somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি, বৃষ রাশির বালিকাটি

০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সৈয়দ আফসার

বৃষ্টিপর্ব
জল ফুটছে করতলে, ঠোঁট ছুঁয়ে উড়ে গেছে মেঘ— সুন্দর! মনে করো
আমরা যে পথ ধরে হেঁটেছি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্যাবলি যত
বোবাস্মৃতি সেজে। তবু কেন যে ছুঁয়ে দেখার আগে বৃষ্টিপর্ব শুরু হলো
না অজল চোখে

পাত্রের গায়ে লেগে আছে তৃষ্ণা, বাকিটুকু শৈবালে-তোমার মুগ্ধতা
আড়ালে-আবড়ালে মেঘের কালে… অবাক হবার কিছুই নেই
বেদনাত্ন চোখে, ভোররাতে হাত বাড়ালে যদি ঝড়ো হাওয়া
ফিরে আসে পুর্নবার ডালে-ডালে। পাতায় তুলে রাখি ছায়া
শুকনো জল দেই ঢেলে সামনে দাঁড়ালে জলে ঘাম পুড়ে করতলে
তোমার চোখে শ্রাবণের ঢল নেমে এলে

কার স্পর্শে যেন মিশে যেত হাত; চুষে নিতে জল ম্লান চোখ দু’টি
মিশে যেত হাওয়ায়-আবহাওয়াপাড়ায়। উড়ু হাওয়া বলুক রোদের
তীব্রতা খেয়ে গেল কে? আর্দ্র হাত দুটি কার আয়ু গুনে রাখে মনে-
রোদ কুড়ানোর ছলে তুমি লুকোবে আজ কার খোঁপায়। যদি ফিরে
আসে ওই দুটি হাত কলঙ্কফুল গেঁথে আমি গুনে নেবো স্মৃতি একা পেলে

জলে স্বপ্ন লুকানো বলে ভাবিনি এতসব জল অবলম্বনে জেনেছি স্বপ্নফুল
কবে ফুটেছে ঝরেছে তুমি জেগে ওঠার আগে- তাই জল ছুঁতে ভয় হয়,
বসে থাকি পেখম মেলে— আমি জল কখনো জমতে দেব না আর্তচোখে
ঢল নেমে এলে শোকগাথা যতসব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেবো ছত্রাকে-শৈবালে

৩০শে জুলাই
আজ তোর জন্মদিন! আমার তারও ঢের পরে
তাই একটি নক্ষত্র ঝরে গেলো; উড়ে গেলো দিঘীর পাড়ে
কি দেবো আজ তোকে— গোলাপ-কাজল নাকি কংকন
তুই বোবার মতো তাকালে মুখ ঢেকে মুছে নিলে
শুকনো চোখের জল

তোকে কাল চিঠি দেবো তাই বৃষ্টিভেজা আজ কাগজ কলম
জন্মদিনে যত্ন করে রাখিস; স্মৃতিসহ ওই বোবা পুতুল

আমি তো দূরে চলে যাবো-দেখবো না কভু আর তোর মিষ্টি মুখে
হাসির ফুল জানিস্ সে কথা ভাবলে ভোররাতে আমাকে
জাগিয়ে তোলে তোর মোলায়েম গালের তিল

কুড়ানো পাথর
একারে মিশে আছো; জবাকুসুমের আশায়
তাই কলঙ্ক শুয়ে আছে মধ্যিখানে— পড়োশি পাড়ায়

তোমার অপেক্ষা কেবল জিলিপি প্যাঁচেই জানে
একদিন কি যেন বলেছিলে অনিচ্ছায়; কানে-কানে

অবশেষে কুড়িয়েছি নুড়িপাথর বিচানায়; খাটে

ইচ্ছে
আজ আমি জল শুকাতে দেবো না রোদে
আজ তবে বৃষ্টি নামুক তার মতো করে
আজ একাই ছিঁড়ে নেবো এক টুকরো জল
তুমি কি আমাকে অর্ধেক রোদ পোহাতে দেবে?

