somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইলস কথন^নব্য রাজাকার

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে আমাদের বাংলাদেশী সমর্থকদের চরম অশ্লীল তথা কুরুচিপূর্ণ গালাগালি দেখে ব্যথিত হয়ে কলকতার প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলাম তার ফেসবুকে ভদ্রোচিত ভাষায়ই লিখেছিলেন -
"তথাকথিত ভারত-পাকিস্তান বিদ্বেষের গল্প শুনেছি, কিন্তু আমার পরিবেশে কখনো ছায়া ফেলেনি। অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে এক নতুন পাকিস্তানের অভ্যুদয় সহ্য করছি, আমার অভিজ্ঞতায় যা বিরলতম"।
কথাটি কী তিনি মিথ্যে লিখেছেন ?
ক) ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে দেশে গোলাম আযম, শাহ আজিজুর রহমানের মত কুখ্যাত রাজাকারগণ ফিরতে আরম্ভ করেন।
খ) ধর্মনিরপেক্ষতাকে তুড়ি মেরে জিয়াউর রহমান সংবিধানে নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে 'বিসমিল্লাহ রহমানির রাহিম' সংযুক্ত করেন - যেই সংযুক্তির দাবি বাংলাদেশী নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ বা বড় কোনো সংগঠন করেননি।
গ) ১৯৭১ সালে রংপুর থেকে পাকিস্তানে চলে যাওয়া এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসা জেনারেল এরশাদ নিজের ব্যক্তিগত খুশি মোতাবেক সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন যার দাবি ১৯৭১ সাল থেকে এরশাদের শাসনামল পর্যন্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ বা বড় কোনো সংগঠন করেননি।
ঘ) আল বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, সেকেন্ড ইন কমান্ড আলী আহসান মুজাহিদ, কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলীমেরা বাংলাদেশের মন্ত্রী হন।
ঙ) একসময়কার বাংলা ভাই ও হালের গুলশান হামলা ও কল্যাণপুরের অভিযান থেকে বোঝা যায় - বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে।
লক্ষ্যণীয়,
১) জিয়াউর রহমান - পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২য় সর্বোচ্চ খেতাব বিজয়ী সেনাসদস্য
২) হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ - মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া সেনাসদস্য
৩) খালেদা জিয়া - পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্য আসিফ জানজুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শোক প্রস্তাব উত্থাপনকারী
সুতরাং, এটি সুস্পষ্ট হয় যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও শেষ অবধি অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে পাকিস্তানের অনুগত ব্যক্তিরাই বাংলাদেশ অধিকাংশ সময় শাসন করেছেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বাংলাদেশে তাদের মনগড়া যেই নিয়মকানুন চালু করেছেন, যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে পরজাতি বিদ্বেষী হিসেবে তৈরি করেছেন, তাতে এদেশের তরুণ সমাজ চরমভাবে নষ্ট হয়েছে।
আজকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কথায় কথায় 'খানকীর পোলা' 'বেশ্যার পোলা' 'চুতমারানি' 'মাদারচোদ' ইত্যাদি বলে ভারতীয়দের গালাগালি করে, এমনকি নিজের দেশের লোকজনদেরও গালাগালি করে। এই নোংরা জাতি তৈরির পেছনে পাকিস্তানের অনুগতরাই দায়ী।
প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার তথা সঙ্গীত পরিচালক কমল দাশগুপ্ত বেশিদিন বাঁচতে পারেননি। উইকিপিডিয়া থেকে - "২০ জুলাই, ১৯৭৪ সালে প্রায় অযত্নে-অবহেলায় ও বিনা চিকিৎসায় ঢাকায় এই গুণী শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন"।
কেন 'অযত্ন-অবহেলা' ? কেন 'বিনা চিকিৎসা' ? এথেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় - ফিরোজা বেগমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিলো বটে কিন্তু সেই বিয়ে সুখের হয়নি। ফিরোজা বেগমের পরিবার বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবার। সেই পরিবারের জামাই কোন যুক্তিতে সম্পূর্ণ অযত্ন অবহেলা ও বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন ? কট্টরপন্থী এই পরিবারের হিংস্রতায় কমল দাসগুপ্ত কখনোই পরিবারে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারেননি, সন্তান মানুষ করার সুযোগ ও সময় কিছুই পাননি। ফলে হামীন শাফিনেরা কুলাঙ্গার সন্তান হিসেবে দিনে দিনে তৈরি হয়েছেন।
এই হামীন শাফিনেরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন বলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। মতিঝিলে হাজার হাজার হেফাজতিদের সরকার খুন করেছে বলে মিথ্যে প্রচারণা চালান। বাংলাদেশের হিন্দুদের মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেন। ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে চরম অশ্লীল ভাষায় পোস্ট করেন। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সমর্থকদের পক্ষে লড়াই করেন, এই পাকিপ্রীতিকে নিন্দা জানালে তারা পাকিস্তানের পক্ষে নিবেদিত প্রাণ হয়ে সমালোচকদের ওপর নোংরা ভাষায় ঝাপিয়ে পড়েন। হামীন শাফিনেরা কী তাহলে 'নব্য পাকিস্তানী' নন ?
