somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তাজুল ইসলাম মুন্না
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ালেখা করছি। পাশাপাশি অনলাইন জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছি দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে। ব্লগে ফেরার ইচ্ছা বহুদিনের। একদিন হয়তো হুট করে আবারও রেগুলার হয়ে যাবো।

ভুলে ভরা পাঠ্যবই-১ শিশু-কিশোরেরা কী শিখছে!

০১ লা জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে বিদেশে গ্রন্থের প্রণেতা ও রম্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৪৭ সালে মারা গেছেন, মাধ্যমিক বাংলা গদ্য বইয়ে এমন তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। ওই বইয়ে এই বিশিষ্ট লেখকের পরিচিতিতে বলা আছে, "১৯৭২ সালে তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা বিভাগের অধীনে কাবুল কৃষিবিজ্ঞান কলেজে ইংরেজি ও জার্মান ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হন।" এই একটি বাক্যে রয়েছে তিনটি তথ্যগত ভুল।
এক, সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যাপক নয়, প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। দুই, ১৯৭২ নয়, যোগদানের সময়টি ১৯২৭ সাল। তিন, তিনি "ইংরেজি ও জার্মান" নয় "ইংরেজি ও ফারসি" ভাষার প্রভাষক ছিলেন। (সুত্র: বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, পৃষ্ঠা-৯৮)।
এভাবে মাধ্যমিকের বিভিন্ন বইয়ে লেখকদের নাম, তাঁদের পরিচিতি, জন্ন-মৃত্যু এবং বিভিন্ন গ্রন্থের নামে রয়েছে অসংখ্য ভুল। ১৯৯৬ সাল থেকে এসব বই পড়ানো হচ্ছে, এরপর সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণও হয়েছে কয়েক দফা। কিন্তু একই ভুল চলে আসছে দীর্ঘ ১৩ বছর।
মাধ্যমিক স্তরে মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯৫। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণীর বই ২৯টি। প্রতিটি বইয়ে রয়েছে অসংখ্য ভুল। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নমুনা হিসেবে নবম-দশম শ্রেণীর নয়টি বইয়ের ভুলত্রুটিসহ বিভিন্ন অসংগতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাংলা গদ্য, বাংলা কবিতা, ইতিহাস, ভুগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, কৃষিশিক্ষা, ইসলামী শিক্ষা ও ইংরেজি। এসব বই পড়েই শিক্ষার্থীরা সর্ববৃহৎ এবং ছাত্রজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে পরিচিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ২৬ জুন এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে অংশ নেওয়া সাত লাখ ৪৩ হাজার ৬০৯ জন ছাত্রছাত্রীও এসব বই পড়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এখন যারা নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ছে, তারাও এগুলো পড়ছে।
গ্রন্থের নামে ভুল: বাংলা গদ্য বইয়ে সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী কাজী মোতাহার হোসেনের (১৮৯৭-১৯৮১) সঞ্চয়ন গ্রন্েথর নাম একাধিকবার ছাপা হয়েছে "সঞ্চরণ"। ১০৪ পৃষ্ঠায় ভারতের প্রখ্যাত লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের (১৯০৪-২০০২) গ্রন্েথর নাম ছাপা হয়েছে "পথের প্রবাসে", প্রকৃত নাম পথে প্রবাসে।
এ ছাড়া কবিতার বইয়ে ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের (১৮৮২-১৯২২) তীর্থরেণু গ্রন্থের নাম ছাপা হয়েছে "তীর্থরণু"। প্রখ্যাত এই কবির "ঝর্ণা" কবিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি তাঁর "কাব্যসঞ্চয়ন" থেকে সংগৃহীত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই নামে তাঁর কোনো কাব্যগ্রন্থ নেই, এটি কবিতার সংকলনগ্রন্থ।
বিষাদসিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের (১৮৪৭-১৯১২) লেখা আত্মজৈবনিক রচনা আমার জীবনী, আমার জীবনীর জীবনী ও বিবি কুলসুম বই তিনটিকে উল্লেখ করা হয়েছে প্রবন্ধ হিসেবে। এ ছাড়া "ইসলামের জয়" নামে উপন্যাস লিখেছেন মর্মে লেখক পরিচিতিতে তথ্য দেওয়া হলেও এ নামে মীর মশাররফ হোসেনের কোনো বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
লেখকের নামে গরমিল: গদ্য বইয়ের সুচিপত্রে আছে "অপূর্ব ক্ষমা" প্রবন্ধের লেখকের নাম মীর মোশাররফ হোসেন। কিন্তু ১৩ পৃষ্ঠার মূল লেখায় আছে মশাররফ হোসেন। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র (১৮৮৫-১৯৬৯) নামের বানান সুচিপত্রে এক রকম, মূল প্রবন্ধে আরেক রকম। পাঠ্যবইয়ে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর (১৮৯৪-১৯৭৮) নাম ইবরাহীম খাঁ লেখা হলেও বাংলা একাডেমী চরিতাভিধানে (পৃষ্ঠা-৮৬, দ্বিতীয় সংস্করণ) লেখা আছে ইব্রাহীম খাঁ। কবিতার বইয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের (১৯২৬-১৯৪৭) নাম সুচিপত্রে ছাপা হয়েছে "সুকা ভট্টাচার্য"। গদ্য বইয়ে "দুজন বীরশ্রেষ্ঠ" শিরোনামে ১৩৮ পৃষ্ঠার লেখাটি কে লিখেছেন বা সংকলক কে−এর কিছুই উল্লেখ নেই।
রবীন্দ্রপরিচিতিতেও বিভ্রান্তি: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১−১৯৪১) পরিচয় দিতে গিয়ে গদ্য বইয়ে লেখা হয়েছে, "বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি।" কিন্তু কবিতার বইয়ে কবি পরিচিতিতে লেখা হয়েছে, "বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল, সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশি দিন স্কুলের শাসনে থাকতে পারেননি।" একই শিক্ষার্থী কবিগুরু সম্পর্কে বাংলা গদ্যে এক রকম এবং কবিতায় আরেক রকম তথ্য শিখছে।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমী চরিতাভিধানের ৩৪০ পৃষ্ঠায় বলা আছে, "প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি স্বগৃহে বিভিন্ন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে; পরে যথাক্রমে ওরিয়েন্টাল, সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী স্কুল এবং সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। কিন্তু পড়াশুনা কোথাও ভালো এগোয়নি।"
"বীরবল" ছদ্মনামের সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬) সম্পর্কে লেখক পরিচিতিতে বলা হয়েছে, তিনি ইংরেজি সাহিত্যে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। আসলে এখানে "শিক্ষকতা" কথাটি হতো যুক্তিযুক্ত। কারণ একজন শিক্ষককে অধ্যাপক বলা যায় না।
অন্নদাশঙ্কর, আবু ইসহাক ও শামসুর রাহমান বেঁচে আছেন!: গদ্য বইয়ে বিখ্যাত লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় এবং সুর্যদীঘল বাড়ি উপন্যাসের রচয়িতা আবু ইসহাকের মৃত্যুর তারিখ নেই। সবার মৃত্যু তারিখ থাকলেও এ দুজনের না থাকায় মনে হতে পারে, তাঁরা বেঁচে আছেন। প্রকৃতপক্ষে অন্নদাশঙ্কর ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আবু ইসহাকও ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন। তাঁদের মৃত্যুর চার-পাঁচ বছর পরও বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
বাংলা কবিতা বইয়ের ৮৬ পৃষ্ঠায় "স্বাধীনতা তুমি" কবিতাটি পড়লে মনে হবে আজও বেঁচে আছেন প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমান। কিন্তু ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট শামসুর রাহমান মারা গেলেও তা কবি পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়নি। একই অবস্থা আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি কাব্যগ্রন্েথর রচয়িতা আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ক্ষেত্রে। তিনি ২০০১ সালের ১৯ মার্চ মারা গেলেও কবি পরিচিতিতে এর উল্লেখ নেই। অথচ বইটি ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পুনর্মুদ্রণ হয়েছে।
