somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাঁচি সমাচার ; না পড়লে চরম মিস !

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাঁআআআচ্চুউউউউ !
*
*
কি হল এটা ? হ্যা এটা হাঁচির শব্দ ! আমরা প্রতিদিন হাঁচি দেই , সময়ে অসময়ে হাঁচি দেই । এই হাঁচির পিছনে লুকিয়ে আছে মজার মজার সব তথ্য । তবে আর দেরী নয় , শুরু করা যাক ।
*
প্রথমেই হাঁচির পিছনের কিছু মিথোলজি বলি । আমরা হাঁচি দেয়ার পর পরই ঈশ্বরের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি । মুসলমানরা বলেন "আলহামদুলিল্লাহ" আর অন্য ধর্মে বলে "Bless me/you" । মুসলিম হোক আর অন্য ধর্মই হোক , তাদের শুকরিয়া জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্য কিন্তু একই । মিথটা হচ্ছে , হাঁচি দেয়ার সময় নাকি মানুষের আত্না বা রূহ নাকের ডগায় চলে আসে । কিন্তু ঈশ্বরের পরম কুদরতে যেহেতু আত্না নাক দিয়ে বের হয়ে যায় নাই তাই ঈশ্বরের প্রতি শুকরিয়া আদায় করা হয় । এই হাঁচি দেয়ার পর ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের প্রচলনটা আসে প্রাচীন গ্রীস থেকে । হাঁচির ইংরেজী Sneeze এর গ্রীক প্রতিশব্দ "Pneuma" যার অর্থ "Soul/spirit" । তার অর্থ এই যে হাঁচি আসা মানেই আত্না নাকের ডগায় চলে আসা ! [ভাগ্যিস আত্না বের হয়ে যায় নাই , নচেত্‍ কেলেংকারীর অন্ত থাকত না]
*
*
~ অনেকে বলে থাকেন হাঁচি দেয়ার সময় আমাদের হৃদপিন্ড এক মিলি সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ! হাঁচি দেয়ার সময় শরীরের নার্ভাস সিস্টেমগুলো প্রচন্ড শক্তি সংগ্রহ করে এবং প্রবল বেগে ফুসফুস থেকে বাতাস বেড় করে দেয় । তাই এইসময় শক্তি সঞ্চয় করতে শরীরে রক্তপ্রবাহ এক মিলি সেকেন্ডের জন্য স্থগিত থাকে , হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যায় না ।
*
~ অনেকেই ভাবেন যে হাঁচির উত্‍পত্তি নাক অথবা ফুসফুসে । এটা ভুল ধারণা । হাঁচির উত্‍পত্তি শরীরের নার্ভাস সিস্টেমে । শরীরের মাঝে নাক ও ফুসফুসের স্নায়ুগুলো সবথেকে বেশি সংবেদনশীল , তাই নাকে বা ফুসফুসে কিছু প্রবেশ করলেই হাঁচির উদ্রেক হয় ।
*
~ শত্রু যদি হয় জীবাণু , ব্যাক্টেরিয়া , ধুলাবালি তবে হাঁচি হচ্ছে বুলেট , আর ফুসফুস হচ্ছে বন্দুক । সেই বন্দুকের ট্রিগার হল শরীরের নাভার্স সিস্টেম ! নার্ভাস সিস্টেমকে তাই Sneeze trigger বলা হয় ।
*
~ কম্পিউটার বা মোবাইলে জাংক ফাইল বেশি হলে কম্পিউটার/মোবাইল আমরা Reboot করি । হাঁচি হচ্ছে মানব দেহের Reboot সিস্টেম । হাঁচি দেয়ার পর শরীরের নার্ভাস সিস্টেমগুলো আবার নতুনভাবে কাজ করা শুরু করে । শরীরকে নিরাপদ রাখে ।
*
~ আপুরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে , চোখের ভ্রু প্লাক করার সময় হাঁচি আসে । এর কারণ হল , ভ্রু'র নিচে নার্ভগুলো ভ্রু তোলার সময় ছিঁড়ে যায় । তখন নার্ভাস সিস্টেম মনে করে শত্রুপক্ষ তাদের নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রমণ করেছে । তাই তখন সে ট্রিগার চেপে দেয় , ফলাফলে চলে আসে হাঁচি । এখন বলতে পারেন , চুল বা দাঁড়ি তোলার সময় হাঁচি আসে না কেন ? কারণ একমাত্র ভ্রু'র সাথে সংযুক্ত নার্ভগুলো ন্যাসাল নার্ভের সাথে যুক্ত । আবার যখন আপনি অনেক পরিশ্রম করবেন তখনও হাঁচি আসবে । কারণ তখন শরীরে ঘাম বেড় হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শরীরের হাইপারভেন্টিলেশন হয় । রাগ করলেন নাকি এরকম কাঠখোট্টা শব্দ ব্যবহারের জন্য ? আচ্ছা সহজ করে দেই । হাইপারভেন্টিলেশন হচ্ছে শরীরে বাতাসের প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শরীরকে ঠান্ডা করার একটা পদ্ধতি । তো এই কুলিং সিস্টেম চলার সময় নাক শুকিয়ে যায় । তো নাক শুকালে নাকের তো সমস্যা ! শত্রুপক্ষকে তাহলে আটকাবে কিভাবে ? তাই নাক তখন একধরনের তরল নিঃসরণ করে নাককে ভেজানোর জন্য । তখন আবার নার্ভাস সিস্টেম ভড়কে গিয়ে ভাবে এ আবার কোন আপদ এসে জুটল বাপু ! দে শালার ট্রিগার চাইপা ! ফলাফল হাঁচ্চুউ ! আরেকটা মজার ব্যাপার বলে রাখি । সেটা হল , সেক্স ও sneeze trigger হিসেবে কাজ করে !
