somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ তিনটি একসাথে।

২৪ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিশু এবং গ্র্যানি।

ওর নাম মিশু। মিশু খন্দকার। সারাদিন হৈ চৈ করে বেড়ানোর জন্যে এলাকাতেও ওর খুব বদনাম, আবার ক্লাসেও ফার্স্ট হয়। ওর বয়স মাত্র সাত, এখন ক্লাস টুতে পড়ে। বাবা-মা দুজনের কেউই থাকে না বাসায়, নিজেদের বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত।

মিশুর প্রিয় জিনিস দুটো, একটা ঢাউস সাইজের বেবি ডল অন্যটা হচ্ছে ওর গ্র্যানি। গ্র্যানি সম্পর্কে একটু না বললেই নয়, এই মহিলার বয়স প্রায় চল্লিশ কিন্তু দেখতে লাগে ষাটের উপরে, বৃদ্ধার আচরন খুব অদ্ভুত, অদ্ভুত কিছু রিচুয়ালিটি মেইন্টেইন করেন, তবে সেটা মিশুর বাবা-মা মেনে নিয়েছে শুধু মিশুর জন্যেই, মিশু কিছুতেই গ্র্যানিকে ছাড়তে চায়নি।

আজ মিশুর বাবা-মা দুজনেই বাসায় আছে, দুজনকেই সারাদিন জ্বালিয়ে মারলো, এদিকে রাতেও খুব মন দিয়ে পড়াশুনা করে চলেছে মিশু।

তখন প্রায় মধ্যরাত, মিশুর মায়ের ঘুম ভেংগে গেলো, হাজবেন্ডকে ডেকে তুললেন ভদ্রমহিলা, এইই দেখেছো মিশু এখনো পড়ছে, এত্তোটুকুন বাচ্চা মেয়েকে এখনো ঐ বুড়ি পড়াচ্ছে, এটা কি ঠিক হচ্ছে? সারাদিন কত্তো দুস্টুমী করলো মেয়েটা, ঘুম জড়ানো কন্ঠে মিশুর বাবা বলল, আমরা তো আর ওর টেক কেয়ার করতে পারি না, কি আর করবে বলো? চলো আজকে ওকে সাথে নিয়েই ঘুমাই।

মিশুর বাবা মা দুজনেই চুপিচুপি গিয়ে হাজির হলো মিশুর রুমে, দেখলেন রুমের লাইট জ্বালানো, ছোট্ট কিন্তু কিউট একটা পড়ার টেবিলে মিশু পড়ছে পাশেই আরেকটা চেয়ারে বসে আছেন গ্র্যানি। তবে রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলেন মিশুর বাবা মা।

মিশু তো ছোট্ট বেডে অঝোরে ঘুমাচ্ছে! মিশুর মায়ের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে গেলো ছোট্ট একটা শব্দ, মিশু!

আর মিশুর পড়ার টেবিলে বসে থাকা মিশু শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, মিশুর বাবা-মা অবাক হয়ে দেখতে পেলেন, মিশুর প্রিয় বেবি ডলের মুখ।



বাধ।


এতো বৃষ্টি হচ্ছিলো যে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাকে, পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ডে)র একজন প্রকৌশলী হওয়া আসলে যতটা অকর্মা মনে হয় ততটা অবশ্যই নয়, এখানেও কাজ করতে চাইলে অনেক কাজ, আর একবার দায়িত্ব নিয়ে ফেললে তখন মানুষ আপনার উপরে নির্ভর করতে শুরু করবে।

সেখানে হটাৎ করেই পানির লেভেল বেড়ে যাচ্ছে, বাধের কয়েক জায়গায় চিড় দেখা যাচ্ছে বলে রিপোর্ট করেছে গ্রামবাসী, প্রচন্ড শীতের মধ্যেও আমি ঘামছি, ব্যক্তিগতভাবে চাচ্ছি না বাধটা ভেংগে যাক। তাই গ্রামের প্রায় সবাইকে কাজে লাগিয়ে দিলাম সাথে আমার কর্মীদেরকেও, এমনকি নিজেও গিয়ে ওদের সাথে হাত লাগালাম তাও যদি কোনো উপায়ে বাধটা ধরে রাখা যায়।

এরি মাঝে দেখতে পেলাম ইয়া বড় সাপ বাধের গায়ে, সাপ ভীষন ভয় লাগে আমার, তাই ওখান থেকে সরে এলাম, দেখতে পেলাম এক জায়গায় আমার দুই কর্মী কাজ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছে, কিছুটা হাসি ঠাট্টাও বৈকি, খুব মেজাজ খারাপ হয়ে গে্লো, ওদের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম আমার আরো এক কর্মী বাধের ওপাশে পড়ে আছে হাবুডুবু খাচ্ছে, সে ভালো সাতার জানে কিন্তু এই তীব্র স্রোতে বেচে থাকা একদম অসম্ভব।

আমি চিৎকার করে ডাকলাম, এই শফিক, শফিইইইক, উঠে এসো, কিন্তু সে নিচ থেকে পানি খেয়ে কাশতে কাশতে জানালো, স্যার আপনিও নেমে পড়ুন, দারুন মজা হচ্ছে এখানে, আমি বুঝলাম না ও হাবুডুবু খেতে খেতে তলিয়ে যাচ্ছে তাতে মজা পাবার কি আছে। খুব রাগ হলো, এরি মাঝে আমার অন্য দুই কর্মীও লাফ দিলো ঐ তীব্র স্রোতের মধ্যে।

