somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব আমিরাতে শ্রমিক সমস্যার কারন

০২ রা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ মানুষ কে জীবিকা করে। আমরা প্রায় বলে থাকি সৌদি তে বাঙালি ভিসা বন্ধ অথবা আরব আমিরাতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার হয়(যেমন কাজ বেশি করানো, বেতন কম দেয়া , ওভার টাইম না দেয়া ইত্যাদি )। কিন্তু এইসব ব্যপার গুলোতে ঐসব দেশের সরকারের চাইতেও কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের দোষ বেশি। নিশ্চই শুনেছেন সৌদি তে বাঙালিরা কিভাবে মিছিল , মিটিং , ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করেছে! যা ঐসব দেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সৌদি এবং আরব আমিরাতের শ্রমিক দের একটা বড় অংশ আসে দালালের মাধ্যমে। অনেক সময় সরকার অনুমদিত এজেন্সির মাধ্যমে। এরাই মূলত বাঙালির দুর্দশার কারন। আরেকটা মজার তথ্য হচ্ছে ঐসব দেশের ৮০ % বাঙালি কোনো না কোনো ভাবে আদম ব্যবসার সাথে জড়িত। এখন দেখা যাক আরব আমিরাতে কিভাবে বাঙালি দুর্দশার মধ্যে পড়ে।

১ ) শ্রমিক রা আসে ৩ লাখ টাকা খরচ করে । অথচ বেতন পায় আমিরাটি টাকায় গড়ে ৭০০ দিরহাম। সব খরচ মিলিয়ে থাকে ৪০০দিরহাম। এই টাকায় আসল উঠতে ৩ বছরের ও বেশি সময় লাগে। ত্রাপারেও তারা কেনো আসে? কেনো অন্য দেশের লোকের থেকে বাঙালির সেলারি কম ?

২) ওভার টাইম কেনো ঠিক মতো পায় না ?

৩) ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার দের বেতন এবং সুবিধা কেনো অন্যদেশের থেকে কম ? এবং কেনো মান সম্মত প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত নয় ?

এইসব ব্যপার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ঐসব দেশের সরকারের থেকে আমাদের দোষ বেশি ! এখন আশা যাক উত্তরে

আরব আমিরাতে কোম্পানি গুলো মূলত সস্তা শ্রমের জন্যে বাংলাদেশের দিকে নজর দেয়। একজন বাঙালি শ্রমিকের দেশে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নিশ্চই সেভ হয় না । তাই যখন সে ১৪০০০ টাকা সমমানের চাকরির সুযোগ পায় তখন দালালের মাধ্যমে আরব আমিরাতে যায়। যেখানে স্টান্ডার বেতন হয়তো মাসে ২০০০০ টাকা । এখন আরব আমিরাতে আসতে টিকেট সহ প্রকৃত খরচ ১৬০০০০ টাকার মধ্যে। সেখানে একজন শ্রমিক আসে ৩০০০০০ টাকায়। বাকি অংশ যায় দালালের পেটে। দালাল যেহেতু দালালি করে , সেহেতু সে কোম্পানি কে বলে তাকে ভিসা দিতে এবং সে কম বেতনের লোক আনবে। শুধু মাত্র দালালি করে এইখানে অনেক শ্রমিক সহ ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার বড়লোক হয়ে গিয়েছে। বাঙালির সপ্ন হচ্ছে কিভাবে একটা ভিসা যোগার করবে। কিভাবে বড়লোক হবে। শুধু মাত্র এই আশায় শ্রমিক এবং অনেক ভদ্রলোক খুব কম বেতনে এই দেশে আসে।


আরব আমিরাতে আপনি খুব সহজে বিজনেস করতে পারবেন। কোনো ঝামেলা নাই। ইমকাম ট্যাক্স নাই। তাই অনেকে কিছু পয়সা জমলে ( ৪ লাখ টাকার মতো ) বিভ্হিন্নো ধরনের লাইসেন্স খুলে। এখন টাকা আসবে কোথা থেকে ? তারা করে কি তাদের লাইসেন্সের বিনিময়ে দেশ থেকে মানুষ আনে। ২০ জন লেবার আনলে প্রতি জনের কাছ থেকে ১৫০০০০ টাকা লাভ করতে পরলে পরলে তার মোট লাভ ৩০০০০০০ টাকা । যেটা দিয়ে সে বিজিনেস শুরু করে । এইভাবেই অনেক বাঙালি এইখানে কোটিপতি !

যেহেতু বাঙালিরা আসে অনেক টাকা খরচ করে , তাই কোম্পানির যেকোনো অন্যায় মেনে নেয় । কারন খরচের টাকা উঠাতে হবে । ভিসার ব্যবসা করে বড়লোক হতেই হবে !