*
~ বাবা মা সারাদিন গাধা বলে বকে ? নো টেনশন ! আপনিও বাবা মাকে একটু বকে দিতে পারেন যদি আপনি 'ফটিক' হন ! আবার রাগ করলেন ? ভাবতেছেন আপনি কেন ফটিক হতে যাবেন ! আরে বাবা এই ফটিক রবীবাবুর ছুটি গল্পের ফটিক নয় , এইটা হচ্ছে "Photic" ! গ্রীক শব্দ Photics বা ইংরেজীতে 'of light' হচ্ছে এর অর্থ । এই Photic কি করে জানেন ? এই ফটিকবাবু সূর্যের উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকালে হ্যাঁচ্চো করে হাঁচি দেয় ! এটা কিন্তু জেনেটিক সমস্যা ! মন খারাপ করলেন ? মন খারাপ করবেন না , কারণ প্রতি তিনজন মানুষের মাঝে একজন ফটিকবাবু থাকেন ! স্যরি photic হবে ।
*
*
অনেক জ্ঞান দিলাম তাই না ? তাহল এবার কিছু মজার মজার কথা শুনেন ।
~ হাঁচি আসলে জোর করে আটকাতে যাবেন না , তাহলে আপনার নার্ভাস সিস্টেম নার্ভাস হয়ে যাবে !
~ খুব জোরে হাঁচি দিবেন না ! (যাহ বাপু , একবার হাঁচি আটকাতে নিষেধ করি আরেকবার জোরে হাঁচি দিতে নিষেধ করি !) ইয়ে মানে , জোরে হাঁচি দিয়ে আপনি আপনার বুকের একটা হাঁড় ভাঙ্গতে পারেন !
~ হাঁচি দেয়ার সময় আপনি আপনার চোখ খোলা রাখতে পারবেন না । সত্যি বলছি ! আর যদি কোন ভাবে খুলে রাখতেও পারেন তবে শরীরের ভিতরে যে চাপ তৈরী হবে সেটার চাপেই আপনার একটা অক্ষিগোলক খুলে আসতে পারে !
~ খেয়াল করে দেখবেন , স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁচি দেয় না । কারণ এসময় নার্ভাস সিস্টেম মহাশয় ও ঘুমিয়ে থাকেন ।
~ হাঁচি বাবাজি যখন বেড়িয়ে আসে তখন তার গতিবেগ থাকে ঘন্টায় ১০০ মাইলের বেশি ! বাপরে !
~ প্রতিবার হাঁচির সাথে আপনি প্রায় একলক্ষ জীবাণু বের করে দেন ! [বারে ! ওরা এখন থাকবে কোথায় ?]
~ হাঁচির সাথে বের হওয়া জীবাণুগুলো প্রায় পাঁচ ফুট রেডিয়াস আয়তন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে এবং সামনের দিকে প্রায় ত্রিশ ফুট পর্যন্ত দূরে ছিটকে যাবে ।
~ হাঁচিতে এলার্জি ? একটানা হাঁচির সেঞ্চুরী হয়ে যায় ? মন খারাপ করবেন না ভাই । কারণ একটানা হাঁচি দেয়ার রেকর্ড আছে টানা ৯৭৮ দিনের ! সব্বনাশা এই রেকর্ড খানা করেছেন Worcestershire এর বৃটিশ মহিলা Donna Griffiths ! [সারাজীবন মনে হয় হাঁচিই দিছে]
~ বাড়িতে বিড়াল আছে ? তাহলে আপনাকে আর আবহাওয়ার সংবাদ দেখতে হবে না । কারণ , যখন আপনার বিড়াল হাঁচি দিবে বুঝে নেবেন বৃষ্টি হবে ! হে হে হে !
*
*
শেষ করার আগে হাঁচি বন্ধ করার একটা প্রচলিত ট্রিক্স শিখিয়ে দেই । অকা ? সেটা হল , মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিন , হাতের তালু দিয়ে একই সাথে উপরের ঠোঁট আর নাকের ডগায় ডলাডলি করতে থাকুন । আর নাকের শেষভাগে চিমটি দিতে থাকুন ! যদিও ফুলপ্রুফ নয় এটা ।
*
Happy Sneezing ;-)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৪
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×