ততক্ষনে শফিক তলিয়ে গেছে একদম, ওকে আর দেখতে পাচ্ছি না প্রায় ৯ মিনিট হবে, আর বাকী দুইজন হারুন এইমাত্র ডুবে গেলো, সজল প্রায় ডুবে ডুবে অবস্থা। বোধশক্তি ততক্ষনে ভোতা হয়ে গেছে আমার, আশংকায়, কি হচ্ছেটা কি এখানে? এখানে কি কোনো সুইসাইডাল মিশনে নামিয়েছি ওদের? বুকের বা পাশে এতো ব্যাথা হচ্ছিলো সে নিশ্বাঃস নিতে পারছিলাম না আর। চোখের সামনে সুইসাইড, কি ব্যাক্ষা দেবো আমি এর? কি রিপোর্ট করবো অফিসে? আর এদের ফ্যামিলিও তো আছে।

হটাৎ করেই বাধের উপরে দাঁড়িয়ে থেকেও আমার মনে হচ্ছিলো গলায় পানি ঢুকে গেছে, মাথার মধ্যে হাজার হাজার লাল নীল নিয়ন আলোর ফুলকি। আর অনেক দূর থেকে যেন কয়েক কোটি আলোকবর্ষ মাইল দূর থেকে, শফিক বলছে, হ্যা হ্যা স্যার বেচে আছে।


অচেনা রাত।

একদিন দুপুর বেলায় আমাকে হটাৎ অফিস থেকে বলা হলো, যেতে হবে প্রায় ছ ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে একটা নিউ সাইটে, ওটা অন এয়ারে যাবে, চেক করতে হবে তার আগেই, খুব ভালো করেই আমার টিএল আমাকে সাবধান করে দিলো, ভাই সন্ধ্যার আগেই ফিরবেন ওখান থেকে, কোনোমতেই যেন সন্ধ্যা ওভার না হয়, পাছে ওকে নিয়ে না হাসি তাই বলল, ওদিকে ডাকাতি হয় নাকি খুব !

এরপর রওনা দিয়ে পৌছাতে পৌছাতেই সন্দ্যা হয়ে গেলো, যাত্রার শেষটুকু একটা অটো ভ্যানে যেতে হবে প্রায় ছয় মাইলের মতো, অন্য কোনো ট্রান্সপোর্ট নাই। উঠে পড়লাম একটা ভ্যানে, একাই যাবার ইচ্ছে, দেরী হোক চাচ্ছি না, কিন্তু একটু পরেই আমার ছোট ভাইয়ের বয়সী একটা ছেলে উঠে এলো আমার ভ্যানে, যাত্রা সংগী পেয়ে এই এলাকা সম্পর্কে অজস্র প্রশ্ন করছি, আর ছেলেটাও অনর্গল উত্তর দিয়ে যাচ্ছে, সে যেন আমাকে পেয়ে দারুন খুশি। কথা বলতে বলতে পৌছে গেলাম সাইটে।

চারিদিকে আম গাছে বাগান আর লিচু গাছ আছে অল্প কিছু, সব জায়গাতেই ফলে আছে আম লিচু। আর এক পাশে একটা তেতলা বিল্ডিং, গেট আটকানো। আমি ছেলেটাকে বললাম আমার সাথে থেকে যেতে, ও রাজি হলো। বললাম সাইটের চাবি হাউজ অউনারের কাছে আছে, একটু এনে দিতে, সে এনেও দিলো।

সাইটে এক্সেস নিয়ে কাজ শুরু করলাম। চেক করতে সময় নিলাম মাত্র ১৫ মিনিট, সব ওকে, কনফিগের কাজ চলছে, যেকোনো সময় সাইট অন এয়ারে যাবে তারপর শুধু কল টেস্ট বাকী। সাইট অন এয়ারে গেলেও নেট পাচ্ছি না সাইটে বসেই, বেশ কিছুটা সময় লেগে গেলো এতে, ছেলেটা এর ফাকে আমাকে কোথা থেকে যেন ১০ টা গোল্ড লীফ সিগারেট এনে দিলো, আমি টেনে যাচ্ছি একমনে আর চেক করতেছি, কাজ করতে করতে তখন প্রায় রাত সাড়ে এগারোটা বেজে এসেছে, ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম এদিকে থাকার জায়গা আছে কিনা, সে বলল নেই।

ওকে বিদেয় দিলাম, দিয়ে হাটা শুরু করলাম অত রাতেই, হাটাহাটির ব্যাপারে আমার একটু বাতিক আছে, প্রচুর হাটি। কিছুটা পথ যাবার পর হটাৎ পেছন থেকে ডেকে উঠলো কেউ, পরিচিত ভয়েস পেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, হ্যা কেউ একজন আসছে, অন্ধকারে আমি তার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। একটু পরেই বুঝলাম সেই ছেলেটা।

হ্যা অবিকল সেই ছেলেটা, আমি শুধু ওর ছায়া দেখতে পাচ্ছি, আর হ্যা বুঝতে পারছিলাম ওর বডিটা এবসেন্ট। নেই, কিছু নেই ছায়া আর ভয়েস ছাড়া। একদম কিচ্ছু না।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×