কাল তোমাকে আমি ছায়া এনে দেবো—
তোমার হাতের কাছাকাছি অর্ধেক রেখো
রোদটুকু ফেরৎ পাবে

আবার তোমার কাছ থেকে মেঘ চেয়ে নেবো
আজ না হয় কাল— অবধারিত বৃষ্টি এলে

ব্যবহার
রমণীর যন্ত্রণা যতটুকু বুকে কল্পনায় তার অর্ধেক নয়
তবু তুমি সাদৃশ্য খুঁজে চলো বাক্য বিন্যাসে ক্রিয়ায়

শব্দ তরঙ্গে স্তব্ধ তুমি-চুমু খেলে শির-শির দেহ কঙ্কাল
আমি ব্যাকরণের পাঠ নিতে এসে দেখি তুমি; তুমি আগুনের মশাল

ধ্বনি-বর্ণের ব্যবহার যেন ঘুমন্ত লিঙ্গের দীর্ঘশ্বাস
ছায়া কুড়োতে এসে দেখি তুমি শিখে ফেলেছো সমাস-বিন্যাস

তুমি যতই সন্ধি বিচ্ছেদ করো; এখনো কারকের ব্যবহার শিখনি
ভাষা শিখিনি আজো; শুধু সন্ধ্যানে ফিরি; এ কথা কভু তোমাকে বলিনি

বেলা-অবেলা
যতটুকু বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো
তাকে অনুসরণ করো— কিংবা অনুকরণ করে
ককনো কি ছুঁয়ে দেখেছো হাত, ছায়া মেপে—
প্রকাশ করেছো কি কভু গেঁথে রাখা চোখের ভাষা?
তবে কেনো দৃষ্টিস্ফীত করে খুলে রাখো চোখ আর
আউলা চুলে শুকাচ্ছো জল যেন ঝরে পড়ছে জলজ উষ্ণতা

তোমাকে জাগাতে এসে ভুলে গেছি স্বপ্ন দেখেছি কবে
ওসব বললে হেসে ওঠো বাস্তবতাটুকু
মেনে নিতে পারো না

ফুলপাথর
পাথরের ঘর্ষণে পাথর ফুটুক, অনড় চোখে
তোমার স্পর্শ ছাড়া একাকী দীর্ঘ সহবাস ছেড়ে উঠুক স্বপ্ন
তার মতো করে
ফুল তবে ফুটুক কারো স্পর্শ ছাড়া নিঃস্ব দায়ভার রেখে
ঝরে পড়ুক তুমি ছুঁয়ে দেখার আগে ডালে-ডালে

তোমার দু’হাতে ঝরাফুলের হাসি নিয়ে ফিরেছো; জড়ো করছো
দু’হাতের ঘ্রাণ— আমি তো যত্ন করে কুড়িয়ে এনেছি
গোলাপের কলি বহু আগে

স্পর্শ করিনি তবু পাথরের ঘর্ষণে পাথর কাঁপে
ফুল ফোটে নিভৃতে ঝরে পড়ে তার মতো করে রোদের তাপে
আজো বাঁধা আমাদের মতো হাজারও প্রাণ সেই পাথর ঘর্ষণ—
আর ফুলের কাছে

পরিতাপ
পরিতাপের ভাষা জানা নেই; ততুমি দাঁড়িয়েছো কপাট খুলে
তাই বলে কি— স্পর্শদোষে দীর্ঘশ্বাস ছুঁড়ে ফেলা যায়
কারো প্ররোচনায়
একা ঝুলে আছি চিরতার ডালে দু-জনের স্বপ্ন খুলে
তুমি পায়ের পাতায় গেঁথেছো কন্টকফুল; ক্ষতহাত
সবই জানে— তুমি কি জানো, তোমার চোখের সৌন্দর্য
কীভাবে ঢাকা পড়ছে এক্সট্টা চশমার ফাঁকে
দূরত্ব কতটুকু জমা রেখেছো বলো ঘূর্ণন বাতাসে