দীনবন্ধু মিত্রের শিক্ষা ও চাকরি: বইয়ের পাঁচ পৃষ্ঠায় নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের (১৮৩০-১৮৭৩) পরিচয় দেওয়া হয়েছে "রসমন্ডিত নাট্যকার" হিসেবে। নাট্যকার পরিচিতিতে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, "বৃত্তি লাভ করে উচ্চস্তরে পড়ালেখা করেছেন। ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।" কিন্তু বাংলা একাডেমী চরিতাভিধানে বলা হয়েছে, কলেজের শেষ পরীক্ষা না দিয়ে পাটনায় পোস্টমাস্টার পদে চাকরি লাভ করেন। এরপর কলকাতায় পোস্টমাস্টার জেনারেলের সহকারী হন।
এখানে কলেজ শিক্ষা শেষ না করলেও দীনবন্ধু মিত্র উচ্চস্তরে পড়াশোনা করেছেন উল্লেখ করা হয়েছে এবং পোস্টমাস্টার জেনারেলের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকে পোস্টাল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের জন্ন-মৃত্যু: লেখক সম্পর্কে বলা হয়েছে "রূপকথার রূপকার দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের জন্ম ১২৮৪ বঙ্গাব্দে, মৃত্যু ১৩৬৩ সালে।" রূপকথার জন্য বিখ্যাত হলেও এই লেখককে রূপকথার রূপকার হিসেবে কোথাও দেখানো হয়নি। এ ছাড়া তাঁর জন্ম বঙ্গাব্দ এবং মৃত্যুতে সাল কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা একাডেমীর চরিতাভিধান অনুযায়ী তাঁর জন্ন ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। পাঠ্যবই এবং বাংলা একাডেমীর চরিতাভিধান পর্যালোচনা করলে দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের বয়সে এক বছরের হেরফের পাওয়া যায়।
লেখকের মনোভাব তুলে ধরতেও: "ধনধান্য পুষ্কপভরা" কবিতায় নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬৩-১৯১৩) পরিচিতি দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, "ঐতিহাসিক নাটকগুলোতে তাঁর স্বদেশপ্রেম ও পরাধীনতা থেকে সৃষ্ট সমবেদনা প্রকাশ পেয়েছে।" এটি একদিকে জটিল বাক্য, অন্যদিকে বাক্যটির মাধ্যমে লেখকের যে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার কথা, তা সেভাবে ফুটে ওঠেনি।
এ ছাড়া বিশিষ্ট মহিলা কবি কামিনী রায়ের (১৮৬৪-১৯৩৩) পরিচিতি দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, "এই উচ্চশিক্ষিতা মহিলার ব্যক্তিগত জীবন স্বামীর অকাল বিয়োগে হূদয়বিদারী দুঃখের আকর হয়েছে।" এই বাক্যের মর্মার্থ নবম-দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে উদ্ধার করা বেশ কঠিন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ভুল: ইতিহাস বইয়ে সোহরাওয়ার্দী নাম লেখা হয়েছে "সোহারাওয়ার্দী"। মুর্শিদকুলী খানের নাম লেখা হয়েছে "মুর্শিদমুলী"। এ ছাড়া মীর কাসিমের নামে "শ", লক্ষ্মণ সেনের নাম "লক্ষণ সেন" লেখা হয়েছে।
স্থান নিয়েও ঝামেলা: গদ্য বইয়ে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র পল্লী সাহিত্য প্রবন্ধের শেষে নমুনা উত্তরের এক জায়গায় বলা আছে, "এবার ফেরাও মোরে" কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের বোয়ালিয়ায় বসে রচনা করেছিলেন।" প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক−রাজশাহীর বোয়ালিয়া কি এতই প্রসিদ্ধ কোনো জায়গা যে শিক্ষার্থী বুঝতে পারবে। এ ছাড়া ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের জন্নস্থান মানিকগঞ্জ জেলার বগজুড়ী গ্রামের নাম পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়েছে "বগজুরী"। ভুগোল বইয়ে "মাগুরা" কাগজকলকে "মাগুড়া", "আরব" মরুভুমিকে "আবর" বলা হয়েছে।
