somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘পঁচাত্তরের পরে দেশ স্বাধীন’ -১

১৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

’৭৫-এর পরবর্তীতে ভক্তরা তাকে ঘোষক দাবি বলে করত। এতে মেজর জিয়ার অনাগ্রহ ছিল না। এতে অতি উৎসাহিক ছিলেন চৈনিকরা, বিশেষ করে দৈনিক বাংলা-বিচিত্রাসহ কতিপয় মিডিয়া। চৈনিকদের উৎসাহের কারণ ছিল ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যেহেতু চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে সেহেতু এদেশের চৈনিকরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন; যার প্রমাণ ভাসানী ন্যাপের সম্পাদক মশিউর রহমান যাদুমিয়া ও পাকবাহিনীর মুরগি সাপ্লায়ার আনোয়ার জাহিদ (কোলাবরেটর আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন)। কাজী জাফর, মান্নান ভূঁইয়ারা নরসিংদীতে বসে পাকবাহিনীর সঙ্গে আপোসে কাটিয়েছেন। উল্লেখ্য, যাদুমিয়া, কাজী জাফর একবার ভারতে গিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানীকে ফেরত আনতে এবং পাকবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিতে। কিন্তু মাওলানা ভাসানী সে আবদার প্রত্যাখ্যান করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের অভিভাবকের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছে হক, তোহা গ্রুপের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি, সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি; যাদের সমর্থন করতেন বদরউদ্দীন উমর। যিনি এখনও কতিপয় সংবাদপত্রে কলাম লিখে মুজিবের বিষোদগার করছেন, জামায়াতের পক্ষে সাফাই গাইয়ে মূলত বিএনপিকে ধোয়া তুলসীপাতা বানাতে চেষ্টা করছেন। আজ তাকালে দেখা যায় যে, সেই ’৭১- এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শুধু জামায়াত নয়, চৈনিকরাও এখন বিএনপির কণ্ঠস্বর। ভুলে থাকার কথা নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে চীনের স্বীকৃতি দেয়ায় বাম নেতা জিয়ার অতিপ্রিয় এনায়েতউল্লাহ খান লিখেছিলেন, ‘এতদিনে দেশ স্বাধীন হলো’। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে রেডিওতে প্রথম ঘোষণায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। গোলাম আযমও একই ভাষায় বলেন, ‘৭৫-এর পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে এর আগে ছিল ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্র।’ স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে জিয়াপুত্রের বক্তব্যের সঙ্গে ’৭৫ সালের এনায়েতউল্লাহ খানের বক্তব্যের একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এখন তার স্ত্রী-পুত্ররা দাবি করছেন যে জিয়াই নাকি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, আর ১৯৭২ সালে ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী হওয়া ছিল অবৈধ। উন্মাদের মতো প্রলাপ বকছে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, সংবিধান, বাঙালীর বৈধতা নিয়ে। কেবল বৈধ জিয়া-খালেদা-আর তারেক? এ নিয়ে তাদের মস্তিষ্ক বিকৃতির এবং রাষ্ট্রদ্রোহের দাবি উঠেছে। কিন্তু এ নিয়ে খোদ বিএনপির কোন নেতার সমর্থন এখনও পায়নি। বরং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিএনপির শীর্ষনেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের একটি উক্তি (কোর্ট-হাইকোর্ট এখন মুজিব কোটে) নিয়ে হাইকোর্টে নালিশ জানিয়েছেন। তবে এক ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সুর মিলিয়ে বলছেন, জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং মুজিবনগর সরকার (১০ এপ্রিল) গঠিত হওয়া পর্যন্ত জিয়াই বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে এই, জিয়া ২৬ তারিখ রাত ২টায় নিজেকে অষ্টম বেঙ্গলের কমান্ডার ঘোষণা করে শহর থেকে পালালেন ২৫ মাইল দূরে। ২৭ তারিখে চাঁদগাঁ এসে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একটি ঘোষণা পাঠ করলেন। আর ৩০ তারিখে সহকর্মীদের ছেড়ে কালুরঘাট ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর মধ্যে কোন যুদ্ধ করেননি। তাই তিনি কিভাবে ঐ সময় দেশের রাষ্ট্রপতি বা মুক্তিযুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন ইতিহাসে তার কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।
এ প্রসঙ্গে সঠিক তথ্য বার বার তুলে ধরার আগে বলতে হয়, ম্যাডাম খালেদা এবার স্বীকার করছেন যে, তিনি ভারতে যান নাই, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। সেখান থেকে কিভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তর হলেন, তার বর্ণনা যদিও এ ধরনের বর্ণনাভিত্তিক একটি লেখা সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ (মার্কিন প্রবাসী) অনেক আগেই লিখিছেন (১৯৭৪)। তার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আগমনের কারণ ছিল-জেনারেল জানজুয়ার খালি বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণের জন্য। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ওই জানজুয়া মারা গেলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সকল প্রটোকল ভঙ্গ করে সেই জানজুয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন মধুর আতিথেয়তার প্রতিদান হিসেবে। এটা স্পষ্ট ছিল যে, তিনি পাকিস্তানের আতিথেয়তা পাকিস্তানের পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষেই সক্রিয় ছিলেন। উচিত ছিল পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে তাকেও পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া। ম্যাডাম স্বগর্বে বলেছেন, তিনি ভারতে যাননি (সব সেনা কমান্ডারের পরিবার ভারতেই ছিলেন)। যারা গেছে তারা উদ্বাস্তু। অথচ তার স্বামী যিনি ৩০ মার্চ তার সঙ্গীদের কালুরঘাটে রেখে সর্বপ্রথম ভারতে চলে যান (সূত্র: মীর শওকত আলী) অর্থাৎ তার স্বামী প্রথম উদ্বাস্তু। দুর্ভাগ্য, ম্যাডাম নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাননি তাকেই, তার ভক্তরা মুক্তিযোদ্ধার পুরস্কার দিয়েছে এবং তিনি তা গ্রহণও করেছেন। হ্যাঁ, করতেই পারেন, তিনিই যদি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের একটি অংশ গোপালগঞ্জ (যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির জনক) সেই অংশটি বাংলাদেশে আর রাখবেন না। এ অধিকার কি তার আছে না থাকবে?
আসলে জিয়াউর রহমান অনিচ্ছাকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য হয়েছিলেন। তার কোন অঙ্গীকার ছিল না বাঙালী ও এই ভূ-খ-ের প্রতি। কেননা সে ছিল পাকিস্তানের অনুগত। পাকিস্তানীদের প্রতি তার অতিভক্তির কিছু তথ্য প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৪৭ সালে তিনি ছিলেন কলকাতায়। ভারত বিভক্তির সময় বাঙালী মুসলমানরা ঢাকায় এবং অবাঙালীরা পাকিস্তান চলে যায়। জিয়া পরিবার গেলেন করাচিতে। সেখানে স্কুল শিক্ষা শেষে ১৯৫২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন খালেদা বেগমকে। ১৯৬৫’র পাক-ভারত যুদ্ধে তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পদক ‘হিলাল-ই-জুুরাত’ খেতাবপ্রাপ্ত হন (সূত্র: উইকিপিডিয়া ও পাক ডিসেন্স ফোরাম- আবুল খায়ের, জনকণ্ঠ ৩০/০৩/১৪)। সুত্র


২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×