পরিতাপের ভাষা তালুবন্দি করো; কপাট খুলে ওইখানে
আমি তুলে নেবো বুকে জমা যত অস্থিরতা রাত্রিবেলায়; অতি গোপনে

অভিমান
শীতল বাতাসে শিহরণ তুলে… অশ্রু জমেছে দীর্ঘরাত, তবু নিদ্রা জাগেনি
ঘুরতে-ঘুরতে কিনারে ঠেকেছে বাতাস; সহস্র রাত্রি কুড়োনো স্মৃতি শুধু বৃষ্টির জন্য কিনি

বাতাসে শরীর ছুঁলে কপালের ঘাম মুছে নাও পাশাপাশি বসে
আমার শরীর জুড়ে গ্রামের গন্ধ; মনে করো জমেছে তোড়া-তোড়া দীর্ঘশ্বাস

দূরে তাকালে রোদে পুড়ে চোখ; তুমি দূরে রাখো ঠেলে
বাতাসে শরীর ছুঁলে উড়ে যায় স্বপ্নফুল এই তো দলে-দলে
আমি তো বাঁধা পড়েছি বৃষ্টির জলে নয়, তোমার ঘনকালো চুলে

ভয় ছিল তবু ছুঁয়ে দিতাম ডানাওয়ালা চুল
চুলের পরিখা, তুলে নিতাম গোছা-গোছা ঘ্রাণ
হাত ফসকে গেলে মনে হতো কার বুকে জমা রাখা
চাপা অভিমান

জল কুড়ানো দীর্ঘশ্বাস
একাকী বাড়ি ফিরিনি কভু বৃষ্টিপাত হলে
তুমি বলতে— ভাদ্রমাসে শান্ত পুকুরের জলে
শুয়ে পড়ি এসো; লাজ শরম ভুলে

দীর্ঘ অপেক্ষা তোমার; দীর্ঘশ্বাস কুড়াও জলে

সংকট
রোদ সংকট পুড়ছে ছায়া তাই আমার দু-হাতে জমেছে খরা
তোর দু-চোখ বিভোর সোনালি স্বপ্নে; আমি আজো স্বপ্নহারা

আজ মুঠো ভরে রেখেছি অশ্রু-তোর চোখে পরাবো কাজল
তুই দাঁড়ালে না পাশে মুঠো খুলে দেখি অশ্রুতে ফুটেছে কান্নাজল

জ্যোতি
যাদের চোখে জল; তারা বুঝে বকজ্বালাস্মৃতি
দুঃখ ভুলে যেতে জানে না— খুঁজো ত্রুটি-বিচ্যুতি
তোমার তাকানোর রহস্য দেখে ফেটেছে চোখ
ঘূর্ণিপাকে ফোটোনি তুমি; ছিঁড়েছো চোখের জ্যোতি

হাত
হাত ছুঁয়ে দেখো ঋণ নেবো না; গেঁথে নেবো কাজলসহ দু-চোখের কান্না
হাত খুলে দেখো জীবন দুর্ভাবনা; স্বপ্ন কিছু নয় নামমাত্র বালুকণা
হাত ছুঁতে করোনি মানা— পূর্ণ করোনি কখনো দেনা-পাওনা
হাত মেপে দেখো দিনা; জলের মতো ঝরে পড়ছে সব অনুশোচনা

হাতে হাত রাখো পূর্ণতা পাবে— দূর হবে তোমার মনের সবটুকু ঘৃণা

কাঙ্ক্ষা
তুমি নীল আকাশে চেয়ে থাকো অবিরত
আমি মেঘের গর্জনে কান পেতে বসি

ধুলোরঙে হাওয়া বয়ে চলে-তবু বৃষ্টি হয়নি
তাই দরজা পাশে দাঁড়ানো একমুঠোরোদ
পেখম মেলে
যদি ঘুম ভেঙে যায় তারা গুনে জমা রেখো হাতে

