ্যে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো ও নামানো, গাড়ি ও রিকসা একই রাস্তায় চলতে দেয়া ও অপরিকল্পিতভাবে ডিভাইডারের মাঝখানে ফাঁকা রেখে গাড়িগুলি “ইউ” টার্ণ করতে দেয়া অন্যতম কারণ।
সমাধানের উপায়:
ঢাকা মহানগরীর এই যানজট সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়। এই সহজ সমাধানের জন্যও আমাদের যেই কাজটি করতে হবে তা হলো, ঢাকা মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক গুলির ক্রসিং পয়েন্টগুলির বর্তমান ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতি(একদিকের গাড়ি আটকে রেখে অপর দিকের গাড়ি যেতে দেয়া) উঠিয়ে দিয়ে গাড়িগুলিকে বাধাহীন ভাবে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, যেমনভাবে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়িগুলি চলাচল করে,কারন ফ্লাইওভারের ওপর কোনো ক্রসিং পয়েন্ট নাই। প্রধানত দুইটি পদ্ধতির সমন্বয়ে আমার এই ধারনাটির বাস্তবায়ন করা যাবে। তার জন্য কোনো বড় ধরনের ফ্লাইওভার নির্মাণের দরকার নেই। উপায় দুটি হলো (১) ওয়ানওয়ে পদ্ধতি (২) ওভারপাস পদ্ধতি।

ওয়ানওয়ে পদ্ধতি:

বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর সকল রাস্তাই টু ওয়ে পদ্ধতির, অর্থাৎ রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে ভাগ করে একভাগ দিয়ে গাড়ি যায় আর অন্যভাগ দিয়ে গাড়ি আসে। আর ওয়ানওয়ে পদ্ধতি হলো ,রাস্তার মাঝখানে কোন ডিভাইডার থাকব না, গাড়ি যাবে
এক রাস্তা দিয়ে আর আসবে আরেক রাস্তা দিয়ে। কাছাকাছি দুইটি রাস্তা (দুই-তিনশ মিটার দুরত্বে) থাকলে সহজে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যাবে।

এই পদ্ধতিটি বাস্তবায়িত করতে হলে গাড়ি কোন পথে যাবে আর কোন পথে আসবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এই ওয়ানওয়ে পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে আপনার গন্তব্যে যাইতে কোন সমস্যা হবে না, আপনাকে হয়ত কিছুটা পথ ঘুরতে হতে পারে কিন্তু আপনি কোনো ট্রাফিক সিগন্যালে পড়বন না এটা নিশ্চিত। এই ওয়ানওয়ে পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করা খুবই সহজ এবং অল্প সময়েই বাস্তবায়ন করা যাবে। এই পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করতে বড় কোনো অবকাঠামো নির্মাণের দরকার নাই শুধুমাত্র রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডারগুলি অপসারণ করতে হবে এবং লাইটপোস্টগুলি সরাতে হবে।

এই ওয়ানওয়ে পদ্ধতির রাস্তাগুলিতে আসা শাখা রাস্তাগুলির প্রবেশমুখে ইংরেজি ‘টি’ আকৃতির ডিভাইডার স্থাপন করতে হবে যাতে কোন গাড়ি আড়াআড়ি রাস্তা ক্রস করতে না পারে। এই ওয়ানওয়ে পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা মাত্র ১০০ কোটি টাকারও কম খরচ করে ঢাকা মহানগরীর আনুমানিক ৫০ভাগ এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব যা বাস্তবায়ন করতে লাগবে মাত্র ২ থেকে ৩ মাস। এই ওয়ানওয়ে পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে যে সকল এলাকার যানজট নিরসন করা যাবে তা হলো- গুলিসতান, মতিঝিল, দৈনিকবাংলা,পলটন, হাইকোর্টের সামনের রাস্তা,মৎস ভবন, কাকরাইল মড়, বিজয় সরণীর মোড়, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর,মৌচাক, মালিবাগ-ক্রসিং, চৌধুরীপাড়া, মগবাজারমোড়, এফডিসির সামনের তিনরাস্তার মোড়,শাহবাগ মোড়, রূপসীবাংলা হোটেল, কাকরাইল মসজিদ,বাংলা মটর, সোনারগাঁ হোটেল,ফার্মগেইট, খামারবাড়ি, বিজয়সরনীর বিমান চত্ত্বর,আইডিবি ভবন,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবন, পান্থপথ -গ্রীণরোড মোড়, ধানমনডি-৩২ হইতে সিটি কলেজ, নিউমার্কেট,নীলক্ষেত মোড়, কাটাবন মোড় পরর্যন্ত।

