JSC পরীক্ষা দেওয়ার আগে,
- ভাল করে পড়, পরীক্ষায় গোল্ডেন/A+ পাইলে তর পছন্দের জিনিস গিফট করব।
- আমাকে একটা সাইকেল/মোবাইল কিনে দিও তাহলে।
- অবশ্যই দিব ভাল করে পড়, সব দিব।
অতঃপর ছেলেটা/মেয়েটা স্বর্ণ(Golden) অর্জন করল,
- আমিতো ভাল রেজাল্ট করেছি গিফট কবে দিবা?
- শোন, এখন সাইকেল দিলে রাস্তায় পরে মরবি, মোবাইল দিলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে S.S.C তে খারাপ রেজাল্ট করবি। S.S.C পরীক্ষায় গোল্ডেন/A+ পেলে একেবারে বাইক/ল্যাপটপ কিনে দিব।
- পল্টি নিলা? আচ্ছা মনে থাকবে।
.
.
.
S.S.C পরীক্ষা দেওয়ার আগে,
- ভাল করে পড় যে কয়টা দিন আছে, গোল্ডেন/A+ পাইলে বাইক/ল্যাপটপ পাবি।
- পল্টি নিবানা তো আবার?
- আরে না বাবা, পড় ভাল করে।
.
.
অতঃপর ছেলেটি/মেয়েটি স্বর্ণ/A+ পেল,
- এইবার আমার বাইক/ল্যাপটপ দেও।
- আচ্ছা বাবা আমরা কি তর খারাপ চাই বল? দিব তো বলছি। এইযে তুই ভাল রেজাল্ট করলি লাভটা কার হইছে? তরই তো লাভ হইছে।
- দেখ আর এমন করবা না। পল্টি নেয়ার ফলস্বরূপ মীর জাফর/ঘষেটি বেগমরা কিন্তু আজও ঘৃণিত ব্যক্তি।
- দেখ সামনে কিন্তু কঠিন পড়ালেখা এই সময়ে যদি তরে এসব কিনে দেই তাহলে আর পড়ালেখা হবেনা। ভাল জায়গায় চান্স পাবিনা বাবা। আমরা তো তর ভালই চাই।
- এখনই কিনে দিবা এত কিছু জানিনা।
- আচ্ছা কথা দিলাম H.S.C তে একটা গোল্ডেন/A+ পাইলে অবশ্যই তর শখের জিনিসটা কিনে দিব এখন ভাল করে পড়।
.
.
.
H.S.C পরীক্ষা দেওয়ার আগে,
- ওরে পড় পড় ভার্সিটিতে চান্স পাইতে হবে সেইসাথে একটা গোল্ডেন চাই।
- আচ্ছা আমার ব্যাপারটাও দেইখো। ভুলে যেয়োনা আবার।
- অবশ্যই বাবা, তুই ভাল করে পড়।
.
.
অতঃপর ছেলেটি/মেয়েটি স্বর্ণ(Golden) পেল,
- তোমাদের আশা পূরণ করেছি। আমার বাইকের চাবি কই?
- একটু পাশে বস, কথা শোন. খাওয়াদাওয়া করিস না কেন? শরীরটা তো শুকিয়ে গেছে।
- আমি কিন্তু জন্ম থেকে জ্বলছি এইবার আমি সব জ্বালাব। কোন কথা নাই আমার জিনিস কই?
- শোন শোন এইতো আর কয়টা দিন পর তো তুই নিজের টাকা দিয়েই কিনতে পারবি। ভার্সিটিতে পড়া শেষ হলেই তো তুই রোজগার করতে পারবি।
.
.
.
চরম মনক্ষুন্ন অবস্থায় ছেলেটি/মেয়েটি অন্যরুমে যেয়ে খাতা কলম নিয়ে বসল সমীকরন মিলাতে।
JSC- কথা রাখেনি,
SSC- কথা রাখেনি,
HSC- কথা রাখেনি।......
সমীকরণের ফলাফল হল, আমাদের বাবা মা পল্টিবাজি ক্যাটাগরিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য। এভাবে চলতে থাকলে আশা করি একদিন বাংলার রাস্তাঘাটে নোবেল মেডেল পরে থাকবে কারন আমাদের বাবা মা পল্টি নিতে ভালবাসে। রাগ হচ্ছে উনাদের প্রতি, ভয়ংকর রকমের রাগ। খাতা কলম রেখে কল্পনায় ডুবি। আমি একজন বাবা, আমার সন্তান আছে। সে আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে আমি তার শখের জিনিস কিনে দিচ্ছি না। কেন দিচ্ছি না? আমার সন্তান সাইকেল/মটরবাইক নিয়ে রোডে বের হয়েছে। আমি সন্তানকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি। আমার ভয় হচ্ছে, ভীষণ ভয়। ও আনমনে সাইকেল চালাচ্ছে চালাচ্ছে, চালিয়েই যাচ্ছে। কোন একটা রাক্ষস এসে আমার সন্তানের সাইকেলসহ তারে নিয়ে চলে যাবে। একেবারে চলে যাবে, আমার সব বেঁচে থাকার প্রেরণা নিয়ে চলে যাবে।......
.
.
.
সুতরাং দিনশেষে বাবা মায়ের স্বর্গীয় ভালবাসাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।