১১সেপ্টেম্বর
চোখ বুঁজে যা কিছু দেখি— ভালো লাগে খুব
আহ! কি সুন্দর দেহ-লতা রুগ্ন নাভিখানি
পঁচিশ তো পার হয়ে গেলো কে তা জানে
হাড়ে ফুটেছে যন্ত্রণা, তাই কুঁজো হয়ে বসি—
দিবারাত্রিমধ্যদুপুর

কার নাম ভালোবাসাবাসি; বাকিটুকু সে শুধু জানে
বৃষ্টিপাত হলে কেন? কেনো জানি বুকে জ্বালাতন বাড়ে

যা দেখি ভালো লাগে খুব, ভালো; আরো ভালো রাত্রিদ্বার
গুনে রাখা স্মৃতিগুলো মনে হয় রূপকথা— হারানো সংসার

শেষটান ছেড়ে দেখি বুকে ব্যথা বেড়েছে দ্বিগুণ; চোখ ঢাকা ঘন অন্ধকারে
ঘোর কেটে গেলো কবে— জেগে দেখি তুমি মুগ্ধ করেছো দেহ চুপিসারে

বৃষ্টি বিষয়ক একটি

চারিদিকে স্ফূরণ, অবিরত ক্ষরণ… বিস্ফোরণ
কার লাগি লিখি এই রাত্রি বরিষণ


মূলত সুখটাই বাস্তব জেনে এগোলে পথ পদতলে পৃষ্ট হলো
বরষাক্রান্ত রাত আমি প্রলম্বিত হয়ে কেবল দূরত্ব আঁকি—
আর তুমি ক্রমশ ঘোর রাত্রিতে স্বপ্ন বুনে যেতে চাও অবিরত
মোহে; ফলে ধনরত্নে গুঁজে দিলে মাথা কাল মুষলধারে বৃষ্টি
হয়নি বলে ফিরে এলে তুমি— গতিপথে এঁকে দিলে সব স্তব্ধতা

অবিরত খুলে নিতে দেহের শরম তুলে নিতে ঘ্রাণ যেন শস্যদানা
অসময়ে গেয়ে যেতে শ্রীকান্ত-মৌসুমীর গান(আবার যেদিন তুমি
সমুদ্র স্নানে যাবে… বৃষ্টি তোমাকে দিলাম) এখন সুরের মুর্ছনা
অন্য পথে চলে— তাই রোদে গড়িয়ে পড়তো জল, কল্পনা যেন
সমুদ্রস্নান; হেসে উঠতে তুমি স্বপ্ন নিয়ে বুকে, জ্বলে ওঠে ক্রোধ যেন
তোমারই নিজস্বতা। দেহ থেকে খসে পড়ে ঘাস; বেদনাগুচ্ছ
বুকে হেঁটে চলে অবিরাম-দেহ ছুঁয়ে দেখো কীভাবে চৈত্রে ঝরাপাতার মতো
দেহ থেকে উড়ে যায় মর্মর সুর, তুমি না ছুঁলে দেহপোড়াযান

রঙিন স্বপ্ন নিয়ে আকাশে উড়বে সে কথা বলনি কভু; ভালো নেই আমি—
তবুও ভয় জাগে মনে, কেননা চেয়ে দেখো দূরে তোমার জন্য আকা দূরের
বনে; স্বপ্ন নয়— নীরবতা। আকাশ ভর্তি কালো মেঘ কার চোখে ফোটে;
তোমার চোখে ফোটে তাই বাতাস ভর্তি ছায়া। মাতাল আমিই সেজেছি
তাই গাঢ় জলে পুড়ছে বুক জ্বলছে ঝাউবন, ।অপেক্ষা কেবল ফিরে আসা
নিয়ে, সুতো ছিঁড়ে গেলে তো মুছবে না কভু কারো আঙুলের পোড়াক্ষতদাগ

