somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও ইসলামী মূল্যবোধ

২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী মঙ্গলবার ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লড়াকু ও দুর্বিনীত সাহসী জাতি হিসেবে আমাদের কাছে দিনটি অনন্যসাধারণ ও স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এই দিনটি জাতির দেশপ্রেম, অবিরাম সংগ্রাম এবং সংহত শক্তির প্রতীকও বটে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বাধিকার আন্দোলনের মুখরতায় টালমাটাল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখটি ছিল পবিত্র শুক্রবার। সেদিন সুউচ্চ মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি ও শাশ্বত সূর্যোদয়ের মধ্যে নিহিত ছিল অন্যরকম দ্যোতনা। কারণ, সেদিন এ দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা লাভের অদম্য বাসনা নিয়ে দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানিদের সীমাহীন ও অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করেছিল। তাই তো দিনটি আবেগমথিত, মহিমান্বিত ও স্বাতন্ত্র্যে ভাস্বর।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে টানা নয় মাসের মরণপণ লড়াই ও সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের পর সাড়ে সাত কোটি মানুষ পেয়েছিল নিজস্ব মানচিত্র, নিজের মতো করে একটি লাল-সবুজ পতাকা। অযুত জনতার আপসহীন মনোভাব ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতিসত্তায় বিশ্ববুকে অধিষ্ঠিত।
বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলামুক্ত করতে সামরিক-বেসামরিক নির্বিশেষে সকল পেশা ও বয়সের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। শরীরের রক্ত ঝরানো ছাড়াও তাদের সহ্য করতে হয়েছে বহু জুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়নের অব্যক্ত যন্ত্রণা। স্বাধীনতার এই মহান দিনে মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত মানুষ শহীদ হয়েছেন, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোত সমবেদনা জ্ঞাপন করি। পাশাপাশি স্মরণ করি যুদ্ধাহত বীর সেনানীসহ মুক্তিযোদ্ধা ও নির্র্যাতিত মা-বোনদের।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে অনেক স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ছিল। এই স্বপ্ন ও প্রত্যাশাগুলো পূরণের মধ্যেই এই দিবস পালনের সার্থকতা রয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সবাইকে পথ চলতে হবে। তাবৎ চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হবে অভীষ্ট লক্ষ্যপানে। এখনও দিকে দিকে শকুনিরা নিঃশ্বাস ফেলছে। একটি মহল যেভাবে এ দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের ঘাঁটি বানাতে চায়, তেমনি অন্য একটি গোষ্ঠী এ দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য কিন্তু শুধু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া নয়; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বিগত চার দশকে এসবের কোনোটিই পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তারপরও বলা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের অনেকগুলো উলেল্গখ করার মতো গর্বিত অর্জন রয়েছে। দেশ এগিয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুশীলনের দিকে। বাংলাদেশের এ অর্জনকে কোনোভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে দলমত নির্বিশেষে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র_ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় হতে হবে। তবেই দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারবে_ ইনশাআল্লাহ।
মানবতার ধর্ম ইসলামে দেশকে ভালোবাসার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের কথা হলো, দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে স্বদেশপ্রেম অত্যাবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা মানুষের ধর্মীয় ও প্রকৃতিগত অধিকার। তবে ইসলাম স্বাধীনতার কিছু সীমারেখা টেনে দিয়েছে, যাতে তা মানুষের বিভ্রান্তি ও অধঃপতন কিংবা অন্যদের ক্ষতির মাধ্যম না হয়। স্বাধীনতা এক খোদায়ী আমানত, যা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধঃপতনের শিকার হয়। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে তাই স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই।
-মুফতি এনায়েতুল্লাহ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×