somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতি বাদ দিয়া" ও "ফ্লাইওভার নির্মান "ছাড়াই ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন সম্ভব

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম দেখে অনেকে চমকে যেতে পারেন যে, যেখানে ট্রাফিক পুলিশ দিয়েই যানজট নিরসন করা যাচ্ছে না সেখানে ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেম ছাড়া অর্থ্যাৎ ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা ছাড়া কিভাবে যানজট নিরসন সম্ভব ? তার উপর অাবার ফ্লাইওভার নির্মানেরও প্রয়োজন নাই ! কথাগুলি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই ব্যাপারে অামার অবস্থান অত্যন্ত জোরালো ও স্পষ্ট ! প্রথমেই যানজট লাগার প্রকৃত কারন গুলি কি কি তা সংক্ষিপ্ত ভাবে অালোচনা করে নিই ! কারন যানজট লাগার প্রকৃত কারন উদঘাটন বা চিহ্নিত করতে না পারলে এর সমাধান বের করা সম্ভব নয় ! অামার দৃষ্টিতে যানজট লাগার প্রকৃত কারন গুলি নিন্মরূপ-

১. ঢাকার রাস্তায় খুব ঘন ঘন ক্রসিং পয়েন্ট থাকা এবং ট্রাফিক সিগনালের কারনে ক্রসিংপয়েন্ট মুখী সব গুলি রাস্তায় গাড়ি জমে প্রবল যানজটের সৃষ্টি করে ! ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলে অনেকটা ব্যাঙের মতো থেমে থেমে, এক সিগনাল থেকে অারেক সিগনাল তারপর অারেক সিগনাল ! এইভাবে গাড়ি চলার কারনে সারা ঢাকায় গাড়ির গড় গতিবেগ অামার মতে মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ! ঢাকা মহানগরীর শতকরা ৭৫ ভাগ যানজটের জন্য মূলত এই ক্রসিং পয়েন্টগুলি দায়ী ,

২. শহরের ভিতরে অান্তঃজেলা বাসটার্মিনাল থাকা যেমন-সায়েদাবাদ ও মহাখালি বাস টার্মিনাল ,

৩. যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো,

৪. ব্যস্ত রাস্তার ডিভাইডারের মাঝে ফাঁকা রেখে গাড়িকে ‘ইউ’ টার্ন করতে দেওয়া ,

৫. ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক গুলিতে দ্রুত গতির বাস,ট্রাক ও প্রাইভেট কারের পাশাপাশি অত্যন্ত কম গতির রিকসা চলার সুযোগ দেওয়া,

৬. রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে অবৈধ মাল চেকিং এর নামে ট্রাফিক পুলিশের চাদাবাজি ,

৭. বহুতলবিশিষ্ট বিপনীবিতান ও অফিসপাড়া গুলিতে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং অন্যতম !

ট্রাফিক পুলিশ কতৃক ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতিতে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন করা কোনভাবেই বাস্তব সম্মত নয় ! কারন ঢাকা মহানগরীর বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অপ্রতুল হওয়া সত্বেও ট্রাফিক বিভাগের ত্রুটিপূর্ন ভাবে গাড়ির রুট নির্ধারনের কারনেই অনেক ক্রসিংপয়েন্টের সৃষ্টি হয় ! অার এই সকল ক্রসিংপয়েন্ট গুলির একটি মাত্র পয়েন্ট দিয়া তিন/চারটি রাস্তার গাড়ি অতিক্রম করানোর উদ্দেশ্যেই মূলত ট্রাফিক সিগনাল সিষ্টেমের প্রবর্তন করা হইয়াছে যা বর্তমানের ভয়াভহ যানজট পরিস্থিতির জন্ম দিয়াছে ! শুধু কি তাই ? ট্রাফিক সিগনালের কারনে সৃষ্ট যানজট এড়াইতে গিয়া ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করতে গিয়া ভয়াবহ দূর্ঘটনার বহু নজির খোদ ঢাকা শহরেই অাছে ! এই ট্রাফিক সিগনাল সিষ্টেম শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক গাড়ি চলাচল করে এমন রাস্তাতেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ! সুতরাং ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতিতে ক্রসিং পয়েন্ট গুলিতে সৃষ্ট এই যানজট নিরসনের কোনই সম্ভাবনা নাই যতই অত্যাধূনিক ডিজিটাল পদ্ধতির ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেমের প্রবর্তন করা হউক না কেন ! বরং বিঅারটি এর সূত্র মতে প্রতি বৎসর ১০% হারে নগরীতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লে ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি অারো ভয়াভহ অাকার ধারন করবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই ! তারপর যাদের উপর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব তারাই যদি রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে অবৈধ মাল ও গাড়ির কাগজপত্র চেকিং এর নামে চাদাবাজি করে তখন গাড়ির চালকেরাও রাস্তার যেখানে খুশি সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করতে উৎসাহ বোধ করে ! তাছাড়া অনেক লোকেরই বদ্ধমূল ধারনা যে ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবেই যানজট লাগিয়ে রাখে যাতে সহজেই চাঁদাবাজি করতে পারে ! তাছাড়া রাস্তার উপর ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন অত্যান্ত কষ্টসাধ্য ও অমানবিকও বটে ! ফলে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ রোদে-বৃষ্টিতে একটানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে সামান্য বিশ্রাম নিতে অাসে পাশে কোথাও বসে থাকার সুযোগে যানজট মারাত্বক অাকার ধারন করে এবং অনেক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় ! তাছাড়া অনেক ধরনের দায়িত্ব পালন করা সত্বেও ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বিধায় ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতিতে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন করা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার !

