আইজকা রাইতে আর ঘুম আইবো না মনে হইতাসে। এমুন খিদা লাগসে! এমুন খিদা নিয়া কি ঘুমানো যায়?! হেইযে সকালবেলা এক টুকরা রুটি খাইসিলাম। তারপর আর কিছু খাইতে পাই নাই।
আমারে মাইনষে খাইতে ক্যান দিবো? আমারে তো হেরা পাগল কয়। পাগলরে কি কেউ খাওন দ্যায়? আমি না খাইয়া থাকলে কার কি? আমি না খাইয়া থাকি………ঘন্টার পর ঘন্টা। কী খিদা! কী খিদা!! কী কষ্ট!!!
মাঝে মইধ্যে মনে হয়, কেউ একটা থাল ভর্তি কইরা গরম ভাত দিতো আমারে। ধুয়া উঠতাসে এমুন এক থাল ভাত। ডিমের সালুন দেয়া এক থাল ভাত। আমি পেট ভইরা খাইতে পারতাম। কিন্তু, কেউ ভাত দেয় না, লাঠির বারি দেয়। কাছে গেলে ভয় নিয়া তাকায়।
কি দেইখা ভয় পায়?
আমার জটা চুল? আমার ময়লা জামা? নাকি আমার চোখ?
কি দেইখা কয়, ঐ ব্যাটা পাগল?
অনেক বছর আগে যখন যুদ্ধে গেসিলাম, তখনও মাইনষে আমারে পাগল কইসিলো। কইসিলো, তুই ক্যান যুদ্ধে যাবি? মরার শখ হইসে তোর? দেশ বাঁচাইতে পাগল হইসিলাম সেদিন।
যুদ্ধেও দিনের পর দিন না খাইয়া থাকতাম। কাদামাটির মধ্যে দিয়া মাইলের পর মাইল গিয়া তাও যুদ্ধ করসি। দেশ স্বাধীন করসি। খুশিতে পাগল হইসিলাম তখন।
যুদ্ধের পর গ্রামে ফেরত আইসা যখন দেখি, আমার বউটারে রাজাকাররা ধইরা নিয়া গেসিলো। এক সপ্তাহ পর ওর লাশ পাওয়া গেসে নদীতে তখন আমি আবার পাগল হইসিলাম। মনে হইতাসিলো কেউ অন্তরটার ভিতরে আগুন ধরায়া দিসে।
আইজকাল যহন দেহি, আমার এলাকার ঐ রাজাকার পতাকাওয়ালা গাড়িতে চলে, তহন আমি আবার পাগল হই। যহন দেহি পোলাপানগুলা খেলার পর পাকিস্থানের পতাকা নিয়া ‘পাকিস্থান জিন্দাবাদ’ কয় তহন আমি আবার পাগল হই। যহন আমি খাইতে পাই না, তহন আমি আবার পাগল হই।
আমি বারবার পাগল হই।
দশটা টাকা কুড়ায়া পাইসি রাস্তায়! এক প্লেট গরম ভাত কিনসি। পেট ভইরা খামু আজকে। একটা কাউয়া আইয়া আমার দিকে চাইয়া রইসে। ওর মনে হয় খিদা লাগসে। আমি প্লেটটা আমার আরো কাছে টাইনা লইসি। আমি চাইয়া থাকলে তো আমারে কেউ খাইতে দেয় না। আমিও দিমু না।
প্লেটের দিকে তাকাই আমি। গরম ধুয়া উঠা ভাত……
লেখকঃ স্বপ্ন_বিলাস
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৩