somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে সময়গুলো কি ফিরে পাবেন উনারা?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বিষয় প্রায়ই আমাকে ভাবায়। বাবা মা'রা আমাদের জন্য কত বিচিত্র প্রকারেই না বিলিয়ে দেয়ার মহোৎসব করলেন নিজেদের নিয়ে। সে যাত্রা এখনো চলমান। ছেলেমেয়ের পর্ব শেষে এখন মাতোয়ারা নাতিপ্রজন্ম নিয়ে। মেয়ের গর্ভধারণ এবং পরবর্তী সময়টুকু, বস্তুতপক্ষে সে শিশুটির বড় হয়ে উঠার পুরো প্রক্রিয়াটার সাথেই একজন নানী বা দাদী মায়ের এবং অভিভাবকের মতোই আবির্ভূত হন স্বতঃপ্রণোদিতে হয়ে। এটাকে তাঁরা কর্তব্যজ্ঞান করেন না শুধু, বাৎসল্যের আশ্রয়ে সে কর্তব্যকে আটপৌরে একটা রূপ দিয়ে দেন নিপুণতায়।

বাবা মাদের আমরা এ রূপে দেখতেই অভ্যস্ত। ব্যাপারটা এত নীরবেই ঘটে যায় যে, তাদের সে জীবনাচরণে সন্তানের সাথে বিযুক্ত এবং একান্তই তাদের যে কিছু সময় হতে পারতো, সেটা ভাবার অবকাশ কখনোই উনারা পাননি, পেতে চাননি বস্তুতপক্ষে। আজ নিজের দাম্পত্য জীবনের রং রসগুলো ষোলআনা চেখে দেখার প্রত্যয়ের বিপরীতে, বাবা মার সে সময়টুকু নিয়ে ভাবার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে স্বভাবতই। আমাদের মা বাবারা উনাদের যৌবন, বিবাহিত জীবনের পবিত্র ভালোলাগা কতটুকু জেনে নিতে পেরেছিলেন, আজ নিজেকেই শুধাচ্ছি। লাগাতার আত্মগ্লানিতে ভুগছি এজন্য যে, আমাদের জন্যই, স্রেফ আমাদেরকে ভেবেই মধ্যবিত্ত অসংখ্য বাবা মা অসাধারণ সুন্দর কিছু ক্ষণকে একেবারে খরচ করে ফেলেছেন। এ যুগের চিত্রটা অবশ্যি তেমন নয়। আমরা এখন নিজেদের নিয়ে ভাবার মত যথেষ্ট সময় এবং সদিচ্ছা রাখি। কিন্তু বঞ্চনায় ডুবেছেন আমাদের জন্মদাতাগণ।

আমার স্মৃতিতে মনে হয়না কখনো শুধু বাবা-মা কোথাও নিজেদের জন্য কিছু সময় বের করে বেড়াতে গেছেন দূরে কোথাও, যখন আমরা সেটার জন্য যথেষ্ট বয়েসী হয়েছি, তখনো নয়। ছেলেমেয়ে ভরা একক অথবা যৌথ পরিবারে একজন রওশন আরা বা নূরউদ্দীন কে কখনো একান্তে সময় কাটাতে দেখিনি। গৃহস্থালি খুনসুঁটিগুলো রোমান্সের মোড়কে মেলানোর মত আদিখ্যেতা উনারা দেখানোর সাহস করেননা। বিয়ের বছর ঘুরতেই সন্তান আসা, তার সময়কে নিজের সময়ের নিয়ন্ত্রক বানিয়ে ফেলা, পরবর্তীতে একটা বয়স্ক ভাব শরীরে, মনে এঁটে যাপিত জীবনকেই কেন যে উনারা আদর্শ ভেবে নিলেন, বুঝিনা। একটু না হয় হতোই বেলেল্লাপনা, সন্তান, আত্মীয়, প্রতিবেশীর কিছু শ্লেষ না হয় মেখে নিতেনই গায়ে। সে সময়টুকু তো আজ ধরা দেবেনা বাৎসল্যের সাগর সেঁচে। আমার নিজেরই মনে আছে, তিন চার বয়সের অথবা তার আরো পরের স্মৃতি। মা আমাদের ছেড়ে বাবার কাছে একটু বসেছেন, অথবা শুধু উনারাই কিছু সময় কাটাচ্ছেন, এটা দেখলে চরম গাত্রদাহ হতো। শিশু-মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ বিষয়ের সুন্দর কিছু ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু দু'টো নরনারীর ভালোবাসার বিজ্ঞান সমান্তরালে চলতে পারেনা মধ্যবিত্ত গণ্ডিতে।

যখন বুঝতে শিখেছি, তখনো তো এ দুটো মানুষকে বাবামার খোলস থেকে বের করে এনে জীবনসঙ্গীর সঙ্গ প্রত্যাশী রক্তমাংসের মানুষে দাঁড়া করাতে পারিনি নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে। আমাকে একবেলা খাইয়ে দেয়া অথবা গল্পবই পড়ে শোনানোর চেয়েও বেশি মানবিক আকাংক্ষা যে মা নামক মানুষটা লালন করতে পারেন, এবং সেটা তার হৃদ্যিক চাহিদার জন্য যে অনিবার্য হতে পারতো, এ চিন্তাটা আজ আমাকে কুরে কুরে খায়। নিজেকে, নিজের সূক্ষ চাওয়াগুলোকে যখন বাবা মায়ের সাথে এক পাল্লায় এনে মাপি, পুরোটাই বঞ্চনার ইতিহাস দেখি। আজ আমি বিলাসী হয়ে বলতে পারি, তোমরা কটা দিন শুধু দু'জনে ঘুরে এসো। শেষ বয়সে পরিণত প্রণয়ের ইঙ্গিতে হয়ত উনারা খানিক লালচে হবেন, তাতে আমার পাপ মোচন হবার নয়। আমার বোধ থেকেই স্বউদ্যোগে কিছুটা সময় স্বর্নরেণু হয়ে ঝরতে পারতো বোকা বাবা মাগুলোর উঠোনে। অন্যথা হবার দায় আমি আজ কিছুতেই যে ঝেড়ে ফেলতে পারছিনা!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:১৪
৬৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×