রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুরে ছিনতাইকারীরা ফিল্মি স্টাইলে একটি প্রাইভেটকারের গুলি করে ৩০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় গুলিবিদ্ধরা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। আহতরা হচ্ছেন শামসুর রহমান (৫৫), আক্তার হোসেন (৩৫) ও জাকারিয়া খান (৪০)। এ সময় এক আনসার সদস্যও আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর আহত জাকারিয়াকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শামসুর রহমান জানান, তিনি মাল্টিপ্ল্যান্ট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সুপারভাইজার। আক্তার হোসেন ওই কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভার। হেড অফিস পান্থপথে। মিরপুর এক নম্বরেও তাদের একটি শাখা অফিস আছে। তাদের সঙ্গে আহত মোঃ জাকারিয়া একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য গাড়িতে করে ৩০ লাখ টাকাসহ মিরপুর থেকে পান্থপথে আসছিলেন। প্রাইভেটকারটি কল্যাণপুরের ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এসে তাদের গাড়িটি যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে শামসুর রহমান বাম পায়ে আর আক্তার হোসেন দুই হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাদের খদ্দের জাকারিয়াও গুলিবিদ্ধ হন। আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্য বিল্লাল হোসেনও। পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত জাকারিয়া জানান, ৩০ লাখ টাকা তো ছিনতাই হয়েছেই, জীবনটাও ছিনিয়ে নেয়া থেকে বেঁচে গেছে। একই দিনে প্রকাশ্যে রাজধানীর শ্যামলীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রকৌশলী রাকিব আল মামুন (২৭) আহত হয়েছেন।
গত বুধবার মালিবাগ ও লালবাগে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাতে মিজানুর রহমান (৩০) ও সোহেল (২৮) নামে দুই পথচারীকে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মিজানের বন্ধু আশরাফ হোসেন জানান, মিজান ড্রাগ ফার্মা কোম্পানিতে মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন। সে মালিবাগের ৪৩১/১৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১২টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। মিজান রিক্সাযোগে মালিবাগ রেলগেট পৌঁছামাত্র দুইজন ছিনতাইকারী তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে নগদ ২০ হাজার ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে মাছ ব্যবসায়ী মোঃ শাজাহান আলীকে (৪৫) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। আহত শাজাহান আলী জানান, ভোর ৬টায় মাছ কেনার জন্য যাত্রাবাড়ী আড়তে যান তিনি। পথে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে তার কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীকে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি মানিকনগর এলাকায় থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরায় হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কাজী মহিউদ্দিন (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে ১ লাখ ৫১ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাইয়ের শিকার মহিউদ্দিনের পিতার নাম কাজী কেফায়েত হোসেন। তিনি মগবাজারের মধুবাগ এলাকার থাকেন। ছিনতাইয়ের শিকার কাজী মহিউদ্দিন জানান, গাজীপুরের গ্রামীণ ফোনের কাস্টমার কেয়ার থেকে বাসায় যাওয়ার পথে উত্তরার মামার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে আসার জন্য হাউস বিল্ডিং এলাকায় আসি। বাস থেকে নামার পর ৫/৭ জন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমাকে একটি সাদা প্রাইভেটকারে ওঠায়। গাড়িতে ওঠানো মাত্র হাত-পা ও দুই চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তার পর ছিনতাইকারীরা এক নারীকে উলঙ্গ করে তার সঙ্গে আমার জোরপূর্বক ছবি তুলে। ছিনতাইকারীরা বেপরোয়াভাবে মারধর করে একটি নকিয়া ই-৭ মোবাইল সেট, নগদ ২০ হাজার টাকা, সঙ্গে থাকা এটিএম কার্ড নিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে নেয়, মোটর সাইকেলের ড্রাইভিংসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নেয়। তাছাড়াও ছিনতাইকারীরা হাতের আঙ্গুলের ছাপ ও বাড়ির ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। যা দিয়ে পরবর্তীতে পুলিশকে অবগত বা থানায় মামলা করলে বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
র্যাবের এ অবস্থা কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের তিন কর্মকর্তার নাম জড়িত হওয়ার পর থেকেই র্যাবের কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরেছে কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই র্যাবের অনুপস্থিতি সেই যে চলেছে তার আর দৃশ্যমান করার আর কোন উদ্যোগ নেই। হাতে গোনা দুই একজন র্যাবের কর্মকর্তা বা সদস্যের অপকর্ম অপরাধের কারণে গোটা বাহিনীই এখন কার্যত পঙ্গুত্বের মতো অবস্থা বরণ করার দশা। এ দশা থেকে উত্তরণের কোন উদ্যোগ না থাকায় এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অপরাধীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব। অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। জানমাল নিরাপত্তাহীনতার কথা গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। তার ওপর আবার রমজান মাস আসন্ন।
জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইউং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, র্যাবের নিয়মিত টহল, চেকপোস্ট নেই। এটা সত্যি বটে। তবে কার্যক্রম সঙ্কুচিত করা হয়নি। কৌশলগত সুবিধা আদায়ে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে র্যাবকে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে যাবে র্যাব। মনে রাখতে হবে র্যাব নিয়মতি বাহিনী নয়, এটা স্পেশাল বাহিনী।
র্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের কথা মালার ফুলঝুড়ি দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো র্যাবের আগের মতো তৎপরতা যে নেই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু র্যাবের তৎপরতার কথা অস্বীকার না করলেও সাধারণ মানুষজন ও অপরাধীদের কাছে এখন আর আগের মতো দৃশ্যমান নয়। র্যাব কর্মকর্তার আক্ষেপের সুরও বোঝা গেছে তার কথাবার্তায়। তিনি বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের ৩০ হাজার সদস্য তৎপর। সেখানে র্যাবের সদস্য সংখ্যা মাত্র ২ হাজার। পুলিশের শক্তিই যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে র্যাবের অনুপস্থিতির কথাটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এতে অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ সংঘটিত করার ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। মানুষজনের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে সরকারের প্রতিপক্ষ বা বিরোধী মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনাকে পূঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ পাবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানীর ৪৯ থানার পুলিশ ইতোমধ্যেই অনেক আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম এ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। প্রয়োজন হলে বিশেষ অভিযানও চালানো হবে। আসন্ন রমজান মাসে মানুষজনের জানমাল রক্ষার্থে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সুত্র

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