স্মৃতিঘোরে উড়ে যেও যদি দূরে ভাসে স্পর্শরীতি শুধু বুকের কাপড়টুকু বাদে সবটুকু উড়াতে করো না মানা— লক্ষ রাখো তোমার বুকে জমা রাখো আমারই স্পর্শে আঁকা পূর্ণিমার চাঁদ… কেননা ঘনঘোরে নির্ঝর বনে অধিকার অধিকার শুধু আমার; একার। তাই জলপূর্ণ কাঙ্ক্ষায় কেঁপে ওঠে দিঘীর পাড় দীর্ঘরাত্রির অপেক্ষা কেবল ক্ষয়ে-ক্ষয়ে যায় তবু তুমি খুঁজি ফিরো কালো চশমার ফাঁকে শূন্যতার ছায়া।
তাই দুরত্বে গেলে দেখো শংকিত দেহের ভাঁজে ফুলে ফেঁপে ওঠে দেহের হাজারো দীর্ঘশ্বাস

জানি এগোলে পথ খোলা নেই; চোখে আঁক স্পর্শরীতি বাদে উপেক্ষিত রাত
তাই দূরে দাঁড়ালে তুমি তিন হাত পরে— দূরে গেলে বলে যেও হাত রাখি
কই, আঙুলের পোড়াক্ষত দেখনি আজো সে-কথা স্মরণে এলে তৃপ্তি ভেবে
খেয়ে ফেলি সিগারেটের অবশিষ্ট ছাই। জানি পালাবার পথ খোলা নেই, তাই
ডুবোরাত্রির কাছে তুমি ডুবে গেলে ডুবো সন্ধ্যা আমার। খড় কুঠুরি যাই ভাবি আসলে নির্জনতাই মূল; তুমি হারালে ভালো চাওয়া র’বেনা কভু স্বপ্ন একাকী পড়ে রবে দূর্বায়

আমি লুকাবো বৃষ্টিপাত হলে কত আগেই বলেছি সেসব কথা ফলে
তুমি লক্ষ রেখেছো হাতের স্বপ্ন; তাই গতিপথে কোথায় লুকিয়েছে
তোমার দুটি পা।আমি স্মৃতি কুড়নোর আগে খুঁজেছি তোমায়; তুমি
ভান ধরে হেসেছিলে দূরে— তাই ফের তাকালে দেখি তোমার বুকের
বিষণ্ণতা এখনও কাটেনি— সহজ-সরল চোখ যেন শূন্যতায় ঠাসা।
আর এখন যতসব ঘটে মনে হয় সবই ছিল বির্বতন স্মৃতি তবু;
তবুও তোমার চোখে নেই জল বৃষ্টিপাত হলে আমিও আর কাঁদবো না

বার-বার বলতে আমার আর সহ্য হয় না; আজোবধি জানা হলো না—
কে কার কাছে বাঁধা পড়ছি আগে; কতটুকু হয়েছি ঋণী— একটু বলো
সে-কথা শুনতে ভালো লাগতো খুব; কখনো বিব্রত বোধ করিনি
বলতাম প্রশ্নের রহস্য কী খোলাসা করো— হেসে বলতে এই মনে করো
সকাল-সন্ধ্যা; দুপুর কিংবা রাত জোক করে বলতাম তবে বাজি হয়ে
যাক্ তুমি তা মানতে বার-বার নারাজ। অপারগ হলে বলতাম সবার
অধিকার একই রকম; সবাই একই বৃত্তে ঘুরে ফেরে চলে কিংবা মনে করো
স্পর্শ পেলে লোভ বেড়ে যায়… দেহে কম্পন তুলে সমান-সমান