ওভারপাস পদ্ধতি:

যে সকল এলাকার যানজট ওয়ানওয়ে পদ্ধতির সাহায্যে নিরসন করা সম্ভব নয় ঐ সকল এলাকায় ওভারপাস পদ্ধতির বাস্তবায়ন করে অবশিষ্ট ৫০ভাগ এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব। এই ওভারপাস পদ্ধতি বাস্তবায়নে জন্য রাস্তাগুলি অবশ্যই সুপ্রসস্ত হতে হবে। যে সকল এলাকায় ওভারপাস পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে যানজট নিরসন করা যাবে সেই এলাকাগুলি হলো-ধানমন্ডি ৩২ হইতে আসাদ গেইট,শমলী টেকনিকেল, মিরপুর-১ মিরপুর-১০ হইতে কাজিপাড়া হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত, তারপর সাতরাস্তা হইতে মহাখালি, বনানী হয়ে উত্তরা পর্যন্ত, তারপর যমুনা ফিউচার পার্ক হইতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এবং গুলশান-১ ও গুলশান-২ পর্যন্ত। ধানমন্ডি এলাকার যানজট ও ওভারপাস পদ্ধতিতে নিরসন করা যাবে।

এই ওভারপাস পদ্ধতিটি হলো এক ধরনের ওভারপাস যা ইংরেজি ‘ইউ’ বা বড় হাতের ‘এল’ আকৃতির অথবা সোজাও হতে পারে যা তিন রাস্তার মোড় বা চার রাস্তার মোড়ের আগে ও পরে স্থাপন করতে হবে। এই ওভার পাসগুলির সাহায্য তিন রাস্তার মোড় বা চার রাস্তার মোড়ের ক্রসিং পয়েন্ট গুলিতে ট্রাফিক সিগন্যালের সমুখীন না হয়ে বাধাহীন ভাবে গাড়ি গুলি চলাচল করতে পারবে। ফলে এ সকল ক্রসিং পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে গাড়ি জমে যানজট লাগার আর সুযোগ থাকবে না। এই ওভারপাসগুলি সাধারনত দুই লইন বিশিষ্ট এবং ৩৫০মিটারের মত লম্বা হবে। এই ওভারপাসগুলির গড় নির্মাণ খরচ আনুমানিক পচিশ কোটি টাকার মত। এই ধরনের এক একটি ওভারপাস নির্মাণ করতে অনধিক ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এই রকম আনুমানিক ৬০ বা ৭০টির মত ওভারপাস লাগতে পারে অবশিষ্ট ৫০ভাগ এলাকার যানজট নিরসনের জন্য যা দুই বছর সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

আমার এই ধারনা বাস্তবায়নের জন্য নুতন কোন রাস্তা নির্মাণের দরকার নাই। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ঢাকার রাস্তায় বর্তমানে যে পরিমান গাড়ি চলাচল করে তার চাইতে অনেক বেশি গাড়ি যানজট মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে। এই দুই পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ঢাকা মহানগরীর শতকরা ৮০ভাগ যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।
রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো বাসের সিড়িগুলি বাদ দিয়ে বাসের ভিতরে আমরা যেখানে দাঁড়াই ওখান থেকে সরাসরি যাতে ফুটপাতে নামতে পারি তার ব্যবস্থা করা। এর সাথে বাসস্ট্যন্ডের ফুটপাতের উচ্চতাও বাড়িয়ে বাসের পা-দানির সমান উচু করতে হবে। ফলে বাস ধেকে আর রাস্তায় নামা যাবে না এবং বাসও আর যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠাতে-নামাতে পারবে না।

ঢাকা শহরে বাস চলাচলের রাস্তা রিকসা চলাচলের রাস্তার চাইতে অনেক কম। তাই যে সকল রাস্তায় বাস চলাচল করে ঐ সকল রাস্তায় রিকসা চলাচল অবশ্যই বন্ধ করা উচিত বলে আমি মনে করি। গাড়ির সাথে রিকশা চলার কারণে গাড়িগুলি রিকশার গতিতে চলতে বাধ্য হয় ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করে।

আমার এই যানজট নিরসনের ধারনাটি প্রস্তাব আকারে যোগাযোগ মন্তণালয়ের সংশ্লিস্ট বিভাগে নকশাসহ গত-১৬.০৫.১২ তারিখ পাঠানো হয়েছে। আমি আশা করি দেশের সাধারণ মানুষ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা সাড়া দিবেন।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×