তারপর অাসি ফ্লাইওভার প্রকল্প ছাড়া যানজট নিরসন প্রসংগে ঃ ফ্লাইওভার অাসলে যানজট নিরসনে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে অথবা ফ্লাইওভার নির্মানের উদ্দেশ্যই বা কি ? অামাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীগন তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে সব সময়ই বলে থাকে যে যানজট নিরসনের জন্য তারা বড় বড় ফ্লাইওভার নির্মান করছে, অারও অনেক বড় বড় ফ্লাইওভার নির্মানের পরিকল্পনার কথা অহরহ বলে বেড়াচ্ছে ! কিন্ত অামাদের এই সকল নীতি নির্ধারকেরা অাদৌ কি জানে যে এই সকল অত্যন্ত ব্যয় বহুল ও কষ্টসাধ্য ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে কি না ? প্রকৃতপক্ষে অামাদের মাননীয় মন্ত্রী-এমপিরা পুরাপুরি ভাবে অামলা নির্ভর হওয়ায় তারা যে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শই দিক না কেন তা গ্রহন করা ছাড়া তাদের অার কিছু করার থাকে না ! বাস্তবায়নের পরেই তারা বুঝতে পারে প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলাফল ! ফলাফল ভালো হলে নিজেরা বাহবা কুড়াবে অার খারাপ হলে অামলাদের ঘাড়ে দোষ চাপাবে ! প্রকৃতপক্ষে অামলারা নিজেদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে এমন পরামর্শ তারা কখনো সরকারকে দেয় না এবং কাউকে দিতেও দেয় না ! তারা সব সময় সরকারকে ছলে বলে কৌশলে সমস্যা জিইয়ে রাখার পরামর্শ দেয় ! কারন সমস্যা যতদিন থাকবে ততদিন সমস্যা সমাধানের কথা বলে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া যাবে ! অার বড় প্রকল্প মানেই তো কাড়ি কাড়ি টাকা ! অামাদের যানজট সমস্যাও এমনি এক ঘেরা টোপের মাঝে অাটকে অাছে ! যানজট সমস্যা সমাধান কল্পে অামলারা কর্তৃক সরকারকে দেওয়া প্রস্তাব গুলির কিছু বর্ননা দিলে অামার কথা গুলি সবার বুঝতে সহজ হবে, যেমন-উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্প, মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১,টেকনিক্যাল, শ্যামলী, অাসাদ গেইট, কলাবাগান হইয়া অাজিমপুর পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্প যা টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হইবে, এফডিসি গেইট হইতে মগবাজার রেল ক্রসিং এর উপর দিয়া গিয়া মগবাজার চৌরাস্তা ও মৌচাক হইয়া কমলাপুর পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্প, গুলিস্থান হইতে বংশাল, নয়াবাজার হইয়া বাবুবাজার বুড়িগংগা ব্রীজ পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্প, মহাখালী ফ্লাইওভার ভাংগিয়া নূতন অারেকটি ফ্লাইওভার নির্মানের পরিকল্পনাও সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধিন রয়েছে ! সুতরাং এই সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করিয়া কত বছরে ও কত টাকা খরচ করিয়া ও জনগনকে কত ভোগান্তি দিয়া ঢাকার যানজট নিরসন হবে বলে অামরা অাশা করতে পারি ! অাদৌ কি যানজট নিরসন হবে এই সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ? মহাখালী ফ্লাইওভার ও খিলগাও ফ্লাইওভার দেখেও কি অামরা কিছুটা অনুমান করতে পারছি না ? যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার এর কাজ শেষ হলে বোধ হয় পুরাপুরি বুঝতে পারবো অাসলে ফ্লাইওভার নির্মান করে কতটুকু যানজট নিরসন হবে ! ফ্লাইওভার অাসলে রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির একটা সামান্য অংশকে ক্রসিং পয়েন্টগুলির উপর দিয়া বাধাহীনভাবে চলাচলে সুযোগ তৈরী করে দেয় মাত্র ! রাস্তায় চলাচলকারী অধিকাংশ গাড়িই ফ্লাইওভারের সুবিধা ভোগ করতে পারে না ! অামাদের ঢাকা মহানগরীর প্রধান সড়ক গুলিতে খুব ঘন ঘন শাখা রাস্তা এসে মিশেছে ! ফলে এই শাখা রাস্তাগুলি থেকে অাসা গাড়িগুলি ফ্লাইওভারে উঠাতে গেলে ঘন ঘন রেম্প নির্মান করতে হবে যা অত্যন্ত কঠিন ও দুরহ কাজ ! বরং এই রেম্প নির্মান করতে গিয়ে মূল সড়কই সংকুচিত হয়ে যায়, যার বাস্তব প্রমান যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার ! অল্প দূরত্বের জন্য ফ্লাইওভার নির্মান করা বোকামি ছাড়া অার কিছু নয় ! একমাত্র লম্বা দূরত্বের জন্য ফ্লাইওভার লাভজনক হবে যদি মূল সড়কে গাড়ি চলাচলের সুযোগ কমে না যায় !