মেঘের গুঞ্জনে সোজাসুজি বসি তাই মৃদুকম্পনে হাসছে রোদ, কাঁপছে জানালা কাচ, উড়ছে নিমপাতা পুড়ছে দেহ জাগা গাছ— তোমার স্বপ্নে ডালে ডালে দুলছে আধাপাকা আম। কারণ ছাড়াই বলে উঠতে হঠাৎ আমার শরীর ছুঁয়ে দেখো কাঁচা মাংশের গন্ধে ভাসছে বৃষ্টিবর্ষারাত। আমি তো রাত্রিকে জড়িয়েছি দেহের ভাঁজে; দেখবো পুরোটা মেঘে তবু যদি লোভাতুর চোখে কখনো জল তৃষ্ণা জাগে

আমি কি জানতাম বৃষ্টিফোঁটায় জ্বলে যাবে স্মৃতি-লিখে নেবো চোখে
যত বদনাম। ডাল-পালায় উড়ে যাবে কথা; পাতায়-পাতায় ঝুলিয়ে
দেবে দ্বিধাদ্বন্দ্ব যত সাথে তুলে নেবে মান-অভিমান। তবু রাগ করো
না; ধুলোয় মিলে মিশে থাকো— হয়ত একদিন বৃষ্টিও রোদে ফেটে যাবে
আমিও সে-দিন জল কেটে লিখে নেবো রাত্রিকাহন

চোখের শরম কি খেয়ে নিল কেউ একবার বুকে হাত রেখে বলো
ওজন করো; দেখো কার দেহে কত আছে ঘূর্ণিপাক। দেখো কার স্বাদ
কেমন লাগে; কার দেহে ফুটে আছে পোড়াক্ষতদাগ। তাই তুমিই বলো
এবছর কি ফিরে আসা ভালো— ফিরবে কি কেউ আমার মতো করে
ব্যর্থ অভিযোগ নিয়ে; তুমিও তো সব ছেড়ে চলে গেলে দূরে; পুড়ছি
তাই চৈত্রের তাপদাহ রোদে আমাকে ঘুমুতে দেয়নি তোমার বধু বেশে
বেজে ওঠা বিয়ের সানাই

আমি গোপনে ধূপ জ্বেলে রাখি; স্মৃতি সব পোড়াই
ফলে খরস্রোতে মিশে পড়ো তুমি— আমি শুধু বাতাসের
শব্দ জপে বৃষ্টিকাঙ্খায় একা বসে থাকি। জানি স্বপ্ন
সাজাতে কেউ আসবে না আর… তোমার জন্য প্রতি রাতে
একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখি

দেহপোড়া গান
যদি শুকনো পাতায় স্মৃতি মেলে ধরো
আমি তবে স্বর্ণলতা গাছের মর্মর গিলে
তৃণলতায় বসে গেয়ে যাব গান

দেখবো কার মুখ থেকে বেরোবে লোনাজল
কারা পুড়ে গেছে আগে

কার জন্য তোমার দেহ পোড়ে অবিরত

পা
পা ডুবিয়ে রাখি কাদায় টেনে নাও— ফলে
ধারে কাছে জমেছে শ্যাওলা; খুঁড়ে দাও তল
সাতরঙাজলে
ডরভয় জাগে তবু কেটে ফেলি জল
চুলে বেণী বাঁধা নেই, তবু বেড়ে ওঠতে দেখি
হাত পায়ের নোখ
যদি টেনে নাও জলে বাঁধা পড়বে তল
তাই গোপনে ডুবিয়ে রাখি কাদা-জলের ফাঁকে
তোমার অর্ধেক পা

দ্বিধা বিষয়ক আরো একটি
আমাকে চূর্ণ করতে এসেছে ডাঙর চোখ নাকফুলজল আর উড়ন্ত চুলের
হাওয়া হাতের কঙ্কন মৃদু সুরে বাজে— হৃদে কম্পন তুলে নির্বাক চণ্ডাল
সেজে দণ্ডিত হই; গোপন শ্বাসনালী ফুলে-ফেঁপে ওঠে চোখ ভরে দেখি
মনে-মনে জপি গীতা-বাইবেল— অসংখ্য সুরা। প্রার্থনা করি আমাকে
স্বর্ণাভ করো প্রভু…