উল্লেখ্য, এই পরিবারের অপরাপর সদস্যগণ হলেন -
১) আসাফুদ্দৌলাহ যিনি কয়েক বছর আগেও মিডিয়াতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন উদ্ধত বক্তব্য দিয়েছেন এবং এনার পাকিস্তানপ্রীতি বোঝা যায় যখন গজলশিল্পী গোলাম আলীর উর্দু গজলগুলোকে ইনি বাংলায় রূপ দেন এবং গোলাম আলীকে দিয়ে সেগুলো বাংলায় গাওয়ান।
২) একদা সেনা কর্মকর্তা মুসিউদ্দৌল্লাহ যিনি আজীবন কট্টর ভারতবিরোধী।
৩) রুবাবা মতিন দৌল্লাহর মত একজন পার্ট টাইম পতিতা - মুসিউদ্দৌলাহর মেয়ে।
একদিকে এই পরিবার ইসলাম ইসলাম করে মুখে ফেনা তোলেন, আরেকদিকে এই পরিবারের সদস্যরাই ঠাটবাট করে স্টাইলিশ প্যান্ট শার্ট পরে বা শরীর দেখানো শর্ট শাড়ি/কাপড় পরে জীবন কাটান। এটাকে হিপোক্রিসি বা স্ববিরোধিতা বলে।
কলকাতায় গলা ধাক্কা খেয়ে বিতাড়িত হওয়ার অনেক আগেই হামীন-শাফিনেরা বাংলাদেশে ভারতীয় চলচিত্রাভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের ব্যানের দাবী জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। মজার ব্যাপার হলো, ব্যাপারটা বুমেরাং হয়ে তাদের কাছেই ফেরত এসেছে। তাদেরই ঘাড় ধাক্কার শিকার হতে হয়েছে। তাই বলা যায় - যেমন কর্ম তেমন ফল।
পক্ষান্তরে রূপম ইসলামকে দেখুন। ইনি মুসলিম কিন্তু হামীন শাফিনের মত উগ্রবাদী হিংস্র প্রকৃতির ধর্মান্ধ মুসলিম নন। ইনি সমালোচনা করলে সেটা বিনীত ও শিষ্ট ভাষায় করেন যার সামান্য অংশ ওপরে দেওয়া হয়েছে। ইনি আর যাই হোক, হামিন শাফিনের মতো নোংরা ভাষায় গালাগালি করার মধ্যে কিন্তু নেই। আমাদের দেশ থেকে মিথ্যে প্রচারণা চালানো হয় যে - ভারতে মুসলিমেরা নির্যাতিত, তারা ভারতকে নাকি পছন্দ করেন না। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে - ভারতীয় মুসলিমেরা ভারতকে প্রাণভরে ভালোবাসেন যার নমুনা রূপম ইসলাম। যার নমুনা শাহরুখ খান, সালমান খান, আমীর খান, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, এপিজে আব্দুল কালাম, মোহাম্মদ হিদায়েত উল্লাহ, জাকির হুসেইন সহ অনেকেই।
আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কী প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন ? উত্তর হচ্ছে - না। অথচ মোহাম্মদ হিদায়েত উল্লাহ ভারতে - ১) প্রধানমন্ত্রী ২) ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ৩) প্রধান বিচারপতি ৩টি পদেই অধিষ্ঠিত হয়েছেন। জাকির হুসেইন এবং এপিজে আব্দুল কালাম তো রয়েছেনই। পররাষ্ট্রের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন সালমান খুরশীদ। আমাদের দেশে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদৌ পাবেন পররাষ্ট্র কিংবা স্বরাষ্ট্র কিংবা প্রধানমন্ত্রিত্ব কিংবা রাষ্ট্রপতির পদ ?
এই হচ্ছে বাংলাদেশ (নব্য পাকিস্তান) ও ভারতের পার্থক্য। এতো কিছুর পরেও ভারতীয়রা নাকি পক্ষপাতদুষ্ট আর আমরা বাংলাদেশীরা মহান !
দেশপ্রেম ভালো গুণ কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদ কখনোই ভালো বয়ে আনে না। তাই হিটলারের একসময় পতন ঘটেছিলো। রূপম ইসলামের ভুয়সী প্রশংসা করি, তিনি একজন ভদ্র ব্যক্তি, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। পক্ষান্তরে হামীন শাফিনের মত কুলাঙ্গার নব্য পাকিস্তানপন্থীদের প্রতি ধিক্কার জানাই, এনারা অসভ্য অভদ্র এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী নরকীট।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে এই হামীন শাফিনদের মত রাজাকার সমর্থক ও সহানুভূতিশীল কুলাঙ্গারদের হাত থেকে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে উগ্র জাতীয়তাবাদ, পরজাতি ও পরধর্ম বিদ্বেষের হাত থেকে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে হিপোক্রিট এই পরিবারের হাত থেকে যারা একদিকে ইসলাম ইসলাম করে মুখে ফেনা তোলে আবার তাদের মেয়ের পতিতার মত জীবনযাপনে নীরব থাকে। সেই পরিবারের হাত থেকে যারা ভারত বিদ্বেষ ও পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের মাথায় রেসিজম বা উগ্রবাদ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ধিক হামীন শাফিন, ধিক আসাফুদ্দৌলাহ-মুসিউদ্দৌলাহ-রুবাবা মতিন দৌলাহ।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×