তাছাড়া এজেন্সির মাধ্যমে যারা আসে , তাদের কে ভুলিয়ে ভালিয়ে ভালো বেতনের কথা বলে আনা হয় । দেশের থেকে তারা বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি পত্রে সই করে। যার কোনো মূল্য ওই দেশে নাই। শ্রমিক রা ওইখানে গিয়ে ঐদেশের নতুন চুক্তিপত্রে সাক্ষর করে , যেখানে বেতন থাকে দেশের চুক্তিপত্রের বেতনের থেকে কম এবং যে কাজের কথা বলে আনে তা না দিয়ে অন্য কাজ করায়। আরব আমিরাতের ছোট কোম্পানি গুলো এইসব কাজ গুলো করে এবং বাঙালি সহ অন্য দেশের মানুষেরাও এই অনিয়মের স্বীকার। এবং অবশ্যই এই ছোট কোম্পানি গুলোর মধ্যে অনেক বাঙালি কোম্পানি আছে।

আরব আমিরাতের সরকার এবং কোম্পানি গুলো অনেক সময় ভাড়ায় লোক নেয়। যেমন কোনো একটা আদম কোম্পানিকে বলে সে লোক প্রতি ৪০০০০ টাকা বেতন দিবে শ্রমিকদের , ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বেতন দিবে ইঞ্জিনিয়ারদের ইত্যাদি । এবং এই টাকা দিবে আদম কোম্পানিকে তাদের লোক সাপ্লাই দিতে হবে। তখো আদম কোম্পানি গুলো লোক নিয়ে আসে তাদের ভিসায় এবং শ্রমিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের দের বেতন দেয় ৩ ভাগের ১ ভাগ। তাছাড়া লোক আনার সময় যে টাকা নিয়েছে সেখানে লাভ তো আছেই।

সবচেয়ে মজার কথা হলো শিক্ষিত ( ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার এবং অনন্য পেশা ) লোকেদের আনা লাভজনক। কারো এদের ভিসার টাকা , টিকেটের টাকা মূল কোম্পানি দেয় । আবার এদের থেকেও দালালরা টাকা নেয় প্রায় ১৫০০০০ টাকা । এইভাবেই সবাই বড়লোক এবং এই ব্যবসায় জড়িত শিক্ষিত শ্রেণী। তারা এইভাবে যেনতেন কোম্পানিতে লোক দিয়ে তাদের জীবন শেষ করে দেয়।

আরব আমিরাতের একটা নিয়ম হচ্ছে কোম্পানি যত অনিয়ম করুক না কেনো ৩ বছরের আগে নন অবজেকশন পেপার ছাড়া কোম্পানি চেঞ্জ করা যায় না। কিন্তু কোম্পানি আপনাকে যেকোনো সময় ছাটাই করতে পারবে। ফলে অনেক তিন বছরের জন্যে কষ্ট করে ভবিশৎ সুখের আশায় ৩ বছরে কষ্ট মেনে নেয়। তাই বোয়েসেল চুক্তি করার সময় ২ বছরের চুক্তি করে যেখানে চাকরি যখন খুশি তখন চেঞ্জ করা যায়। কিন্তু খারাপ কোম্পানি গুলো এই নতুন চুক্তি পত্রে শ্রমিকদের ছলে বলে সাক্ষর করায়।

তাছাড়া আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ার এবং লেবার রা উন্নত যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত নয় , যেটা এদেশে নিজেদের যোগ্যতা প্রমানে বাধা। ভাষা গত সমস্যাও আছে। এইখানে চলে আরবী এবং হিন্দি যা ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানি দের জন্যে সমস্যা নয়। এইভাবেই যোগ্যতা বিচারে আমরা পিছিয়ে পরি এবং সমস্যার কথা যথাযথ কর্তিপক্ষ কে ঠিক মতো বলতে পারি না । ইন্ডিয়াতে শুধু শ্রমিক রপ্তানির জন্যে আরবী ভাষা শিক্ষার অনেক স্কুল আছে।


এইসব কথা আরবির জানে তাই তারা বলে থাকে , " কুল্লু বাঙালি তাবান "। মানে বাঙালি দুর্বল এবং একই সাথে ছোট হৃদয়ের ।

প্রাসঙ্গিক ভাবে আরব আমিরাত সরকারের করণীয় কি ? এই প্রশ্ন আসে। আরব আমিরাতের মূল টাকা আসে বিনিয়োগ কারীদের মাধ্যমে । তারা বিনিয়োগকারীদের খেপাতে চায় না। তাদের মূল লেবার আইন খুবই সুন্দর যা কখনই মানা হয় না । শ্রমিকদের দাবী আদায় করতে না পারার কারন লেবার ইউনিয়ন না থাকা , যা ওই দেশের আইনে নাই। কোনো শ্রমিক তার দাবী নিয়ে লেবার কোর্ট এ গেলে তাকে কেস চালানোর জন্যে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয় এবং তাও বিনা বেতনে । শেষ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বছর পর রায় হয়তো তার পক্ষে আসবে কিন্তু এতদিন পয়সা ছাড়া থাকা সম্ভব না বলে তারা হাল ছেড়ে দেয়। এইদেশে এসে আমি বুজতে পারি লেবার ইউনিয়ন কতটা জরুরি শ্রমিকদের জন্যে।




যদি সমস্ত বাঙালি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে দেশে টাকা পাঠাতো তবে আমাদের রেমিটেন্স দ্বিগুন হত।


শেষ কথা উল্লেখিত সমস্যা গুলো একটা গরীব দেশের সমস্যা যা সহজে সমাধান করা যাবে না। এর জন্যে চাই দেশের উন্নতি যার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×