তবু যদি মিশে যায় স্রোতজল বেয়ে, যদি লবণাক্ত জল চুষে নেয় কেউ
ক্রমশ ম্লান হবে তুমি। তাই ভয়ার্ত কত চোখ সাগরের জল বেয়ে ওঠে।
আর আমি জলের কাছে লুকাবো বলে স্নান ঘরে আসি মনে সংশয় দ্বিধা;
তবে কি আমি ভুরে যাবো সব ঘুমোবার আগে তুমি আজো বলনি ওই
পথ ধরে হেঁটে গেছে কারা? আমাদের আগে

আমি লুকাবো কি জলে একবার সম্মতি দাও— স্পর্শ করো না কভু শরীর
গুপ্ত সীমানা। তবে কেনো জড়তা নিয়ে জেগে রবে তুমি ঘোররাত্রি পাড়ে
তাই নৈঃশস্দ এগুলো হাত তোমাকে ছুঁয়ে দেখার আগে আঙুলের পতন হল
পিচলে স্মৃতি-স্বপ্নসহ চুম্বনের দাগ, কপালের ভাঁজে-ভাঁজে তোমার অসংখ্য
রোমাঞ্চ

আমি তো ওই পথে চোখ খুলিনি, তুমি তাকিয়ে আছো গভীর ধ্যানে—তাই
নিরবধি জপি যেভাবে শিখিয়েছো প্রেরণা কাকে বলে; কখনো ভাবিনি কতটা দূরত্বে দাঁড়ালে তুমি— বোবাজলও কাত হয়ে শোয়। তাই নিজস্ব আগ্রহে লুকিয়েছো মুখ; মুখের প্রীতি। ফলে ভাসা ভাসা বিজুলি সংকেতে ফেটে ডাবে চোখ; চোখের জ্যোতি। তুমি ফিরবে না জেনে সবটুকু জল জমা রেখেছি পথের ঠোঁটে

অঙ্গগুলো মৃদু দুলে ওঠে জলপথ হেঁটে ছেঁকে নেবো মৌ… তুমি জলের পাশে খুঁজে ফেরো বাষ্পদানা; তার আগে শূন্যে উড়ে গেছে ঘ্রাণ বরফের কাছে গলে-গলে পড়ছে জলস্পৃহা। তাই নিরবধি জপি দ্বিধালিপি যত তোমার শূন্যতা জমা রাখো গাছের আড়ালে ওই জারুলের বনে। আমি তো একাকী জেগে আছি আড়ালে; সাতাশটি পাতার ফাঁকে। দ্বিধা যত জমা থাকুক বুকে

এবার তুমিই বলো রোদ আজ কোথায় দাঁড়ালো; আলো ফোটালো কার গায়
তুমি আর কতবার শরীর পোড়াবে রোদে। রোদে পুড়িনি কভু তবুও তোমার
রোদের তৃষ্ণা মিটেনি। রোদের তীব্রতা জড়াতে চাও পায়ে, আমি রোদবিহীন জ্বলে পুড়ে সেজেছি কয়লা—অবশিষ্ট স্পৃহা যত গেঁথে রেখেছো হাতের রেখায়

তবুও জানি মেঘের ঘনঘটা হলে মেঘাচ্ছন্ন দিনে তোমার কাছে বেড়ে যায়
রোদের কদর, তাই আঁধার ঘনালে পাশ ফিরে দেখো ধ্রুবজলছায়া- জেনে
রাখো ঘোরপ্রবণ রাতের কাছে কারো দায়ভার নেই,কখনো তাকবেও না