এখন অাসি কিভাবে ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেম ও ফ্লাইওভার নির্মান ছাড়াই ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন করা যায় সেই অালোচনায়ঃ-অামাদের দেশের রোড, ট্রান্সপোর্ট ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনরত উচ্চ পদস্থ কর্তা-ব্যক্তিদের ভাবসাব ও কথাবার্তা শুনে মনে হয় যে যানজট একটি অসমাধান যোগ্য সমস্যা অনেকটা ডায়াবেটিক রোগের মতো ! ডায়াবেটিক রোগ যেমন নিয়ন্ত্রন করা যায় কিন্ত নিরাময় করা যায় না তেমনি যানজটও সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে অানার চেষ্টা করা যায়, নামিয়ে অানা যায় তাও বলতে পারে না ! অামি তাদের এই ধরনের মন্তব্যের দুইটি কারন চিহ্নিত করেছি যথাঃ- হয় তাদের যানজট সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা নাই অথবা সমস্যা জিইযে রেখে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটার কৌশল হিসাবে সমাধানের লোক দেখানো চেষ্টা করে তারা ! অামি অামার বাস্তব ধারনার অালোকেই কথাগুলি বলেছি ! কারন বিগত এক বৎসর যাবত যানজট সমস্যার এই সহজ সমাধানের প্রস্তাবটি নিয়া উপরোল্লিখিত কর্মকর্তাদের ধারে ধারে ঘুরছি কিন্ত তাদের কোনরুপ সহযোগিতা পাচ্ছিনা অামার প্রস্তাবের উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের জন্য যাতে সহজেই অামার ধারনাটি সরকারের কাছে পৌছানো যায়! যানজট সমস্যা নিয়ে দীর্ঘকাল (প্রায় ৮/১০ বৎসর) যাবৎ চিন্তাভাবনা করার ফলে সমস্যাটি তৈরীর কারন অামার কাছে স্বচ্ছ পানির মতোই পরিস্কার ! ফলে সমাধানটিও অামার কাছে খুব পরিস্কার ভাবে ধরা দেয় যদিও বাস্তবায়ন করানোটা খুবই কঠিন হবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই ! কারন নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়ন কারীদেরকে অামার ধারনাটা বুঝাতে রীতিমত সংগ্রাম করতে হবে অামাকে এটা নিশ্চিত বুঝতে পারছি ! যানজট সমস্যার সহজ সমাধানের জন্য অামার মূল কনসেপ্ট বা ধারনাটি হলোঃ-যদি রাস্তায় গাড়ির বাধাহীন চলাচল নিশ্চিত করা যায় তবে খুব সহজেই যানজট নিরসন করা সম্ভব অর্থ্যাৎ ট্রাফিক সিগনালের কারনেই হউক বা অন্য কোন কারনেই হউক যদি গাড়িগুলিকে চলাচলের সময় কোথাও থামতে না হয় অথবা গাড়ির গতি অস্বাভাবিক ভাবে কমিয়ে অানতে না হয় তবে রাস্তায় গাড়ি জমে যানজট সৃষ্টির কোন সুযোগ থাকবে না ! উদাহরন স্বরুপ ধরুন-যদি যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলি বা উত্তরা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মান করা হয় তবে এই ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে উল্লেখিত গন্তব্যে যেতে কত সময় লাগবে অার ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি নিয়ে যেতে কত সময় লাগবে তার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষন দেখি ! যদি যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলির দূরত্ব ২০কিলোমিটার এবং উত্তরার দূরত্ব ৩০কিলোমিটার হয় তবে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলি যেতে লাগবে ২০মিনিট এবং উত্তরা যেতে লাগবে ৩০মিনিট যদি গাড়ির গতিবেগ হয় ৬০কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ! অার অন্যদিকে ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা দিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে গাবতলি যেতে লাগবে ২ঘন্টা এবং উত্তরা যেতে লাগবে ৩ ঘন্টা (ঢাকা শহরের বর্তমান গড় গতিবেগ ১০কি;মি প্রতি ঘন্টায় অামার হিসাবে) ! এখন দেখি কেন এতো পার্থক্য ! তুলনামূলক বিশ্লেষনে দেখা যায় যে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়িগুলি বাধাহীনভাবে সর্বোচ্চ গতিতে যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলি বা উত্তরা যেতে পারে কারন প্রথমতঃ ফ্লাইওভারের উপরে কোন ক্রসিংপয়েন্ট না থাকায় ট্রাফিক সিগনালের কারনে কোথাও থামতে হয়না , দ্বিতীয়তঃ ফ্লাইওভারের উপর দিয়া কোন রিকসা চলাচল করে না বিধায় গাড়ির গতিবেগ কমে না, তৃতীয়তঃ ফ্লাইওভারের উপর যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ না থাকায় যত্র-তত্র গাড়ি থামিয়ে গাড়ি চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না ! অপরদিকে ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তায় ঘন ঘন ক্রসিং পয়েন্ট থাকায় ট্রাফিক সিগনালের কারনে প্রায় প্রতিটি ক্রসিং পয়েন্টেই কিছু না কিছু সময় জামে অাটকে থাকতে হয় ! এই ভাবে থেমে থেমে যাওয়ার ফলে গন্তব্যে যেতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী সময় লেগে যায় ! গাড়ি অার রিকসা একই রাস্তা দিয়া চলার কারনে গাড়িগুলোকে রিকসার গতিতে চলতে হয় বলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করে,তারপর রাস্তার যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো- নামানোর কারনেও গাড়ির স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যানজট তৈরী করে ! উপরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে আমরা নিশ্চয়ই ফ্লাইওভারের তুলনায় রাস্তায় চলাচলে অনেক বেশী সময় লাগার কারন গুলি চিহ্নিত করতে পেরেছি ! এখন আমার মতে রাস্তাগুলিতে যদি আমরা ফ্লাইওভারের মতো গাড়ির বাধাহীন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি তবে অবশ্যই যানজট নিরসন করতে সক্ষম হবো ! এই জন্য প্রথমেই আমাদেরকে রাস্তার ক্রসিং পয়েন্ট গুলি দিয়া যাতে গাড়িগুলি ট্রাফিক সিগনালের কারনে না থেমে বাধাহীন ভাবে চলাচল করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে ! মূলত দুইটি পদ্ধতির সমন্বয়ে আমরা ক্রসিংপয়েন্ট গুলি দিয়া গাড়ির বাধাহীন চলাচল নিশ্চিত করতে পারি ! পদ্ধতি দুইটি হলো যথাঃ (১) ওয়ান ওয়ে পদ্ধতি (২) ওভার পাস পদ্ধতি ! অামার অপর পোষ্টগুলিতে পদ্ধতি দুটির বিস্তারিত বর্ননা রয়েছে বিধায় পুনরায় বর্ননায় গেলাম না ।
শহরের ভিতর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রাখা কোন ভাবেই যুক্তিসংগত নয়! কারন আন্তঃজেলা বাস নগর পরিবহনে কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না, বরং বাসটার্মিনালের আশে পাশের রাস্তায় অবৈধ পার্কিং করে গাড়ির স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যানজট পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে ! যেমন-সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল তার অন্যতম উদাহরন ! তাছাড়া বাসটার্মিনাল গুলির আশে পাশের পরিবেশে মারাত্বক বায়ু দুষন হয়ে থাকে যা বসবাসের জন্য অত্যন্ত অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ! তাই আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল গুলিকে অবশ্যই শহরের বাইরে স্থানান্তর করতে হবে ! অন্যথায় বাসটার্মিনাল গুলির অাশে পাশের রাস্তার যানজট নিরসন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে !

ঢাকা শহরে বাস,ট্রাকসহ বড় আকৃতির গাড়ি চলাচল উপযোগী রাস্তার পরিমান রিকসা চলাচলকারী রাস্তার চেয়ে অনেক কম বিধায় বাস,ট্রাক চলাচলকারী রাস্তায় অবশ্যই রিকসা চলাচল বন্ধ করতে হবে ! কারন
রিকসা গাড়িগুলোকে রিকসার গতিতে চলতে বাধ্য করে ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যানজট তৈরীতে সাহায্য করে !

যানজট সমস্যা তৈরীর প্রধান কারনটির যদি সমাধান আমরা করতে পারি তবে অন্যান্য ছোট-খাটো সমস্যা গুলির অনেকটার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস !

আমার প্রস্তাব অনুসারে ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যার সমাধান করা হলে অনেক দিক দিয়েই তা লাভজনক হবে ! যেমন-ফ্লাইওভার নির্মানের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার অার প্রয়োজন হবেনা সেই সাথে অনন্তকাল পর্যন্ত অার যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা , বর্তমানে ঢাকা শহরে যে রাস্তা অাছে সেই রাস্তাতেই অামার প্রস্তাব অনুসারে যানজট নিরসন সম্ভব, নূতন রাস্তা নির্মানের তেমন একটা প্রয়োজন হবেনা , রাস্তাগুলির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, রাস্তাগুলো দিয়া বর্তমানের চেয়ে অন্তত তিন/চার গুন বেশী গাড়ি চলাচল করতে পারবে , রাস্তায় চলাচল কারী সকল গাড়িই যানজট মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে যা ফ্লাইওভারের মাধ্যমে কখনো সম্ভব না, ওভারপাস গুলি ফ্লাইওভারের তুলনায় খুব ছোট হওয়ায় দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে অল্প দিনেই যানজট সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করা সম্ভব ,ভূমিকম্পে ফ্লাইওভারের তুলনায় ওভারপাস গুলি অত্যন্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ! সবচেয়ে বড় কথা এই যে, আমার প্রস্তাবানুসারে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোকে সম্পূর্ণভাবে যানজট মুক্ত করা সম্ভব !
পরিশেষে ঢাকা মহানগরীর ভয়াবহ যানজট সমস্যার সহজ অথচ খুবই অল্প টাকায় অল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানের লক্ষে যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট সকলের আমার প্রস্তাবের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি !
প্রদর্শিত নকশা গুলি ওয়ানওয়ে পদ্ধতির ও ওভারপাস পদ্ধতির নমুনা নকশা ! নকশায় তীর চিহ্নের সাহায্যে গাড়ি কোন পথে চলাচল করবে তা বুঝানো হইয়াছে !
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×