একটি নামের জন্য অপচয়!: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বদল হলেই প্রত্যেক বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা পাল্টে যায়। "প্রসঙ্গ কথা" শিরোনামে ওই প্রথম পৃষ্ঠার বক্তব্য বছরের পর বছর একই রকম থাকে। শুধু পরিবর্তন হয় বোর্ডের চেয়ারম্যানের নামটি। আর এভাবে একটি নাম সংযোজনের জন্য প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের একটি পৃষ্ঠা বদল হয়, এ জন্য অপচয় হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। তবে শুরুতে চেয়ারম্যানের নামটি মোটা হরফে লেখা হলেও বইয়ের ভেতরে কী আছে এবং শিক্ষার্থীরা কী পড়ছে, তা এই নীতিনির্ধারক জানেন না। বোর্ডসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেছেন, শুধু "চেয়ারম্যান" কথাটি থাকলে এই পরিবর্তন প্রয়োজন হয় না।
"প্রসঙ্গ কথা" শিরোনামে ওই বক্তব্যে প্রতিবছরই উল্লেখ থাকে "শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মত বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুদ্রণের কাজ দ্রুত করতে গিয়ে এ বইয়ে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে যেতে পারে। পরবর্তী সংস্করনে বইটি আরও সুন্দর, শোভন ও ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।"
ঢাকার শিক্ষার্থী ও গ্রামের শিক্ষকের কথা: মিরপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী তারান্নুম শাকেরীন খান লিজা জানায়, প্রতিটি পাঠ্যবইয়ে অসংখ্য ভুলত্রুটি রয়েছে এবং এগুলোর বেশির ভাগই শ্রেণীকক্ষে সংশোধন করা হয় না। এনসিটিবি প্রকাশিত বাংলা দ্বিতীয় পত্রে অসংখ্য ভুলের কথা উল্লেখ করে সে জানায়, "আমরা কেন, অনেক ভুল শিক্ষকও হয়তো ধরতে পারবেন না।"
আরেকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে লিজা জানায়, জ্যামিতির উপপাদ্যের অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৫০টি পড়তে হয়। কিন্তু নম্বর মাত্র ৮। এটা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর ওপর অহেতুক চাপ কমানো উচিত। আরেকটি উদাহরণ দিয়ে লিজা জানায়, পরলোকে গত= পরলোকগত। এটা সপ্তমি তৎপুরুষ সমাস হলেও বোর্ডের বইয়ে লেখা আছে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস। এভাবে কারক, বাক্য প্রকরণ, সন্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য ভুল রয়েছে বলে সে জানায়।
বাগেরহাটের ফকিরহাট সাতশৈয়া হাজি আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সিদ্দিকুর রহমান জানান, পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ভুলের কারণে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে খেসারত দিতে হয়। কিশোর বয়সে একজন শিক্ষার্থীর শেখা ভুল শিক্ষা সহজে সংশোধন হয় না। তা ছাড়া পাঠ্যবইয়ের আলোকে তৈরি নোট-গাইডেও এসব ভুল থেকে যায়। এভাবে পাঠ্যবইয়ের ভুল চক্রাকারে চলতেই থাকে।
এনসিটিবি বিষয়টি অবগত: পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি থাকার বিষয়টি এনসিটিবির অজানা নয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এতই দুর্বল যে, এগুলো শোধরানোর মতো দক্ষতা ও উদ্যোগ নেই। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক মো. সিরাজুল হক বলেন, পাঠ্যবইয়ে এত বছর এই বিপুলসংখ্যক ভুলত্রুটি থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আশা করছি, আগামী শিক্ষা বছরে এসব ভুল থাকবে না। এ জন্য নতুন করে বইগুলো কম্পোজ করা হবে।"


প্রথম আলো থেকে সংগ্রহীত


দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×