হাত ছুঁয়ে দেখো কতটা পাথর হলো বুক, ফুটে ওঠে জিভ তৃষ্ণার্ত ঠোটে
আর তুমি ঠোঁট ছুঁয়ে দেখারভান করে লালা জলে খেলা করো গালভর্তি
দীর্ঘশ্বাস ফেলে— তাই তোমার তো জলের কাছাকাছি যেতে মানা

এখন শুধু নীরবে জপি প্রেরণা কাকে বলে— আর কখনো যাবো না
তোমাকে

বিরামহীন বুক
কার ইশারায় শঙ্কিত হও— পুঁতে রাখো হাড়গোড় অন্তিম হিমে আমি
পাহাড়ের গা ধরে হেলেদুলে খাড়া হতে থাকি তুমি মুখ ঢাকতে গিয়ে
দৃষ্টি খুলে রাখো দূরে চোখ তুলে ধরো দেখো কতটুকু গুঁড়ো গুঁড়ো
বৃষ্টি হলে রাত্রি কৌতূহলে রাড়ে যদি ফিরে এসো একসাথে ডুবে যাব
ঝরনার জলে দেখবো কত স্মৃতিচিহ্ন জমা রেখেছো বিরামহীন বুকে

বিষফল
তলিয়ে যাবার ভয় নেই, তবুও জলকলহের আগে
কুটে-কুটে তুলে নাও আরো কিছু জল; জ্বলে পুড়ে
তাপভষ্মদেহ— তোমাকে ছুঁলে বৃষ্টি শুকিয়ে হবে মৃতদেহ কংকাল
তাই রোদফুল কুড়োতে যাব কি না ভেবে জাগে কৌতূহল
আমাকে জাগিয়ে তোলে শতবর্ষের বেদুইন সকাল
হাতে তুলে রাখি আধোজাগা স্বপ্ন; তুমি ফিরবে না কেবল…

ঘোরবৃষ্টিদিনে চোখে জল নেই; দিকে দিকে ছড়িয়েছে বিষফল

জলফল
চোখের পাতায় জমেছে স্মৃতিক্লান্ত ভুল
ফলে আগে-পিছে জমেছে বিন্দু বিন্দু জল
তুমি বলো চেয়ে দেখো ফুটেছে জলফুল
তুলে আনতে দেখি গেঁথে নিয়েছো খোঁপায়
তাই চুলে ঝরেছে জলফুল; জলে ভাসছে নাকফুল প্রীতি
তুমি যখন ছিঁড়ে নেবে জল; আমি গুনে রাখবো যত দুর্গতি

জাগতিক পাতা
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে যত জল পড়ে
ঠোঁটে তুলে রাখো যদি কখনোও তৃষ্ণা বাড়ে
একটু পরে যখন উঠোনের ঠোঁটে
চুম্বন দিলো বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জল
তখন তোমার কল্পনাগুলো লাফ দিয়ে উঠে গেল
ফণা তুলে হেসে গেলে তুমি, সাথে মুচকি হাসি
দেয় জানালার গ্রীল আর আতশি কাচ
যতটুকু বৃষ্টি হলে ঘিরে রাখো শূন্যতা
বাকিটুকুও রেখে দিও সময়ের কথায়

জলকাহন
আমাদের জলকলহগুলো জড়িয়ে
উঠেছে কচুরিপানার মূলে—
হাতে-হাতে উঠে এসেছে জলজ শাপলা আর
ক’ফোটা কলঙ্কিত জল তবে ইদানীং কেন
জল ছুঁতে গেলে অযথাই সংশয় জাগে

অথচ তুমি সেই কল্পিত সুরে কথা বলো
যেন সব স্বপ্ন লুকানো ছিল আমাদের কায়ায়…

আর— আমি জলাধিকার প্রশ্ন খুঁজতে রয়ে যাব জলে
এতে তোমারও প্রণিধান রয়ে গেলো জলের দিকে

______________বৃষ্টি, বৃষ রাশির বালিকাটি আরো একটি পোষ্ট হবে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:২৪
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×